Friday, November 29, 2013
গণতন্ত্রকে প্যান্ট পরাতে কতদিন লাগবে?
আগুনে পুড়া গেল। এবার আসি ভাঙচুর প্রসঙ্গে। গাড়ি বা বাস চালায় যাচ্ছেন, হৈ হৈ করে এসে কিছু মহান ভাড়াটে দেশপ্রেমিক গণতান্ত্রিক কর্মী এসে গাড়ি-বাস থামিয়ে ভাঙা শুরু করবে। এর জন্য দরকার বুলেটপ্রুফ গ্লাস। অবরোধকারীরা কাঁচে বাড়ি দিবে কিন্তু কাঁচ ভাঙবে না। সবাই হাততালি দিবে। আর যদি বুলেটপ্রুফ গ্লাস সবাই অ্যাফোর্ড করতে না পারে তাহলে তো কাঁচ ভাঙা দেখতে হবে। গাড়ি চালক ও যাত্রীরা যেন কাঁচ এবং পিকেটারের মাইর থেকে রক্ষা পায় সেজন্য পুলিশের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও গিয়ার আপনারা নিয়ে আসেন। আইফেরির ওয়েবে হরতাল-অবরোধ সেকশনে এগুলোর তালিকা ও ছবি দিয়ে দেন। সাপ্লাই না পেলে চায়নায় ভেন্ডর ঠিক করে অর্ডার দেন। বহুত ফায়দা হবে। মানুষ উপকৃত হবে। আর ভালো দেখে হেলমেট রাখতে কিন্তু ভুলবেন না।
আসল কথা বলা হয় নাই। সেটা হচ্ছে ককটেল। ককটেল যদি গায়ের ওপর বা আশেপাশে পড়ে তাহলে স্প্লিন্টার যেন কোনো সমস্যা করতে না পারে সেজন্য দরকার বোমাপ্রুফ জামা। ফুটবলের জার্সির কালেকশন আপনাদের ভালো। এবার মেহেরবানী করে একটু হরতালের বোমাপ্রুফ জার্সির বন্দোবস্ত করেন।
হরতাল-অবরোধে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস হয়তো হয় না। অনেক সরকারি অফিসেও হয়তো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিত হতে হয় না। কিন্তু যারা দিনমজুর, যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এবং যাদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে হয় তাদেরকে জান হাতে করে নিয়েই বের হতে হয় ঘরের বাইরে। আর একেকদিন একেকজনের ভাগে পড়ে লাশ হওয়ার গল্প। মা সন্তানকে ঘর থেকে বিদায় দেন কিন্তু জানেন না তার সন্তান কাজ শেষে বাড়ি ফিরবে কিনা কিংবা ফিরলেও জীবিত ফিরবে কিনা। সাধারণ মানুষের জন্য মহামান্য রাষ্ট্রপতি কিংবা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মতো এসএসএফ, পিজিআর আর পুলিশের এসপিবিএন নাই। তাই পাবলিকের নিজের নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। এক পাবলিক আগুনে পুড়লে আরেক পাবলিকই তাকে ঢাকা মেডিকেলে নেয়। আমজনতা যাতে নিজের নিরাপত্তা নিজে নিতে পারে সেজন্য নিরাপত্তা গিয়ার আইফেরিতে আনেন, মানুষ অর্ডার করুক, আপনারা বাসায় দিয়ে যান।
রাজতন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে উত্তরণের কারণ হলো জনতার শাসন প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এমন অবস্থায় আমরা উপনীত হয়েছি যে শুধু গণতন্ত্র বললে গণতন্ত্র বোঝা যায় না, বুঝিয়ে বলতে হয় “ট্রু গণতন্ত্র”। অর্থাৎ, এখন বাংলাদেশে যে গণতন্ত্র তা ‘ট্রু গণতন্ত্র’ না হলেও ‘গণতন্ত্র’। কি অদ্ভুত! ক’টা রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগীদের কাছে সব শাসন ক্ষমতা আর এর নাম নাকি “গণতন্ত্র”? আমরা ১৬ কোটি জনতা মানুষের কাবাব হওয়া রোধ করতে পারি না। ১৬ কোটি মানুষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার চায় নাকি হরতাল চায় সেটি কোনো বিবেচনার বিষয় নয়। বিচার-বিবেচনা আটকে গিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর গুলশানে বিরোধীদলীয় নেত্রীর কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের মধ্যে। ভীষণ লজ্জা হয়, ভীষন অপমানবোধ জাগে, ভীষণ অসহায় লাগে। আমরাই তো ’৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ করা জাতি। আজ আমরাই এত অসহায়, এত নিরুপায়? দু’দলে যে মুক্তিযোদ্ধারা আছেন তারা কি তবে আরো অসহায়? সত্যি, আজ বড় খারাপ সময়। আজ গণতন্ত্রের প্যান্ট খুলে গিয়েছে। নগ্ন গণতন্ত্র আজ লজ্জিত, বিব্রত, অপারগ। শেষ প্রশ্ন, গণতন্ত্রকে প্যান্ট পরাতে কত সময় লাগবে আমাদের?
ছবি কৃতজ্ঞতা: বাংলানিউজ২৪
Tuesday, November 26, 2013
একজন মুহম্মদ জাফর ইকবালের কি প্রয়োজন ?
একজন ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠান থেকে বড় হতে পারে কি না - এই বিতর্কে না গিয়েও বলা যায় আমাদের এবং আমাদের পরের প্রজন্মের একটা বড় অংশের কাছে জাফর স্যার যেকোন প্রতিষ্ঠানের চাইতে বড় একজন ব্যক্তিত্ব। স্যারের ব্যক্তিগত, ধর্ম-সংক্রান্ত বা রাজনৈতিক যেকোন বিশ্বাসে ভিন্নমত থাকতেই পারে কিন্তু তাঁর একজন সরাসরি-ছাত্র হিসেবে বলতে পারি ভার্সিটিতে জাফর স্যার কখনওই অসদুদ্দেশ্যে কোন পদক্ষেপ নেননি। ট্র্যাডিশনালি আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা অত্যন্ত সম্মানিত একটি পেশা হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নতজানু এবং সুবিধাবাদি ভূমিকার কারণে আস্তে আস্তে তারা তাদের দেবতুল্য আসন হারিয়েছেন। আমাদের এখানে শিক্ষকেরা নীল-সাদা-গোলাপি এবং বর্ণচোরা হন, তারা ভাড়া খাটেন, ফরমায়েশি ইশতেহার লিখে দেন এবং অনুগ্রহধন্য হবার আশায় ছাত্রনেতা নামধারী কিছু পান্ডার পিঠ চুলকে দেন। আর যারা এগুলো করতে পারেন না তারা টিমটিম করে জ্বলতে জ্বলতে একসময় দুপ করে নিভে যান। (কথাগুলো প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখলাম, কেউ দ্বিমত পোষণ করতে চাইলে আমি দৃষ্টান্ত সহ বাহাসে বসতে রাজি আছি।)
এই ব্যাকড্রপে মফস্বলের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে লেখালেখি থেকে শুরু করে নানা কাজের ভেতর দিয়ে MZI (Muhammad Zafar Iqbal এর সংক্ষেপিত রূপ MZI -আমাদের সেমিস্টারের রুটিনে এভাবেই তাঁর নাম লেখা হত) আমাদের মনে বিশ্ববিদ্যালয়-গবেষণা-সমাজ ভাবনা এগুলো নিয়ে পুরোপুরি নতুন একটা ধারণা গড়ে তোলেন। সমাজে ভাল মানুষের অভাব কখনওই থাকে না, অভাব থাকে ভাল একজন দৃষ্টান্ত সৃষ্টিকারী ব্যক্তিত্বের। এই কথাটা শিক্ষক সমাজের ক্ষেত্রেও ভীষণভাবে প্রযোজ্য। আক্ষরিক অর্থেই একদল উৎসুক এবং ভালো মানুষ শিক্ষকদের নেতা হিসেবে জাফর স্যার এক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখেন। এই শতকের শুরু থেকেই একদল সমমনা শিক্ষক ও সচেতন সমাজকর্মীদের সাথে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে স্যার দেশের নানা প্রান্তে ছুটে গেছেন, অংশ নিয়েছেন তরুণ সমাজকে উদ্বুদ্ধ করার মত বিভিন্ন আন্দোলনে, জন্ম দিয়েছেন অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের ও উদ্যোগের।
[caption id="attachment_1048" align="aligncenter" width="788"] iFeri.com SUST Project Fair 2013[/caption]
স্যারের এই সব কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ সুফলভোগী ছিলাম আমরা যারা সাস্টের ছাত্র। ভার্সিটি থেকে বের হবার পর এমন কোন চাকরির ইন্টারভিউ দেইনি যেখানে জাফর স্যার সম্বন্ধে কিছু 'থোক' প্রশ্ন বরাদ্দ থাকতো না। আমার মনে হয়, সে সময়ের কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সাথে শেয়ার করলে আপনারা বুঝতে পারবেন শিক্ষক হিসেবে জাফর স্যার কেমন। জাফর স্যার কোনদিন, কোন একদিন, আমাদের কোন কোর্সের নির্ধারিত ক্লাসে এক মিনিট দেরিতে আসেন নি, হরতাল বা অন্য যেকোন কারণে যে ক্লাসগুলো মিস হত সেই সব ক্লাসগুলো সবসময়ই তিনি মেকাপ করতেন, পরীক্ষায় কখনও কাউকে অন্যায়ভাবে কম বা বেশি দেননি, তাঁর ছাত্রদের মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন করেছেন এমনকি সেটা তাঁর মতের সাথে পরিষ্কার অমিল থাকলেও। স্যারের ঢাকা এবং ক্যাম্পাস, দুই বাসাতেই যাওয়ার সুবাদে জানি কতটা সাদামাটা জীবনে তিনি অভ্যস্ত - এই কথাটা বললাম তাদের উদ্দেশ্যে যারা একসময় অর্থ আত্মসাতের মত অপবাদও স্যারের নামে দিতে দ্বিধা করেনি।
গতকাল স্যার শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পদ ত্যাগ করেছেন। কারণটা অনুমানের বা কানাঘুষোর কোন ফাঁক তিনি রাখেননি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গুচ্ছ-পরীক্ষা পদ্ধতি চালুর যে আন্দোলনে তিনি প্রথম জোরাল পদক্ষেপটি রাখতে পেরেছিলেন যশোর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সাস্টের পরীক্ষা আয়োজন করে সেখান থেকে কর্তৃপক্ষের সরে আসার সিদ্ধান্তই স্যারকে এবং ম্যাডামকে বাধ্য করেছে তাদের সাধের এবং সাধনার প্রতিষ্ঠান থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিতে। গুচ্ছপরীক্ষা হলে কি হয় ? গুচ্ছপরীক্ষা হলে যশোরের বা রংপুরের বা খাগড়াছড়ির বা সিলেটের বা সিলেটের বা সিলেটের বা সিলেটের (বারবার বলছি তাদের জন্য যারা মনে করেন যশোরে মানুষ থাকেন না, যারা একটি সীমান্ত শহর হিসেবে যশোরের গুরুত্ব জানেন না, যারা অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে যশোরের অবস্থান জানেন না, যারা মধুসূদনকে চেনেন না এবং যারা মনে করেন সিলেটের একজন ছাত্রের পক্ষে ইহজীবনে যশোর যাবার কোন সম্ভাবনা নেই তাদের জ্ঞাতার্থে) একজন ছাত্র যেকোন এক জায়গায় (যশোর বা সিলেট) বসে তার পছন্দমত ভার্সিটিতে পরীক্ষা দিতে পারতেন। এর বাইরে এই পদ্ধতির আর কোন অভিনবত্ব বা দুরভিসন্ধি নেই ! কিন্তু যথারীতি এই পদ্ধতি নিয়েও নোংরা আঞ্চলিক রাজনীতির ঘুঁটি চালা হল এবং একটা অন্যায় যুদ্ধে কারো জয় ছাড়াই অসৎ একদল মানুষের প্ররোচনায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষ পরাজয় বরণ করল।
স্যারের যেকোন সিদ্ধান্তের বুঝে-না-বুঝে বিরোধিতা কোন নতুন বিষয় নয়, কিন্তু কাছের মানুষ যখন ময়দান থেকে সরে আসে এবং যুদ্ধশিবির বদলায় তখন কোন আত্মসম্মানবোধ সম্পন্ন মানুষই আর সেনাপতির পদ আঁকড়ে ধরে থাকতে পারেন না। এই প্রস্থানের রক্তক্ষরণ স্যার বা তাঁর শুভানুধ্যায়িদের যতটা আহত করবে এর 'আফটারম্যাথ' তার চেয়ে অনেক বেশি আহত করবে এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এই জনপদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের বাসিন্দাদের।
এই লেখার উদ্দেশ্য মোটেও জাফর ইকবাল বাঙালি জাতির জন্য কেন অপরিহার্য বা তিনি একজন মহাপুরুষ এটা প্রমাণ করা নয়। স্যারের অনেক মত বা আদর্শের সাথে হয়ত আমরা একমত নই কিন্তু তাই বলে নিরপেক্ষ থাকার ভান ধরে এই অন্যায় শক্তির বিজয়োল্লাস এবং অনাচারের প্রতিষ্ঠা দেখা স্যারের একজন প্রত্যক্ষ ছাত্র হিসেবে আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা যারা আম জনতা তারা কিন্তু খুব ভালভাবেই জানি বিবদমান রাজনৈতিক দলগুলো শুধুমাত্র তখনই একমত হতে পারে যখন সেখানে নাগরিক হিসেবে আমাদের সুস্পষ্ট স্বার্থলঙ্ঘন হয় ও তাদের উদ্দেশ্য চরিতার্থ হয়। আমরা আশা করি স্যারের এই পদক্ষেপে সিলেট এবং সাধারণ (অসচেতন) দেশবাসীর বোধোদয় হবে এবং তারা সরকার এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এই বার্তা পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে যে শুধু ভোটের রাজনীতিই এই দেশের শেষ কথা না, আমরা এখন নিজেদের স্বার্থ বুঝি ও সেটা আদায় করে নিতে জানি।
Saturday, November 23, 2013
পাসপোর্ট অফিসের অভিজ্ঞতা (এম.আর.পি পর্ব-২)
আমরা অনেকেই ভাবি দালাল ছাড়া পাসপোর্ট পাওয়া বিরাট মুশকিল। এটা ঠিক যে দালালদের দৌরাত্ম সবসময়েই আছে, কিন্তু আমার মতে দালালকে মানুষ শুধু শুধুই টাকা দেয়। ফর্ম নিজে পূরণ করতে পারলে এবং ব্যাংকে টাকা জমা নিজে দিতে পারলে শুধু শুধু কেন আমি দালালের কাছে গিয়ে টাকা দেবো। দালালকে টাকা দিলেও আপনাকে লাইনে দাড়াতে হবেই। ফর্ম জমা দেয়ার সময় আপনাকেই সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে। আপনার ছবি ও আঙুলের ছাপ নেয়ার ব্যাপারটিতেও দালালের কিছুই করার নেই। তবে কেন দালালের সরণাপন্ন হবেন। তারচেয়ে একটু সময় হাতে নিয়ে, ধৈর্য্য সহকারে নিজেই করে নিন নিজের কাজটা।
গত পর্বে আমরা জেনেছি ফর্ম কিভাবে পূরণ করতে হয়। এবার জানবো পাসপোর্ট অফিসে কি ধরনের অভিজ্ঞতা হতে পারে। ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে (টাকা জমা দেয়া রশিদ সংযুক্ত করা সহ) আপনাকে যেতে হবে আপনার বর্তমান ঠিকানা যেই আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের (আরপিও) আওতায় পড়েছে, সেই অফিসে যেতে হবে।
বাংলাদেশে মোট ৩৪টি আরপিও রয়েছে। আসুন জেনে নেই কোন কোন থানা কোন কোন আরপিও এর অধীনে পড়েছে-
পাসপোর্ট অফিস সমূহ এবং তার অধীনস্থ এলাকা | |||||
ক্রমিক | পাসপোর্ট অফিস সমূহ | অধীনস্থ এলাকা (থানা) | কার্যালয় | ফোন নম্বর | |
১ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, ঢাকা | মতিঝিল, পল্টন, মিরপুর, শেরে বাংলা নগর, শাহ আলী, পল্লবী, কাফরুল, তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রমনা, শাহবাগ, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, হাজারিবাগ, ধামরাই এবং সাভার। | পাসপোর্ট ভবন, ই-৭, আগারগাও, শের-এ-বাংলা নগর, ঢাকা-১২০৭। | ০২-৮১৫৯২৫ | |
২ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, চট্টগ্রাম | কোতয়ালী, পাহারতলী, চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বন্দর, ডবল মুরিং, কর্ণফুলী, খুলশী, হালিশহর, বায়েজিদ বোস্তামী, বাকালিয়া, পতেঙ্গা, মীরসরাই, হাটহাজারী, সীতাকুন্ড এবং রাউজান থানার চট্টগ্রামের অংশ। | মুর্শিদাবাদ, চট্টগ্রাম | ০৩১-২৫৫০০১০ | |
৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুমিল্লা | কুমিল্লা সদর (কোতয়ালী), চান্দিনা, বুড়িচং, দেবীদ্বার, দাউদকান্দী, হোমনা, ব্রাহ্মণপাড়া, মুরাদনগর, মেঘনা, মনোহরগঞ্জ এবং তিতাস থানার কুমিল্লা জেলা অংশ | নোয়াপাড়া, কুমিল্লা | ০৮১-৬৫৭৮৬ | |
৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ময়মনসিংহ | ময়মনসিংহ জেলা | জেলা স্কুল রোড, ময়মনসিংহ | ০৯১-৬৬৩৫৭ | |
৫ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, গোপালগঞ্জ | গোপালগঞ্জ জেলা | চান্দমারী রোড, গোপালগঞ্জ | ০৬৬৮-৫৭০৮৯ | |
৬ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নোয়াখালী | নোয়াখালী জেলা | হাসপাতাল রোড, নোয়াখালী | ০৩২১-৬১৭০৪ | |
৭ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রাজশাহী | রাজশাহী জেলা | হাতেমখান, রাজশাহী | ০৭২১-৭৭২২৪৮ | |
৮ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রংপুর | রংপুর জেলা | রোড-৫, মুলাতলা, রংপুর | ০৫২১-৬৪২৫০ | |
৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিরাজগঞ্জ | সিরাজগঞ্জ জেলা | ০৭৫১-৬২৯০৩ | ||
১০ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, খুলনা | খুলনা জেলা | বাড়ী- ৩৮, রোড- ৫, সোনাডাঙ্গা আ/এ, খুলনা | ০৪১-৭৩২১৪৬ | |
১১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যশোর | যশোর জেলা | নাজির শংকরপুর, যশোর। | ০৪২১-৭৩৫০৭ | |
১২ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, বরিশাল | বরিশাল জেলা | বাঁধ রোড, বরিশাল | ০৪৩১-৬৪৫৪৯ | |
১৩ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট | সিলেট জেলা | বাড়ী- ৫৭, রোড- ০২, ব্লক- ই, শাহজালাল উপশহর, সিলেট | ০৮২১-৭১৪০২২ | |
১৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, হবিগঞ্জ | হবিগঞ্জ জেলা | কোরেশ নগর এলাকা, হবিগঞ্জ | ০৮৩১-৫২৮৯৪ | |
১৫ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুর | ফরিদপুর জেলা | ঝিলতলী, ফরিদপুর | ০৬৩১-৬২৭৮৭ | |
১৬ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চাঁদপুর | চাঁদপুর জেলা | ০৮৪১-৬৬৪৪৭ | ||
১৭ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মানিকগঞ্জ | মানিকগঞ্জ জেলা | ০৬৫১-৫১০১০ | ||
১৮ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মুন্সিগঞ্জ | মুন্সিগঞ্জ জেলা | |||
১৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বগুড়া | বগুড়া জেলা | |||
২০ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, দিনাজপুর | দিনাজপুর জেলা | |||
২১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পাবনা | পাবনা জেলা | |||
২২ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পটুয়াখালি | পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা | |||
২৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মৌলভীবাজার | মৌলভীবাজার | |||
২৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, টাঙ্গাইল | টাঙ্গাইল জেলা | খালেদা মঞ্জিল, হোন্ডিং-২৩৭, পলাশতলী, আকুরটাকুরপাড়া, টাঙ্গাইল। | ||
২৫ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চান্দগাঁও, চট্টগ্রাম | চান্দগাঁও | পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম | ||
২৬ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তরা, ঢাকা। | উত্তরা, এয়ারপোর্ট, গুলশান, বাড্ডা, ক্যান্টনমেন্ট, দক্ষিনখান, উত্তরখান, খিলখেত, আশুলিয়া এবং গাজীপুর জেলা। | বাড়ী- ২৯, রোড- ৭, সেক্টর-১২, উত্তরা, ঢাকা। | ০২-৮৯৬২০৩৯ | |
২৭ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা। | খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা, শ্যামপুর, কদমতলী, গেন্ডারিয়া, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা, কেরানীগঞ্জ দক্ষিন থানা, চক কোতয়ালী, দোহার, নবাবগঞ্জ, সুত্রাপুর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলা। | বাড়ী-৩৬০৫, মুজাহিদনগর, রায়েরবাগ, কদমতলী, ঢাকা। | ০২-৭৫৪২০৩৩ | |
28. | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কিশোরগঞ্জ | কিশোরগঞ্জ জেলা | |||
২৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নরসিংদী | নরসিংদী জেলা | |||
৩০ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফেনী | ফেনী জেলা | |||
৩১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা | |||
৩২ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার | কক্সবাজার জেলা | |||
৩৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, রাঙ্গামাটি | রাঙ্গামাটি জেলা | |||
৩৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুষ্টিয়া | কুষ্টিয়া জেলা | |||
আবেদনকারীরা পাসপোর্ট এর ফি বাবদ টাকাটা জমা দেবেন রাষ্টায়ত্ব সোনালী ব্যাংক এর নির্দিষ্ট শাখায়। চলুন জেনে নেই কোন পাসপোর্ট অফিসের জন্য কোন কোন শাখায় টাকা জমা দেয়া যাবে।
ক্রমিক | বিভাগীয়/আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নাম | নির্ধারিত সোনালী ব্যাংক শাখার নাম | সংখ্যা |
১ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, আগারগাঁও, ঢাকা। | আগারগাঁও, মহাখালী, কলেজগেট মোহাম্মদপুর, আওলাদ হোসেন মার্কেট, বঙ্গবন্ধু আভিনিউ, দিলকুশা, মগবাজার, সেগুনবাগিচা, মালিবাগ ও মিরপুর-১২ শাখা। | ১০টি |
২ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, মনসুরাবাদ, চট্টগ্রাম। | আগ্রাবাদ কর্পোরেট, পাঁচলাইশ ও মিঠাগলী শাখা। | ০৩টি |
৩ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, সিলেট। | সিলেট কর্পোরেট, স্টেশন রোড ও মহাজন পট্টি শাখা | ০৩টি |
৪ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রাজশাহী। | রাজশাহী কর্পোরেট শাখা | ০১টি |
৫ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, রংপুর। | কর্পোরেট শাখা ও কাঁচারী বাজার শাখা | ০২টি |
৬ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, খুলনা। | কর্পোরেট শাখা, খুলনা | ০১টি |
৭ | বিভাগীয় পাসপোর্ট ও ভিসা অফিস, বরিশাল। | কর্পোরেট শাখা, বরিশাল | ০১টি |
৮ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যাত্রাবাড়ি, ঢাকা। | সদরঘাট, খিলগাঁও ও যাত্রাবাড়ি শাখা | ০৩টি |
৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, উত্তরা, ঢাকা। | উত্তরা শাখা | ০১টি |
১০ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চাঁদগাঁও, চট্টগ্রাম। | কোর্টহিল, সদরঘাট, বহদ্দার হাট, পাঁচলাইশ শাখা | ০৪টি |
১১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুমিল্লা। | স্টেশন রোড ও কুমিল্লা কর্পোরেট শাখা | ০২টি |
১২ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নোয়াখালী। | মাইজদী কোর্ট শাখা | ০১টি |
১৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ব্রাহ্মণবাড়িয়া। | প্রধান শাখা, বি বাড়িয়া | ০১টি |
১৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, চাঁদপুর। | প্রধান শাখা, চাঁদপুর | ০১টি |
১৫ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, হবিগঞ্জ। | প্রধান শাখা, হবিগঞ্জ | ০১টি |
১৬ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মৌলভীবাজার | প্রধান শাখা, মৌলভীবাজার | ০১টি |
১৭ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কক্সবাজার। | প্রধান শাখা, কক্সবাজার | ০১টি |
১৮ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, রাঙ্গামাটি। | প্রধান শাখা, রাঙ্গামাটি | ০১টি |
১৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, বগুড়া। | প্রধান শাখা, বগুড়া | ০১টি |
২০ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পাবনা। | প্রধান শাখা, পাবনা | ০১টি |
২১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, সিরাজগঞ্জ। | প্রধান শাখা, সিরাজগঞ্জ | ০১টি |
২২ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কিশোরগঞ্জ। | প্রধান শাখা, কিশোরগঞ্জ | ০১টি |
২৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মানিকগঞ্জ। | প্রধান শাখা, মানিকগঞ্জ | ০১টি |
২৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, টাঙ্গাইল। | প্রধান শাখা, টাঙ্গাইল | ০১টি |
২৫ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ময়মনসিংহ। | প্রধান শাখা, ময়মনসিংহ | ০১টি |
২৬ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, নরসিংদী। | প্রধান শাখা, নরসিংদী | ০১টি |
২৭ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, দিনাজপুর। | প্রধান শাখা, দিনাজপুর | ০১টি |
২৮ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফরিদপুর। | প্রধান শাখা, ফরিদপুর | ০১টি |
২৯ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, গোপালগঞ্জ। | প্রধান শাখা, গোপালগঞ্জ | ০১টি |
৩০ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, কুষ্টিয়া। | প্রধান শাখা, কুষ্টিয়া | ০১টি |
৩১ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, যশোর। | প্রধান শাখা, যশোর | ০১টি |
৩২ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, পটুয়াখালী। | প্রধান শাখা, পটুয়াখালী | ০১টি |
৩৩ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, মুন্সীগঞ্জ। | প্রধান শাখা, মুন্সীগঞ্জ | ০১টি |
৩৪ | আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস, ফেনী। | প্রধান শাখা, ফেনী | ০১টি |
৩৫ | ভিসা সেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, ঢাকা। | ভিসা সেল, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর শাখা, ঢাকা। | ০১টি |
৩৬ | ভিসা সেল, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, চট্টগ্রাম। | ভিসা সেল, হযরত শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর শাখা, চট্টগ্রাম। | ০১টি |
সর্বমোট | ৫৬ টি |
নির্দিষ্ট শাখার কথা এজন্য বললাম যে, সোনালী ব্যাংকের সকল শাখায় পাসপোর্ট এর ফি জমা নেয়া হয় না। তাছাড়া আরপিও অনুযায়ী নির্দিষ্ট শাখায় টাকা জমা দিলে আপনার পাসপোর্ট এর ফি পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ দ্রুত নিশ্চিত হবে যে টাকা সরকারী কোষাগারে জমা পড়েছে। অন্য কোন অনুমোদিত শাখায় টাকা জমা দেয়া হলেও আপনার আবেদন গ্রহন করা হবে, কিন্তু ব্যাংক ফি ভেরিফিকেশন এর বিষয়টা খানিকটা দেরি হবে এবং আপনার পাসপোর্টটি আপনি নির্দিষ্ট সময়ে আপনি নাও পেতে পারেন। তাই নির্দিষ্ট আরপিও-র জন্য সোনালী ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখায় টাকা জমা দিয়ে ভোগান্তি থেকে বাঁচা সম্ভব হয়।
এবার জেনে নেয়া যাক পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে কি ধরনের প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। শুরুতে আপনার ফর্মটি যাচাই করা হবে, অর্থাৎ দ্বিতীয় গেট (তিনটি গেটের মধ্যে মাঝেরটা) দিয়ে ঢোকার পরই একজন সেনা সদস্য আপনার ছবির সাথে আবেদনের ছবি মিলিয়ে দেখবেন এবং ফর্মের পূরণ করার পদ্ধতি সঠিক আছে কিনা দেখে একটি সিরিয়াল নম্বর দিয়ে আপনাকে পাঠিয়ে দেবেন পাসপোর্ট অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার কাছে ফর্মটি চেক করার জন্য।
আপনার ফর্মটিতে উল্লেখিত সকল তথ্য সঠিক কিনা এবং কাগজপত্র সঠিকভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে কিনা দেখবে ওই কর্মকর্তা। এখানে আপনার জাতীয় সনদের মূল কপি, পূর্বের পাসপোর্ট (যদি থাকে) এর মূল কপি দেখতে চাইেব। তাই সেগুলো অবশ্যই সাথে রাখতে হবে। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে তাহলে ওই অফিসার ফর্মটিতে পরবর্তী নির্দেশনা লিখে স্বাক্ষর (সীল সহ) করে পাঠিয়ে দেবেন ছবি তোলার জন্য।
এরপর আপনাকে আরেকজন সেনা সদস্য অারেকটি সিরিয়াল নম্বর বসিয়ে আপনাকে প্রি-এনরোলমেন্ট এর জায়গা দেখিয়ে দেবেন। সেখানে একজন অপারেটর আপনার ফর্মের তথ্য মূল ডাটাবেসে সংযুক্ত করবে। তথ্য সংযুক্ত হবার পর আপনাকে যাচাই এর জন্য একটি প্রিন্ট আউট দেয়া হবে। আপনার তথ্যগুলোর বানান, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, যোগাযোগের নম্বর ভাল করে যাচাই করে নিন সঠিক আছে কিনা, অনেক সময় অপারেটর ভুল করে বসতে পারে, অপনি খেয়াল না করলে ভুলটাই আপনার পাসপোর্টে প্রিন্ট হয়ে যাবে।
এরপর অপারেটর আপনাকে ছবি তোলার নির্দিষ্ট জায়গা দেখিয়ে দেবেন। সেখানে আপনার ছবি তোলা, আঙুলের ছাপ নেয়া এবং ডিজিটাল প্যাডে আপনার স্বাক্ষর নেয়া হবে। ছবি তোলার পর আপনাকে একটা ডেলিভারী স্লিপ দেয়া হবে, যেখানে পাসপোর্ট প্রদানের তারিখ দেয়া থাকবে।
এর কয়েকদিনের মাঝে আপনার সঙ্গে এসবি (পুলিশ) এর প্রতিনিধি যোগাযোগ করবেন, আপনার তথ্য যাচাই করে রিপোর্ট পাঠাবেন পাসপোর্ট অফিসে। রিপোর্টটি পাসপোর্ট অফিসে পৌঁছানোর পর আপনার পাসপোর্টটি প্রিন্ট এর জন্য পাঠানো হবে। ডেলিভারী স্লিপে উল্লেখিত প্রদানের তারিখের আগেরদিন আপনার ফর্মে উল্লেখ করা মোবাইল নম্বরে খুদে বার্তার মাধ্যমে আপনাকে জানানো হবে আপনার পাসপোর্টটি প্রস্তুত। ঐদিন আপনি ডেলিভারী স্লিপটি সহ পাসপোর্ট অফিসের ডেলিভারী কাউন্টারে গিয়ে জমা দিলে আপনার পাসপোর্টটি স্বাক্ষর নিয়ে আপনার কাছে হস্তান্তর করা হবে। ডেলিভারী স্লিপটি সাথে না নিয়ে গেলে আপনাকে পাসপোর্ট দেয়া হবে না, তাই ডেলিভারী স্লিপ অবশ্যই সাবধানে রাখবেন, প্রয়োজনে প্রথম দিনই একাধিক ফটোকপি করে একাধিক নিরাপদ জায়গায় রেখে দিন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যার যার পাসপোর্ট তার নিজেকেই তুলতে হবে। বিশেষ বিবেচনায় প্রতিনিধি পাঠালেও তার হাতে যথাযথ প্রত্যয়ন থাকতে হবে। অন্যথায় হয়রানির শিকার হবার সম্ভাবনা থাকবে।
পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হবার কথা। কিন্তু এর মাঝে যেসব অসুবিধা কিংবা হয়রানি হবার সম্ভাবনা আছে সেগুলো হলো-
১। ফর্ম যাচাই এর প্রত্যেকটা পর্যায়ে দীর্ঘ লাইনে দাড়াতে হবে। একদিনে জমা দেয়া (ছবি তোলা সহ) হয়ে যাবার কথা থাকলেও অনেক সময় এটা সম্ভব হয় না, অতিরিক্ত ভীড়ের কারনে। এখানেই দালালদের সাথে আপনাদের দেখা হবে। তারা লাইন ভেঙ্গে আপনাকে সামনের দিকে পৌঁছে দিতে চাইবে, টাকার বিনিময়ে অবশ্যই। কিন্তু এক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের দ্বারা আরো বেশি হয়রানির শিকার হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর বেশ কিছু অসাধু সদস্য এই লাইন বিষয়ক দূর্নীতির সাথে জড়িত। এখানে আপনাকে ধৈর্য্য রাখতে হবে।
২। ফর্মের যে কোন জায়গায় কোনরকম ভুল বা কমতি থাকলে আপনাকে আবার তা সংশোধন করে লাইনের পেছন থেকে শুরু করতে হতে পারে। এক্ষেত্রে সেখানে অবস্থিত কর্মকর্তাগন আপনাকে ছাড় কতটা দেবেন তা বলা কঠিন।
৩। পনের বছরের নিচে আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে অবশ্যই বাবা-মা একজনকে উপস্থিত থাকতেই হবে, অন্য কোন অভিভাবক (চাচা, মামা, ভাই, বোন) থাকলেও ফর্ম জমা নেয়া হবে না। বাবা-মা জীবিত না থাকলে কিংবা দেশে উপস্থিত না থাকলে যথাযথ অভিভাবক উপস্থিত থাকতে পারবে।
৪। বিবাহিত নারীদের ক্ষেত্রে স্বামী সহ ফর্ম জমা দেবার দিন আসতে হবে, তাদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় কাবিন-নামা দেখতে চাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ডিভোর্সীদের ক্ষেত্রে যথাযথ কাগজ সংযোজন করতে হবে।
৫। পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় পুলিশ কর্মকর্তার মর্জি অনুযায়ী ব্যাবস্থা নিতে হবে, এই ভেরিফিকেশন রিপোর্টটি অনুকূলে না হলে আপনার পাসপোর্ট প্রিন্ট হবে না, অর্থাৎ আপনাকে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে না। এমনকি পাসপোর্ট অফিসে নির্দিষ্ট সময়ে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট যেতে দেরী হবার কারনে অনেক পাসপোর্ট নির্দিষ্ট দিনে প্রদান না করতে পারার ঘটনাও অনেক ঘটেছে। ব্যাক্তিবিশেষে ডেলিভারীর তারিখের তিনদিন, সাতদিন, একমাস, দুই মাস এমনকি বছরখানেক পরেও পাসপোর্ট হাতে পাবার ব্যাপার ঘটেছে। সুতরাং বাস্তবতা মেনে নিয়ে বুদ্ধিমান ব্যাক্তি ভেরিফিকেশনের জন্য আসা কর্মকর্তার ইশারা বুঝবেন, হয়রানি কম হবে।
উপরোক্ত সব হয়রানিগুলো যে আপনার ক্ষেত্রেও ঘটবেই এমন কোন কথা নেই, সঠিক নিয়মে আবেদন করলে এবং ধাপগুলোর অসুবিধার কথা মাথায় রেখে (মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে) আবেদন করে ফেলুন, অনেক অসম্ভবের দেশে আপনার পাসপোর্টটিও যথা সময়ে, বিনা হয়রানিতে পেয়ে যেতেও পারেন। আপনার জন্য শুভ কামনা।
Friday, November 22, 2013
আততায়ী অতঃপর
পর্ব ১
মর্গ। হিম শীতল কক্ষ টির এক প্রান্তে একটি দেহ। রক্তাক্ত, বিকৃত, ক্ষতবিক্ষত। নীল জিন্স, সাদা শার্ট। শার্ট টিতে জমে থাকা রক্ত খয়েরি রঙ ধারণ করেছে। লাশ। হ্যাঁ, লাশ। রক্তাক্ত, বিকৃত, ক্ষতবিক্ষত লাশ। লাশ টি সাদা কাপরে ঢেকে দেবার প্রয়োজন কেউ বোধ করেনি। না। পরনে সাদা শার্ট সেই কারণে নয়। সাদা শরীর, যা হিম শীতল কক্ষে আরও শুভ্র হয়ে উঠেছে সেই কারণেও নয়। বে ওয়ারিশ লাশ, সেই কারণেও নয়। বে ওয়ারিশ লাশ ও মর্যাদার সাথে দাফন করা হয়।
আচ্ছা, এই লাশ টা কি দাফন করা হবে?? মৃত্যুর পূর্বেও যে সুদর্শন এক যুবক ছিল। হয়ত তার জন্যে কোনও প্রিয়া অপেক্ষা করে বসে আছে! হয়ত মা পথ চেয়ে বসে আছে। কেও কি তাদের জানিয়েছে? হয়ত জানায়নি।
লাশ টির ভবিষ্যৎ কি হবে?? এ ধরণের লাশ এর কি হয়?? রক্তাক্ত, বিকৃত, ক্ষতবিক্ষত লাশ...... হয়ত বিকৃত এই লাশ টি কঙ্কালে পরিণত হবে, স্থাণ পাবে কোন মেডিকেল শিক্ষার্থীর কক্ষে।
লাশ টি দাফন হবেনা...... তার গায়ে জরাবে না কাফনের কাপড়। কেউ নিবে না লাশের দায়িত্ব। টিভি তে খবর শুনে হয়ত তার বাবা মা ছুটে আসবে লাশের সন্ধানে, হয়তবা আসবে না। আসলেও পাবে না লাশ। আচ্ছা ওর বাবা মা কি বেঁচে আছে??
বাবা মা যদি বেঁচে না থাকে তবে?? কোনও আত্মীয় কি আসবে লাশের খোঁজে??
এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টাও কেও করেনি।
কেন করবে?? কে ও?? ও তো কথাই বলতে পারেনা। লাশ তো কথা বলেনা। রক্তাক্ত, বিকৃত, ক্ষতবিক্ষত লাশ।
আততায়ীর লাশ। তার শার্ট এর বুক পকেট বরাবর একতা ছিদ্র। হৃদয় টা ক্ষতবিক্ষত বুলেটের আঘাতে। থেমে গেছে তার স্পন্দন।
হিম শীতল কক্ষ টির এক প্রান্তে একটি দেহ। রক্তাক্ত, বিকৃত, ক্ষতবিক্ষত। আততায়ীর মৃতদেহ।
পর্ব ২
গলি। নির্জন, নীরব।
১১/৩, আসাদ স্ট্রিট,
গলি টা যেন একটু বেশিই স্তব্ধ। আলোক স্বল্পতা গলিটাকে একটু বেশিই ভৌতিক করে ফেলেছে। মৃদু আলো ঘন ছায়ার খেলা যেন সর্বদাই গলি জুড়ে। দিনেও সূর্যের আলো পৌঁছাতে পারেনা আশেপাশের বাড়ীগুলোর সুবিশাল বৃক্ষের কারণে। স্যাঁতস্যাঁতে মাটি। গলির পাশের দেয়াল গুলোয় জমে থাকা শেওলা, মস গুলো যেন ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এর বিশেষত্ব প্রকাশ করে।
নির্জন, নিরব, স্তব্ধ ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট...
১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এ মোট ১১টি বাড়ি। মফস্বল এর প্রায় গলি গুলোই এমন হয়ে থাকে। নিরব, নির্জন, একটু বেশিই স্তব্ধ যেন। বড় শহরে বেরে ওঠা মানুষের কাছে এই গলি গুলো যেন একটু বেশিএ রহস্যময় ঠেকে। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এর ৩ নম্বর বাড়িতে আসাদ সাহেব থাকেন।
না, এই আসাদ সাহেবের নাম এ গলির নামকরন করা হয়নাই। গলি তে ১১ টি বাড়ি, ৩ নম্বর বাড়িতে আসাদ সাহেব থাকেন সেই কারণেও এটি ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট নয়। কিন্তু কেমন যেন অদ্ভুত একতা মিল। এতটা মিল সচরাচর চোখে পড়ে না।
১১/৩/২০১৩। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট। সময় রাত ১১টা ৩০।
নিরব, নির্জন, স্তব্ধ গলি টা কিছু সময়ের জন্যে আর নিরব রইল না। কোলাহল। মানুষে পরিপূর্ণ। নিরব গলিটাতে তিল ধারনের জায়গা নেই। উৎসুক মানুষের দৃষ্টি খুব অদ্ভুত। চোখে কিসের যেন অজানা ভীতি। কিছু জানার আশায় এদিক সেদিক তাকায়। বাতাসে নানা গুঞ্জন রটে, পাড়ার মহিলারা রঙ চং লাগিয়ে পুরো ঘটনার দৃশ্যপট ই পালটে ফেলে... তাদের আর কোনও কাজ নেই যেন...।
নিরব, নির্জন, স্তব্ধ গলি টা লোকে লোকারণ্য। সবুজ দেয়ালে লাল রঙ এর ছোপ। উৎসুক মানুষের অদ্ভুত দৃষ্টি.........
পর্ব ৩
আদ্রি, নম্র, ভদ্র, সুশীল একজন মেয়ে। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এর ৪ নাম্বার বাড়িতে থাকে।
১১/৩/২০১৩, আজকের এই দিন টা অন্য সব দিনের মতো ছিল না। অন্তত আদ্রি এর জন্য তো নয় ই। নীল আজ ওদের বাড়িতে আসবে। আদ্রির বাবা ছেলেটার সাথে কথা বলতে চেয়েছে। আদ্রির মনে কোনও এক অজানা ভয় কাজ করছে। আচ্ছা, ভয় কিসের?? পাঁচ বছরের প্রেম। নীল আর আদ্রি। ওরা একে অপরকে অসম্ভব রকম বেশি ভালবাসে। নিলাদ্রি। সন্ধি বিচ্ছেদ করে নিলাদ্রি শব্দটিকে কে আলাদা করা যায় হয়ত... কিন্তু নিলাদ্রির অফুরন্ত ভালবাসা... ওটা পারমাণবিক বোমার আঘাতেও যে ভাঙার নয়, তা শুধু বন্ধুমহল কেন?? নিলাদ্রির বাবা মার ও অজানা ছিলনা।
তবে আদ্রির এত ভয় লাগছে কেন?? মনে নানা খেয়াল জেগে উঠছে। চিন্তিত হতে পারে, উদ্বিগ্ন হতে পারে, কিন্তু এত ভয় কিসের??
নীল আসাদ স্ট্রিট এর বাসিন্দা নয়। ও অন্য একটা মহল্লায় থাকে। ভাল ছেলে। চাকরি তে ঢুকেছে সম্প্রতি। বাবা মার একমাত্র সন্তান। মা বাবার আর্থিক অবস্থা যে খুব ভাল ছিল তা নয়। নীল একটা প্রাইভেট ফার্ম এ ঢুকেছে। বেতন বেশ ভালই।
আদ্রির মনে বিচিত্র খেয়াল জেগে উঠছে। নীল জিন্স, সাদা শার্ট এ নীল কে কেমন লাগবে?? আদ্রি কয়েক দিন আগে নীল কে গিফট করেছিল নীলের জন্মদিনে।
হঠাত আদ্রির ফোন বেজে উঠল। হ্যাঁ, নীলেরই ফোন। ও আসতে পারবেনা আজ। এক বন্ধুকে রক্ত দিতে যেতে হবে...... ফিরতে ফিরতে দেরি হবে। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এ পৌঁছাতে রাত ১১টা বেজে যাবে। কিছু সময় নীরবতা।
হঠাত আদ্রি রেগে গেল। আশ্চর্য। হঠাত ও এতটা রেগে গেলো কেন?? হ্যাঁ, রাগার হয়ত যথেষ্ট কারণ আছে কিন্তু...... নীলের তো কোনও দোষ নেই...।
আদ্রি ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করলো। ও নীল কে অসম্ভব রকম ভালবাসে। ১১/৩/২০০৮, ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এই প্রথম পরিচয় ওদের। তারপর কেটে গেছে ৫টি বছর। আর মাত্র ৩৬৫ দিন। ২০১৪ তে আদ্রির এম বি বি এস কমপ্লিট হবে। ১১/৩/২০১৪ তে ওরা বিয়ে করবে।
নীল আদ্রি কে কষ্ট দিতে চায়নি। আদ্রির কান্না শুনে ওর খুব খারাপ লাগছিল।নম্র,ভদ্র, রাজকন্যার মতো মেয়েটা, কেমন বাচ্চার মতো কাঁদছে...।।
পর্ব ৪
আসাদ সাহেবের ছেলে আরমান। সিডনি থাকে। সিডনি থাকে বলতে, সিডনী তে ছিল। দেশে ফিরে এসেছে। আজকাল বিদেশ গিয়ে কেও ফিরে আসতে চায় না। বাংলাদেশে কি হবে?? শিক্ষার মর্যাদা নেই, শিক্ষিতের চাকরি নেই। রাজনৈতিক অরাজগতা। এই কারণেই দেশ ছেড়েছিল আরমান।। কিন্তু মন টিকলোনা। নাড়ির টান হোক কিংবা নারীর টান, ও দেশে ফিরে এসেছে ৭ তারিখে।
সিডনি তে ভালোই চলছিল তার। অনেক টাকা করেছে। এই টাকা দেশে বিনিয়োগ করবে সে। নিজের একটা ফার্ম খুলবে। ভার্সিটির পুরনো কতগুলো বন্ধু মিলে। বন্ধুরা সবাই কমবেশি প্রতিষ্ঠিত।
কিন্তু ওই যে, আমাদের বাংলাদেশ। যেখানে পতিতালয়, মাদকের আখরা খুলতে অনুমতির দরকার হয়না, ভাল কিছু করতে গেলেই সরকারের যত পেটের পীড়া। এইসব নিয়েই ব্যাস্ত ছিল আরমান। কাজের কাজ কিছুই হল না। তাই আপাতত ক্ষান্ত দিয়ে আরমান নারীর টানে মনোনিবেশ করলো।।
মিথিলা আরমানের ৩ বছরের জুনিয়র। মিথিলা ইন্সপেক্টর রহমান সাহেবের মেয়ে। বাড়ি নাম্বার ৯, ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট। ওদের বিয়ের কথাবারতা চলছে। আরমান দেশে ফিরে আসায় মিথিলা যেন দেহে প্রান ফিরে পেল। আরমান যেদিন সিডনি চলে যায়, সেদিন মিথিলা নীরবে যে চোখের পানি ঝরিয়েছে তা আর সবার দৃষ্টি এড়ালেও মিসেস আসাদ তা ঠিক এ খেয়াল করেছেন।
মিথিলার মা মারা যায় তার জন্মের ৩ বছর পরেই। মিসেস আসাদ মিথিলাকে আজিবন নিজের মেয়ের মতই আগলে রেখেছেন। মিথিলা আরমানের মা রোকেয়া রহমানাকে মা বলেই ডাকে। এই নিয়ে ছোটবেলায় দুজনের সে কি ঝগড়া।
ছোটবেলার সেই ঝগড়া প্রেমে পরিনত হতে খুব বেশি সময় লাগলো না। রোকেয়া রহমানা খুব খুশিই হয়েছিলেন।
১১/৩/২০১৩, হঠাত জরুরি দরকারে আসাদ সাহেব এবং মিসেস আসাদ কে গ্রামে যেতে হল। মিথিলা ও সঙ্গে গেলো। আরমান যেতে পারল না কারণ তার কিছু কাজ পড়ে গিয়েছিল।
রাত ১১টা। হঠাত টিভি তে এক মরমান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ শুনে আরমান অনেক বিচলিত হয়ে উঠলো। মিথিলা, আসাদ সাহেব, রোকেয়া রহমানা কাউকেই পেল না ফোনে। পরনে থাকা সাদা শার্ট আর নীল জিন্স টা পরেই বেরিয়ে গেলো।
পর্ব ৫
একদিন ডিঊটি শেষ করে বাড়ি ফিরলেন ইন্সপেক্টর রহমান। আজ যেন খুব বেশিই বিদ্ধস্ত লাগছে তাকে। মিথিলা এগিয়ে এল। অনেক দিন হয়ে গেলো বাবার সাথে ঠিক মতো কথাই হয়না। আজ কেন জানি বাবাকে খুব অসহায় লাগছে। টিভি তে খবর হচ্ছিল, ক্রসফায়ার এর খবর। রহমান সাহেব হঠাত ই যেন রেগে গেলেন।
মিথিলার মা মারা যাওয়ার পর তিনি আর বিয়ে করেন নি। তাকে দেখে বুঝার ই উপায় নেই তিনি ২৪ বছর বয়েসী এক মেয়ের বাবা। দুর্দান্ত, অকুতোভয় এক পুলিশ অফিসার। দায়িত্বে অবহেলা করেননি কোনোদিন। পুরস্কার ও পেয়েছেন অনেক। কিন্তু কোনও এক কারণে তিনি নিজেকে ক্ষমা করতে পারেন নি কোনোদিন।
১১/৩/২০১৩।
মিথিলা বাড়িত নেই। আসাদ সাহেব দের সাথে উনাদের গ্রামের বাড়িতে। মিসেস আসাদ এর ঋণ তিনি কোনোদিন শোধ করতে পারবেন না। মা মরা মেয়েটাকে মিসেস আসাদ যেভাবে নিজের মেয়ের মতো আগলে রেখে মানুষ করেছেন তা সত্যিই অতুলনীয়। রহমান সাহেব চিরকৃতজ্ঞ থাকবেন আজীবন।
পুলিশ এর উনিফরম টা আজ পরেন নি। আজ ডিউটি বলতে এক মন্ত্রি এসেছে শহরে। তার ই নিরাপত্তার জন্যে শহরের সব পুলিশ নিয়োজিত। তার ই তত্ত্বাবধায়নে ছিলেন তিনি। এইসব কাজ তিনি অত্যন্ত ঘৃণা করেন। শহরের সব পুলিশ একজনের পিছে বাস্ত আর ঐদিকে সারা শহরের নিরাপত্তার কোনও খবর নাই। মিথিলা শখ করে বাবাকে এক সাদা শার্ট কিনে দিয়েছিল। ওটা পড়েই আজ গিয়েছিলেন। অসাধারণ লাগছিল তাকে সাদা শার্ট এ।
মন্ত্রি ফিরে গেলো ১০টার দিকে, তিনি আর বেশি দেরি করলেন না। খুব ক্লান্ত লাগছিল তার... এমনটা তো কখনও হয়নি... বাড়ি ফিরে মেয়েটাকে দেখতে পারবেন না ভেবে তার কেমন যেন লাগছিল।
অদ্ভুত কোনও কারণে তার আজ কিছুই ভাল লাগছিল না। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এ পৌঁছালেন, রাত তখন ১১টা...।
পর্ব ৬
ইয়াশ। তাজ এর ছোটো ভাই। তার দৃষ্টিতে যেন চৈত্রের রোদ। প্রতিশোধ এর আগুন তার চোখে। নাহ, আগে তো ও এমন ছিল না। তাজ এর মৃত্যুটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। অস্বাভাবিক মৃত্যু, অকাল মৃত্যু...।
তাজ এর তো কোনও দোষ ছিল না, ওকে কেন মরতে হবে?? ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে তাজ। অস্বাভাবিক নিষ্ঠুর মৃত্যু!! মৃত্যু একটি চরম বাস্তবতা। সবাইকেই মরতে হয়! কিন্তু, অকাল মৃত্যু, খুবই মর্মান্তিক।
চৈত্রের রাত! লোডশেডিং! অসহনীয় গরম। পরদিন পরীক্ষা। পড়ছিল। ক্লান্ত। বাইরে যাবে। একটু হেটে আসবে। গেলো। বাড়ি থেকে বের হল।
হঠাত কোলাহল। দৌড়াদৌড়ি। গুলির শব্দ। আর্তনাদ। নীরবতা।
তাজ আর ফিরতে পারল না!
মৃত্যু! অকাল! অস্বাভাবিক! মর্মান্তিক! নিষ্ঠুর!!
রহমান সাহেবের কোনও দোষ ছিল না। নিয়তি! দাগি আসামি। পালাচ্ছে! গুলি ছুরল! তাজ কত্থেকে যেন মাঝে চলে এল। কিছু বুঝে উঠার আগেই!!
নিষ্ঠুর! নিয়তি খুব নিষ্ঠুর!!
১১/৩/২০১৩।
কিছু একটা করবেই ও! ভাইয়ের মৃত্যু টা ওর জীবন টাই যেন পালটে দিল! আজ তাজের জন্মদিন!!
ভাইয়ের জন্যে ও একটা সাদা শার্ট কিনেছিল। তাজ এর সাদা রঙ খুব প্রিয়। তাজ নেই!! ইয়াশ শার্ট টা পরে নিল। সাথে প্রিয় নীল জিন্স টা।
আজ কিছু করবেই ও। ওকে করতেই হবে!
আজ ও নিষ্ঠুর, ও নির্মম। দূর্বার। অপ্রতিরোধ্য। প্রতিশোধ! দৃষ্টিতে তার চৈত্রের রোদ। ঝলসে দিবে সবকিছু!!
শেষ পর্ব
গলি। নির্জন, নিরব।
১১/৩ আসাদ স্ট্রিট।
আদ্রির কান্না নীলের সহ্য হয়নি। ওকে কষ্ট দিতে পারেনি। চলে এল। আদ্রি কে চমকে দিবে ও। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট এর ৩ নাম্বার বাড়ি টা। আচ্ছা! আদ্রিকে দেখতে খুব ইচ্ছে করছিল ওর। কাঁদলে আদ্রি কে অস্বাভাবিক রকম সুন্দর লাগে। ১১ টা বেজে গেলো।
রহমান সাহেব কে বাড়িতে না পেয়ে আরমান দৌড়ে বেরিয়ে গেলো!! কোথায় যাবে ও?? কিছুই বুঝতে পারছে না! উদ্বিগ্ন! চিন্তিত!
রহমান সাহেব ১১ টায় আসাদ স্ট্রিট এ পৌঁছালেন! আজ যেন খুব বেশিই ক্লান্ত উনি!
ইয়াশ গলির কাছেই অপেক্ষা করছিল! কোত্থেকে যেন একটা পিস্তল আর ৬ রাউন্ড গুলি যোগাড় করেছে। আচ্ছা ও তো এমন ছেলে না!! ওর হাতে অস্ত্র মানায় না!
১১/৩ আসাদ স্ট্রিট! ৪ জন মানুষ মুখোমুখি। অস্ত্র। কোলাহল! ধস্তাধস্তি! লোড শেডিং! অন্ধকার! কয়েকটি গুলির শব্দ। অস্পষ্ট চিৎকার।
নীরবতা। ১১/৩ আসাদ স্ট্রিট খুব বেশিই নিরব যেন!!
পরিশিষ্ট
গল্পের ১ম পর্বে মর্গে যে মৃতদেহ টার কথা বলা হয়েছে তা যে কারোই হতে পারে!!
গল্পের ৪ টি চরিত্রের একটি! অথবা নিছক ই কোনও আততায়ীর মৃতদেহ!!
শেষ পর্ব টা আমি ইচ্ছা করেই অস্পষ্ট, অগোছালো এবং অসম্পূর্ণ আমি বলতে চাই না! আপনারাই সাজিয়ে নিন সমাপ্তি টা।
Thursday, November 21, 2013
Update on SSA-iFeri Science based Article and Sci-Fi Writing Competition 2013
to know more, feel free to contact
Istiyak (01710312915)
Joy (01937081660)
Sunday, November 17, 2013
একজন সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ যেভাবে তার স্মার্টফোনটিকে নিরাপদে রাখেন
অ্যালাবামা বিশ্ববিদ্যালয়-বার্মিংহামের SECuRE & Trustworthy Computing Lab (SECRET Lab) এর পরিচালক সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রাগিব হাসান, পিএইচডি; নিজের ফোনটির নিরাপত্তার খাতিরে কিছু ধাপ অনুসরণ করে থাকেন।
কম্পিউটার ও তথ্য বিজ্ঞান বিভাগের এই সহকারী অধ্যাপক বলেন, বেশিরভার মানুষই নিজের স্মার্টফোনটির নিরাপত্তার জন্য সেরা পথটি অনুসরণ করেন না।
রাগিবের মতে, “আপনার স্মার্টফোনটি আর পাঁচটি ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রের চাইতে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ। একটি পাসকোড দিয়েই অনেকটা সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হলেও আমাদের অনেকেই এ বিষয়ে তেমন গা করেন না।”
যেহেতু খুব সহজেই ফোনের সেটিং অংশে গিয়ে পাসওয়ার্ড সেট করা যায় সেহেতু যারা এখনও পাসওয়ার্ড বসান নি তাদেরকে দ্রুত এটি বসানোর পরামর্শ দেন তিনি। কেননা, অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ব্যক্তির হাতে পড়লে এই ফোনটি থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল কিংবা ব্যক্তিগত ছবি সহজেই হাতিয়ে নেয়া সম্ভব।
তিনি বলেন, “এমনকি ঐ দুর্বৃত্ত যদি আপনার ইমেইলে প্রবেশাধিকার পেয়ে যায় তাহলে সে অতি সহজে আপনার ডিজিটাল জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিতে পারে”।
স্বীয় তথ্যের সুরক্ষার জন্য জনাব হাসান আরো ক’টি পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো নিম্নরূপ:
- কখনোই পাবলিক ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বিল পরিশোধ করা বা ব্যাংকিংয়ের কাজ করা যাবে না। কারণ, এর মাধ্যমে আপনাকে টার্গেট করতে খুব সুবিধা হয় সাইবার অপরাধীদের। বাসায় নিজস্ব ওয়াই-ফাই ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু তবুও ম্যালওয়্যারের ভয় থেকেই যায়। এই ম্যালওয়্যারগুলো আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ কোনো অ্যাপ বা মজার কোনো গেইমের মাধ্যমে আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে এবং আপনার অজান্তেই সব তথ্য সংরক্ষণ করে পাঠিয়ে দিতে পারে অপরাধীদের ডেরায়।
- স্পর্শকাতর বা ব্যক্তিগত গোপণীয় বিষয় নিয়ে কথা বলতে হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করে ল্যান্ডফোন ব্যবহার করাই শ্রেয়।
- ভয়েজ ফিশিং বা ভিশিং এর হাত থেকে সতর্ক থাকতে হবে। অপরাধীরা ব্যাংক বা ক্রেডিট কার্ড কোম্পানির কর্মকর্তা সেজে ফোন করে আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট কার্ড বা সামাজিক নিরাপত্তা কার্ডের নাম্বার চেয়ে বসতে পারে। মানুষ এখন ফিশিং ইমেইলের সাথে যথেষ্ঠ পরিচিত। ইমেইলের স্প্যাম ফিল্টারও এসব ক্ষতিকর মেইলের অধিকাংশকে আটকে দিতে সক্ষম। ফোনের ক্ষেত্রে কিন্তু কোনো ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই। হাসান সেলফোনে কখনোই এসব তথ্য শেয়ার না করতে পরামর্শ দেন। প্রয়োজন হলে কোম্পানির গ্রাহক সেবা বিভাগের মূল নম্বরে ফোন করুন। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে অপরাধীরা আপনাকে ফোন করতে পারে কিন্তু আপনার হবে যেন স্থানীয় প্রতিষ্ঠান থেকেই কল এসেছে।
- ব্যবহারের পর মনে করে ইমেইল অ্যাকাউন্ট, ফেসবুক বা টুইটার থেকে লগ আউট করুন কিংবা স্মার্টফোনের টাইম আউট অপশন চালু করে রাখুন। “কেউ যদি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে তাহলে সে আপনার পরিচয়ের আড়ালে থেকে ফেইক অ্যাকাউন্ট চালাতে পারে কিংবা আপনার বন্ধুতালিকার সকলের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছুও পাঠিয়ে দিতে পারে। হাসান মনে করেন, “এই অপরাধীরা সত্যিকার অর্থেই অনেক ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম”।
- ফোন বিশেষ করে অ্যানড্রয়েড ফোন ব্যবহারের সময় অস্বাভাবিক কোনো কার্যকলাপ চলছে কিনা সেদিকে নজর রাখুন। অস্বাভাবিক কাজগুলো কিন্তু ম্যালওয়্যারের ফল। এ ম্যালওয়্যারগুলো আরো সহজে পিসিতে প্রবেশ করতে পারে। জনাব হাসান আরো বলেন, “আপনার ফোনের চার্জ যদি খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাওয়া শুরু করে তাহলে এমনও হতে পারে যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত অ্যাপ আপনার অজান্তেই ফোনে চলছে এবং আপনার তথ্য পাচার করে দিচ্ছে। এরকম হলে ফোন রিসেট করতে পারেন কিংবা ফোন কোম্পানির সহায়তা নিতে পারেন”।
- কোনো ব্যবসায়ে মোবাইল পেমেন্টের সুযোগ যদি থেকেও থাকে তবুও কোনো কর্মচারীকে আপনার ফোন নিয়ে চোখের আড়াল হতে দেবেন না।
- কখনোই ফোনের ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট যেমন- ড্রাইভার লাইসেন্স বা পাসপোর্টের স্ক্যানড কপি রাখবেন না।
- ফোনে রিমোট ট্র্যাকিং এবং ওয়াইপিং টুল ইনস্টল করে রাখতে হবে যেন মোবাইল হারিয়ে গেলে ট্র্যাক করা যায় এবং প্রয়োজনে দূর থেকেই ভেতরে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট মুছে ফেলা যায়।
- কফিশপ বা বিমানবন্দরের মতো অরক্ষিত গণওয়াই-ফাই নেটওয়ার্কে যেন আপনার ফোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে যোগাযোগ স্থাপন করে না ফেলে সে ব্যবস্থা সর্বদা চালু রাখুন।
- মোবাইল ফোনের উপযোগী সাইটগুলো ব্রাউজ করার সময় সতর্ক থাকুন। মোবাইল ফোন থেকে ভিজিট করার সময় ভিজিটরদের সুবিধার্থে নামকরা প্রয়োজনীয় ওয়েবসাইটগুলো মূল সাইটের মতো দেখতে না হয়ে সাধারণত একটু ভিন্ন চেহারার হয়ে থাকে। আর মানুষও সেজন্য সাইটগুলো ভিন্ন চেহারার হলে সন্দেহ করে না। সেই সুযোগে অপরাধীরা আসল সাইটের মতো করে ভুয়া সাইট বানিয়ে রাখে। আর ফোনের ছোট স্ক্রিনে অনেক সময়েই আসল এবং নকলের সূক্ষ্ম পার্থক্য ধরা যায় না।
সবশেষে রাগিব হাসান পরামর্শ দেন, “এ বিষয়গুলো অবশ্যই আপনার পরিচিত ব্যক্তিদের সাথে শেয়ার করুন যাতে তারা নিরাপদে থাকতে পারে। এমনকি চৌকস ব্যক্তিরাও আজকাল এ ধরণের স্প্যাম বা স্ক্যামের ফাঁদে পা দিচ্ছেন। এর কারণ একটাই। অপরাধীরা দিন দিন আরো চৌকস হয়ে উঠছে”।
মূল রচনা: কেলি হিউয়েট টেইলর
ইংরেজি থেকে ভাষান্তর: আহ্মদ ইকরাম আনাম
লেখা ও ছবি ইউনিভার্সিটি অভ অ্যালাবামার নিউজ সাইট থেকে সংগৃহীত
মেশিন রিডেব্ল পাসপোর্ট (পর্ব-১)
[caption id="attachment_910" align="aligncenter" width="691"] Download MRP Application Form[/caption]
এবার আসা যাক ফর্ম পূরণ করার সঠিক পদ্ধতি বিষয়ে। ফর্মটি অবশ্যই ইংরেজীতে ক্যাপিটাল লেটারে পূরণ করতে হবে। শুধুমাত্র বাংলাতে লিখতে বলা যায়গায় বাংলা লেখা যাবে। ফর্ম পূরণের আগে ফর্মের শেষ পাতায় উল্লেখিত নির্দেশনাটি পড়ে নিন, এতে পূরনের ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
[caption id="attachment_911" align="aligncenter" width="768"] Instructions[/caption]
ধরা যাক আপনার হাতে একটি ফর্ম আছে চলুন পূরণ করার চেষ্টা করি।
১. ফর্ম এর উপরে যে ছবি দেবার ঘর আছে তাতে আপনার একটি পাসপোর্ট সাইজের রঙ্গীন ছবি (সাইজটি ফর্মে উল্লেখ আছে) অবশ্যই আঠা দিয়ে আটকাবেন, স্ট্যাপলার করা হলে বাতিল হয়ে যাবে। ডানপাশে পিতা-মাতার ছবি দেবার কথা দেখে বিভ্রান্ত হবেন না। কেবলমাত্র পনের বছরের নিচে যারা তাদের ক্ষেত্রে পিতা-মাতার স্ট্যাম্প সাইজের ছবি আঠা দিয়ে আটকাতে হবে।
[caption id="attachment_912" align="aligncenter" width="768"] Attach Photo[/caption]
২. আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নাম ইংরেজীতে (ক্যাপিটাল লেটার) লিখুন। আবেদনের প্রকৃতি এর জায়গায় যথাযথ টিক চিহ্ন দিন। আবেদনেরকৃত পাসপোর্টের প্রকৃতি আপনি যদি কূটনৈতিক কিংবা সরকারী কর্মচারী না হন তাহলে সাধারন-এ টিক দিন। পাসপোর্ট বিতরনের প্রকৃতি এর জায়গায় আপনার পছন্দের ধরনে টিক দিন, মনে রাখবেন, সাধারণ পাসপোর্টের ফি তিন হাজার টাকা এবং জরুরী পাসপোর্টের ফি ছয় হাজার টাকা।
৩. ১ নম্বর ঘরে আবেদনকারীর নাম বাংলাতেই লিখুন। ২ নম্বর ঘরে নামটা ইংরেজী লিখুন। এখন ৩ নম্বর ঘরে প্রথম অংশ হিসেবে আপনার নামটি লিখুন (গ্যাপ ছাড়া, প্রতি ঘরে একটি করে শব্দ) এবং দ্বিতীয় অংশে বংশনাম বা সারনেম লিখুন (নামটি যদি আশিকুর রহমান হয় তাহলে প্রথম অংশে – আশিকুর, দ্বিতীয় অংশে – রহমান) যদি আপনার নাম দুই এর অধিক অংশ যুক্ত হয় তাহলে শুধু টাইটেল দ্বিতীয় অংশে লিখুন (আফজাল হোসেন খান, প্রথম অংশ – আফজাল হোসেন, দ্বিতীয় অংশ – খান)। প্রথম অংশে নামের দুই অংশের মাঝে একটি ঘর ফাকা রাখতে হবে (অবশ্যইইংরেজীতেএবংক্যাপিটালে)।
[caption id="attachment_913" align="aligncenter" width="768"] Part 3 of he Form[/caption]
৪. এরপর ৭ নম্বর পর্যন্ত যথাযথভাবে ইংরেজীতে (অবশ্যই ক্যাপিটালে) পূরণ করুন।৮ নম্বরে টিক দিন আপনার বৈবাহিক অবস্থার ঘরে। ৯ নম্বর ঘরে আপনার পেশা লিখুন। আপনি সরকারী চাকুরিজীবী হলে কিংবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরিজীবী হলে এর বর্ধিতাংশটিও পূরণ করুন। এরপর ১০ নম্বর থেকে ২১ নম্বর পর্যন্ত যথাযথ তথ্য লিখুন এবং টিক চিহ্ন দিন। ২২ নম্বর ঘরে একজনের রেফারেন্স দিন যে আপনার আত্মীয় এবং জরুরী প্রয়োজনে তার সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব। (বড় ভাই, বোন, চাচা, মামা যে কেউ)
[caption id="attachment_915" align="aligncenter" width="768"] Reference Section[/caption]
৫. ২৩ নম্বরটি শুধু মাত্র তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের পূর্বের পাসপোর্ট আছে। উল্লেখ্য পূর্বের পাসপোর্টটি ফর্ম জমা দেবার দিন সঙ্গে অবশ্যই আনতে হবে। তাই যদি বহু আগে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে সেটার কথা উল্লেখ না করাই ভাল। আর যদি সম্প্রতি (পাঁচ বছরের মাঝে) মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকে তাহলে উল্লেখ করে দেয়াই ভাল কারন পূর্বের পাসপোর্টের রেফারেন্স থাকলে পুলিশ ভেরিফিকেশন এর প্রয়োজন হয় না এবং সময়মত ডেলিভারী পাওয়া যায়। আরেকটি প্রয়োজনীয় বিষয় জানা থাকা ভাল, মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টের ক্ষেত্রে যত বছর আগে মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়েছে তার প্রতি বছরের জন্য ৩০০ টাকা করে মূল ফি এর বাইরে (আলাদা স্লিপে) ব্যাংক জমা দিতে হবে। মেয়াদ থাকা অবস্থায় পাসপোর্টটি নবায়ন (হাতে লেখা হলে মেশিন রিডেব্ল এ রূপান্তর) করে নেয়া ভাল।
[caption id="attachment_914" align="aligncenter" width="768"] Passport Renewal[/caption]
৬. ২৪ নম্বরটি পুরণ করা জরুরী, অর্থাৎ মূল ফর্মের সাথে আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের সত্যায়িত ফটোকপি (দুই পাশ একই দিকে) সংযোজন করতেই হবে। যদি জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকে তবে জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি অবশ্যই দিতে হবে। অন্যথায় আপনার আবেদন অসম্পূর্ণ বলে বাতিল হবে। এরপর সরকারী কর্মকর্তা, অবসরপ্রাপ্ত, পুরনো পাসপোর্টধারী, পেশাদার, ব্যবসায়ী যার যার প্রযোজ্য কাগজটির ফটোকপি সংযুক্ত করে দেবেন এবং যা সংযোগ করা হলো ২৪ নম্বর ঘরে তা টিক দিয়ে উল্লেখ করে দেবেন।
[caption id="attachment_917" align="aligncenter" width="768"] Attached Documents[/caption]
৭. ২৫ নম্বর ঘরে ব্যাংকে টাকা জমা দেবার তথ্য টাকা জমা দেবার পর উল্লেখ করুন। টাকা জমা দেবার স্লিপটিতে রশিদ নম্বর লাল কালিতে লিখে দেয়া থাকবে। টাকা জমা দেবার স্লিপটি আঠা দিয়ে প্রথম পাতায় ছবির ডানপাশে (পিতা-মাতার ছবি থাকলে তার নিচে) আটকে দিন।
৮. এরপরের অংশে স্বাক্ষর করুন তারিখ দিন। স্বাক্ষর বাংলাতেও হতে পারে।
[caption id="attachment_916" align="aligncenter" width="768"] Signature[/caption]
৯. সর্ব শেষ পাতায় প্রত্যয়ন অংশ তাকে দিয়ে পুরণ করুন যে আপনার পাসপোর্ট ফর্ম এবং সংযোজিত সকল ফটোকপি সত্যায়িত করেছেন। তার টেলিফোন নম্বরটি অবশ্যই উল্লেখ থাকতে হবে (ঠিকানা সহ)। পাসপোর্ট ফর্ম পূরণ করার নিয়মটি জানা না থাকলে বলছি, প্রথম পাতায় ছবির উপর (অর্ধেক ছবি, অর্ধের ফর্ম) সত্যায়নকারী স্বাক্ষর এবং সীলমোহর প্রদান করবেন। পিতা-মাতার ছবি সংযোজিত থাকলে তার উপরেও আলাদা ভাবে স্বাক্ষর-সীলমোহর দিতে হবে। উল্লেখ্য, ফটোকপি এবং ফর্ম একই ব্যাক্তি কর্তৃক পূরণ করতে হবে, অন্যথায় ফর্ম বাতিল হবে।
[caption id="attachment_918" align="aligncenter" width="768"] Certification[/caption]
এভাবে আপনার ফর্মটি পূরণ করা হলো। আপনি অনলাইনেও আবেদন করতে পারবেন। www.dip.gov.bd এই ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনি অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। অনলাইনে আবেদন করলে লক্ষ করবেন শেষ অংশে সাবমিট করার আগে সাক্ষাতকারের তারিখটি আপনি নিজে পছন্দ করতে পারছেন। ওখানে শুক্রবার এবং শনিবার বাদে পরের পনের দিনের মাঝে আপনার পছন্দমত যে কোন একটি তারিখ উল্লেখ করে আপনি সাবমিট করুন। এরপর আপনার উল্লেখিত ই-মেইল এ আপনার ফর্মটির পূরণকৃত পিডিএফ পৌঁছে যাবে। আপনি সেটা প্রিন্ট করে নেবেন (নতুন আবেদন হলে দুই কপি, পূর্বের পাসপোর্ট থাকলে কিংবা সরকারি কর্মকর্তা হলে এক কপি) এবং সত্যায়ন করবেন। অবশ্যই ছবি আঠা দিয়ে লাগাতে ভুলবেন না, নাহলে ফর্ম অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। এবং এক্ষেত্রেও সত্যায়ন ছবির উপরেই হতে হবে।
[caption id="attachment_919" align="aligncenter" width="768"] Online Application[/caption]
আপনি যদি নতুন আবেদনকারী হন তাহলে ফর্ম দুই কপি পূরণ করবেন। দুইটাই সত্যায়ন করবেন, দুইটার সঙ্গেই সত্যায়িত ফটোকপি সংযোজন করবেন। এবং যে কোন একটা কপির প্রথম পাতায় উপরে ব্যাংক জমার স্লিপটি আঠা দিয়ে আটকে দেবেন। শুধুমাত্র ফটোকপিগুলো ফর্ম এর সাথে স্ট্যাপ্লার দিয়ে আটকাবেন।
এই হলো পাসপোর্ট ফর্ম পূরনের সঠিক উপায়, অনেকেই পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে বার বার ঘুরে আসেন কিংবা দালালের কাছে ধরা দেন সঠিকভাবে ফর্ম পুরণ করতে না পারার কারনে। আমার পরবর্তী লেখায় পাসপোর্ট বিষয়ক আরো টুকিটাকি উল্লেখ থাকবে। আশা করি আপনাদের কাজে লাগবে।
Friday, November 15, 2013
জানা-অজানায় লিটল মাস্টার
১. শচীনের পুরো নাম শচীন রমেশ টেন্ডুলকার, উচ্চারণ তেন্দুলকার। রমেশ টেন্ডুলকার তার বাবার নাম। মায়ের নাম রজনী দেবী।
২. সংগীতজ্ঞ শচীন দেব বর্মনের নামেই তার নাম শচীন রাখা হয়।
৩. শচীন ছিলেন সুনীল গাভাস্কারের ভক্ত। স্কুলে পড়ার সময় শচীনকে গাভাস্কার এক জোড়া প্যাড দিয়েছিলেন। শচীন ১৯৮৯ সালে তার জীবনের প্রথম টেস্টে ঐ প্যাডজোড়া পায়ে দিয়েই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে নামেন।
৪. শচীন কুসংস্কারের কারণে সব সময় বাম পায়ের প্যাড প্রথমে পরেন।
৫. ডানহাতি ব্যাটসম্যান এবং ডানহাতি স্পিন বোলার হওয়া সত্ত্বেও শচীন লেখেন বাম হাত দিয়ে।
৬. শচীন বোলিং প্রশিক্ষণের জন্য এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ভর্তি হন। কিন্তু তার বোলিং এ অসন্তোষ প্রকাশ করেন বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান লিজেন্ড বোলার ডেনিস লিলি। তিনিই শচীনকে ব্যাটিং এ মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেন।
৭. শচীন কখনো অনুর্ধ্ব উনিশে খেলেন নি। তিনি একবারে বড়দের প্রথম শ্রেণির খেলায় অংশ নেন।
৮. তিনি তার প্রথম একদিনের খেলায় শূণ্য রান করেন।
৯. ক্রিকেট জীবনের প্রথম দিকে তিনি তার কোচ রমাকান্ত আচরেকারের কাছ থেকে একটা করে কয়েন লাভ করতেন যদি একবারও বাদ না পড়ে নেট প্র্যাকটিস সেশন উতরে যেতে পারতেন। এভাবে মোট ১৩ টি কয়েন লাভ করেন তিনি।
১০. ছোটবেলায় টেন্ডুলকার তার গ্লাভস,প্যাড, হেলমেট নিয়ে ঘুমাতেন।
১১. টেন্ডুলকারই প্রথম ব্যাটসম্যান যিনি থার্ড আম্পায়ারের ডিসিশনে আউট ঘোষিত হয়েছেন। এ ঘটনা ঘটে ১৯৯২ সালে ডারবান টেস্টে।
১২. সাধারণ ব্যাটের চেয়ে অধিক ভারি ব্যাট ব্যবহার করেন শচীন। একমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকার ল্যান্স ক্লুজনারই তার থেকে ভারি ব্যাট ব্যবহার করেন।
১৩. শান্ত-ভদ্র হিসেবে পরিচিত শচীন কিন্তু স্কুল জীবনে সহপাঠীদের আংলি দিতে ওস্তাদ ছিলেন।
১৪. ১৯৯৫ সালে শচীন রোজা মুভিটি দেখতে দাঁড়ি লাগিয়ে চশমা পরে ছদ্মবেশে সিনেমা হলে যান। কিন্তু তার চশমা খসে পড়ায় উপস্থিত ব্যক্তিরা তাকে চিনে ফেলেন।
১৫. শচীনের মাতৃভাষা মারাঠী। তার বাবা স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে মারাঠী পড়াতেন। আর মা ছিলেন একজন বীমা কর্মকর্তা। তার প্রিয় খাবার ভাডা-পাও (এক ধরণের মহারাষ্ট্রীয় খাবার)।
১৬. শচীনকে একবার মাইকেল শুমাখার একটি ফেরারি গাড়ি উপহার দিয়েছিলেন। সেটি দেশে আনতে শচীনকে বেশ বেগ পেতে হয়েছিল। বিরাট অংকের শুল্কের পুরোটাই দিয়েছিল ফিয়াট অটো যদিও তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তার শুল্ক মওকুফ করতে চেয়েছিলেন।
১৭. এই ফেরারি তিনি এতই ভালবাসতেন যে অ্যাক্সিডেন্টের ভয়ে তার স্ত্রী অঞ্জলীকেও চালাতে দিতেন না।
১৮. টেন্ডুলকার সৌরভ গাঙ্গুলীকে ‘বাবু মশাই’ বলে সম্বোধন করেন আর গাঙ্গুলী তাকে ডাকেন ‘ছোটা বাবু’ নামে।
১৯. ভারতীয় ক্রিকেট দলের অন্যতম স্পিনার হরভজন সিং কিন্তু বোলিং করা শিখেন টেন্ডুলকারের কাছ থেকেই।
২০. বৃষ্টির মৌসুমে যখন খেলা বা প্র্যাকটিস বন্ধ থাকে তখন শচীন টেনিস বল দিয়ে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসেন।
২১. শচীনের শাশুড়ি অ্যানাবেল মেহতা একজন ব্রিটিশ নাগরিক হওয়ায় শচীনের ছেলে ইচ্ছে করলে ইংল্যান্ডের কাউন্টি দলে স্বদেশি হিসেবে খেলতে পারে।
২২. ভারতের রাজ্যসভার একজন সদস্য তিনি। রাজ্যসভার ২৫০ টি আসনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির মনোনীত ১২ জন সদস্যের একজন হিসেবে সদস্যপদ লাভ করেন।
২৩. ভারতীয় বিমান বাহিনী তাকে সম্মানসূচক গ্রুপ ক্যাপ্টেন পদমর্যাদা দান করেছে।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেবেন ভারতের এই ক্রিকেট মহারাজ। কিন্তু তাকে হৃদয় থেকে বিদায় জানানো সম্ভব নয় কোনো ভক্তের পক্ষেই। ব্যাটিংকে যে শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছেন এই লিটল মাস্টার, সে জন্যেই তাকে হাজার বছর ধরে মনে রাখবে সবাই। অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তী স্পিনার শেন ওয়ার্ন একবার বলেছিলেন, “আমি রাতে দুঃস্বপ্ন দেখি যে শচীন টেন্ডুলকার আমার বলে ছক্কার পর ছক্কা মেরে যাচ্ছেন এবং ক্রিজে নাচানাচি করছেন" -এত বড় বোলার এরকম কথা তখনই বলতে পারেন যখন কথাটা হয় একজন কিংবদন্তি ব্যাটসম্যানকে নিয়ে। অনেকেই বলে থাকেন শচীন নাকি ‘ম্যাচ উইনিং প্লেয়ার’ নন। শচীন শতরান করেছেন কিন্তু দল জেতে নি এমন হয়েছে অনেকবার। কিন্তু তাই বলে শচীনের তুলনা কিন্তু শচীনই। স্থিরচিত্তে বাঘা বাঘা বোলারদের চার-ছয় পিটিয়ে যেভাবে নাকাল করেছেন তিনি, তার সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাস। শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৭৪ রান করেছেন। আশা করি, দ্বিতীয় এবং জীবনের শেষ টেস্ট ইনিংসে ভক্তদের জন্য দারুন কিছু উপহার দিতে যাচ্ছেন তিনি।
তথ্য ও ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট
Sunday, November 10, 2013
সিদ্দিকুরের গলফ জয়: অতঃপর খালি হাতে গলফ শিক্ষা
গলফের এ সম্ভাবনা অনুধাবন করতে হলে এ খেলার কিছু টার্ম আমাদের জানতে হবে। আমি নিজেও কিছুই জানি না। অল্প-স্বল্প হোমওয়ার্ক করে চলে আসলাম আপনাদের ক্লাস নিতে। আর সে জন্যেই আজকের এই গলফ কিন্ডারগার্টেন স্কুলের আয়োজন করা হলো। তো শুরু হয়ে যাক খালি হাতে গলফ শিক্ষা।
১. Club ক্লাব: যে ডান্ডাটা আমরা দেখি খেলোয়াড়দের হাতে অর্থাৎ যেটা দিয়ে বলকে আঘাত করা হয় তাকেই বলে ক্লাব।
২. Bogey বোগি: গলফের ক্ষেত্রে নির্ধারিত যে ক’টি শটে বলকে গর্তে ফেলতে হয় সে ক’টি শট নিয়ে যদি বলকে গর্তে ফেলা না যায় তখন প্রতিটি অতিরিক্ত শটকে বলা হয় বোগি। যত বেশি বোগি নিতে হয় তত ডিসক্রেডিট। মানে স্কোরে পিছিয়ে থাকতে হয়।
৩. Birdie বার্ডি: বোগির উল্টোটাই বার্ডি। অর্থাৎ, যে কয় শটে গর্তে বল পাঠানোর কথা তার চেয়ে একটি শট কম লাগলে তাকে বলা হচ্ছে বার্ডি। যত কম শটে বলকে গর্তে পাঠানো যায় স্কোর তত ভালো হয়, অন্য খেলোয়াড়দের চেয়ে এগিয়ে থাকা যায়।
৪. Eagle ঈগল: ডাবল বার্ডি হচ্ছে ঈগল। মানে নির্ধারিত শটের চেয়ে দুই শট কম নিয়েই যদি বলকে গর্তে পাঠানো যায় তাহলে তাকে বলা হয় ঈগল।
৫. Tee টি: টি হচ্ছে যে ছোট্ট কাঠ বা প্লাস্টিকের পিনের মতো জিনিস যার ওপর বল রাখা হয়। গলফার যখন কোনো হোলে বল ফেলার জন্য প্রথম শট নেন তখন বলটি ঐ টি’র ওপরেই রাখা থাকে।
৬. Tee Shot টি শট: হোলে বল ফেলার জন্য প্রথম শটকে বলা হয় টি শট।
৭. Hole হোল: যে গর্তে বল ফেলতে হয়।
৮. Par পার: যে কয়টি শটে বলকে গর্তে ফেলতে হয়। পার শটের চেয়ে এক শট বেশি নিলে তাকে বলা হয় বোগি আর এক শট কম নিতে হলে তাকে বলে বার্ডি।
৯. Pin পিন: যে গর্তে বল ফেলতে হয় সেখানে যে পতাকা পোঁতা থাকে তার স্টিকটাকে পিন বলে।
এবার খেলার নিয়ম সম্পর্কে কিছু কথা বলি। একটি পূর্ণ গেইমকে বলা হয় কোর্স। এই একটি কোর্সে সাধারণত ১৮ টি গর্ত থাকে। খেলার শুরুতে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের ‘পার’ থাকে সমান। অর্থাৎ, একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক শট বা স্ট্রোক নিয়ে প্রতিটি গর্তে বল ফেলতে হয়। যে খেলোয়াড় যত কম শট মেরে গর্তে বল ফেলতে পারে সে-ই এগিয়ে থাকে। এখানে পার হচ্ছে স্কোরের মতো। কিন্তু যত কম পার তত ভালো। প্রত্যেকটি গর্তে বল ফেলার জন্য কিন্তু সমান পার থাকে না। সাধারণত চারটি পার-৩, দশটি পার-৪ এবং চারটি পার-৫ অর্থাৎ মোট ৭২ টি রাউন্ড থাকে। কোন গর্তে বল ফেলার জন্য পার কত হবে তা নির্ভর করে টি থেকে হোলের দূরত্বের ওপর। যত দূরে হোল থাকবে তত বেশি পার হবে বা স্ট্রোক নেয়া যাবে। যে রাউন্ডে ৩টি শট বা স্ট্রোকে বল গর্তে ফেলতে হবে সেটিতে টি থেকে হোল বা পিনের দূরত্ব হয় ৯০ থেকে ২৩০ মিটার। আবার পার-৪ বা ৪ শটে বল ফেলার রাউন্ডের ক্ষেত্রে টি থেকে পিনের দূরত্ব হয় ২৫০ থেকে ৪৫০ মিটার আর পার-৫ এর ক্ষেত্রে এ দূরত্ব ৪১০ থেকে ৫৫০ মিটার।
একজন গলফারকে ঝোপ-ঝাড়, পানি, ঢাল এসব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে হোলের কাছে পৌঁছতে হয়। হোলের অবস্থান তিনি জানতে পারেন দূর থেকে ফ্ল্যাগ দেখে। যে জায়গায় হোল, পিন এবং ফ্ল্যাগ থাকে তাকে বলে ‘গ্রিন’। খেলোয়াড়দের মূল লক্ষ্য থাকে যত কম শটে পারা যায় বলকে গ্রিনে নিয়ে আসা। এরপর আলতো টোকায় বলকে গর্তে পাঠানো।
নিচে সিদ্দিকুরের বিজয় নিয়ে ইত্তেফাকের একটি প্রতিবেদনের লিংক দিলাম। আশা করি, যারা গলফ সম্পর্কে জানতেন না তারা প্রতিবেদনটি পড়ে বুঝতে পারবেন কীভাবে সিদ্দিকুর নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেন।
http://www.ittefaq.com.bd/index.php?ref=MjBfMTFfMTBfMTNfMF8wXzNfODQ3MDg%3D
Friday, November 8, 2013
অ-তে অজগর আর হ-তে হরতাল
হরতালে এক সময় খুব আনন্দ হতো। সে আনন্দের শুরু ৯৫ পরবর্তী সময়ে। তখন আওয়ামী লীগের আমল। আমারও স্কুল জীবনের শুরুর দিককার সময়। লাগাতার হরতাল মানেই ছুটি। তিনদিনের হরতাল সর্বদা শুক্র-শনিবারের সাথে জুড়ে দেয়া হতো। ৫ দিনের ছুটি কাটাতে এত ভালো লাগতো যে বলার নয়। সকাল-বিকেল চলতো পাড়ার ক্রিকেট। মাঝে মধ্যে টেস্টও খেলা হতো। সকালে এক ইনিংস, দুপুরে লাঞ্চ ব্রেক আর বিকেলে দ্বিতীয় ইনিংস। রাতে চলতো ব্যাডমিন্টন। জীবনে তো মজ্জায় মজ্জা। তখন যে হারে রাস্তায় ক্রিকেট খেলেছি ঐ হারে খেলা চালিয়ে যেতে পারলে সাকিব-তামিমের জায়গায় বোধহয় জাতীয় দলে আমিই খেলতাম। যাই হোক, দুঃখের কথা আর না বাড়াই। কেন জানি তখন ধারণা ছিল হরতাল বোধহয় সরকারি দল দেয়। অনেক পরে আবিষ্কার করেছি হরতালের উদ্যোক্তা বিরোধী দল :p । এরপরে হরতাল উপভোগ করেছি বিএনপির আমলে অর্থাৎ ২০০১ পরবর্তী সময়ে। ক্রিকেট চর্চা থেমে থাকে নি। তখন পরিস্থিতি এখনকার মতো ছিল না। হরতাল মানে রাস্তা ফাঁকা, ইট দিয়ে স্ট্যাম্প বানিয়ে অ্যারোপ্লেন বা ডানলপ টেনিস বলে ওসাকার লাল টেপ মেরে শুরু হয়ে যেত খেলা। আর এখন তো হরতাল মানে আইপ্যাডটা বের করে টেম্পল রান জাতীয় হাবিজাবি খেলা। এখনো মনে পড়ে রাস্তার ড্রেইনে বল পড়ার স্মৃতি। বল যে ফেলতো তাকেই তুলতে হতো। পানি পাওয়া গেলে ভালো নয়তো মাটিতে ড্রপ দিয়েই কাজ সারা হতো। ড্রপ দিতে গিয়ে ড্রেইনের পানির নোনতা স্বাদও যে পায়নি তা কিন্তু অস্বীকার না। সব মিলিয়ে যা বলতে চাই তা হলো হরতাল মানে নিখাঁদ বিনোদন ছিল।
তখনও বুঝতাম না এই হরতাল কতটা সর্বনাশা জিনিস। আমরা যখন মজা করে খেলতাম, আমার মা-বাবাকে জান হাতে করে অফিসে যেতে হতো। বাস না পেয়ে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে রিকশা নিতে হতো। প্রতি মূহুর্তে চিন্তা করতে হতো এই না এসে গায়ে বোমা পড়ে। এই না ভাঙচুর শুরু হয়। হরতালে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি, পরিবহন ব্যবসায়ের লোকসান, মানুষের দুর্ভোগের সীমাহীন চিত্র তখন অনুধাবন করতে পারি নি কচি হৃদয় দিয়ে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, রিকশাওয়ালারা কাজের অভাবে হরতালে খেয়ে না খেয়ে যে দিন পার করে তা আমার শৈশবের কালিমাহীন মন অনুধাবন করার জন্য প্রস্তুত ছিল না। হরতালের সংস্কৃতি চলমান। কোনো আমলেই তা বন্ধ হয় নি। যখনই যে বিরোধী দলে গিয়েছে তখনই সে হরতাল নামক এই মরণাস্ত্র ব্যবহার করেছে। ক্ষমতার লড়াইয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক অস্ত্র উদ্ভাবন কিংবা ব্যবহারের মতো মেন্টাল ক্যাপাসিটি বা ফ্যাকাল্টি আমাদের রাজনীতিবিদদের ছিলও না, হবেও না। হরতাল-অবরোধ-সংঘাত ব্যতীত কোনো কর্মসূচী গ্রহণের হিম্মত বা ইচ্ছা কোনোটাই তাদের নেই। আর সরকারি দলও ভুলে যায় যে তারা এক সময় বিরোধী দলে ছিল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আজীবন ক্ষমতায় থাকার লোভ সামলাতে দলগুলো চিরকাল ব্যর্থ হয়েছে।
আমাদের সংসদীয় গণতন্ত্র যে নির্বাচিত রাজতন্ত্র তা কিন্তু টার্মিনোলজি থেকেই বোঝা যায়। যেমন- নির্বাচনে জয় লাভ করে কোনো দল সরকারি দায়িত্ব নিলে আমরা বলি ‘ক্ষমতায় আসলো অমুক দল’। আমরা বলি না, ‘দায়িত্ব গ্রহণ করলো তমুক দল’। আমরা প্রায়শ’ বলে থাকি আওয়ামী লীগের আমল বা বিএনপির আমল। যেন এটা সেই সম্রাট আকবরের রাজত্ব বা চেঙ্গিস খানের সময় যখন সামরিক দখলের মাধ্যমে রাজারা ক্ষমতা গ্রহণ করতো এবং রাষ্ট্রের মালিক বনে যেত। ব্রিটেনের উপনিবেশ হিসেবে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সকলেই ছিল। কিন্তু উপনিবেশবাদী চিন্তাধারায় আমরাই সবচেয়ে এগিয়ে। পাকিস্তান হয়েছে শতভাগ সামরিক রাষ্ট্র। তাদের সব কিছু ঐ পারমাণবিক বোমার মাঝে সীমাবদ্ধ। আর আমাদের সব কিছু ঐ কুট-কৌশলের রাজনীতির মাঝেই আটকে রয়েছে। অন্য দিকে চিকন বুদ্ধি সম্পন্ন ভারত গোটা বিশ্বে তাদের অবস্থান গড়ে তুলছে তিলে তিলে। আর দাদাগিরির কথা তো বাদই দিলাম।
ট্রু গণতন্ত্রে আমাদের পৌঁছতে আরো অনেক দেরি। আর হরতাল-সংঘাতের রাজনীতি ক্রমাগত আমাদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে এগোতে না পারলেও আমরা যদি সাম্যাবস্থায় থাকতাম তাও হতো। কিন্তু প্রতিদিন যদি আমরা এভাবে পিছিয়ে পড়ি তবে বাংলাদেশ মালয়েশিয়া-থাইল্যান্ড হবে না কখনই। হরতালকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে বন্ধ করা সম্ভব রাজনৈতিক নেতাদের সদিচ্ছার মধ্য দিয়েই। হরতালে যে প্রাণহানি ঘটে তার দায়ভার কি কোনো দল কখনো গ্রহণ করেছে? হরতালে মানুষ হত্যার জন্য কেউ কি আজ পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলেছে? দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, অর্থনীতি, যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংস করে দিয়ে হরতাল দিনের পর দিন টিকে থাকতে পারে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেমন ছাত্রদের দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করা প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন হরতালকে নিষিদ্ধ করা। তবে এখানে কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা রয়েছে। যখন সরকার জনগণের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করে তখন সতঃস্ফূর্ত হয়ে জনতা হরতাল পালন করে। সেই চিন্তা থেকেই কিন্তু হরতালের কনসেপ্ট গড়ে উঠেছে। কিন্তু রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে হরতালকে নিষিদ্ধ করতে কি ব্যবস্থা নেয়া যায় তা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং আইনজ্ঞরাই ভালো বলতে পারবেন। জাতিকে স্থবির করে দেয় যে হরতাল তা কখনোই শুভ কোনো বার্তা বয়ে আনতে পারে না।
ছবি কৃতজ্ঞতা: প্রথম আলো এবং শীর্ষ নিউজ
প্রতিদিনের পাথেয় – ৬
১. যা কিছু সন্দেহজনক তা বর্জন করে যা কিছু সম্পর্কে তুমি নিঃসংশয় তা গ্রহণ করো। সত্য বয়ে আনে প্রশান্তি আর মিথ্যা বপন করে সন্দেহের বীজ।
২. তুমি যে অবস্থাতেই থাকো না কেন আল্লাহ্ কে ভয় করতে থাকো, তোমার দ্বারা যদি কোন খারাপ কাজ হয়ে যায় তবে সাথে সাথে একটা ভালো কাজ করে তা মুছে দাও, আর মানুষের সাথে সদাচার কর।
(এই হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার যৎসামান্য ইংরেজি এবং অগভীর ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)
Thursday, November 7, 2013
প্রতিদিনের পাথেয় – ৫
[caption id="attachment_779" align="aligncenter" width="850"] Sunnahs of Friday (Jumua)[/caption]
২. এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এসে বললেন, আমাকে নসিহত করুন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমার ক্রোধ দমন কর। ঐ ব্যক্তি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরও কয়েকবার একই অনুরোধ করলেন এবং রাসুল প্রতিবারই তাকে উপদেশ দিলেন, 'তোমার ক্রোধ দমন কর'। - সহিহ বুখারি, ৬১১৬
(এই হাদিসগুলো জনাব Abdul Malik Mujahid সংকলিত 200 Golden Hadiths from the Messenger of Allah (দারুস সালাম) সঙ্কলন থেকে অনূদিত (ইংরেজি থেকে বাংলা)। Abdul Malik Mujahid সাহেব হাদিসগুলো সর্বজনস্বীকৃত সহিহ হাদিস গ্রন্থসমূহ থেকে নিয়েছেন, যার সূত্র এখানে উল্লেখ করে দেওয়া হচ্ছে। হাদিসগুলো যাতে সব ভাষাভাষী মানুষের কাছে পৌঁছতে পারে সেই উদ্দেশ্যে তিনি যেকোন ভাষায় তার এই সংকলনটিকে অনুবাদের অনুমতি দিয়ে এটিকে কপিরাইটের আওতামুক্ত রেখেছেন। আমার যৎসামান্য ইংরেজি এবং অগভীর ইসলামের জ্ঞান এই অনুবাদ কাজের জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়, তাই এই অনুবাদটিকে ভাবানুবাদ ধরে নেয়াই নিরাপদ এবং প্রতিষ্ঠিত যেকোন ইসলামী অনুশাসনের মোকাবিলায় বা সমর্থনে এই অনুবাদকে তথ্যসূত্র বা রেফেরেন্স হিসেবে ব্যবহার না করে বরং প্রতিটি অনুবাদের নিচে দেওয়া সূত্র অনুযায়ী মূল হাদিস গ্রন্থে অনুসন্ধান করাই বাঞ্ছনীয়।)
Monday, November 4, 2013
মৃত্যুর আগে
-১-
গতকাল হুমায়ূন কবির সাহেব কলকাতা এসেছেন শুনে জীবনানন্দ সকাল সকাল তাঁর বাসায় চলে এসেছেন। কিন্তু আজকেও হুমায়ূন কবির সাহেবের সাথে দেখা হল না। পিএ যদিও বলল উনি বাড়িতে নেই, তবু সাক্ষাতের জন্য আসা এত লোকজন আর গাড়ি বারান্দায় দাড়ানো গাড়ি বলে দিচ্ছে একজন নিঃস্ব কবির সাথে দেখা করে চাকরির আর্জি শোনার চাইতে আরো অনেক বড় কাজ আছে মন্ত্রী মশায়ের। দুই মাস আগে একবার কবির সাহেবের সাথে দেখা হয়েছিল। বিশেষ কোণ আশ্বাস দেননি। একথা সেকথা বলে তাঁকে বিধানচন্দ্র রায়, নলিনীরঞ্জন সরকার, কিরণশঙ্কর রায়, জ্যোতি বসু প্রমূখ ক্ষমতাসীন ভারি-ভারি ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করে নিজের সমস্যার কথাটা বলতে বলেছে। প্রথম প্রথম জীবনানন্দ বিধান রায়কে ছোটো-বড়ো বেশ কয়েকটা চিঠি লিখেছে অ্যাপয়েন্টমেন্ট চেয়ে, কিন্তু প্রত্যুত্তর আসে নি। সরাসরি এদের কারো সাথে দপ্তরে গিয়ে দেখা করার সাহস তাঁর হয়নি। সে ভেবে দেখেছে, যে সামাজিক অবস্থানে তাঁর বাস, সেখান থেকে আগবাড়িয়ে গিয়ে ওঁদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে কোনো লাভ নেই। ওঁরা ‘অনেক দূরের মানুষ’।তার চাইতে কবির সাহেব কে কাছের মানুষ মনে হয় তাঁর। ভদ্রলোক নিজেও একজন কবি এবং দূঃস্থ কবি সাহিত্যকদের পাশে দাঁড়ানোর একটা ঝোঁক আছে। তাঁর ‘সাতটি তারার তিমির’ বইটাও সে কবির সাহেব কে উৎসর্গ করেছে। যদিও কিছুদিন যাবৎ কবির সাহেব অনেক চিঠি লিখে, নিজের দূরাবস্থার কথা জানিয়েও কোন লাভ হয়নি।
এখন সিগনেটের দীলিপ বাবুর যাবে কিনা ভাবতে ভাবতে সিড়ি দিয়ে নামছিল জীবনানন্দ। যদি ওনাকে বলে সাগরময় ঘোষ কে একটা ফোন করানো যায়। গত কমাসে আটটা কবিতা সাগরবাবুর কাছে সে রেজিস্ট্রি করে ডাকে পাঠিয়েছে। কোন উত্তর আসেনি। কবিতা কটা ছাপা হলে কিছু টাকা হাতে আসত। টাকার খুব টানাটানি যাচ্ছে আজকাল। সাথে সিগনেটের কোন কবিতা সংকলনে যদি একটা কবিতা ছাপানো যায়…।
বাইরে আসতেই শীতকালের চড়া রোদ লাগল মাথায় আর মুখে। ভাবনায় ছেদ পড়ল, মাথাটাও যেন একটু চক্কর দিল। হাই প্রেশার আর সকালে না খাওয়ার যে একটা কুফল আছে, শরীর জানান দিল তাঁকে। শরীর মহাশয় হলেও তারও তো একটা সহ্য ক্ষমতা আছে। যদিও সাহিত্যের জন্য বেঁচে থাকার সহজ সাফল্য পাবার চেষ্টা ছেড়ে দিয়েছিল সে। কিন্তু মানুষের জীবন তো শুধু তাঁর একার না। ঘরে দুটো রোগা ছেলে মেয়ে, একটা বউ আছে, পাওনাদার আছে, আত্মীয়-বন্ধুরা আছে। আর সকলেই বিভিন্ন চাহিদা নির্ভর সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে আছে তাঁর জীবনের সাথে। একজন কাপালিকের মত নিঃস্ব কবি, যার সামনে কিছু নেই আর ভবিষ্যতে কিছু থাকবার সম্ভাবনাও নেই, তাঁকে এই চাহিদা নির্ভর সম্পর্কগুলো ক্রনিক আলসারের মত বয়ে বেড়াতে হয়।
আবারও চারদিকে তাকাল জীবনানন্দ। নিউ আলিপুরের এই দিকটা বড়লোকদের আবাসস্থল। রাস্তায় পায়ে চলা লোক কম দেখা যায়। এখন দশটা বাজে। মানুষ জন ধীরে ধীরে আরও কমে আসছে। সবাই যে যার গন্তব্যে পৌছে গেছে। এমনকি কিছু দূরের গাছের নিচে বসে দুই ভিখারীও ভিক্ষা চাইতে প্রস্তুত, সব কিছু ঠিকঠাক করে নিয়ে বিড়িতে শুকটান দিচ্ছে তারা। তাঁর মত উদ্দ্যেশ্যহীন ভাবে মনে হয়না কেউ এই মুহুর্তে এখানে আছে। এখনো দীলিপ বাবুর কাছে যাবে কিনা মনস্থির করতে পারছে না। যেতে-আসতে ২৫ পয়সা বাস ভাড়া লাগবে। পকেটে সর্বসাকূল্যে গতকাল দেশ পত্রিকার শব্দজট সমাধান করে পাওয়া একটাকা আছে। এইটাকা শেষ হলে আর কোথা থেকে টাকা আসবে তাঁর কোন সম্ভাব্য উপায় এই মূহুর্তে তাঁর জানা নেই।
এদিক সেদিক তাকাতে তাকে রাস্তার ওপারে একটা ডাবওয়ালাকে ঝুড়িতে করে ডাব বিক্রি করতে দেখল সে। প্রেশারের কারনে ডাক্তার বলেছিল কচি ডাব খেতে। এই মুহুর্তে গলাও শুকিয়ে আছে তাঁর। সে রাস্তা পার হয়ে ডাবওয়ালা কে জিজ্ঞেস করল, ডাব কত করে?
ডাবওয়ালা উদাসীন ভাবে জবাব দিল, দশ পয়সা করে। আজকাল চেহারায় যেন একটা দারিদ্রের স্থায়ী দাগ পরে গেছে। কেউ খুব গুরুত্ব দেয় না, ভাবল জীবনানন্দ।
-আট পয়সা করে সব জায়গায় বিক্রি হয়, তুমি এত দাম চাইছ কেন হে? কিছুটা দরদাম করে ডাবওয়ালার কাছ থেকে পাওয়া উদাসীনতার অপমান ঝেড়ে ফেলতে চায় জীবনানন্দ।
-একদাম, আমার এখানে দরদাম হয়না। নিলে নেন। সাফ জবাব ডাবওয়ালার। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা তাকে খদ্দের চিনতে শিখিয়েছে। সামনে দাঁড়ানো ক্রেতার যে ট্যাকে খুব বেশী জোর নেই, তা সে না তকিয়েই বলে দিতে পারে। একটার বেশী ডাব হয়তো কিনবে না। শুধু শুধু কথা খরচ করার কোন কারন সে খুজে পায় না। এই জায়গাও তাঁর বদলাতে হবে। আগে সামনের বাড়ীর বাবুর কাছে হাজার লোক আসত প্রতিদিন। আসা যাওয়ার পথে বাবুরা তাঁর কাছ থেকে ডাব কিনে খেত। বিকাল গড়ানোর আগেই ঝুড়ি ফাঁকা এখন মাসে দুয়েকদিন এমন হয়। বাকি সময় কেউ আসেনা। মাসে তো আর দুই দিন ব্যাবসা করে পেট চলে না। তবে আজকে সকাল থেকে অনেক লোকজন আসছে। ব্যাবসা আজকে ভাল হবে মনে হয়।
-দাও দেখি একটা, হালকা শাস ওয়ালা দিও। ডাবের শাস খেয়ে ক্ষুধাটা চাপা দেয়া যাবে, ভাবল সে। তারপর ডাবওয়ালার কেটে দেয়া ডাবটা হাতে নিয়ে একপাশে ছায়ায় সরে দাঁড়িয়ে চুমুক দেয়। বেশ মিস্টি। এক চুমুকে পানিটা খেয়ে নিয়ে ডাবওয়ালাকে ডাবটা দেয় সে। ঝুড়ির ভেতর থেকে একটা দা বের করে ডাবটা অভিজ্ঞ হাতে দুই ফালি করে, পাশথেকে ছোট একটা চলটা তুলে আবার সেটা আবার জীবনানন্দ কে ফিরিয়ে দেয়। সেটা হাতে নিয়ে দেখে বেশ খানিকটা নরম শাস আছে। তৃপ্তি করে চেঁছে খায় সে। ক্ষুধার ভাব অনেকটাই কেটে গেছে তাঁর।
রঞ্জু আর মঞ্জুর জন্য কটা ডাব নিয়ে যাবে ভাবল সে। অনেক দিন ধরেই জ্বর জ্বর ভাব ছেলেটার। মেয়েটাও এমন রোগা, এ অসুখ সে অসুখ লেগেই আছে। ডাক্তারের কাছে নেয়ার সামর্থ্য এই মুহুর্তে তাঁর নেই। আরো চারটে ডাব বেছে কেনার পর দাম দিতে গিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখে একটা চারটে দশ পয়সা আছে। মনে পড়ল আসার আগেই ফার্মেসি থেকে রঞ্জুর জন্য এক ফাইল ভাইটেক্স কিনেছে। তাতেই ষাট পয়সা বেরিয়ে গেছে।
-পঞ্চাশ পয়সা। চারটে ডাব বাধছাঁদা করে এগিয়ে দেয় ডাবওয়ালা।
-একটা দশ পয়সা তার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে জীবনানন্দ বলে, ভাই এগুলো থাক। পরে এক সময় এসে নিব।
হুহ!! হাত থেকে পয়সাটা প্রায় কেড়ে নিয়ে একটা তাচ্ছিল্যের শব্দ করে ডাবওয়ালা। নিজের মনে গজগজ করতে থাকে। কি তা ভাল করে শোনেনা জীবনানন্দ।
-২-
হনহন করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা দেয় সে, কিছুটা দৌড়ে গিয়ে বালিগঞ্জগামী একটা লোকাল বাসে লাফ দিয়ে উঠে পরে। অনেকটা তাচ্ছিল্য এড়ানোর জন্যে অহেতুক তাড়াহুড়া করে সে।
তাচ্ছিল্য আজকাল যেন সকলের কাছ থেকে জীবনানন্দর প্রাপ্য হয়ে গেছে। সম্পাদক-সমালোচক থেকে শুরু করে আত্মীয়-বন্ধু সকলেই আজকাল আর হিসাবেই আনে না তাঁকে। অনেকেই বাড়ী বয়ে এসে তাচ্ছিল্য করে যায়। আর সর্বক্ষন তাচ্ছিল্য করার জন্য তো বাড়ীতে লাবন্য আছেই। নীহাররঞ্জন গুপ্ত লাবন্যর কেমন যেন সম্পর্কে দাদা হয়। কদিন আগেও সেটা নিয়ে সে বলেছিল, লেখক তো তিনিও। কত খ্যাতি, কত সম্মান। টাকাও তো কম কামান না লেখালেখি করে। ডাক্তারী করা তো আজকাল ছেড়েই দিয়েছেন প্রায়। আর তুমি কুলির মত সারা দিন খেটে কি লেখ যে একটা পয়সাও আয় হয় না? কোন জাবাব দিতে পারেনি জীবনানন্দ। খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে তখন তাঁর মাথার মধ্যে ঘুরছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটা কথা। বুদ্ধদেব বসু কে একবার চিঠি লিখে তাঁর সম্পর্কে বলেছিল, “তাঁর কবিতা চিত্ররূপময়। তাঁর কবিতায় তাকিয়ে থাকার আনন্দ আছে।” সে সময়ে কলকাতায় বুদ্ধদেব বসু, প্রেমেন্দ্র মিত্র এবং সমর সেন একটা নতুন কবিতাপত্রিকা বের করার তোড়জোড় করছিলেন, যার নাম দেয়া হয়েছিল কবিতা। পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যাতেই জীবনানন্দের একটি কবিতা ছাপা হয়, যার নাম ছিল 'মৃত্যুর আগে'। সেটা পড়েই রবীন্দ্রনাথ একথা লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বাবুকে। পরে নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলন যখন ১৯৫২ সালে পরিবর্ধিত সিগনেট সংস্করণ “বনলতা সেন” বইটাকে বাংলা ১৩৫৯ এর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ হিসেবে পুরস্কৃত করে, সেই পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে বুদ্ধদেব বাবু এই কথাগুলো তাঁর বক্তৃতায় বলেছিলেন। উগ্রমূর্তী স্ত্রীর গঞ্জনার সামনে দাঁড়িয়ে সেটাই বারবার মাথার মধ্য ঘুরছিল কেন, কে জানে? হয়ত অতীত স্বীকৃতি দিয়ে বর্তমানের ব্যার্থতার ব্যাথা ঢাকার চেষ্টা নিজের মধ্যে নিজে করে যাচ্ছিল।
চিঠি অবশ্য রবীন্দ্রনাথ তাঁকেও লিখেছিল একবার। ১৯১৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর এ। ষোল বছর বয়সে অনেকটা আবেগের বশে যখন সে কয়েকটা কবিতা নোবেল পাওয়া কবি রবীন্দ্রনাথের কাছে মান যাচাই করার জন্য পাঠিয়েছিল, তার জবাবে উত্তর এসেছিল,
কল্যানীয়াসু,
তোমার কবিত্বশক্তি আছে তাঁতে সন্দেহমাত্র নেই। -কিন্তু ভাষা-প্রভৃতি নিয়ে এত জবরদস্তি কর কেন বুঝতে পারিনে। কাব্যের মুদ্রাদোষটা ওস্তাদীকে পরিহসিত করে। বড়জাতের রচনার মধ্যে একটা শান্তি আছে। যেখানে তার ব্যাঘাত দেখি সেখানে স্থায়িত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ জন্মে। জোর দেখানো যে জোরের প্রমান তা নয় বরঞ্চ উল্টো।
-শ্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
চিঠিটা সে খুব যত্ন করে রেখেছিল অনেকদিন। শেষবার যখন পাকাপাকি ভাবে কলকাতায় চলে আসে তখন বাঁধা ছাঁদার ফাঁকে কোথায় যেন হারিয়ে যায় চিঠিটা। অনেকদিন খুব যত্ন করে রাখলেও চিঠি পড়ে তাঁর মনে হয়েছে কবিতা গুলো রবীন্দ্রনাথ পছন্দ করেননি তিনি। কিছুটা রাগও করেছিলেন হয়ত। কারন চিঠির শেষে কোন আশীর্বাদ ছিল না, ভাষাও ছিল বেশ রুক্ষ। তাঁর পরেও সে আনন্দ পেত এই ভেবে যে চিঠির শুরুতে রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কবি স্বীকৃতি দিয়েছেন।
বালিগঞ্জ! বালিগঞ্জ! কন্ডাক্টরের চিৎকারে সম্বিত ফেরে তাঁর। বাস একটু ধীর হলে ছোট্ট একটা লাফ দিয়ে বাস থেকে নেমে পরে সে। ধীরে ধীরে বাড়ীর দিকে হাঁটা দেয়। ট্রামের টুং টুং ঘন্টা শুনে একটু থামে। ট্রাম আসছে। আশেপাশের মানুষজন, টানা রিক্সা সব দাঁড়িয়ে গেছে। ট্রাম ক্রসিং এর একটু আগে সেও দাঁড়িয়ে যায়। খুব মনযোগ দিয়ে ট্রামটা লক্ষ্য করে। লাল হলুদ মেশানো একটা যন্ত্র পেটের মধ্যে কতগুলো মানুষ কে নিয়ে গন্ত্যব্যে পৌঁছে দিচ্ছে। অথচ যন্ত্রটার নিজের কোন গন্ত্যব্য নেই। মনে পড়ে অনেক আগে ট্রাম নিয়ে সে একটা কবিতা লিখেছিল। খুব একটা ভাল হয়নি বলে কোথাও পাঠায়নি সে, যদিও একবার সঞ্জয় ভট্টাচার্য কে কবিতাটা পূর্বাশা পত্রিকার ছাপাবার জন্য পাঠাবে ভেবেছিল।
ট্রামের লাইনের পথ ধরে হাঁটি: এখন গভীর রাত
কবেকার কোন্ সে জীবন যেন টিটকারি দিয়ে যায়
'তুমি যেন রড ভাঙা ট্রাম এক- ডিপো নাই, মজুরির প্রয়োজন নাই
কখন এমন হলে হায়!'
আকাশে নক্ষত্রে পিছে অন্ধকারে
কবেকার কোন্ সে জীবন ডুবে যায়।
সবসময়ই ট্রাম জিনিসটার প্রতি একটা অদ্ভূত আকর্ষন বোধ করেছে সে। ট্রামের সাথে মিশিয়ে দিতে ইচ্ছে করে শরীর তাঁর। মনে হয় ট্রামের নিচে চাপা পরে মরলে মৃত্যু অনুভব করা যাবে। একটু একটু করে ভারী চাকাগুলো যখন শরীর থেঁৎলে দেয়া শুরু করবে মৃত্যু তখন কোন প্রাচীন প্রেতীনির মত ধীর পায়ে এগিয়ে আসবে আধা-থেঁৎলা শরীরটার দিকে, যা কখনও একটা মানুষের শরীর ছিল।
বিধাতার লীলা বড়ই অদ্ভূত। কারও কারও ভক্তি ভরে করা আজন্ম প্রার্থনা তিনি মঞ্জুর করেন না, আবার কারও মুহুর্তের অসতর্ক উচ্চারন সাথে সাথে অনুমোদন করে দেন।
-৩-
ট্রাম চলে গেছে। লাইনের দুই পাশে এতক্ষন থেমে থাকা মানুষ আর টানা রিক্সা গুলোর মধ্যে একটা হুড়োহুড়ি লেগে যায়া। সবারই গন্ত্যব্যে পৌছানোর তাড়া। ঠেলা-গুতো এড়াতে জীবনানন্দ একপাশে সরে যায়। তারপর ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দেয় সে। তাঁর নিজের বাড়ি সেই কবে দখল হয়ে গেছে। এক লাইফ-ইনসিওরেন্স কোম্পানির বড়বাবুদের ন্যাওটা এক মহিলা কে সাবলেট দিয়েছিলেন বাড়িতে। সেই উপভাড়াটেনি সারারাত এমন নাচ গান আর রাতভর আসর বসিয়ে হৈ-হুল্লোড় করত যে বাড়ীতে টেকা দায় হয়ে পরে। তবে ভাড়াটা মাসের ঠিক এক তারিখে মিটিয়ে দিতেন মহিলা। জীবনানন্দর লেখাপড়া আর পারিবেশিক শান্তি মাথায় উঠলে ভাড়াটেনিকে তুলে দিতে তিনি বহু চেষ্টা করেন, প্রথমত বদলি ফ্ল্যাট দেখে দিতে চেয়েছেন; দ্বিতীয়ত, ইনসিওরেন্সের বড় কর্মকর্তা সাবিত্রীপ্রসন্নকে, অজিত দত্তকে ধরেছেন; এমনকি হুমায়ুন কবিরের সাহেবের কাছে গিয়েও ধরনা দিয়েছেন; তৃতীয়ত, বরিশালের মানুষ এবং উষা পত্রিকার সম্পাদক প্রাণকৃষ্ণ সেনকে এবং পাড়ার মানুষ বন্ধু সুবোধ রায়কে ধরে পাড়ার গুন্ডা যুবকদের সাহায্য নেবার কথা ভেবেছেন। কিন্তু, কিছুতেই কিছু করা যায় নি, মহিলা বহাল-তবিয়তে থেকে গিয়েছেন। শেষমেষ তাঁকে এসে উঠতে হয়েছে ছোট ভাইয়ের বাড়িতে। ছোটভাই নিচতলায় দুটো ঘর ছেড়ে দিয়েছে থাকার জন্য। একটা ঘরে তিনি আর রঞ্জু আরেকটাতে মঞ্জু কে নিয়ে থাকে লাবন্য। আলাভোলা দাদাকে খুবই ভালবাসে অশোক। একে তো অতিরিক্ত একটা পরিবারের বোঝা ঘাড়ের উপরে নিয়ে নিয়ে মুখ বুজে থাকে সে, তার উপর মাসে মাসে কিছু টাকা সে দাদার হাতে দেয় সে। দাদার হাতে টাকাটা দেবার সময় এমন ভাবে মাথা নিচু করে থাকে যেন খুব বড় কোন অপরাধ করছে সে। ছোটবোন সুচরিতাও মাসে দুই তিনবার আসে দাদার সাথে দেখা করতে। প্রতিবার আসলে কোন বইয়ের বা খাতার ভাঁজে কিছু টাকা গুজে দিয়ে যায়। সরাসরি দাদার হাতে টাকা দিতে তাঁর বাধে।
এই উপরি কটা টাকা, এক বন্ধুর ব্যাবসার অ্যাকাউন্ট্যান্ট কাম অ্যাডভাইজার হওয়া, নিজের ভাড়া-বাড়ির একাংশ বেআইনি ভাবে সাবলেট করে দেওয়া, মাঝে-মধ্যে টাকা নিয়ে কবিতা এবং প্রবন্ধ ছাপানো – এ-রকম সব স্বনিযুক্ত কাজকর্ম করে কোনো এক-ভাবে রোজ-আনি-রোজ-খাই ধরনে সংসারটা টেনে যাচ্ছে সে। ভবিষ্যতের কথা ভাবার সাহস হয়না তাঁর। কোন সম্মানজনক চাকরী গত একবছর চেষ্টা করেও জুটাতে পারেনি। যদিও গোপালচন্দ্র রায়ের দৌলতে এবং বিজয়কৃষ্ণ ভট্টাচার্যের বদান্যতায় গতবছর ভাল চাকরি পেয়েছিলেন একটা হাওড়া গার্লস কলেজে। চাকরিটাও তাঁর পছন্দসই ছিল, কিন্তু কলকাতার ল্যান্সডাউন রোড থেকে হাওড়া ময়দান – রোজ দু’ বেলা ঠ্যাঙানোটা ছিল খুবই কষ্টকর। নিজের শরীরও প্রায় অসহযোগিতা করছিল – ডায়াবেটিস, হাই ব্লাড প্রেশার, চোখের অসুখ। অনেকটা বাধ্য হয়ে শেষমেষ চাকরিটা ছেড়ে দেয় জীবনানন্দ।
বাড়ির সামনে আসতেই জীবনানন্দ দেখে রঞ্জু বের হচ্ছে। বাবাকে দেখে হাসি দেয় একটা। কই যাস, জিজ্ঞেস করে সে।
-মোড়ের দোকান থেকে চা আনতে। পীসি এসেছে। বাড়ীতে চাপাতা নেই।
কিছু না বলে ভিতরে ঢুকে যায় সে। রঞ্জুও চা আনতে চলে যায়। আজকাল সুচরিতার সাথে দেখা হলে একটা অপরাধবোধ কাজ করে তাঁর মধ্যে। ছোটবোন টা সব সময় তাঁকে অনেক বড় কবি হিসেবে শ্বশুর বাড়ীতে পরিচয় দিয়েছে। আজকাল নাকি সেকথা নিয়ে প্রায়ই খোঁটা দেয় তাঁর বোন কে। শ্বশুর বাড়ী থেকে পাওয়া বোনের অপমানের জন্য নিজেকেই দায়ী মনে হয়। অনেক বার বের করতে চেয়েছে আর দশটা মানুষের মত সে কেন হল না? একটা চাকরি, মাস শেষে বেতন, স্ত্রীর হাসি মুখ, সুস্থ সবল সন্তান, কিছু জমানো টাকা আর কি চাই?
হয়ত সে এ সবই পেতে পারত। কিন্তু স্রোতের বিপরীতে নিজের মত প্রকাশ করার একটা অদ্ভূত বাতিক আছে তাঁর। ১৯২৭ এ যখন সে যখন সিটি কলেজে পড়ায় তখন একবার কিছু হিন্দু ছাত্রের অনুরোধে তিনি লক্ষীপূজার আয়োজন করেন। কলেজের বেশীর ভাগ ছাত্র তখন ব্রাহ্ম ধর্মের অনুসারী। বেশীরভাগ শিক্ষক ও গভর্নিং বডির সদস্যরাও তাই। একটা সাধারন লক্ষীপূজা তাঁদের কাছে হয়ে উঠল সাম্প্রদায়িক আচার। এ নিয়ে ছাত্র অসন্তোষ আর শিক্ষকদের তাতে সমর্থনের ফল হল তরুন প্রভাষক জীবনানন্দ দাশের চাকরিচ্যূতি। যদিও তাঁকে দেয়া চিঠিতে কলেজ কতৃপক্ষ কলেজের অর্থনৈতিক অনটন কে তাঁর এই চাকরি থেকে অব্যহতির কারন হিসেবে উল্লেখ করেছে। তারপর আবার একই ঘটনার পূনরাবৃতি ঘটে। ১৯৪৬ সালের জুলাই মাসে বরিশালের বিএম কলেজের চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে কলকাতায় চলে আসে সে। হুমায়ুন কবিরের সাহেবের দৈনিক পত্রিকা স্বরাজে একটা চাকরি জুটে যাবে এই ভরসায়। চাকরি জুটেও গিয়েছিল। ১৯৪৭ দেশ-বিভাগের পুরো পরিবার কলকাতায় নিয়ে আসে। কিন্ত চাকরিটা বছর দেড়েকের বেশি টেকে নি। কী কুক্ষণেই-যে সে স্বরাজ পত্রিকার সাময়িকীতে নজরুল ইসলামকে নিয়ে একটা ছোটো লেখা লিখতে গিয়ে লিখে ফেলেছিলেন : ‘... আপাতদৃষ্টিতে এত বড় একটা প্রবল উৎস ব’লে মনে হয় যে-নজরুলী রচনাকে, তা কি বড় সাহিত্য সৃষ্টি করবে না একদিন? কিন্তু, তবুও, ক্রমে-ক্রমে বুঝতে হল যে, নজরুল ইসলামের লেখায় মহাকবিতার গভীর প্রসাদ নেই, তার প্রতিশ্রুতিও কম।’ লেখাটা ছাপা হবার পরপরই স্বরাজ পত্রিকার কর্তাব্যক্তিরা ক্ষেপে গেলেন খুব। এমনকি তাঁর কাছের মানুষ হুমায়ুন কবির সাহেবও, এতটাই ক্ষেপলেন যে, তাঁর চাকরিটা পত্রপাঠ চলে গেল। এর পর থেকে অনেকটা নিজের মধ্যে গুটিয়ে গেছে সে। কোন কিছু বলতে ভয় পায়। এমনকি নিজের লেখা নিয়েও সে ঠিক নিশ্চিত হতে পারে না। হয়ত বয়সের সাথে সাথে আত্মবিশ্বাস আর সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা কমে আসছে মনে হয়।
-দাদা আমি যাই। কখন সুচরিতা ঘরে ঢুকেছে বুঝতে পারে নি সে। ভাবনার মাঝখান থেকে হঠাৎ সম্বিত ফেরে জীবনানন্দের।
-এখনি যাবি কি? আমি তো কেবল আসলাম। বস, দুটা কথা বলি।
-না দাদা। আজ বাড়ীতে কাজ আছে। ওঁর কয়েক বন্ধুকে সন্ধ্যায় দাওয়াত করেছে। রান্না-বান্নার জোগার দেখতে হবে।
-যা তাহলে। আসিস আবার সময় পেলে।
- তা আমি আসি। তুমি না বললেও আসব। আর তোমার শরীরের খেয়াল রেখ। কি অবস্থা করেছ দেখেছ? রঞ্জু আর মঞ্জুর শরীরও তো ভাল না। ডাক্তারের কাছে যাও না কেন?
-দেখি যাব। একটু টাকার জোগার করতে পারলেই..., অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয় জীবনানন্দ।
সুচরিতাও বোঝে দাদার দাদার ডাক্তারের কাছে যাবার অক্ষমতা মনে করিয়ে দিয়ে সে তাঁকে আঘাত করে ফেলেছে। তাঁর আর কোন কথা মনে আসে না। আসি তাহলে, বলে আস্তে আস্তে সে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। জীবনানন্দ এক মনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। নির্দিষ্ট কিছুর দিকে নয়, কোন কিছুর দিকেই নয়। শূন্য তাকিয়ে থাকা, যেন তাঁর ভবিষ্যত দেখছে, অনেক সম্ভাবনার মাঝে এরকমই শূন্য।
-চিঠি! চিঠি! দরজার কড়া নেড়ে ডাকপিওন হাঁক দেয়। উঠতে গিয়ে দেখে রঞ্জু চিঠিটা নিয়ে আসছে। আবার খাটে বসে পরে সে।
-তোমার চিঠি, বলে চিঠিটা তাঁর হাতে দেয় রঞ্জু। দেশ পত্রিকার খাম দেখে খুশি হয়ে ওঠে সে। নিশ্চই কোন কবিতা ছাপার জন্য মনোনীত হয়েছে। দ্রুত হাতে খামটা খুলে ফেল সে। খুলেই মনটা হতাশায় ভরে ওঠে। তাঁর লেখা চিঠি আর কবিতা ফেরৎ দিয়েছেন সাগরময় ঘোষ। কোন প্রত্যূত্তরের জবাব নেই, শুধু খামে ভরে ফেরৎ পাঠিয়ে দিয়েছে তাঁর লেখা দুটো চিঠি আর আটটা কবিতা। বুকের বামদিকে একটা ব্যাথার অনুভূতি হয় তাঁর। চিনচিনে ব্যাথা, এটাই কি ব্যার্থতার গ্লানির শারীরিক প্রকাশ, ভাবে সে। তারপর নিজের লেখা বালিশে মাথা রেখে পড়তে থাকে সেঃ
১৪.৭.৫৪
প্রিয়বরেষু,
আশা করি, ভালো আছেন। আমি খুব অসুস্থ ছিলাম, এখন আগের চেয়ে ভালো আছি। ‘দেশ’ পত্রিকায় ছাপাবার জন্য এই সঙ্গে কয়েকটি কবিতা পাঠালাম। এর ভেতর থেকে একটি কবিতা শারদীয়া সংখ্যার জন্যে নিয়ে বাকিগুলো আপনার পত্রিকার অন্যান্য সংখ্যায় ছাপাবার সুযোগ পেলে আনন্দিত হব। লেখাগুলোর প্রাপ্তি-সংবাদ ও আপনার চিঠি পেলে আনন্দিত হব। আমার শুভেচ্ছা ও প্রীতিনমস্কার গ্রহণ করুন।
ইতি।
আপনার জীবনানন্দ দাশ
১.১০.৫৪
প্রীতিভাজনেষু,
মাস দেড়েক হল সাত/আটটি কবিতা আপনাকে (বাড়ির ঠিকানায়) রেজিস্ট্রি ক’রে পাঠিয়েছিলাম, সুযোগ-মতো ‘দেশ’এ ছাপাবার জন্যে। আপনার কোনো চিঠিপত্র পাই নি। কবিতাগুলো পাঠিয়ে আপনাকে বিব্রত করা উচিত হয় নি – বোধ করছি। আমার মনে হয়, এখন কবিতাগুলো কিছু-কাল আমার কাছে থাকুক; বিশেষত প্রেমের কবিতা তিনটি (‘সে’, ‘তোমাকে’ ও ‘তোমাকে ভালোবেসে’); কবিতা তিনটি নানা কারণে এখন আর ছাপাব না, ভাবছি। আপনি এই চিঠি পেয়ে কবিতাগুলো আমার ঠিকানায় পাঠিয়ে দিলে খুশি হব। পরে ‘দেশ’-এ আপনার প্রয়োজন হলে আবার পাঠানো যাবে। রেজিস্ট্রি ক’রে পাঠাবার জন্যে টিকিট এই-সঙ্গে পাঠিয়ে দিলাম। আশা করি ভালো আছেন। শুভাকাঙ্ক্ষা ও প্রীতিনমস্কার জানাচ্ছি।
ইতি।
জীবনানন্দ দাশ
-বাবা খাবে না? রঞ্জু এসে জিজ্ঞেস করে।
-উঠি। জবাব দেয় সে। কিন্তু বিছানা থেকে নড়েনা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে ছাদের দিকে। জানালা দিয়ে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসে একটু শীত শীত করে তাঁর। পায়ের কাছে রাখা কম্বলটা আবার গায়ে জড়িয়ে নেয়, আবার ছাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রঞ্জু বাবার মন খারাপ টের পায়। কিছু না বলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। জীবনানন্দও এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে। এর মধ্যে দুবার ঘরে এসে রঞ্জু দেখে গেছে যে বাবা ঘুমাচ্ছেন। সেও পাশের ঘরে গিয়ে একসময় ঘুমিয়ে পরে। শুধু মাত্র এক নিস্তবদ্ধ হাহাকার কবির ঘরজুড়ে পায়চারী করে বেড়ায়।
-৪-
-এই অবেলায় ঘুমাচ্ছ কেন? হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে জীবনানন্দ দেখে খাটের এক কোনায় সুবোধ বসে আছে। পাড়ার কয়েক বাড়ি পরেই থাকে সে। বয়সে তাঁর চেয়ে বছর পাঁচেকের ছোট, কিন্তু এই বয়সে এসে আর বয়সের ব্যাবধান বন্ধুত্বের বাঁধা হয় না। এই পাড়ায় আসার পর থেকেই সুবোধের সাথে তার বেশ আলাপ হয়েছে। এখন যে কজন গুটিকয় বন্ধু অবশিষ্ট আছে, তাঁর মধ্যে সুবোধই তাঁর সব থেকে বেশী খোঁজ খবর রাখে।
- কি হল, ওঠো দাদা। বাড়ীতে বউ আজকে কচুরি করেছিল। ভাবলাম তোমার জন্যও নিয়ে আসি। দুই ভাই আড্ডা দিতে দিতে খাওয়া যাবে।
-আমার তো এখনো দুপুরের খাওয়া হয়নি। কম্বল সরিয়ে উঠতে উঠতে জীবনানন্দ জানায়।
-এই অবেলায় আর ভাত খেয়ে কাজ নেই। তুমি মুখধুয়ে আস। কচুরির গতি করি।
মুচকি হেসে জীবনানন্দ উঠানের দিকে চলে যায় হাত মুখ ধুতে। একটু বেশী সময় নিয়ে চোখে মুখে পানি দেয় সে। তারপর উঠানের দড়িতে ঝোলানো গামছা দিয়ে মুখ মুছে ঘরে ঢুকে দেখে প্লেটে অনেক গুলো কচুরি সাজানো। রঞ্জু আরেকটা ছোট প্লেটে ছয়টা কচুরি আলাদা করে নেয়।
-তোমার বোনের জ্বর সেরেছে? সুবোধ রঞ্জুকে জিজ্ঞেস করে।
ঘাড় হেলিয়ে জবাব দিয়ে বেরিয়ে যায় রঞ্জু। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। জীবনানন্দ প্লেট থেকে একটা কচুরি তুলে কামড় দেয়। চা দেবার কথা বলতে গিয়ে মনে পড়ে বাড়িতে চাপাতা নেই। আবার চুপচাপ আরেকটা কামড় দেয় কচুরী তে। হিং দেয়ায় বেশ স্বাদ হয়েছে। পেটে ক্ষুধা থাকায় বেশ ভাল লাগে কচুরী খেতে। আরেকটা হাতে তুলে নেয় সে।
-কাল রেডিও তে তোমার মহাজিজ্ঞাসা কবিতার আবৃত্তি শুনলাম। তুমি দাদা নিয়মিত রেডিওতে কবিতা পড়লেই পার। বেশ ভরাট গলা তোমার। শুনতে বেশ লাগে।
কিছু বলেনা জীবনানন্দ। মৃদু একটু হাসে। রঞ্জুকে চেঁচিয়ে জল দিয়ে যেতে বলে। তারপর সুবোধকে জিজ্ঞেস করে, খাচ্ছ না কেন?
-আমি বাড়ী গিয়ে খাব। তোমার বৌদির দাদা আজ কাশী থেকে এসে আমাদের বাসায় উঠবে। জলখাবার তার সাথে বসেই খেতে হবে।
কিছু আর বলে না জীবনানন্দ। রঞ্জুর এনে দেয়া জল এক চুমুকে শেষ করে বাইরে থেকে চা আনার জন্য কয়েকটা খুচরো পয়সা দেয় সে রঞ্জুর হাতে। তারপর সুবোধ কে জিজ্ঞেস করল, গত কয়েকদিন তোমার দেখা পেলাম না যে? বাইরে কোথাও গিয়েছিলে নাকি?
-না দাদা বাড়ীতেই ছিলাম। ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরেছিল। কয়েকদিন খুব ভুগিয়েছে।
-হ্যা, এখন এই রোগতো শীতের শুরুতে ঘরেঘরে লেগেই আছে। আমার মেয়েও তো এক সপ্তাহ হল ভুগছে। চল আজকে চা খেয়ে বিকালে হেঁটে আসি। শরীরের ঘাম ঝড়ালে জ্বর-জারি সব পালাবে।
- এই শরীরে মনে হয় না পেরে উঠব। তাছাড়া বাড়িতে লোক আসবে। ফিরতে হবে সন্ধ্যার আগে।
এমন সময় রঞ্জু দুই গ্লাস চা নিয়ে ঢোকে। চা খেতে খেতে অনেক্ষন আড্ডা হয়। কথা বেশীর ভাগ সুবোধই বলে গেল। স্বভাবসুলভ ভাবে জীবনানন্দ চুপচাপ শুনে গেল। সুবোধের একটা গুন ছিল যে সে অনেকের উচ্চারন নকল করতে পারত। বনফুল আর করুনানিধি নিধান এর উচ্চারন ত্রুটির নকল শুনে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে জীবনানন্দ। ঘন্টাখানেক পরে সুবোধ বলে, দাদা যাই।
-আমিও বেরোব একটু হাঁটতে। চল কিছুটা হেঁটে আসি। তাঁর পর বাড়ী যাবে। বৌদির দাদার আসতে তো এখনো দেরী আছে।
-নাহ দাদা। আজকে থাকুক। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে আর একটু জোর দিয়েই অনুরোধ প্রত্যাখান করে সুবোধ। জীবনানন্দও আর জোরাজুরি করে না। বিদায় নিয়ে সুবোধ চলে যায়। জীবনানন্দও হাটতে যাবার জন্য প্রস্তত হতে থাকে। হঠাৎ টেবিলের উপরে লক্ষ্য করে পুরোনো একটা প্রবাসী পত্রিকার নিচে কয়েকটা টাকা চাপা দেয়া আছে। তুলে দেখে দুটো দশ টাকার নোট। সুচরিতা দিয়ে গেছে বরাবরের মত। একটু খুশি হয়ে ওঠে সে। একদমই কোন টাকা ছিলনা হাতে। কুড়ি টাকা খুব কাজে আসবে। নোট দুটো পকেটে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে পরে সে। তারপর হাটতে হাটতে বালিগঞ্জ বাজারে চলে আসে। বাজারে ঘুরতে তাঁর ভালই লাগে। অনেক মানুষ একজাগায় নানা উদ্দ্যেশে ঘুরে বেড়ায়, দোকানীরা নানান কৌশলে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে, কেউ মনের মত দামে কিছু কিনতে না পেরে নিজের মনে গজগজ করে হেটে যাচ্ছে, আরও কত কি। ঘুরেঘুরে এসব একমনে দেখতে থাকে। একজনকে ডাব বিক্রি করতে দেখে সকালের কথা মনে পরে তাঁর। সকালের অপমানের প্রতিশোধ নিতেই দরদাম না করে চারটে ডাব কিনে ফেলে সে। তারপর বাড়ীর দিকে হাঁটা ধরে। বাজারের ভেতর থেকে বের হয়ে ট্রামক্রসিং এর এসে পড়ে। মাথা নিচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটছিল সে। ট্রামলাইনগুলো পার হবার সময় লাইনের মাঝখানে জন্মানো ঘাসে তাঁর চোখ আটকে যায়। হালকা সবুজ অনেক ঘাস লাইনের ফাঁকে এক সারিতে জন্মেছে। বিভিন্ন মাপের, তাদের সবুজটাও যেন মাঠে জন্মানো ঘাসের মত গাড় না। একটু ফ্যাকাশে মত সবুজ, অনেকটা কচি কলাপাতার মত রঙ। রাস্তার মাঝের ৩ ইঞ্চি বাই ৬ ইঞ্চি জায়গায় নিজের সমস্ত সৌন্দর্য নিয়ে দিয়ে জন্মে যাচ্ছে, মরে যাচ্ছে, কখনও উচ্চতায় একটু বড় হলেই কর্পোরেশনের সাফাই অভিযানে উৎখাত হচ্ছে। বাইরের জগতের কাছে সব সময়ই অপ্রকাশিত থেকে যায় তাদের সৌন্দর্য, কারো কোন কাজেও লাগে না তারা কখনও।
ঘাসগুলোর সাথে নিজের খুব মিল খুজে পায় সে। সেও দিনের পর দিন আধো অন্ধকার একটা ঘরে বসে লিখে চলেছে কবিতা, গল্প, উপন্যাস। বেশীর ভাগই কেউ কোথাও ছাপতে চায় না। মাঝে সাঝে যাও ছাপা হয়, কর্পোরেশনের সাফাই কর্মীদের মত সমালোচকরা তাঁর লেখাকে নিশ্চিহ্ন করতে ঝাঁপিয়ে পরে। পারলে তাঁকেও নিশ্চিহ্ন করে দেয়। এসব কথা ভাবতে ভাবতে নিজের ভিতরে একধরনের ক্রোধ, ক্ষোভ, ঘৃনা আর অভিমানের মিশ্র অনুভূতি টের পায়। মাথার মধ্যে একটা অজানা বোধের উপস্থিতি টের পায়। নিজের লেখা কবিতাটার মতঃ
সব কাছ তুচ্ছ হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা — প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়!
টুং টুং শব্দ পেয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে ট্রাম আসছে। শরীরের উপর দিয়ে ট্রাম চলে যাওয়ার চিন্তাটা আবার মাথায় ভর করে। প্রাচীন প্রেতীনির মত মৃত্যুর ধীর পায়ে এগিয়ে আসার ছবিটা সে যেন চোখের সামনে দেখে। মুখে মোহনীয় কিন্তু ক্রুর একটা হাসি নিয়ে মৃত্যু এগিয়ে আসছে। বুকের ভিতর অদ্ভূত উত্তেজনা বোধ করে সে। ঠিক করে ফেলে আজকেই মৃত্যুর মুখোমুখি হবে সে।
পাদটীকাঃ
আমি যখনই জীবনানন্দ দাশ এর কথা ভাবি তখন দুজন মানুষের ছবি আমার সামনে ভাসে। একজন অসাধারণ অতিন্দ্রীয় বোধ সম্পন্ন দীপ্তমান রাজপুত্র, যিনি আমাদের দিয়েছেন প্রেম, বিরহ, জীবনবোধ, বিস্ময় এবং মৃত্যর অতিলৌকিক প্রকাশ।আরেকজন, উপার্জনে অক্ষম, উদাসীন, আত্মবিশ্বাস এ চিড় খাওয়া, সাধারন সমাজে অচল একজন দ্বিধাগ্রস্থ মানুষ।
অনেকটা আবেগের বশেই ২০০৬ সালে আমার অতিপ্রিয় এই মানুষটার শেষ দিন নিয়ে একটা গল্প লিখেছিলাম, যেটা কোথাও ছাপা হয়নি। কয়েকদিন আগে এক বন্ধু কষ্ট করে সেটা টাইপ করে দেয় আমার বাসায় এসে (তাঁর নাকি খুব ভাল লাগছে গল্পটা।) আমিও তাঁর সম্মানে সেটা কপি পেস্ট করে সিসিবি তে পোস্ট করি। দেখুন একজন ব্যার্থ লেখকের চোখে জীবনানন্দ কে......
* ক্যাডেট কলেজ ব্লগে প্রথম প্রকাশিত।