বেনাপোল সীমান্ত এক মাছের বাজার। প্রথমে বাস নিয়ে নামালো এক কাউন্টারে। সেখানে এক ছ্যামড়া এসে আমাদের টিকেট দেখতে চাইলো। টিকেট দেখানো মাত্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের গেঞ্জিতে ধাম ধাম করে গ্রীণ লাইন স্ক্যানিয়া লেখা স্টিকার লাগিয়ে দিলো। অতঃপর আরেকটা ছোট বাসে করে আমরা গ্রীণ লাইনের আরেক কাউন্টারে গিয়ে হাজির হলাম। সেখানে গ্রীণ লাইনের লোকজন আমাদের ডিএম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো। সেই সাথে পাসপোর্ট এবং ৩০০ করে টাকা নিলো ট্রাভেল ট্যাক্সের। সত্যি কথা বলতে সীমান্ত পার হতে তারা খুবই উপকার করলো। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনের জায়গাটাতে প্রবেশ করতেই কাস্টমসের লোকজন খুব ব্যাগ খুলতে চাইলো। কিন্তু আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক একজন গ্রীণ লাইনের লোক ছিল। সে গ্রীণ লাইন বলতেই সব ক্লিয়ার। এর মধ্যে আরেকজন এসে ট্যাক্সের রশিদ এবং পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে গেল। ইমিগ্রেশন ক্রস করে গ্রীণ লাইনের লোকের সাথেই হেঁটে সীমান্ত পার হলাম আমরা। এই সময়টা একটু বিপদজনক। দালালরা ছোঁক ছোঁক করতে থাকে টাকা খাওয়ার জন্য। অপরপ্রান্তে যাওয়ার পর আমাদের পাসপোর্ট দেখে দেখে ভারত সরকারের এম্বারকেশন কার্ড পূরণ করে দিলো ভারতীয় গ্রীণ লাইনের এক চাচা। অতঃপর আমরা ভারতের ইমিগ্রেশনের লাইনে দাঁড়ালাম। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে আছি। আশেপাশে ‘দাদা’, ‘দাদা’ শুনতে পাচ্ছি প্রচুর। প্রকৃতি পুরোই বাংলাদেশের কিন্তু যেখানে যেখানে মানুষ হাত লাগিয়েছে সেখানেই বাংলাদেশের চেয়ে পার্থক্য চোখে পড়ছে। লেখার ফন্ট, বাংলা বাক্য গঠনের ধরণ সবই আলাদা। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশন শেষ হলো। বের হয়ে টং দোকান দেখলাম কতগুলো। পুরোই বাংলাদেশি টং কিন্তু প্রতিটা পণ্য আলাদা। সেটাই স্বাভাবিক। ভাবতেই পারছিলাম না ভারতে প্রবেশ করে ফেলেছি। এবারে ভারতীয় গ্রীণ লাইনে করে কোলকাতার উদ্দেশে যাত্রা শুরু। বাংলাদেশের চেয়ে ওদের বাসের কোয়ালিটি অনেক খারাপ। যশোর রোড ধরে যাচ্ছি তো যাচ্ছিই, পথ আর ফুরোয় না। মাঝে একটা হোটেলে দুপুরের খাওয়ার জন্য বাস থামলো। হোটেলগুলো অদ্ভুত। হোটেল ছাড়িয়ে বেশ খানিকটা দূরে তার বাথরুম। খেতে বসে কী খাবো তা চিন্তা করছিলাম। ওয়েটার দাদা দেখলাম বেশ বিরক্ত হয়ে গেলেন। শুনেছিলাম ভারতে খাবার সস্তা। তিনজন ভাত, মাছ, মাংস নেয়ার পর বিল আসলো ৪০০ রুপির মতো। তখনই জানতাম না, হোটেল নয়, সস্তা স্ট্রিট ফুড। অত্যন্ত বাজে স্বাদ। রান্নার ধরণই আলাদা। এ ধরণের রান্না খেয়ে আমরা অভ্যস্ত না। ক্ষুদার্ত ছিলাম তাই খেয়ে নিলাম। এরপর বাসে চেপে কোলকাতা যাত্রা। রাস্তাঘাট দেখে বোঝার উপায়ই নেউ বাংলাদেশের বাইরে কোনো স্থান এটি। তবে কোলকাতা শহরে প্রবেশ করে পার্থক্য বোঝা গেল। রাস্তাঘাটে দোকানপাটের সাইনবোর্ড, বিলবোর্ড দেখে খুব মজা লাগলো। কেমন অদ্ভুতভাবে বাংলা লেখা। বিকেল ৫ টার কিছু পরে আমরা কোলকাতার মার্ক্যুইজ স্ট্রিটের গ্রীণ লাইনের কাউন্টারে নামলাম। অবশেষে শেষ হলো দীর্ঘ যাত্রা।
গাট্টি-বোঁচকা পিঠে ঝুলিয়ে শুরু হলো আরেক কঠিন কাজ। হোটেল খোঁজা। বাসে সমবয়সী বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দু’জন বাংলাদেশির সাথে পরিচয় হয়েছিল। উনাদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে যায় আমাদের পরে। আমরা এক সাথেই হোটেল খুঁজতে বের হই। ২-৩ টি হোটেলে রুম না পেয়ে শেষ পর্যন্ত চৌরঙ্গী লেনের ক্যাপিটাল গেস্ট হাউজে রুম খালি পাওয়া যায়। আমরা ৩ জন ডাবল বেড রুমে ৮৯০ রুপি ভাড়ার বিনিময়ে উঠি। আর উনারা ২ জন ডাবল বেড রুমে ৮০০ রুপিতে ওঠেন। রুমের অবস্থা মোটামুটি কিন্তু টয়লেটের অবস্থা যাচ্ছেতাই। এ নিয়ে হোটেল কর্তৃপক্ষের সাথে আমাদের কিছুটা বিতণ্ডাও হয়। সবকিছু রফা হলে উঠে যাই রুমে। গোসল করে ফ্রেশ হতে হতে সন্ধ্যা। এবারে আমরা ৩ বন্ধ বের হই নিউ মার্কেটের উদ্দেশে। হাতে তখন বেশ কিছু কাজ। দেশে কথা বলার জন্য সিম কার্ড কিনতে হবে। খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। বাস থেকে নামার পর কিছু সিম বিক্রেতা আমাদের যে অফার দিচ্ছিলো সে অফার পরে নিউ মার্কেটের আশেপাশে খুঁজে আমরা আর পাচ্ছিলাম না। অফারটি ছিল এরকম যে সিমের দাম ২০০ রুপি। সাথে ২০০ রুপি টক টাইম। অর্থাৎ, সিমটি ফ্রি। এ অফার খুঁজে না পেয়ে অবশেষে মাথাপিছু প্রায় ৩০০ রুপি খরচ করে সিম কিনি আমরা। এবারে আমার বন্ধুদের নিউ মার্কেটের দোকান ঘোরা আর আমার খাবার সন্ধানের পালা শুরু হয়।
(চলবে)
Friday, July 4, 2014
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-২
Labels:
Travel,
কোলকাতা,
নিউ মার্কেট,
বেনাপোল,
ভারত,
মার্ক্যুইজ স্ট্রিট,
যশোর রোড,
সীমান্ত
Tuesday, July 1, 2014
আমাদের পশ্চিমবঙ্গ ভ্রমণ-১
কোলকাতা আর দার্জিলিং ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গত ২ জুন রাত ১১ টায় গ্রীনলাইন বাসে করে রওনা দিয়েছিলাম বেনাপোলের উদ্দেশে। পুরো ব্যাচ থেকে কোলকাতা, আগ্রা, দিল্লি ও কাশ্মীর ভ্রমণের উদ্দেশ্য ছিল আমাদের। সে লক্ষ্যেই ভারতের ভিসা করানো হয়। কিন্তু শেষ মূহুর্তে উত্তর ভারত থেকে রেলের ফিরতি টিকেট না পাওয়া যাওয়া পিছিয়ে যায় ট্যুর। তাই আপাতত হাতের কাছের কোলকাতা ও দার্জিলিং এই সাধ মেটানোর পরিকল্পনা করি আমরা তিন বন্ধু। আমি, শ্রাবণ ও মিশু। ৭-১০ দিন থাকার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। আমি যেখানে জীবনেও কোনো কাজের জন্য কোনো প্রকার প্রস্তুতি নিই না, সেই আমি এ যাত্রা ছোটখাটো এক মহাপ্রস্তুতি গ্রহণ করে ফেললাম। দার্জিলিং এ নাকি তখন বৃষ্টির মৌসুম। দেরি না করে জুতার বাক্সে পড়ে থাকার রাবারের ছেঁড়া স্যান্ডেলটা সেলাই করে নিয়ে আসলাম। প্যান্ট সংকটে ভুগছিল ক’দিন ধরেই। বিদেশ-বিভূঁইয়ে গিয়ে প্যান্ট সংক্রান্ত আপদ থেকে মুক্তি পেতে দু’খানা প্যান্ট খরিদ করলাম ধানমন্ডির বিগ বস থেকে। আমি যেহেতু ঘাড়ে-গর্দানে বিগ বস সেহেতু সহজে নিউ মার্কেট এলাকায় আমার প্যান্ট পাওয়া যায় না আজকাল। বিগ বসেই ধরনা দিতে হয়। একটা গ্যাবার্ডিন আর একটা জিন্স। সবকিছু রেডি করে খেয়াল করলাম যাত্রাপথে কান খোঁচানো অতি জরুরি একটা কাজ। সেজন্য ফুটপাত থেকে দু’ প্যাকেট কটন বাড কিনে ফেললাম। কান খোঁচানোর সময়ে যে জাগতিক সুখ লাভ করা যায় তা যারা কান খোঁচাতে অভ্যস্ত তারা ভালোই জানেন।
বাসের টিকেট কাটা হয়েছিল যাত্রার দু’দিন আগে। ঢাকা থেকে বেনাপোল ১২০০ টাকা আর সীমান্ত পার হয়ে ওদিকে হরিদাসপুর থেকে কোলকাতা যাওয়ার জন্য গুনতে হবে আরো ২৮০ রুপি। টিকেট হাতে পাওয়ার পর আমার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মিশু উত্তেজনায় প্রত্যহ ৩-৪ বার ফোন দেয়া শুরু করে দিয়েছিল। ট্যুর উপলক্ষে সে একখানা বিরাট সাইজের লুঙ্গি খরিদ করেছে। বন্ধু-বান্ধবের সামনে কাপড় বদলানোর এর চেয়ে ভালো উপার আর কী আছে? আমি নিয়মিত লুঙ্গি পরি বিধায় লুঙ্গির সংকট আমার কখনই হয় না। আরেক বন্ধু শ্রাবণ বর্ষাতি কেনার জন্য চাংখারপুল ও বঙ্গবাজার এলাকায় টহল দেয়া শুরু করলো। ঐ এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো হোটেল আল-রাজ্জাকে দুপুরের খানা খাওয়া।
যাই হোক, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে পান্থপথের বাস কাউন্টারে হাজির হলাম। কিন্তু বাসের আর দেখা নেই। রাত ১১ টার বাস কাউন্টারে হাজির হলো ১ টায়। শুরুতেই ২ ঘন্টা দেরি। অতঃপর আমাদের সাধের ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। চলছি তো চলছিই। ভোর হওয়ার আগে আগে পৌঁছালাম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। আস্তে আস্তে বাস এগোচ্ছে। বিশাল লাইন। বাস থেকে হাঁটাহাঁটিও করলাম কিছুক্ষণ। এক সময় ফেরিতে উঠলাম। বেশ খিদে পেয়েছে ততক্ষণে। ফেরিতে কিছু খেয়ে পেট খারাপ হবে এ ভয়ে আর কিছু খাওয়া হলো না। ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটতে শুরু করলো। থাকতে না পেরে ১০ টাকার একটা জাম্বো ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আয়েশ করে খেতে খেতে ঘাটে নামলাম আমরা। এরপর আবারো যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। পথ আর ফুরোয় না। ফরিদপুর শেষ করে যশোরের কোনো এক বন্ধ পেট্রোল পাম্পের সামনে বাস গেল নষ্ট হয়ে। এসি বন্ধ। গরমে ঘামছি। কিছুক্ষণ পর ঘামের সাথে যোগ দিল বৃষ্টির পানি। এসি বাসের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে বাসে। বাসভর্তি যাত্রী গ্রীন লাইনকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। সুপারভাইজার সাহেব আশ্বাস দিলেন আরেকটি বাস আমাদের উদ্ধার করতে রওনা হয়েছে। সে বাসেরও দেখা নেই। ঘন্টাখানেক রাস্তার মাঝখানে বসে থেকে উদ্ধারকারী বাস হাজির হলো। আমরা ভিজে ভিজে বাস বদলালাম। নতুন বাসে যেতে যেতে যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে দু’টো দল তৈরি হলো। এক দল চায় খাওয়ার জন্য হোটেলে বাস থামাতে, আরেক দল বাস থামাতে নারাজ। অনেক দেরি হয়েছে, আর দেরি মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, তাদের সাথে গাট্টি-বোঁচকা ভর্তি খাবার। অবশেষে অনেক হৈ চৈ করে বাস একটা হোটেলের সামনে থামানো হলো। সে হোটেলে ঢুকে দেখা গেল তাদের চুলা বন্ধ। কোনো খাবার নেই। তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার অপর পাশে আরেকটু ছোট্ট গ্রামীণ হোটেলে রাবার গরুর মাংস দিয়ে আটা রুটি কোনোমতে নাকেমুখে গোঁজা হলো। এরপর বাসে চেপে একবারে বেনাপোল সীমান্তে।
(চলবে)
বাসের টিকেট কাটা হয়েছিল যাত্রার দু’দিন আগে। ঢাকা থেকে বেনাপোল ১২০০ টাকা আর সীমান্ত পার হয়ে ওদিকে হরিদাসপুর থেকে কোলকাতা যাওয়ার জন্য গুনতে হবে আরো ২৮০ রুপি। টিকেট হাতে পাওয়ার পর আমার ভ্রমণসঙ্গী বন্ধু মিশু উত্তেজনায় প্রত্যহ ৩-৪ বার ফোন দেয়া শুরু করে দিয়েছিল। ট্যুর উপলক্ষে সে একখানা বিরাট সাইজের লুঙ্গি খরিদ করেছে। বন্ধু-বান্ধবের সামনে কাপড় বদলানোর এর চেয়ে ভালো উপার আর কী আছে? আমি নিয়মিত লুঙ্গি পরি বিধায় লুঙ্গির সংকট আমার কখনই হয় না। আরেক বন্ধু শ্রাবণ বর্ষাতি কেনার জন্য চাংখারপুল ও বঙ্গবাজার এলাকায় টহল দেয়া শুরু করলো। ঐ এলাকায় যাওয়ার ক্ষেত্রে তার অন্য আরেকটা উদ্দেশ্যও ছিল। সেটি হলো হোটেল আল-রাজ্জাকে দুপুরের খানা খাওয়া।
যাই হোক, সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে নির্ধারিত দিনে পান্থপথের বাস কাউন্টারে হাজির হলাম। কিন্তু বাসের আর দেখা নেই। রাত ১১ টার বাস কাউন্টারে হাজির হলো ১ টায়। শুরুতেই ২ ঘন্টা দেরি। অতঃপর আমাদের সাধের ভারত ভ্রমণ শুরু হলো। চলছি তো চলছিই। ভোর হওয়ার আগে আগে পৌঁছালাম পাটুরিয়া ফেরিঘাটে। সেখানে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হলো। আস্তে আস্তে বাস এগোচ্ছে। বিশাল লাইন। বাস থেকে হাঁটাহাঁটিও করলাম কিছুক্ষণ। এক সময় ফেরিতে উঠলাম। বেশ খিদে পেয়েছে ততক্ষণে। ফেরিতে কিছু খেয়ে পেট খারাপ হবে এ ভয়ে আর কিছু খাওয়া হলো না। ফেরি দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছানোর আগেই আলো ফুটতে শুরু করলো। থাকতে না পেরে ১০ টাকার একটা জাম্বো ঝালমুড়ি নিয়ে নিলাম। আয়েশ করে খেতে খেতে ঘাটে নামলাম আমরা। এরপর আবারো যাচ্ছি তো যাচ্ছিই। পথ আর ফুরোয় না। ফরিদপুর শেষ করে যশোরের কোনো এক বন্ধ পেট্রোল পাম্পের সামনে বাস গেল নষ্ট হয়ে। এসি বন্ধ। গরমে ঘামছি। কিছুক্ষণ পর ঘামের সাথে যোগ দিল বৃষ্টির পানি। এসি বাসের ফাঁকফোঁকর দিয়ে সমানে পানি ঢুকছে বাসে। বাসভর্তি যাত্রী গ্রীন লাইনকে গালাগালি শুরু করে দিয়েছে। সুপারভাইজার সাহেব আশ্বাস দিলেন আরেকটি বাস আমাদের উদ্ধার করতে রওনা হয়েছে। সে বাসেরও দেখা নেই। ঘন্টাখানেক রাস্তার মাঝখানে বসে থেকে উদ্ধারকারী বাস হাজির হলো। আমরা ভিজে ভিজে বাস বদলালাম। নতুন বাসে যেতে যেতে যাত্রীরা প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করলো। এ অবস্থায় যাত্রীদের মাঝে দু’টো দল তৈরি হলো। এক দল চায় খাওয়ার জন্য হোটেলে বাস থামাতে, আরেক দল বাস থামাতে নারাজ। অনেক দেরি হয়েছে, আর দেরি মেনে নেয়া যায় না। উল্লেখ্য, তাদের সাথে গাট্টি-বোঁচকা ভর্তি খাবার। অবশেষে অনেক হৈ চৈ করে বাস একটা হোটেলের সামনে থামানো হলো। সে হোটেলে ঢুকে দেখা গেল তাদের চুলা বন্ধ। কোনো খাবার নেই। তুমুল বৃষ্টিতে রাস্তার অপর পাশে আরেকটু ছোট্ট গ্রামীণ হোটেলে রাবার গরুর মাংস দিয়ে আটা রুটি কোনোমতে নাকেমুখে গোঁজা হলো। এরপর বাসে চেপে একবারে বেনাপোল সীমান্তে।
(চলবে)
Wednesday, June 25, 2014
অগতানুগতিক কিছু বিষয় যেগুলোর ওপর রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়া সম্ভব-২
পড়াশুনার জন্য রয়েছে অদ্ভুত থেকে অদ্ভুতুরে সব বিষয়। এ পর্বে তেমনই আরো কয়েকটি বিষয় নিয়ে হাজির হলাম।
ঘাসযুক্ত লনের বিজ্ঞান: টার্ফগ্রাস সায়েন্স। পড়ানো হয় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। গলফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলার জন্য সুন্দর সুষম ঘাসযুক্ত মাঠের প্রয়োজন হয়। এ সকল মাঠ কীভাবে তৈরি করতে হয় তা নিয়ে পড়াই এ বিষয়ের মূল লক্ষ্য। রীতিমতো জীববিজ্ঞান, রসায়ন, প্ল্যান্ট সায়েন্স, আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয় ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন টার্ফগ্রাস সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের।
বিনোদন প্রকৌশল: ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা অ্যাট লাস ভেগাসে বিনোদন প্রকৌশলের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। ইউনিভার্সিটির অবস্থান শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এ বিষয়ে আসলে কী পড়ানো হয়। পড়ানো হয় মূলত ক্যাসিনোর বিভিন্ন গেইম তৈরি, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্য ও বাণিজ্যিক উপস্থাপন বিষয়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের বায়োমেকানিক্স থেকে শুরু করে অ্যানিমেট্রনিক্স পর্যন্ত পড়তে হয়।
ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজ: অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলো একই পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করেন। যেমন- ওয়ালমার্ট, ফোর্ড, গ্যাপ, মোটোরালা ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় তা নিয়ে পড়াশুনা করায় ফ্লোরিডার স্টেটসন ইউনিভার্সিটি।
কানাডিয়ান স্টাডিজ: আফ্রিকান, ওরিয়েন্টাল কিংবা আমেরিকান স্টাডিজ রয়েছে। কিন্তু কানাডিয়ান স্টাডিজ? হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রদের জন্য কানাডিয়ান স্টাডিজ খুলে রেখেছে। মার্কিন নাগরিকরা যেন তাদের উত্তর অবস্থিত বিশাল কানাডার মানুষ সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানতে পারে সেজন্য। কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি সব বিষয়েই এখানে পড়ানো হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটি, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক প্ল্যাটসবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্টে কানাডিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়ানো হয়।
জ্যাজ স্টাডিজ:সঙ্গীত ঘরানার অন্যতম এক শাখা জ্যাজ। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। তবে বিশ্বব্যাপী এর বহু ভক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র জ্যাজ মিউজিক শেখা এবং তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ভূমিকা, বিগত দশকগুলোতে জ্যাজ সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে পড়ানো হয় জ্যাজ স্টাডিজে। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ও ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় এ বিষয়টি।
ইকোগ্যাস্ট্রনোমি: ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ানো হয়। মাঠ থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত খাবার কীভাবে পৌঁছায় তাই নিয়েই এদের পড়াশুনা। কতগুলো ধাপ পেরিয়ে কোনো জিনিস মানুষের খাবারে পরিণত হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাস ইকোলজিতে কী প্রভাব বিস্তার করে এসব তাদের পাঠ্য। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি আছে গ্র্যাজুয়েটদের। কৃষি থেকে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সবই পড়তে হয় তাদের। মনে হচ্ছে, এ বিষয়টা নিয়ে আমার পড়া উচিৎ ছিল।
অশ্ববিদ্যা: ঘোড়া নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকে। ওয়েস্টার্ন মুভিতে ঘোড়া নিয়ে খুব ভাবসাবের দৃশ্য থাকে। অশ্বচালনা, অশ্বপালন এবং অশ্বকে বিভিন্ন খেলার জন্য প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো হয় এ অশ্ববিদ্যা বা ইকোয়াইন স্টাডিজে। ম্যাসাচুসেটসের বেকার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অভ মেরিল্যান্ডে এ বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া হয়।
ন্যানিইং: পাশ্চাত্যে ন্যানি খুব পরিচিত একটা বিষয়। বিশেষ করে ধনী পরিবারে ন্যানিদের দেখা যায়। ধনী পরিবারের শিশুদের দেখাশুনা করে থাকেন তারা। বাংলাদেশের বুয়া আর কি। তো এই ন্যানিইং এর ওপর ১২ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয় কেনটাকির সুলিভান বিশ্ববিদ্যালয়। সিপিআর, প্রাথমিক চিকিৎসা, বাচ্চার সুরক্ষাজনিত বিষয়, বাচ্চাকাচ্চাকে আনন্দ দেয়ার কৌশল থেকে শুরু করে বাচ্চা ও বাচ্চার মা-বাপের সাথে “ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন” পর্যন্ত শেখানো হয় এ কোর্সে।
কমিক আর্ট: কমিক বইয়ের মতো অসাধারণ জিনিস আর কয়টা আছে? এই তো টিভি, কম্পিউটার যখন ছিল না তখন ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গল্প বলার জাদুকরী ভূমিকা পালন করেছে কমিক্স। যত আধুনিক প্রযুক্তিই আসুক না কেন টিনটিন, আর্চি, চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টের আবেদন কী কমেছে আমাদের কাছে? বড় বড় কমিক আর্টিস্টরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীতই জন্ম দিয়েছেন অসাধারণ সব কমিক্স বইয়ের। এই কমিক আর্টের ওপর ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস ডিগ্রি প্রদান করে মিনিয়াপোলিস কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন।
বন্দুক বানানো (গানস্মিথিং), ঘড়ি বানানো (ওয়াচস্মিথিং), আউটার ওয়ার্ল্ডের বায়োলজি নিয়েও পড়াশুনার অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে রয়েছে। আছে সার্কাসে পারফর্ম করার বিদ্যা নিয়েও ডিগ্রি। সেগুলো হয়তো হাজির হবো অন্য কোনোদিন।
তথ্যসূত্র: স্টাডি ইন আনইউজুয়াল সাবজেক্টস লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
ঘাসযুক্ত লনের বিজ্ঞান: টার্ফগ্রাস সায়েন্স। পড়ানো হয় পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। গলফ থেকে শুরু করে বিভিন্ন খেলার জন্য সুন্দর সুষম ঘাসযুক্ত মাঠের প্রয়োজন হয়। এ সকল মাঠ কীভাবে তৈরি করতে হয় তা নিয়ে পড়াই এ বিষয়ের মূল লক্ষ্য। রীতিমতো জীববিজ্ঞান, রসায়ন, প্ল্যান্ট সায়েন্স, আবহাওয়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে হয় ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন টার্ফগ্রাস সায়েন্সের শিক্ষার্থীদের।
বিনোদন প্রকৌশল: ইউনিভার্সিটি অব নেভাডা অ্যাট লাস ভেগাসে বিনোদন প্রকৌশলের ওপর ব্যাচেলর অব সায়েন্স ডিগ্রি দেয়া হয়। ইউনিভার্সিটির অবস্থান শুনেই আমরা বুঝতে পারছি এ বিষয়ে আসলে কী পড়ানো হয়। পড়ানো হয় মূলত ক্যাসিনোর বিভিন্ন গেইম তৈরি, সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ, সৌন্দর্য ও বাণিজ্যিক উপস্থাপন বিষয়ে। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের বায়োমেকানিক্স থেকে শুরু করে অ্যানিমেট্রনিক্স পর্যন্ত পড়তে হয়।
ফ্যামিলি এন্টারপ্রাইজ: অনেক বড় বড় কোম্পানি আছে যেগুলো একই পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করেন। যেমন- ওয়ালমার্ট, ফোর্ড, গ্যাপ, মোটোরালা ইত্যাদি। পরিবারের সদস্যদের সাথে ব্যবসায় করার ক্ষেত্রে কী করা উচিৎ আর কী করা উচিৎ নয় তা নিয়ে পড়াশুনা করায় ফ্লোরিডার স্টেটসন ইউনিভার্সিটি।
কানাডিয়ান স্টাডিজ: আফ্রিকান, ওরিয়েন্টাল কিংবা আমেরিকান স্টাডিজ রয়েছে। কিন্তু কানাডিয়ান স্টাডিজ? হ্যাঁ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় তার ছাত্রদের জন্য কানাডিয়ান স্টাডিজ খুলে রেখেছে। মার্কিন নাগরিকরা যেন তাদের উত্তর অবস্থিত বিশাল কানাডার মানুষ সম্পর্কে আরেকটু ভালো করে জানতে পারে সেজন্য। কানাডার ইতিহাস, সংস্কৃতি, রাজনীতি সব বিষয়েই এখানে পড়ানো হয়। ডিউক ইউনিভার্সিটি, জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্ক প্ল্যাটসবার্গ, ইউনিভার্সিটি অব ভারমন্টে কানাডিয়ান স্টাডিজ নিয়ে পড়ানো হয়।
জ্যাজ স্টাডিজ:সঙ্গীত ঘরানার অন্যতম এক শাখা জ্যাজ। বিশেষ করে পাশ্চাত্যে। তবে বিশ্বব্যাপী এর বহু ভক্ত রয়েছে। শুধুমাত্র জ্যাজ মিউজিক শেখা এবং তার ইতিহাস, সাংস্কৃতিক ভূমিকা, বিগত দশকগুলোতে জ্যাজ সঙ্গীতের ব্যবহার নিয়ে পড়ানো হয় জ্যাজ স্টাডিজে। ইউনিভার্সিটি অব নর্থ টেক্সাস, ইউনিভার্সিটি অব লুইসভিল ও ইস্ট ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটিতে পড়ানো হয় এ বিষয়টি।
ইকোগ্যাস্ট্রনোমি: ইউনিভার্সিটি অব নিউ হ্যাম্পশায়ারে পড়ানো হয়। মাঠ থেকে মানুষের প্লেট পর্যন্ত খাবার কীভাবে পৌঁছায় তাই নিয়েই এদের পড়াশুনা। কতগুলো ধাপ পেরিয়ে কোনো জিনিস মানুষের খাবারে পরিণত হয়, মানুষের খাদ্যাভ্যাস ইকোলজিতে কী প্রভাব বিস্তার করে এসব তাদের পাঠ্য। ফুড ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি আছে গ্র্যাজুয়েটদের। কৃষি থেকে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট সবই পড়তে হয় তাদের। মনে হচ্ছে, এ বিষয়টা নিয়ে আমার পড়া উচিৎ ছিল।
অশ্ববিদ্যা: ঘোড়া নিয়ে অনেকের আগ্রহ থাকে। ওয়েস্টার্ন মুভিতে ঘোড়া নিয়ে খুব ভাবসাবের দৃশ্য থাকে। অশ্বচালনা, অশ্বপালন এবং অশ্বকে বিভিন্ন খেলার জন্য প্রস্তুত করা, প্রশিক্ষণ দেয়া প্রভৃতি বিষয়ে পড়ানো হয় এ অশ্ববিদ্যা বা ইকোয়াইন স্টাডিজে। ম্যাসাচুসেটসের বেকার কলেজ এবং ইউনিভার্সিটি অভ মেরিল্যান্ডে এ বিষয়ে ডিগ্রি দেয়া হয়।
ন্যানিইং: পাশ্চাত্যে ন্যানি খুব পরিচিত একটা বিষয়। বিশেষ করে ধনী পরিবারে ন্যানিদের দেখা যায়। ধনী পরিবারের শিশুদের দেখাশুনা করে থাকেন তারা। বাংলাদেশের বুয়া আর কি। তো এই ন্যানিইং এর ওপর ১২ মাসের ডিপ্লোমা ডিগ্রি দেয় কেনটাকির সুলিভান বিশ্ববিদ্যালয়। সিপিআর, প্রাথমিক চিকিৎসা, বাচ্চার সুরক্ষাজনিত বিষয়, বাচ্চাকাচ্চাকে আনন্দ দেয়ার কৌশল থেকে শুরু করে বাচ্চা ও বাচ্চার মা-বাপের সাথে “ইফেক্টিভ কমিউনিকেশন” পর্যন্ত শেখানো হয় এ কোর্সে।
কমিক আর্ট: কমিক বইয়ের মতো অসাধারণ জিনিস আর কয়টা আছে? এই তো টিভি, কম্পিউটার যখন ছিল না তখন ছবির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে গল্প বলার জাদুকরী ভূমিকা পালন করেছে কমিক্স। যত আধুনিক প্রযুক্তিই আসুক না কেন টিনটিন, আর্চি, চাচা চৌধুরী, নন্টে-ফন্টের আবেদন কী কমেছে আমাদের কাছে? বড় বড় কমিক আর্টিস্টরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যতীতই জন্ম দিয়েছেন অসাধারণ সব কমিক্স বইয়ের। এই কমিক আর্টের ওপর ব্যাচেলর অব ফাইন আর্টস ডিগ্রি প্রদান করে মিনিয়াপোলিস কলেজ অব আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন।
বন্দুক বানানো (গানস্মিথিং), ঘড়ি বানানো (ওয়াচস্মিথিং), আউটার ওয়ার্ল্ডের বায়োলজি নিয়েও পড়াশুনার অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে রয়েছে। আছে সার্কাসে পারফর্ম করার বিদ্যা নিয়েও ডিগ্রি। সেগুলো হয়তো হাজির হবো অন্য কোনোদিন।
তথ্যসূত্র: স্টাডি ইন আনইউজুয়াল সাবজেক্টস লিখে গুগলে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
Labels:
Career,
Daily Life,
অগতানুগতিক,
অদ্ভুত বিষয়,
ডিগ্রি,
পড়াশুনা,
বিশ্ববিদ্যালয়,
মজার বিষয়
Tuesday, June 24, 2014
অগতানুগতিক কিছু বিষয় যেগুলোর ওপর রীতিমতো বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি পাওয়া সম্ভব
বহু আগে অদ্ভুত কিছু পেশা নিয়ে লিখেছিলাম। খুঁজতে খুঁজতে অদ্ভুত বা গতানুগতিক নয় এমন কিছু বিষয় পেয়ে গেলাম যার ওপর রীতিমতো উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাচেলর, মাস্টার, পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করা হয়। আমাদের দেশে কেউ শিক্ষা কিংবা শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন নিয়ে পড়াশুনা করলে আমরা অবাক হয়ে যাই, এইটা আবার কোন বিষয়? অথচ সারা পৃথিবীর প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলো পড়ানো হয়। কিন্তু যে বিষয়গুলো সত্যিই অপ্রচলিত এবং কিছু ক্ষেত্রে অদ্ভুত সেগুলো নিয়েই আজকের লেখা।
দ্য বিটলস: হ্যাঁ, ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের ওপরে রীতিমতো ডিগ্রি প্রদান করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ডিগ্রির নাম এম.এ ইন দ্য বিটলস, পপুলার মিউজিক অ্যান্ড সোসাইটি। এখানে গত ৫০ বছরে কী ধরণের পপ সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে, সে সঙ্গীতের ওপর বিটলসের প্রভাব এসব বিষয়ে পড়ানো হয়।
মারিজুয়ানা চাষ: ক্যালিফোর্নিয়ার ওকস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় রীতিমতো মারিজুয়ানা চাষের ওপর ছাত্রদের পড়াশুনা করায়। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসার কাজে মারিজুয়ানার গুণাবলীর বিষয়ে। মারিজুয়ানা চাষ পদ্ধতি, তার ইতিহাস, আইনি দিক নিয়ে পড়ানো হয়। ড্রাগ ডিলিং হচ্ছে এমন সন্দেহে তবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ক্লাস চলতে চলতে সেখানে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিইএ, ইউ মার্শাল আর আইআরএস প্রভৃতি ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিয়ার বানানো: পোশাকী নাম ফারমেন্টেশন সায়েন্স। পড়ানো হয় অ্যাপালাচান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এ বিষয়ে ব্যাচেলর করতে হলে রীতিমতো রসায়ন ও জীববিদ্যার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। পড়তে বিয়ার ব্যবসা ও পরিবেশনার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে। কঠিন অবস্থা।
যৌনতা: সান ফ্রান্সিস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যৌনতা বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। মানুষের যৌন আচরণ, কলা, শিল্প ও সাহিত্যে মানব যৌনতার বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয় এ সাবজেক্টে। ডিগ্রির মূল উদ্দেশ্য সমাজে যৌন হয়রানী বন্ধ করা।
মদ মেকিং: কেতাবী নাম ভিটিকালচার অ্যান্ড এনোলজি। পারফেক্ট মদ বানানো নিয়ে পড়াশুনা। আঙ্গুর চাষের জন্য মাটি পরীক্ষা, আবহাওয়া নির্বাচন থেকে শুরু করে উন্নত মানের মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর বাছাই করে মদ বানানোর সকল প্রক্রিয়া শেখানো হয় এখানে। মদ বাজারজাতকরণের দিকও পড়ানো হয়। নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ের গর্বিত ডিগ্রিদাতা।
সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান: ডিসিশন সায়েন্স। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না?? কেন পারেন না? কীভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এসব কিছুর ওপর পড়াশুনা করে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিশন সায়েন্সের পন্ডিত শিক্ষার্থীরা। ডিসিশন সায়েন্সের ওপর রীতিমতো পিএইচডি ডিগ্রি দেয় তারা। এই পিএইচডিধারী পন্ডিতরা অংক কষে আপনার কোম্পানীর জন্য প্রয়োজনীয় ডিসিশনও নিয়ে দিতে পারে।
জনপ্রিয় সংস্কৃতি: এ বিষয়ের ওপর বিএ ডিগ্রি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাওলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি। সাম্প্রতিক সময়ের টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, গাড়ি, বাড়ি, সঙ্গীত, ম্যাগাজিন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড, সেলিব্রেটিদের জীবনযাপন ভালোমতো খিয়াল করে তা নিয়ে গবেষণা করাই এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ। কীভাবে আগের চেয়ে এখনকার সংস্কৃতি পরিবির্তন হলো তাও তারা খুঁজে বের করে। চমৎকার কিন্তু!
ফুলের দোকানদারি: ফ্লোরাল ম্যানেজমেন্ট। আমাদের শাহবাগের ফুলের দোকানদাররা এই বিষয়ে না পড়েই কঠিন ব্যবসায় করে ফেলছে। কিন্তু মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উৎপাদকের কাছ থেকে ফুল কিনে বাজারজাত করা এবং দোকানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার ওপরে পড়ানো হয়। ফুলের দোকানকে আনন্দদায়ক বাগানের আদলে সাজিয়ে ফুল বিক্রিও যে একটা শিল্প তাও শেখানো হয়। আর ফুল ব্যবসার বাণিজ্যিক দিক (সহজ কথায় বিবিএ) তো অবশ্যই পড়ানো হয়।
নিলামওয়ালা: অকশনিয়ারিং। নিলামে মাল তুলে কীভাবে তা বেচতে হবে এ বিষয়ে ২০ ক্রেডিটের কোর্স করায় পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গ এরিয়া কমিউনিটি কলেজ। রীতিমতো লাইসেন্সড নিলামওয়ালা হওয়া যায় এ কোর্স শেষে পরীক্ষায় পাশ করে।
প্যাকেজিং: প্যাকেজিং বা বাক্স-প্যাটরা বিষয়ে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি ব্যাচেলর, মাস্টার এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। তা কী শেখানো হয় এখানে? পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। দুনিয়া লাখ লাখ ধরণের প্রোডাক্ট প্রতিদিন বিক্রি হয়। এসবই কিন্তু বাজারে আসে কোনো না কোনোরকম প্যাকেটের ভেতরে। এই প্যাকেজিং পরিবেশকে যথাসম্ভব কম ক্ষতি করে কীভাবে করা যায় তাই নিয়ে পড়াশুনা। এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এমন স্বপ্ন দেখেন যে অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো সিস্টেম তারা দাঁড় করাবেন যখন প্যাকেট ছাড়াই পণ্য বিক্রি হবে। (আমার প্রশ্ন- তখন এই পন্ডিতরা করবে কী?)
তথ্যসূত্র: গুগলে স্টাডি ইন আনইউজুয়াল / উইয়ারড সাবজেক্ট লিখে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
দ্য বিটলস: হ্যাঁ, ৬০ এর দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড বিটলসের ওপরে রীতিমতো ডিগ্রি প্রদান করে যুক্তরাজ্যের লিভারপুল হোপ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরো ডিগ্রির নাম এম.এ ইন দ্য বিটলস, পপুলার মিউজিক অ্যান্ড সোসাইটি। এখানে গত ৫০ বছরে কী ধরণের পপ সঙ্গীত গাওয়া হয়েছে, সে সঙ্গীতের ওপর বিটলসের প্রভাব এসব বিষয়ে পড়ানো হয়।
মারিজুয়ানা চাষ: ক্যালিফোর্নিয়ার ওকস্টারডাম বিশ্ববিদ্যালয় রীতিমতো মারিজুয়ানা চাষের ওপর ছাত্রদের পড়াশুনা করায়। তবে অবশ্যই তা চিকিৎসার কাজে মারিজুয়ানার গুণাবলীর বিষয়ে। মারিজুয়ানা চাষ পদ্ধতি, তার ইতিহাস, আইনি দিক নিয়ে পড়ানো হয়। ড্রাগ ডিলিং হচ্ছে এমন সন্দেহে তবে ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে ক্লাস চলতে চলতে সেখানে হাজির হয় যুক্তরাষ্ট্রের ডিইএ, ইউ মার্শাল আর আইআরএস প্রভৃতি ফেডারেল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
বিয়ার বানানো: পোশাকী নাম ফারমেন্টেশন সায়েন্স। পড়ানো হয় অ্যাপালাচান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। এ বিষয়ে ব্যাচেলর করতে হলে রীতিমতো রসায়ন ও জীববিদ্যার ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। পড়তে বিয়ার ব্যবসা ও পরিবেশনার বাণিজ্যিক দিক নিয়ে। কঠিন অবস্থা।
যৌনতা: সান ফ্রান্সিস্কো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে যৌনতা বিষয়ে বিস্তারিত পড়াশুনার সুযোগ রয়েছে। মানুষের যৌন আচরণ, কলা, শিল্প ও সাহিত্যে মানব যৌনতার বহিঃপ্রকাশ প্রভৃতি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করা হয় এ সাবজেক্টে। ডিগ্রির মূল উদ্দেশ্য সমাজে যৌন হয়রানী বন্ধ করা।
মদ মেকিং: কেতাবী নাম ভিটিকালচার অ্যান্ড এনোলজি। পারফেক্ট মদ বানানো নিয়ে পড়াশুনা। আঙ্গুর চাষের জন্য মাটি পরীক্ষা, আবহাওয়া নির্বাচন থেকে শুরু করে উন্নত মানের মদ তৈরির জন্য আঙ্গুর বাছাই করে মদ বানানোর সকল প্রক্রিয়া শেখানো হয় এখানে। মদ বাজারজাতকরণের দিকও পড়ানো হয়। নিউ ইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটি এ বিষয়ের গর্বিত ডিগ্রিদাতা।
সিদ্ধান্ত বিজ্ঞান: ডিসিশন সায়েন্স। আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না?? কেন পারেন না? কীভাবে মানুষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এসব কিছুর ওপর পড়াশুনা করে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিশন সায়েন্সের পন্ডিত শিক্ষার্থীরা। ডিসিশন সায়েন্সের ওপর রীতিমতো পিএইচডি ডিগ্রি দেয় তারা। এই পিএইচডিধারী পন্ডিতরা অংক কষে আপনার কোম্পানীর জন্য প্রয়োজনীয় ডিসিশনও নিয়ে দিতে পারে।
জনপ্রিয় সংস্কৃতি: এ বিষয়ের ওপর বিএ ডিগ্রি দেয় যুক্তরাষ্ট্রের বাওলিং গ্রিন স্টেট ইউনিভার্সিটি। সাম্প্রতিক সময়ের টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, চলচ্চিত্র, গাড়ি, বাড়ি, সঙ্গীত, ম্যাগাজিন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড, সেলিব্রেটিদের জীবনযাপন ভালোমতো খিয়াল করে তা নিয়ে গবেষণা করাই এ বিষয়ের শিক্ষার্থীদের কাজ। কীভাবে আগের চেয়ে এখনকার সংস্কৃতি পরিবির্তন হলো তাও তারা খুঁজে বের করে। চমৎকার কিন্তু!
ফুলের দোকানদারি: ফ্লোরাল ম্যানেজমেন্ট। আমাদের শাহবাগের ফুলের দোকানদাররা এই বিষয়ে না পড়েই কঠিন ব্যবসায় করে ফেলছে। কিন্তু মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে উৎপাদকের কাছ থেকে ফুল কিনে বাজারজাত করা এবং দোকানে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার ওপরে পড়ানো হয়। ফুলের দোকানকে আনন্দদায়ক বাগানের আদলে সাজিয়ে ফুল বিক্রিও যে একটা শিল্প তাও শেখানো হয়। আর ফুল ব্যবসার বাণিজ্যিক দিক (সহজ কথায় বিবিএ) তো অবশ্যই পড়ানো হয়।
নিলামওয়ালা: অকশনিয়ারিং। নিলামে মাল তুলে কীভাবে তা বেচতে হবে এ বিষয়ে ২০ ক্রেডিটের কোর্স করায় পেনসিলভানিয়ার হ্যারিসবার্গ এরিয়া কমিউনিটি কলেজ। রীতিমতো লাইসেন্সড নিলামওয়ালা হওয়া যায় এ কোর্স শেষে পরীক্ষায় পাশ করে।
প্যাকেজিং: প্যাকেজিং বা বাক্স-প্যাটরা বিষয়ে মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটি ব্যাচেলর, মাস্টার এমনকি পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করে। তা কী শেখানো হয় এখানে? পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং। দুনিয়া লাখ লাখ ধরণের প্রোডাক্ট প্রতিদিন বিক্রি হয়। এসবই কিন্তু বাজারে আসে কোনো না কোনোরকম প্যাকেটের ভেতরে। এই প্যাকেজিং পরিবেশকে যথাসম্ভব কম ক্ষতি করে কীভাবে করা যায় তাই নিয়ে পড়াশুনা। এই বিষয়ের শিক্ষার্থীরা এমন স্বপ্ন দেখেন যে অদূর ভবিষ্যতে এমন কোনো সিস্টেম তারা দাঁড় করাবেন যখন প্যাকেট ছাড়াই পণ্য বিক্রি হবে। (আমার প্রশ্ন- তখন এই পন্ডিতরা করবে কী?)
তথ্যসূত্র: গুগলে স্টাডি ইন আনইউজুয়াল / উইয়ারড সাবজেক্ট লিখে সার্চ দিলে প্রথম পাতায় যা আসে সব
Labels:
Career,
Daily Life,
অদ্ভুত বিষয়,
ডিগ্রি,
পড়াশুনা,
বিশ্ববিদ্যালয়
রমজানের প্রস্তুতি
রোজা তো প্রায় এসেই গেল তাই যারা অনেক বিজি থাকেন তাদের জন্য আমার কিছু টিপস রইল। রোজায় যেহেতু সবারই কিছুটা ক্লান্ত লাগে তাই কিছুটা কাজের চাপ যেন কম থাকে তার জন্য চাইলে এইগুলো ট্রাই করে দেখতে পারেন।
১। রোজায় আমরা যে সমস্ত রান্না সচরাচর করে থাকি সেগুলোতে বাটা মশলা লাগে এজন্য তুলনামুলক রোজার মাঝে বাটা মশলা বেশি লাগে। তাই রোজার আগেই বেশি করে আদা, রসুন, পিঁয়াজ সহ সব মশলা বেটে বা ব্লেন্ড করে ফ্রিজের ডিপে তুলে রাখুন। আমি ইতিমধ্যেই করে রেখেছি।
২। ডালের বড়ার জন্য ডাল বেটে ডিপে রাখুন। প্রতিদিন ডাল বাটার ঝামেলা থেকে মুক্ত।
৩। রোজার আগের দিন ছোলা বেশি করে (আমি অন্তত সাত দিনের জন্য রাখি) সিদ্ধ করে প্লাস্টিকের ঢাকনা দেয়া বক্সে তুলে ফ্রিজে রাখুন, ডিপে না রাখলেও চলবে। ওগুলো শেষ হলে আবার বেশি করে একদিন সিদ্ধ করে রাখুন। তাহলে চটপট ছোলা তৈরি করা যাবে।
৪। আগেই কাঁচাবাজার করে ফেলুন এবং কাটা ধোয়া করে ফ্রিজে রাখুন তাহলে আর রোজা থেকে বাজার করা বা তা গোছানো নিয়ে ঝামেলা করতে হবে না।
৫। মাছ, মাংস তো বটেই শাক বাদে অন্যান্য সবজির গায়ে লেগে থাকা পানি ময়লা এগুলো পরিষ্কার করে মুছে রাখলে ১০- ১৫ দিন পর্যন্ত ভাল থাকে।
৬। চাইলে কিছু মাংস ভুনা করে ডিপে রাখতে পারেন, মাছও রাখা যায়। একদিন যতটুকু লাগে এই পরিমান নিয়ে একেকটা বক্সে রেখে দিলে মোটেই স্বাদ নষ্ট হয়না।
৭। খেজুর আগেই বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে ফ্রিজে (ডিপে না) রেখে দিন এরপর ইফতারের প্লেট সাজানোর সময় সরাসরি দিতে পারবেন ধুতে হবে না।
৮। যারা নিজেরাই শিঙ্গাড়া, পুরি বানাতে পারেন, বেশি করে বানিয়ে সংরক্ষন করুন ফ্রিজে।
৯। চাদর, পর্দার মত ভারি কাপড় গুলো ধুয়ে ফেলুন।
এভাবে গুছিয়ে রাখলে কম পরিশ্রমে আর কম সময়ের মাঝেই কাজ শেষ করতে পারবেন বাইরের ভেজাল খাবার খেতে হবে না। যেটুকু সময় বেঁচে গেল সে সময় ব্যবহার করে নিজের ধর্ম নিয়ে পড়ালেখা করা যায়, কারন নিজে যদি জানেন আসলে আপনার ধর্ম আপনার কাছে কি চায় তাহলে কেউ আপনাকে অন্তত ধর্মের দোহাই দিয়ে প্রতারনা করতে পারবে না বা ধোকা দিতে পারবে না।
সবাইকে রমজানের অগ্রিম শুভেচ্ছা।
Sunday, May 25, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৫ম ও শেষ পর্ব
মার্কেটে রাখাইনদের দোকান বলতে গেলে আর নেই। সব বাঙালিদের দখলে। আমরা খুঁজে খুঁজে রাখাইনদের দোকান খুঁজে বের করলাম। বড্ড ভালো লাগে তাদের দোকানে গেলে। বুদ্ধিমান পাঠক আশা করি বুঝে গিয়েছেন, খুলে বলতে হবে না। মার্কেট ঘোরা আমার খুব অপছন্দের কাজ। কিন্তু ভালোই লাগছিল সেখানে। রাখাইন দোকানীদের কথাবার্তা এতো সুন্দর। মন ভালো হয়ে যায়। জিনিসপত্র কিনে সোজা হোটেলে চলে গেলাম। সব কিছু রেখে পুনরায় চলে আসলাম লাবণী পয়েন্টে। সেখান কড়ি-টড়ি কেনা হবে। ঘুরে ঘুরে তাও কেনা হলো। এরপর অটোতে করে যাওয়া হলো মারমেইড ক্যাফেতে। তাদের অন্দরসজ্জা সুন্দর বিধায় যাওয়া হয়েছিল। সব কিছুর দাম আকাশচুম্বী। তিনটা লেমোনেড অর্ডার করা হলো। বসতে অসাধারণ লাগে। মেনুতে লেখা সব খাবারের ওপর ১০ শতাংশ সার্ভিজ চার্জ এবং ৬ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য। ভালো কথা। আমরা হিসাব করে ফেললাম কত টাকা বিল আসবে। লেমোনেড আসলো। বিল দিতে বললাম কেননা একটু তাড়াহুড়ো ছিল আমাদের। রাতের খাবার খেতে যেতে হবে। দেখলাম বিল এসেছে কাঙ্ক্ষিত টাকার চেয়ে ২ টাকা বেশি। পরে আমি আবিষ্কার করলাম তারা খাবারের দামের ওপর সার্ভিজ চার্জ আরোপ করেছে। এরপর সার্ভিস চার্জসহ মোট দামের ওপর আরোপ করেছে ভ্যাট। পুরা বাটপার। এখানেই শেষ নয়। ২৯৮ টাকা বিল এসেছে। ৫০০ টাকা দেয়ার পর ফেরত এনেছে ২০০ টাকা। ২ টাকা গায়েব। আমি তো অত সহজে ছাড়ার পাত্র নই। ওয়েটারকে ডেকে ২ টাকার কথা বললাম। আমার বন্ধুরা খুব বিরক্ত হলো। কিন্তু ২ টাকা কম দিবে কেন? ২ টাকা নিয়ে বের হয়ে আসলাম। রাতে খেলাম পউষীতেই। এবারে আমার বন্ধুরা নিলো একটা করে লইট্টা ফ্রাই আর একটা করে রূপচাঁদা। আমি লইট্টা ফ্রাইয়ের সাথে নিলাম গরুর ভুনা। সবগুলো খাবার স্বাদই অসাধারণ। ভরপেট খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম। পরদিন দুপুর ১২ টায় বিআরটিসি বাসে করে চট্টগ্রাম যেতে হবে।
জিইসি মোড়
১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।
পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।
ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।
জিইসি মোড়
১২ টার বাস ধরতেই আমাদের হিমশিম খাওয়া অবস্থা। ঘুম থেকে উঠলাম সাড়ে ১০ টায়। কোনো মতে রঁসুই ঘরে দুই বন্ধু নাশতা সারলাম। তৃতীয় বন্ধু যথারীতি ঘুমালো। অতঃপর হোটেলে ফিরে সব গোছগাছ করে বিআরটিসির কাউন্টারে গেলাম। সরকারি কোম্পানি তা তার চেহারা দেখেই বোঝা যায়। লাগেজ রাখার কম্পার্টমেন্টে একটা আস্ত স্যুটকেসও আঁটে না। আরো মজার ব্যাপার হলো সেই কম্পার্টমেন্টে তালা লাগানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ছিটকিনি সিস্টেম। পাক্কা সরকারি। বিআরটিসির এসি বাস। জানালাও খোলা যায়। বুঝলাম, সময়ে সময়ে তা নন-এসিতে পরিণত হতে পারে। আমাদের আশংকার সত্যে পরিণত হলো চিটাগাং শহরে পৌঁছানোর পর। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে রাস্তায় কোমর সমান পানি। বাঘা বাঘা সোহাগ, বাগদাদ এক্সপ্রেসের বাস সারি ধরে ফ্লাইওভারের ওপরে থেমে আছে। নিচে নামছে না পানির ভয়ে। পানিতে নামলেই ইঞ্জিনে পানি প্রবেশ করে অচল হয়ে যাবে বাস। পাক্কা দুই ঘন্টা বাস ফ্লাইওভারের ওপরে। বাস থেকে নেমে হেঁটে বেড়াচ্ছি। একটা শসা, গাজরের ট্রাকও থেমে আছে। লোকজন সেখান থেকে নিয়ে নিয়ে শসা গাজর চিবুচ্ছে। অতঃপর পানি না কমলেও আমাদের ড্রাইভার সিদ্ধান্ত নিলো সামনের বাসগুলোর পাশ কাটিয়ে পানির ওপর দিয়েই বাস নেবে। এক যাত্রী চিৎকার করে বলে উঠলো “He is a brave Driver”. আমাদের ব্রেভ ড্রাইভার বীরত্বের সাথে পানির ওপর দিয়ে বাস টেনে নিয়ে আমাদের জিইসি মোড়ে নামিয়ে দিলো। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয় হয়। বিকেল ৪ টার পরিবর্তে সন্ধ্যা ৭ টায় পৌঁছালাম চিটাগাং এ বন্ধুর বাসায়। বন্ধুর মা অর্থাৎ খালাম্মা অসাধারণ সব আইটেম তৈরি করে রেখেছিলেন আমাদের জন্য। ঝরঝরে খিচুড়ি, মুরগির মাংস ভুনা আর গরুর ঝাল মাংস। সাথে আমের আচার এবং আম মাখা। চিংড়ি দিয়ে সবজিও ছিল। গপাগপ গিলতে লাগলাম সব। গলা পর্যন্ত খেয়ে এক কাপ চা। বুকে তখন সুখের মতন ব্যথা।
পরদিন ভোরে সুবর্ণ এক্সপ্রেসে ঢাকা ফিরবো। টিকেট যথারীতি নেই। বন্ধুর চাচা ৩ টা টিকেট ম্যানেজ করে দিলেন। আমরা খাওয়া-দাওয়া সেরে শহরের ভেতরেই ঘুরতে বের হলাম। আমিরবাগ এলাকা টহল দিলাম। হঠাৎ দু’ বন্ধু প্রস্তাব করে বসলো হান্ডিতে খাওয়ার। চট্টগ্রামে এসে হান্ডিতে না খেলেই নয়। আরেক বন্ধুর কাছে ফোন করে খোঁজ নিলাম হান্ডির কী কী আইটেম খাবো। তার পরামর্শেই অর্ডার করলাম হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি আর ফালুদা। আরো অর্ডার করা হলো কাজু বাদামের সালাদ আর কুলফি। কাজু বাদামের সালাদ ছিল চমৎকার। প্রচুর মুরগির মাংস দেয়া তাতে। আর হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানিটা আমার এখন পর্যন্ত খাওয়া সেরা হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি। অসাধারণ স্বাদ। ওপরে কাজু বাদাম ছড়ানো। সাথে সুন্দর করে সেদ্ধ ডিম দিয়ে ডেকোরেশন করা। ভেতরে ৪ টুকরো খাসির পিস। এক কথায় অপূর্ব। আর খাওয়া শেষে কুলফি আর ফালুদা যে কী লাগলো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ঢেঁক তুলতে তুলতে বের হলাম। বাসায় ফিরে ঘুম দিলাম। সকাল ৬ টা ৪০ এ বাস।
ভোরে ওঠা আমাদের সবার জন্যেই কষ্টকর। কষ্ট করে ৬ টায় উঠে ৬ টা ৩৮ এ সিএনজিতে করে পৌঁছালাম রেল স্টেশনে। বগি পর্যন্ত যেতে যেতে ট্রেন চলা শুরু করলো। কোনোমতে একটা বগিতে উঠে ভেতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছালাম নিজেদের বগিতে। দুপুর ১ টায় পৌঁছালাম ঢাকায়। শেষ হলো আমাদের ৩ বন্ধুর অসাধারণ এক কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সফর।
Saturday, May 24, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৪র্থ পর্ব
হিমছড়িতে পৌঁছেই ঝর্ণা খোঁজা শুরু করে দিলাম। দেখলাম ১৩ বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ঢোকার গেইট হয়েছে। ঝর্ণা দেখার কম্পাউন্ডে ঢুকতে ২৩ টাকার টিকেট কিনতে হয়। ১৫ টাকা টিকেটের দাম আর বাকিটা ভ্যাট (ভ্যাট আর শান্তি দিলো না)। গেইট দিয়ে প্রবেশ করতে দেখলাম তীর চিহ্ন দিয়ে বড় ঝর্ণার দিকে যাওয়ার পথ। ঝর্ণা সামনে গিয়ে আমি যারপরনাই অবাক হয়েছি। এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে ঝর্ণা। চেনার কোনো উপায় নেই। ঝর্ণার উচ্চতা আমার চেয়ে একটু বেশি হবে। পাহাড় ভেঙে ঝর্ণা ছোট হয়ে গিয়েছে। ঝর্ণার উৎসের দিকে যাওয়াও নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে। দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে মিনি ঝর্ণায় একটু হাত-পা ভেজালাম। ক্যামেরা নেই, ছবি তোলা হলো না। স্থানীয় ফটোগ্রাফাররা ছবি তুলে মেমরি কার্ডে দিতে চাইলো, কিন্তু সে বস্তুও আমাদের সাথে নেই। অতঃপর সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে ওঠার প্রস্তুতি নিলাম। উঠছি তো উঠছি, সিঁড়ি আর শেষ হয় না। হাঁসফাঁস অবস্থা আমার! আর পারি না। মানুষজনও দেখি সব হাঁপাচ্ছে। প্রায় শেষ পর্যন্ত ওঠার পর একটা সমতল জায়গায় আমার বন্ধুরা ডাবের পানি পান করলো। খালি হাতে উঠতেই যেখানে খবর হয়ে যায় সেখানে ডাবওয়ালা কীভাবে প্রতিদিন একগাদা ডাব নিয়ে উঠে আমার কোনো ধারণা নেই। আমি আর পারছিলাম না উঠতে। আমার বন্ধুরা চূঁড়ায় উঠলো। আমি নেমে এসে সমুদ্র সৈকতের পাড়ে বালির বস্তার ওপর শুয়ে পড়লাম। বুক ভরে বাতাস নিলাম। হানিমুনে আসা নবদম্পতিদের আড়চোখে লক্ষ্য করলাম। তাদের আনন্দে আমিই যেন আনন্দিত হয়ে পড়ছিলাম। প্রায় ৪৫ মিনিট একা একা খুব চমৎকার একটা সময় কাটালাম সাগড় পাড়ে। আকাশে তখন ঘন মেঘ। রোদের জন্যে তাকানোও যায় না ভালো করে। রোদ চশমাই ভরসা। এরমধ্যে আমার বন্ধুরা আমাকে ফোন দিয়ে অটো স্ট্যান্ডে যেতে বললো। ইচ্ছে ছিল সাগর পাড়ে বসে এক গেলাস জুস পান করবো। সে সুযোগ না দিয়ে তারা ১২০ টাকায় লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত অটো ঠিক করে ফেললো। মনোরম পথ ধরে লাবণীতে পৌঁছালাম।
এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।
(চলবে)
এক বন্ধুর ওপর ফরমায়েশ ছিল বার্মিজ বিছানার চাদর কেনার। সাগড় পাড়ের দোকানে কিছু পছন্দ না হওয়ায় অটোতে করে চলে গেলাম শহরে। আমাদের জানা ছিল কক্সবাজারে বার্মিজ মার্কেট একটাই। কিন্তু শহরে প্রবেশ করে একের পর এক বার্মিজ মার্কেট দেখে তো আমরা হতবাক। “আলমাস বার্মিজ মার্কেট”, “রতন বার্মিজ মার্কেট”সহ আরো কত পদের বার্মিজ মার্কেটের সমাহার সেখানে। শহরে প্রবেশ করার পর থেকেই লক্ষ্য করছিলাম বয়স্ক রাখাইন মহিলারা কোন দিক থেকে যেন আসছেন। এদিকে মার্কেটের গায়েও দেখলাম ঠিকানা লেখা ‘বৌদ্ধ মন্দির সড়ক’। বন্ধুদের এক রকম জোর করেই বৌদ্ধ মন্দির খোঁজার অভিযানে শরিক করলাম। পেয়েও গেলাম এক সময়। বাঙালিদের সেখানে প্রবেশ করতে না দেখে তারা অত্যন্ত ভীত। ঢুকতে পারবো কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকা সত্ত্বেও ঢুলে পড়লাম। প্রধান দরজা পার হতেই চলে এলাম দুই থেকে তিনশ’ বছর আগে। আধুনিক শহর আর প্রযুক্তিময় কৃত্রিমতার কোনো ছোঁয়া সেখানে নেই। মনে হচ্ছিল তিব্বতের নিঝুম কোনো মন্দিরে যেন চলে এলাম। ল্যাপটপ, কম্পিউটার, টেলিভিশন, মোবাইলের সভ্যতা এখানে পৌঁছায় নি। অদ্ভুত এক শান্তি কাজ করছি। কিছু দূর এগোতে এক মহিলা আমাদের স্যান্ডেল খুলে রেখে বললেন। আমরা খালিয়ে পায়ে ঘুরে দেখলাম গোটা মন্দির। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের শান্ত-সৌম্য-পাণ্ডিত্যপূর্ণ দৃষ্টিতে আমাদের দেখছিলেন। শুনলাম একটু পরেই প্রার্থনা শুরু হবে। এর আগেই বেরোতে হবে আমাদের। এর মধ্যে মাগরিবের আযানও শুনতে পেলাম কাছে মসজিদ থেকে। রাখাইন তরুণীরা অদ্ভূত এক ধরণের জলাধার থেকে পানি নিয়ে হাতমুখ ধুচ্ছিল। আমার বুকের ভেতরে তখন অদ্ভুত এক হাহাকার যেন। বিদ্যুৎ ছিল না। মোমবাতি জ্বলছে ঘরে ঘরে। আলো ছায়ার এক রহস্যময় পরিবেশ। এর মাঝে অনিন্দ্য সুন্দরী রাখাইন তরুণীরা। সব মিলিয়ে আমি অভিভূত। এক বাঙালি গাইড নিজে থেকে আমাদের কয়েকটি বুদ্ধ মূর্তি দেখালো। পালি ভাষায় লেখা কয়েকটি লাইনও রয়েছে মন্দিরের বিভিন্ন কক্ষের সামনে। একটি কক্ষে দেখলাম ছোট ছোট পাত্রের পানিতে ফুলের পাপড়ি রাখা। গাইড বললো, রাখাইন তরুণ-তরুণীরা মনে মনে একটা ইচ্ছা করে এখানে মন্ত্র পড়ে ফুল রেখে গেলে তাদের বিশ্বাস মনের আশা পূর্ণ হবে। মন্দির ঘোরা শেষে বের হওয়ার সময় বাঙালি গাইড অর্থ চেয়ে বসলো। দুইশ’ টাকা দিয়েও তার মন ভরানো গেল না। আরো ২০ টাকা দিয়ে কোনোমতে বের হয়ে এলাম আমরা। এরপর পাশের রাখাইন পল্লী ঘুরে দেখলাম ৫ মিনিটের জন্য।
(চলবে)
Labels:
Travel,
কক্সবাজার,
ঝর্ণা,
বার্মিজ মার্কেট,
বুদ্ধ মূর্তি,
বৌদ্ধ মন্দির,
ভ্রমণ,
রাখাইন,
সমুদ্র,
সৈকত,
হিমছড়ি
Wednesday, May 21, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ৩য় পর্ব
কক্সবাজারে দ্বিতীয় দিনটা ছিল খুব কার্যকর। আগের পর্ব শেষ করেছিলাম সকালের নাস্তায়। সেখান থেকেই আজকের গল্প শুরু করছি। আমাদের ধারণা ছিল নাস্তা সেরে বাসায় গিয়ে দেখবো আমাদের ঘুমন্ত বন্ধু জেগে গোসল করে রেডি হয়ে থাকবে। কিন্তু না! সে তখনও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে। তাকে জোর করে ঘুম থেকে তুলে বাথরুমে পাঠালাম। নিজেরাও আঁটতে থাকলাম পরবর্তী পরিকল্পনা। ঠিক হলো দুপুরে পউষী রেঁস্তোরায় খাবো। এটা নাকি কক্সবাজারের সেরা বাংলা খাবার রেঁস্তোরা। তিন বন্ধু ফ্রেশ হয়ে ফুরফুরে মেজাজে রিক্সা ঠিক করলাম। এক রিক্সায় তিনজন এবং সে তিনজনের ভেতরে আমিও আছি। যেখানে আমি একাই দু’ জনের সমান সেখানে রিক্সাওয়ালা কতটা সাহসী হলে আমাদের তিনজনকে নিতে রাজি হয়? ২০ টাকার বিনিময়ে সে শুধু আমাকেই না, আমার দু’ বন্ধুকেও বহন করতে রাজি হলো। রিক্সা চলছে তো চলছেই, আর পৌঁছাই না আমরা। আমাদের ধারণা ছিল না যে পউষী শহরের ভেতরে। ভেবেছিলাম যথারীতি সব রেঁস্তোরাই সৈকতের সাথে সমান্তরালে। পৌঁছাচ্ছি না দেখে এক সময় কিছুটা চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রিক্সাওয়ালা আমাদের অন্য কোথায় নিয়ে যাচ্ছে না তো?? বেশ একটা সাসপেন্স। আমার চাঁটগাইয়া ফাজিল বন্ধু এরপর চাপাবাজি শুরু করলো। রিক্সায়ালাকে শুনিয়ে শুনিয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো “আমরা যে কক্সবাজারে আসছি ওসি সাহেবকে জানানো হইসে তো”? আমি বললাম “হ্যাঁ সে-ই তো সব ব্যবস্থা করলো”। এরপর তার প্রশ্ন “এসপি সাহেব”। আমি দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বললাম “স্যার সব জানেন”। এবার তিনগুণ ভাব নিয়ে আমার বন্ধুর প্রশ্ন “ম্যাগজির আর রিভলবার কি একসাথেই আছে?” আমার ততক্ষণে ফিচলা হাসি বের হয়ে গিয়েছে। যা হোক, ওসি সাহেবের ভয়েই কিনা জানি না আমরা খুব দ্রুত পউষীর সামনে এসে পৌঁছালাম। ঠিক তখনই আবিষ্কার হলো আমাদের আরেক বন্ধুর এক পায়ের স্যান্ডেল গায়েব। তিনজন ওঠায় এক পায়ের স্যান্ডেল খুলে সে পা উপরে রেখেছিল। পথিমধ্যে স্যান্ডেলখানা পড়ে গিয়েছে। এবার সে রিক্সা ঘুড়িয়ে স্যান্ডেল উদ্ধারে রওনা হলো। ওসি সাহেবের বিশেষ অতিথিরা অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারলেও স্যান্ডেল উদ্ধার করতে সক্ষম। কেননা আমার বন্ধু আধা ঘন্টা পর মহানন্দে দাঁত বের করে স্যান্ডেল নিয়ে হাজির হলো। তদন্ত করে আবিষ্কার করা হলো যাত্রাপথের এক স্পিড ব্রেকারের ঝাঁকুনিই স্যান্ডেল ভাইয়াকে গুম করে দিয়েছিলেন।
পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে
পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।
হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড
১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম
পউষী রেঁস্তোরার ভেতরে
পউষীর ব্যাপার স্যাপার দারুণ। পরিবেশন এক শিল্প। বাটিতে করে এলো গরম পানি আর প্লেটে চাক করে কাটা লেবু। প্লেটে একটু করে গরম পানি ঢেলে লেবু দিয়ে ঘষে প্লেট পরিষ্কার করতে হবে। চমৎকার একটা ব্যাপার। এ কাজ করার পর প্লেটটা গরম হয়ে যাবে। আর তখন গরম খাবার আর গরম প্লেটের আহার বিলাস হবে অসাধারণ। আমরা অর্ডার করলাম ডাল, ভাত, সবজি আর লইট্টা ফ্রাই। গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম অসম্ভব সুস্বাদু সে খাবার। চালগুলোও অনেক চিকন। কী চাল তা বুঝলাম না। তবে অন্য হোটেলের চেয়ে উন্নত মানের। ঝরঝরে করে রাঁধা। ওদের ফ্রিজে ছোটবেলার স্প্রাইটের কাঁচের বোতলগুলোও দেখলাম। থাকতে না পেরে একটা নিলাম। গরমে আরাম পেলাম ব্যাপক। পউষীর আরেক দারুণ ব্যাপার হলো খাবারের সাথে কমপ্লিমেন্টারি দু’ পদের টমেটোর চাটনি। সব মিলিয়ে পউষীকে অন্য রেঁস্তোরার চেয়ে উপরে রাখতেই হয়। লইট্টা ফ্রাই যতই খাই ততই খেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু বাজেটের দিকে নজর রেখে খুব বেশি খেলাম না। অবশ্য আমাদের সাধারণ খাওয়াই অনেকের কাছে অনেক বেশি। খাওয়া শেষে ডেজার্ট হিসেবে দই আর কাস্টার্ড খাওয়া হলো। বিল মিটিয়ে বের হয়ে অটো ভাড়া করার প্রয়াস হাতে নিলাম। উদ্দেশ্য হিমছড়ি। সব অটো আপ-ডাউন হিসেবে যেতে চায়। তাদের আবার প্যাকেজও আছে। যাবো, এক ঘন্টা থাকবো, এরপর ফিরবো। ৪৫০ টাকা দিতে হবে। আর দু’ ঘন্টা থাকলে ৬০০ টাকা। আমরা শুধু যাওয়ার জন্যেই ভাড়া ঠিক করলাম। কেউ ২০০ এর নিচে যাবে না। মূলামূলি করে ১৮০ তে এক চাচাকে রাজি করিয়ে রওনা হলাম হিমছড়ির পথে।
হিমছড়ির পথে মেরিন ড্রাইভ রোড
১৩ বছর পর হিমছড়ির ঝর্না দেখতে যাচ্ছি। মনটা খুব ভালো। আর সেদিন আবহাওয়াও চমৎকার ছিল। সাগরের পাড় ঘেষে রাস্তা দিয়ে চলছে আমাদের অটো। অন্য পাশে ছোট ছোট টিলা। অটোগুলো খুব দ্রুত যেতে পারে না। মাঝে মাঝে অন্য একটি অটো পাশে এসে আর ওভারটেক করতে না পেরে সমান্তরালে চলতে থাকে। তখন দু’ চালকের মাঝে একটা স্নায়ুযুদ্ধ শুরু হয়। অপর দিক থেকে অন্য একটি বাহন না আসা পর্যন্ত এ যুদ্ধ চলে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ট্রিপ অ্যাডভাইজার ও প্যানারোমিও ডট কম
Labels:
Travel,
অটো,
কক্সবাজার,
খাওয়া-দাওয়া,
পউষী,
মেরিন ড্রাইভ রোড,
রেঁস্তোরা,
হিমছড়ি
Thursday, May 15, 2014
একটি চিরাচরিত ‘ঘুরে এলাম অমুক জায়গা’ টাইপ লেখা- ২য় পর্ব
সঙ্গীত চর্চা করতে করতে একেবারে কলাতলী পয়েন্টে চলে আসলাম আমরা। সেখান থেকে রিক্সা নেব না অটো নেব সে সিদ্ধান্থীনতায় কাটলো অনেকটা ক্ষণ। অতঃপর দু’টা রিক্সা নিয়ে ফিরে এলাম সুগন্ধা পয়েন্টের হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়লাম রাতের খাবারের সন্ধানে। কিছুটা দূরে বিধায় ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায় না গিয়ে হাঁটাপথে খাওয়ার হোটেল খুঁজতে লাগলাম। লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তি স্থানীয় জান্নাত হোটেলের কার্ড ধরিয়ে দিলেন। এতো ক্লান্ত বোধ করছিলাম যে ভালোমন্দ যাচাই না করে ঢুকে পড়লাম সেখানে। ওয়েটার বাবাজি অনেকক্ষণ পর হোটেলের বাইরে থেকে প্রবেশ করলেন। আমরা ছাড়া কোনো কাস্টমার নেই সেখানে। হিসাব-নিকাশ করে ডাল আর ভাতের সাথে অর্ডার করলাম ভর্তা-ভাজি। কক্সবাজার যখন এসেছি রূপচান্দা ফ্রাই যত দামই হোক, একটু চেখে দেখা দরকার সে আশায় অর্ডার করলাম। আকাশচুম্বী দাম। ৩০০ টাকা। ওয়েটার সাহেব বললেন রূপচান্দা আসতে দেরি হবে। কতক্ষণের জবাবে বললেন ১০ মিনিট। আমার চাটগাঁইয়া বন্ধু পাল্টা প্রশ্ন করে বসলো, “১০ মিনিট মানে কি ১০ মিনিট?” এবার মাথা চুলকাতে চুলকাতে ওয়েটার বললেন ইয়ে মানে ১৫ মিনিট। আমরা ভর্তা ভাজি দিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। টমেটো ভর্তাটা এখনও মুখে লেগে আছে। অন্যান্য আইটেম ততটা ভালো লাগে নি। খাওয়া শেষ হওয়ার পর আসলো রূপচাঁদা। তিন জন মিলে সেটাকে নিমিষে সাবাড় করলাম। দাম মিটিয়ে হোটেলের পথে হাঁটা দিলাম।
ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।
বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।
(চলবে)
ভাবছিলাম একটা ঠান্ডা কোক নিয়ে হোটেলে ফিরি। আমাদের মতিগতি ধরে ফেললো এক চাল্লু দোকানদার। ডাক দিলো ঠান্ডা কিছু লাগবে নাকি বলে। তার দোকানে সব কিছুর দাম বাড়তি। আবার মোটের ওপরও দুই টাকা বেশি রাখতে চায়। তার বক্তব্য হলো, সে আমাদের ছোট ভাই। ট্যুরিস্ট এলাকা। দাম একটু বাড়তি। আমরা বললাম যেহেতু আমরা তার বড় ভাই তাইলে দাম একটু কম রাখেন। এবার তার নাকি কান্না। সে গরিব মানুষ। দোকান তার না। দোকানে সে চাকরি করে। খাতির করে সে চা খাওয়াতে পারবে কিন্তু দাম কম রাখতে পারবে না। তারপরও ভুং চুং করে ৫ টাকা কমানো হলো। কঠিন চাল্লু পাবলিক সে। হোটেলে ফিরে ৩ বন্ধু কোকা কোলা পান করতে করতে টিভিতে ট্রাভেল অ্যান্ড লিভিং দেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে অতঃপর ঘুমিয়ে পড়লাম।
আমার বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল তারা পর দিন খুব ভোরে উঠে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার পাশাপাশি জগিং করবে। কীসের কী! সাড়ে ১০ টায় ঘুম থেকে জেগে দেখি আমিই ফার্স্ট। দুইজন বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। এদিকে রাতে এলাকার ভোল্টেজ আপ ডাউন করায় এসি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। ফ্যান একটু চলে তো একটু থামে অবস্থা। ফলে কারোরই ঘুম ভালো হয় নি। দু’জনকে জাগানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে নিজেই নাস্তা খেতে বেরিয়ে পড়লাম। হোটেলের সামনের সাথী রেঁস্তোরায় একমাত্র কাস্টমার হিসেবে প্রবেশ করলাম। পরোটা, ডিম ভাজি আর সবজি দিয়ে নাস্তা সারলাম। এরপর বাইরে এসে পান করলাম এক কাপ অদ্ভুত স্বাদের চা। মনে হচ্ছিল চায়ের মধ্যে চিনি না দিয়ে সরাসরি আখের রস ঢালা হয়েছে। নাস্তা সেরে রুমে ফিরে দেখি দুই বান্দা তখনও ঘুমাচ্ছে। একজনকে ওঠানো গেল। অপরজন বেহুঁশ। যেই জন উঠলেন তার সাথে দ্বিতীয় নাস্তা সারতে বের হলাম। ধানসিঁড়িতে গিয়ে শুনলাম নাস্তা শেষ। থাকবেই বা কী করে? তখন বাজে দুপুর ১২ টা। নাস্তা নেই কিন্তু তাদের ফ্রিজে দেখলাম মিক্সড ফ্রুট নামে এক ডেজার্ট রাখা। কক্সবাজারের সব রেঁস্তোরাতেই এ জিনিস মিলবে। জিনিসটা আসলে কাস্টার্ড। দাম ৬০ টাকা। দু’ বন্ধু মিলে একটা মিক্সড ফ্রুট খেলাম। নাস্তা না পাওয়ার বিরহে বের হলাম। ইলশে গুঁড়ি শুরু হলো। রঁসুই ঘর নামে এক হোটেলে ঢুকে জানতে পারলাম নাস্তা আছে। বসে পড়লাম। আমি পরোটা খেলাম চায়ে ডুবিয়ে, বন্ধু ডিম পোচ দিয়ে পরোটা। বের হওয়ার সময় দেখলাম সেখানে বেলিসিমোর একটা ফ্রিজ আছে। অতিরিক্তি খাওয়ায় হালকা বমি ভাব হচ্ছিল। আইসক্রিম খেলে ভালো লাগবে এ আশায় (আসলে আইসক্রিম খেতে ইচ্ছা করছিল) দু’জন দু’টা মিনি চকবার যেটার নাম সম্ভবত ‘জি’ নিয়ে ফেললাম। খেতে খেতে হোটেলের দিকে ফিরলাম।
বুদ্ধিমান পাঠক নিশ্চয়ই ইতিমধ্যে ধরে ফেলেছেন যে আমাদের কক্সবাজার ভ্রমণে ঘোরাঘুরির চেয়ে খাওয়াই ছিল বেশি। পরের পর্বে হাজির হচ্ছি পৌষী রেঁস্তোরায় উদরপূর্তি আর হিমছড়ি ট্রিপ নিয়ে।
(চলবে)
Labels:
Travel,
কক্সবাজার,
খাওয়া-দাওয়া,
ভ্রমণ,
রূপচাঁদা,
রেঁস্তোরা,
সমুদ্র সৈকত,
হোটেল
Monday, May 12, 2014
একটি চিরাচরিত 'ঘুরে এলাম অমুক জায়গা' টাইপ লেখা- ১ম পর্ব
পড়াশুনা শেষ। বেকার বন্ধুদের তালিকায় নাম লেখায় ফেললাম। কোথাও ঘুরতে যাওয়ার জন্য আদর্শ সময়। নো পরীক্ষা, নো ক্লাস, নো অ্যাসাইনমেন্ট। কই যাবো কই যাবো করতে করতে পান্থপথ এলাকার কোনো এক টং দোকানে চা (আসলে শরবত) খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম কক্সবাজারেই যাবো। ইচ্ছা ছিল বান্দরবান বা সিলেট যাওয়ার। কিন্তু সেখানে গিয়ে আবার গাড়ি ভাড়া করে এখানে সেখানে যাওয়া সম্ভব না। অত টাকা মা-বাবার কাছ থেকে নেয়া সম্ভব না। বন্ধুর বাড়ি আবার চট্টগ্রাম। কক্সবাজার গেলে হোটেলে ট্যাকা দেয়া লাগবে না। “বন্ধুর মামার বন্ধুর” হোটেল। আর কী লাগে! বুধবার টিকেট কাইটা ফেললাম। বৃহস্পতিবার রাতে বাস।
বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে। সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।
কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!
(চলবে)
বাস কাউন্টার বাসার অতি কাছে। হেঁটে গেলে ৫ মিনিটও লাগে না। বাস ছাড়তে দেরি নাই। রিক্সা নিতে গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। আমাদের রিক্সা চালকগণ সম্ভবত ইকোনমিক্সের ডিমান্ড-সাপ্লাই-প্রাইস নিয়ে ভালো ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। ২০ টাকার নিচে তারা যাবেন না। একজন তো ৩০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি আবেগে কাঁইন্দালাইলাম। হাঁটতে হাঁটতে পান্থপথের বাস কাউন্টারে পৌঁছালাম অবশেষে। সেখান থেকে রাজারবাগ। এরপর শুরু হলো মূল যাত্রা। বাস ভ্রমণ আমার জন্য আনন্দদায়ক কিছু নয় কখনই। তা সে যতই এসি হোক, আর যাই হোক। এই বাস জিনিসটা সারা রাস্তা প্রতিটা মূহুর্তে তার গতি এবং দিক পরিবর্তন করে করে আমার মাথা ধরায় দিবে। এরপরও দাঁতে দাঁত চেপে এগোতে লাগলাম। প্রথম যাত্রা বিরতি হলো কুমিল্লার অফবিট রেঁস্তোরায়। অত্যন্ত সুস্বাদু খিচুড়ি দিয়ে ভোর রাতের খাওয়া সারলাম। এরপর চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চলতে লাগলাম। আস্তে আস্তে রাতটা আলো ফুটে দিন হয়ে গেল। চলছি আর চলছি। চট্টগ্রাম শহর পার হয়ে চলে যাচ্ছি। চকরিয়ার আগে আগে আবার যাত্রা বিরতি নেয়া হলো। এরপর সোজা কক্সবাজারের পথে। সামনে শুধু রাস্তা আর রাস্তা। পাহাড়ি পথ। রাস্তা উঠে আর নামে। এ পথের শেষ নামাটা খুব সুন্দর। কলাতলী পয়েন্টে একটা ঢালটা পার হলেই সামনে সৈকতে আছড়ে পড়া সুবিশাল বঙ্গোপসাগর।
কক্সবাজার পৌঁছে উঠলাম বন্ধুর মামার বন্ধুর হোটেলে। মনে খুব প্রশান্তি। ভাড়া লাগবে না। গোসল করে একটা ঘুম দিয়ে বিকেলে বের হয়ে গেলাম সমুদ্র দেখতে। প্রথমে অবশ্য দুপুরের খাবারটা খেলাম ধানসিঁড়ি রেঁস্তোরায়। লইট্টা ফ্রাই আর গরুর মাংস দিয়ে জম্পেশ খাওয়া হলো। খাওয়া শেষে সমুদ্র সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে চলে গেলাম। ৪ বছর পর আবার দেখলাম নিজের দেশের এই ভালোবাসার সমুদ্রকে। ৩০ টাকা দিয়ে একটা কাউচ ভাড়া করে বসলাম ৩ বন্ধু। সমুদ্র দেখতে দেখতে আবিষ্কার করলাম সমানে চোখে বালু প্রবেশ করছে। কে বা কারা লাত্থি মেরে মেরে এ কাজ করে চলেছে। বাধ্য হয়ে চোখ বন্ধ করে সমুদ্র উপভোগ শুরু করলাম। খুব একটা ভালো লাগছিল না আসলে। এর মধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেল। সৈকত থেকে ফিরে এসে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার প্যাকেজগুলোর খোঁজ-খবর নিলাম। সিদ্ধান্ত যখন প্রায় নিয়ে নিলাম যে সেন্ট মার্টিন যাবো তখন টং দোকানের এক ছেলে এ আবহাওয়ায় নিষেধ করলো সেখানে যেতে। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা থাকবে সব সময়। অতঃপর রিক্সা নিয়ে লাবণী পয়েন্টে গেলাম। সন্ধ্যার পর মানুষ তেমন নেই সৈকতে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলাম সমুদ্রের দিকে। হঠাৎ করে অনুভব করলাম ভালো লাগার অনুভূতিটাকে। মাথার উপরে চাঁদ, চাঁদের আলোয় ক’টি মেঘ আর সামনে বিশাল সমুদ্র। শীতল বাতাস বয়ে আসছে ক্রমাগত। পায়ে ঠেকছে সাগরের ঠান্ডা পানি। কক্সবাজার আসা সে মূহুর্তে সার্থকতা লাভ করলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানে। পানির নিচ থেকে বালু সরে যাওয়া উপভোগ করলাম। ধীরে ধীরে হাঁটতে লাগলাম দক্ষিণ দিকে। ৩ জনই গলা ছেড়ে গান ধরলাম। কোনো গানই বাদ পড়ে নি। আইয়ুব বাচ্চু, তাহসান থেকে শুরু করে পৌঁছে গেলাম ব্রায়ান অ্যাডামস আর রিচার্ড মার্ক্সে। কর্কশ কণ্ঠে গান অনেক হলো কিন্তু সাগর পাড়ে চাঁদের আলোয় রবী ঠাকুর আর কাজী নজরুলকে ছাড়া চলে নাকি!! শুরু হলো নজরুলের আলগা করো গো খোঁপার বাঁধন। এরপর রবী বাবুর আমারও পরাণ যাহা চায়। নিজেদের গান শুনে ততক্ষণে আমরা নিজেরাই মুগ্ধ!
(চলবে)
Wednesday, May 7, 2014
অনলাইনেই সেরে ফেলুন কাজ, সফটওয়্যার ডাউনলোডের দিন শেষ
দিন কে দিন সব কাজ চলে আসছে কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের ভেতরে। সিডি-ডিভিডির দিনও ফুরোতে চললো বলে। মুভিও আজকাল চালাচালি হয় পেন ড্রাইভ বা শেয়ারিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। কম্পিউটারে কাজ করার সময় প্রায়ই ছোটখাটো কাজ করতে হয় যার জন্য প্রয়োজন হয় কিছু সফটওয়্যারের। কিন্তু কষ্ট করে সফটওয়্যার ডাউনলোড করার কিন্তু প্রয়োজন নেই। অনলাইনেই অনেক কাজ করে ফেলা যায়। কাজের এরকম কিছু ওয়েবসাইট নিয়ে আজকের আয়োজন।
১। বিজয় দিয়ে আমরা অনেকেই টাইপ করতে পারি না। অভ্র বা ইউনিকোডে বেশ চলে যায় দিন। কিন্তু অভ্রের মতো এত অসাধারণ এই ফ্রিওয়্যারটি দিয়ে ছাপাখানার কাজ করা যায় না। ছাপাখানার মেশিন অভ্রতে লেখা শব্দ পড়তে পারে না। ইউনিকোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ল্যাংগুয়েজ এখনো আমাদের ছাপাখানাগুলোতে আসে নি। কিন্তু ছাপানোর জন্য এখন বিজয়ে টাইপ করা শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অভ্রতে লিখে অনলাইনে বিজয়ে কনভার্ট করে নিলেই কেল্লা ফতে। ইউনিকোড বা অভ্র থেকে বিজয় এবং বিজয় থেকে অভ্র বা ইউনিকোডে লেখা রূপান্তরের খুবই কাজের একটা ওয়েবপেইজ হলো http://www.banglaconverter.com
২। এক সময় কম্পিউটার কিনে আনলে অ্যাডোবির সবকিছু সেখানে দেয়া থাকতো। এখন অনেকেই ল্যাপটপে আসল উইন্ডোজ চালাচ্ছেন। তাই সেখানে পাইরেটেড সফটওয়্যার দেয়া থাকে না। ফলে ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনলাইনে অনেক ছবি সম্পাদনার সাইট রয়েছে। কিন্তু আমার মতো যারা ছোটবেলা থেকে অ্যাডোবির ফটোশপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত তারা http://www.photoshoponlinefree.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে ছবি সম্পাদনার সব কাজ করতে পারবেন। সাইটটি অ্যাডোবির না হলেও অ্যাডোবি ফটোশপের আদলে তৈরি করা।
৩। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজের জন্যে পিডিএফে ফরম পূরণ করতে হতে পারে আমাদের। কিন্তু আমাদের অধিকাংশেরই কম্পিউটারে পিডিএফ পড়ার অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট রিডার আছে, কিন্তু রাইটার বা এডিটর নেই। অ্যাডোবি রাইটার আবার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পাইরেটেড ভার্সন খুঁজে পাওয়াও কঠিন, তা ব্যবহার করাও অনৈতিক। তাই পিডিএফ ফাইলে লেখা বা সম্পাদনার জন্য একটি চমৎকার অনলাইন পিডিএফ এডিটিং সাইট হলো www.pdfescape.com . এখানে গিয়ে পিডিএফ ফরম পূরণ, চেক/টিক মার্ক দেয়া, আগে থেকে থাকা কোনো অংশ মোছাসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা যাবে।
৪। হঠাৎ করে doc বা docx ফাইলকে pdf এ কনভার্ট করার প্রয়োজন হতে পারে কিংবা উল্টোটা। আবার jpg কে pdf এ. অনেক ধরণের ফাইলকেই অন্য ধরণের ফাইলে রূপান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে কাজের প্রয়োজনে। আর অনলাইনে এ কনভারসনের কাজগুলো বিনামূল্যে করে দেবে convertonlinefree.com সাইটটি। কোনো রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। কনভার্ট করে সরাসরি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
convertonlinefree এর ওয়েবপেইজ
৫। একাধিক পিডিএফ ফাইল জয়েন করতে চলে যেতে পারেন pdfjoin.com এ।
৬। অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য বা রিংটোন বানানোর জন্য এমপিথ্রি ফরমেটের গান কাটতে হতে পারে। হয়তো গানের পছন্দের অংশটুকু কেটে আলাদা করতে চান সেক্ষেত্রে কাজটি খুব সহজে করা যাবে mp3cut.net এ।
৭। ছবি এবং ভিডিও সম্পাদনের চমৎকার একটি সাইট হলো www134.lunapic.com. খুব সহজেই ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়া যায়। হটাৎ করে কোনো ছবিতে ওয়াটার মার্ক বসাতে, সাদাকালো করতে কিংবা স্কেচ ইফেক্ট দিতে এ সাইটটি আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি।
সবশেষে আসি একটি মজার জিনিসে। অনলাইনে নক্ষত্রের অবস্থান আর মহাকাশ সম্পর্কে জানার চমৎকার একটি সাইট হচ্ছে neave.com/planetarium. সাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পিসির স্ক্রিন এক উন্মুক্ত আকাশে পরিণত হবে। আপনি যে অবস্থানে আছে ঠিক সে অবস্থান থেকে আকাশের দিকে তাকালে কোন তারাটি কোথায় অবস্থান করবে তাও দেখা যাবে এখানে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে গিয়েও আকাশ দেখা যাবে।
কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই টুকটাক কাজ অনলাইনে করে ফেলতে পারলে আসলেই ভালো লাগে। হার্ডড্রাইভের জায়গাও বাঁচে, কাজও হয়। তবে এসব কাজের জন্য একটু দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ভালো হয়। নইলে কাজ করতে করতে বিরক্তি চলে আসে।
১। বিজয় দিয়ে আমরা অনেকেই টাইপ করতে পারি না। অভ্র বা ইউনিকোডে বেশ চলে যায় দিন। কিন্তু অভ্রের মতো এত অসাধারণ এই ফ্রিওয়্যারটি দিয়ে ছাপাখানার কাজ করা যায় না। ছাপাখানার মেশিন অভ্রতে লেখা শব্দ পড়তে পারে না। ইউনিকোড পড়ার জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ল্যাংগুয়েজ এখনো আমাদের ছাপাখানাগুলোতে আসে নি। কিন্তু ছাপানোর জন্য এখন বিজয়ে টাইপ করা শিখতে হবে এমন কোনো কথা নেই। অভ্রতে লিখে অনলাইনে বিজয়ে কনভার্ট করে নিলেই কেল্লা ফতে। ইউনিকোড বা অভ্র থেকে বিজয় এবং বিজয় থেকে অভ্র বা ইউনিকোডে লেখা রূপান্তরের খুবই কাজের একটা ওয়েবপেইজ হলো http://www.banglaconverter.com
২। এক সময় কম্পিউটার কিনে আনলে অ্যাডোবির সবকিছু সেখানে দেয়া থাকতো। এখন অনেকেই ল্যাপটপে আসল উইন্ডোজ চালাচ্ছেন। তাই সেখানে পাইরেটেড সফটওয়্যার দেয়া থাকে না। ফলে ছবি সম্পাদনা করতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। অনলাইনে অনেক ছবি সম্পাদনার সাইট রয়েছে। কিন্তু আমার মতো যারা ছোটবেলা থেকে অ্যাডোবির ফটোশপ ব্যবহার করে অভ্যস্ত তারা http://www.photoshoponlinefree.com এই ওয়েবসাইটে গিয়ে বিনামূল্যে ছবি সম্পাদনার সব কাজ করতে পারবেন। সাইটটি অ্যাডোবির না হলেও অ্যাডোবি ফটোশপের আদলে তৈরি করা।
৩। অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাপ্তরিক কাজের জন্যে পিডিএফে ফরম পূরণ করতে হতে পারে আমাদের। কিন্তু আমাদের অধিকাংশেরই কম্পিউটারে পিডিএফ পড়ার অ্যাডোবি অ্যাক্রোব্যাট রিডার আছে, কিন্তু রাইটার বা এডিটর নেই। অ্যাডোবি রাইটার আবার টাকা দিয়ে কিনতে হয়। পাইরেটেড ভার্সন খুঁজে পাওয়াও কঠিন, তা ব্যবহার করাও অনৈতিক। তাই পিডিএফ ফাইলে লেখা বা সম্পাদনার জন্য একটি চমৎকার অনলাইন পিডিএফ এডিটিং সাইট হলো www.pdfescape.com . এখানে গিয়ে পিডিএফ ফরম পূরণ, চেক/টিক মার্ক দেয়া, আগে থেকে থাকা কোনো অংশ মোছাসহ যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা যাবে।
৪। হঠাৎ করে doc বা docx ফাইলকে pdf এ কনভার্ট করার প্রয়োজন হতে পারে কিংবা উল্টোটা। আবার jpg কে pdf এ. অনেক ধরণের ফাইলকেই অন্য ধরণের ফাইলে রূপান্তর করার প্রয়োজন হতে পারে কাজের প্রয়োজনে। আর অনলাইনে এ কনভারসনের কাজগুলো বিনামূল্যে করে দেবে convertonlinefree.com সাইটটি। কোনো রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজন নেই। কনভার্ট করে সরাসরি ডাউনলোড করে নেয়া যাবে।
convertonlinefree এর ওয়েবপেইজ
৫। একাধিক পিডিএফ ফাইল জয়েন করতে চলে যেতে পারেন pdfjoin.com এ।
৬। অনুষ্ঠানে বাজানোর জন্য বা রিংটোন বানানোর জন্য এমপিথ্রি ফরমেটের গান কাটতে হতে পারে। হয়তো গানের পছন্দের অংশটুকু কেটে আলাদা করতে চান সেক্ষেত্রে কাজটি খুব সহজে করা যাবে mp3cut.net এ।
৭। ছবি এবং ভিডিও সম্পাদনের চমৎকার একটি সাইট হলো www134.lunapic.com. খুব সহজেই ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট দেয়া যায়। হটাৎ করে কোনো ছবিতে ওয়াটার মার্ক বসাতে, সাদাকালো করতে কিংবা স্কেচ ইফেক্ট দিতে এ সাইটটি আমি অনেকবার ব্যবহার করেছি।
সবশেষে আসি একটি মজার জিনিসে। অনলাইনে নক্ষত্রের অবস্থান আর মহাকাশ সম্পর্কে জানার চমৎকার একটি সাইট হচ্ছে neave.com/planetarium. সাইটে প্রবেশ করার সাথে সাথেই পিসির স্ক্রিন এক উন্মুক্ত আকাশে পরিণত হবে। আপনি যে অবস্থানে আছে ঠিক সে অবস্থান থেকে আকাশের দিকে তাকালে কোন তারাটি কোথায় অবস্থান করবে তাও দেখা যাবে এখানে। পৃথিবীর অপর প্রান্তে গিয়েও আকাশ দেখা যাবে।
কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোড না করেই টুকটাক কাজ অনলাইনে করে ফেলতে পারলে আসলেই ভালো লাগে। হার্ডড্রাইভের জায়গাও বাঁচে, কাজও হয়। তবে এসব কাজের জন্য একটু দ্রুত গতির ইন্টারনেট সংযোগ থাকলে ভালো হয়। নইলে কাজ করতে করতে বিরক্তি চলে আসে।
Labels:
How To,
Informative,
Technology,
অনলাইন,
অনলাইনেই সেরে ফেলুন,
অভ্র,
এমপিথ্রি কাট,
কনভার্ট,
কীভাবে করবেন,
ছবি এডিট,
ডক থেকে পিডিএফ,
পিডিএফ,
পিডিএফ এডিট,
প্ল্যানেটোরিয়াম,
বিজয়
Monday, May 5, 2014
বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু ভুল-ত্রুটি শুধরে নিই - ২য় পর্ব
১ম পর্বের পর থেকে...
৭। কোন নাকি কোনো: বহু জায়গায় ‘কোনো’র স্থলে ‘কোন’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করতে গিয়ে শিখেছিলাম ‘কোন’ এবং ‘কোনো’র পার্থক্য। যেমন- কোনো মানুষ কি না ঘুমিয়ে বাঁচতে পারে?” আবার “কোন কোন জায়গায় যাবো তা এখনও জানি না”।
৮। মত না মতো: মত হলো opinion. মতো হলো alike. কিন্তু প্রায়শ ‘মতো’র পরিবর্তে আমরা ‘মত’ লিখে ফেলি। মতো যখন অনুসারে বোঝায় তখন তা অবশ্যই শব্দের সাথে বসে। যেমন- ইচ্ছেমতো, প্রয়োজনমতো।
৯। উদ্দেশ, উদ্দেশ্য: “কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হলো?” এ বাক্যে কিন্তু ভুল আছে। কথাটি হবে “কার উদ্দেশে এ কথা বলা হলো?”। উদ্দেশ অর্থ নিমিত্ত, জন্য। আর উদ্দেশ্য হলো অভিপ্রায় বা লক্ষ্য বা মতলব। বানান কাছাকাছি হওয়াতে এ ভুল হয়ে থাকে আমাদের এবং ভুল হতে হতে তা প্রায় প্রতিষ্ঠিত হবার পথে।
১০। হল নাকি হলো: “কাজটি কি করা হলো?” এ ধরণের বাক্যে অনেকেই ‘হল’ লিখে ফেলেন। কিন্তু সঠিক বানান হলো, ‘হলো’।
১১। কর, করো: একইভাবে তুমি সম্বোধনের বাক্যে হবে করো, আর তুই সম্বোধনের বাক্যে হবে কর। কিন্তু ভুলবশত আমরা তুমি সম্বোধন করেও ‘কর’ লিখে ফেলি অনেক সময়ে।
১২। পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ: পূর্ব এবং অপরের পর অবশ্যই মূর্ধণ্য ন হয়। সে কারণেই পূর্বাহ্ণ এবং অপরাহ্ণ বানানে মূর্ধণ্য ন কিন্তু মধ্যাহ্ন এবং সায়াহ্ন বানানে দন্ত্য ন।
১৩। নিচ এবং নীচ: নিচ অর্থ নিম্ন আর নীচ অর্থ হীন। “নিচে উদাহরণসহ সংজ্ঞা দেয়া হলো”- এ বাক্যে নীচে লিখলে ভুল হবে।
১৪। বোধহয় এবং বোধ হয়: বোধহয় অর্থ সম্ভবত আর বোধ হয় অর্থ মনে হয়। যেমন- “তার বোধহয় এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে”। আর “আমার বোধ হয় সে ভালো ফল করবে”।
১৫। মিথ্যা এবং ভুল: মিথ্যা এবং ভুল কিন্তু এক নয়। একটিকে অন্যেটির সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা ভুল। মিথ্যা হলো False আর ভুল হলো Wrong। কেউ তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিতে পারে। কিন্তু না জেনে ভুল তথ্য দিতে পারে। মিথ্যা ইচ্ছাকৃত, ভুল সাধারণত অনিচ্ছাকৃত।
১৬। স্ব এবং স: স্ব অর্থ নিজের আর স অর্থ সহ। যেমন- স্বহস্তে ফরমটি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ, নিজের হাতে পূরণ করতে হবে। আবার সশস্ত্র বাহিনী অর্থাৎ শস্ত্র (অস্ত্র) সহ যে বাহিনী।
১৭। উল্লেখিত, উল্লিখিত: উল্লেখিত এবং উল্লিখিত ভিন্ন শব্দ। উল্লেখিত অর্থ specified বা নির্দিষ্ট। আর উল্লিখিত অর্থ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। আবার অনেক সময়ে আমরা কোনো রচনার উপসংহারে লিখি, “উপরে উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই...”। এখানে উল্লিখিত লিখলে উপরে লেখার প্রয়োজন নেই। উল্লিখিত অর্থই ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। উপরে লিখলে তা হবে বাহুল্য। আর উল্লেখিত লেখাই যাবে না এ ক্ষেত্রে। উল্লেখিত শব্দ দিয়ে বাক্য হতে পারে এমন- “সামাজিক বিজ্ঞানের উল্লেখিত বিষয়সমূহের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, পৌরনীতি অন্যতম”।
প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আমার বন্ধু জিন্নাহ একটি প্রচলিত বাহুল্য দোষে দুষ্ট বাক্য ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে। সেটি হলো “আকাশে মেঘের ঘনঘটা”। ঘটা অর্থ মেঘ। ঘনঘটা অর্থ মেঘের আড়ম্বর বা মেঘের সমারোহ। সে হিসেবে মেঘের ঘনঘটা বাহুল্য দোষে দুষ্ট। তবে “আজ বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা” বললে ভুল হবে না। এখানে বলে রাখি, দুষ্ট হলো দোষের বিশেষণ। আবার দুষ্ট অর্থ অনিষ্টকারি বা অমঙ্গলজনক। আর দুষ্টু হলো চঞ্চল।
বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে অনেক আলাপ হলো। আশা করি, আবার কখনো এ বিষয়ে আলাপ করতে হাজির হয়ে যাবো। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: jugamtor.com, mmmainul.wordpress.com
৭। কোন নাকি কোনো: বহু জায়গায় ‘কোনো’র স্থলে ‘কোন’ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু একটি পত্রিকায় কিছুদিন কাজ করতে গিয়ে শিখেছিলাম ‘কোন’ এবং ‘কোনো’র পার্থক্য। যেমন- কোনো মানুষ কি না ঘুমিয়ে বাঁচতে পারে?” আবার “কোন কোন জায়গায় যাবো তা এখনও জানি না”।
৮। মত না মতো: মত হলো opinion. মতো হলো alike. কিন্তু প্রায়শ ‘মতো’র পরিবর্তে আমরা ‘মত’ লিখে ফেলি। মতো যখন অনুসারে বোঝায় তখন তা অবশ্যই শব্দের সাথে বসে। যেমন- ইচ্ছেমতো, প্রয়োজনমতো।
৯। উদ্দেশ, উদ্দেশ্য: “কার উদ্দেশ্যে এ কথা বলা হলো?” এ বাক্যে কিন্তু ভুল আছে। কথাটি হবে “কার উদ্দেশে এ কথা বলা হলো?”। উদ্দেশ অর্থ নিমিত্ত, জন্য। আর উদ্দেশ্য হলো অভিপ্রায় বা লক্ষ্য বা মতলব। বানান কাছাকাছি হওয়াতে এ ভুল হয়ে থাকে আমাদের এবং ভুল হতে হতে তা প্রায় প্রতিষ্ঠিত হবার পথে।
১০। হল নাকি হলো: “কাজটি কি করা হলো?” এ ধরণের বাক্যে অনেকেই ‘হল’ লিখে ফেলেন। কিন্তু সঠিক বানান হলো, ‘হলো’।
১১। কর, করো: একইভাবে তুমি সম্বোধনের বাক্যে হবে করো, আর তুই সম্বোধনের বাক্যে হবে কর। কিন্তু ভুলবশত আমরা তুমি সম্বোধন করেও ‘কর’ লিখে ফেলি অনেক সময়ে।
১২। পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ: পূর্ব এবং অপরের পর অবশ্যই মূর্ধণ্য ন হয়। সে কারণেই পূর্বাহ্ণ এবং অপরাহ্ণ বানানে মূর্ধণ্য ন কিন্তু মধ্যাহ্ন এবং সায়াহ্ন বানানে দন্ত্য ন।
১৩। নিচ এবং নীচ: নিচ অর্থ নিম্ন আর নীচ অর্থ হীন। “নিচে উদাহরণসহ সংজ্ঞা দেয়া হলো”- এ বাক্যে নীচে লিখলে ভুল হবে।
১৪। বোধহয় এবং বোধ হয়: বোধহয় অর্থ সম্ভবত আর বোধ হয় অর্থ মনে হয়। যেমন- “তার বোধহয় এসএসসি পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে”। আর “আমার বোধ হয় সে ভালো ফল করবে”।
১৫। মিথ্যা এবং ভুল: মিথ্যা এবং ভুল কিন্তু এক নয়। একটিকে অন্যেটির সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা ভুল। মিথ্যা হলো False আর ভুল হলো Wrong। কেউ তথ্য গোপন করে মিথ্যা তথ্য দিতে পারে। কিন্তু না জেনে ভুল তথ্য দিতে পারে। মিথ্যা ইচ্ছাকৃত, ভুল সাধারণত অনিচ্ছাকৃত।
১৬। স্ব এবং স: স্ব অর্থ নিজের আর স অর্থ সহ। যেমন- স্বহস্তে ফরমটি পূরণ করতে হবে। অর্থাৎ, নিজের হাতে পূরণ করতে হবে। আবার সশস্ত্র বাহিনী অর্থাৎ শস্ত্র (অস্ত্র) সহ যে বাহিনী।
১৭। উল্লেখিত, উল্লিখিত: উল্লেখিত এবং উল্লিখিত ভিন্ন শব্দ। উল্লেখিত অর্থ specified বা নির্দিষ্ট। আর উল্লিখিত অর্থ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। আবার অনেক সময়ে আমরা কোনো রচনার উপসংহারে লিখি, “উপরে উল্লিখিত বিষয়সমূহ বিশ্লেষণ করে দেখতে পাই...”। এখানে উল্লিখিত লিখলে উপরে লেখার প্রয়োজন নেই। উল্লিখিত অর্থই ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে এমন। উপরে লিখলে তা হবে বাহুল্য। আর উল্লেখিত লেখাই যাবে না এ ক্ষেত্রে। উল্লেখিত শব্দ দিয়ে বাক্য হতে পারে এমন- “সামাজিক বিজ্ঞানের উল্লেখিত বিষয়সমূহের মধ্যে রাজনীতি, অর্থনীতি, পৌরনীতি অন্যতম”।
প্রথম পর্ব প্রকাশের পর আমার বন্ধু জিন্নাহ একটি প্রচলিত বাহুল্য দোষে দুষ্ট বাক্য ধরিয়ে দিয়েছে আমাকে। সেটি হলো “আকাশে মেঘের ঘনঘটা”। ঘটা অর্থ মেঘ। ঘনঘটা অর্থ মেঘের আড়ম্বর বা মেঘের সমারোহ। সে হিসেবে মেঘের ঘনঘটা বাহুল্য দোষে দুষ্ট। তবে “আজ বাংলার আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা” বললে ভুল হবে না। এখানে বলে রাখি, দুষ্ট হলো দোষের বিশেষণ। আবার দুষ্ট অর্থ অনিষ্টকারি বা অমঙ্গলজনক। আর দুষ্টু হলো চঞ্চল।
বাংলা ভাষার প্রয়োগ নিয়ে অনেক আলাপ হলো। আশা করি, আবার কখনো এ বিষয়ে আলাপ করতে হাজির হয়ে যাবো। সবার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: jugamtor.com, mmmainul.wordpress.com
Labels:
Informative,
বানান,
বাংলা,
ব্যাকরণ,
ভাষা,
ভাষা প্রয়োগ,
ভাষার নিয়ম,
ভাষারীতি
Friday, May 2, 2014
বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু ভুল-ত্রুটি শুধরে নিই -১ম পর্ব
ছোটবেলায় বাংলা ব্যাকরণ তো কম পড়তে হয় নি। কারক, সমাস, ধ্বনিতত্ত্ব, ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান আরো কত কি! তৃতীয় শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত দীর্ঘ ব্যাকরণ জীবন আমাদের। এই ব্যাকরণ মানেই বাংলা ২য় পত্র। বেচারা ব্যাকরণ কোনোদিন ১ম পত্রে আসতে পারলো না। যা হোক, বাংলা আমাদের মাতৃভাষা। এ ভাষা অবলীলায় আমরা ব্যবহার করি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই। অত ব্যাকরণ মেনে আমাদের কথা বলতে হয় না বা কিছু লিখতে হয় না। কিন্তু বিভিন্ন কারণে বাংলা ভাষা ব্যবহার করতে গিয়ে কিছু ভুল আমরা করে ফেলি। অনেক মানুষ এ ভুলগুলো করতে করতে এমন অবস্থা করে ফেলেছে যে মাঝে মাঝে ভুলগুলোকেই সত্য বলে মনে হয়। সে ধরণের কিছু ভুল নিয়েই আজকে কথা বলবো।
১। অত্র: অত্র অর্থ এখানে বা এ স্থানে। রাস্তাঘাটে আমরা অনেক সময় লেখা দেখি, “অত্র এলাকার কাজি অফিসের ঠিকানা ...”। এটি কিন্তু ভুল। অত্র শব্দটি নিজেই এই এলাকা বোঝাচ্ছে। এর পরে আবার এলাকা শব্দটি জুড়ে দিলে তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। সে হিসেবে সঠিক বাক্যটি হলো, “অত্র কাজি অফিসের ঠিকানা ...”।
২। কী এবং কি: আধুনিক বাংলায় 'কি' এবং 'কী' এর মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। সাধারণত যেকোনো স্থানে একটি ব্যবহার করলেই হয়। কিন্তু দু’টোর মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দিয়ে দেয়া যায় সে সকল বাক্যে যে ‘কি’ বসে সেটি হলো ‘কি’। যেমন- আপনি চা খাবেন কি? আর যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেয়া যায় না সে সকল বাক্যে হয় ‘কী’। যেমন- আপনি কী খাবেন? অর্থাৎ, ‘কি’ হলো এক ধরণের অব্যয়। আর ‘কী’ হলো এক ধরণের সর্বনাম। প্রথম উদাহরণের ‘কি’ বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়তা করছে। কোনো বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না। কিন্তু পরের উদাহরণের ‘কী’ একটি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। উত্তরের সময়ে ‘কী’ এর স্থানে বসছে কোনো খাবারের নাম।
ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে আমি একটি ভুল করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান বলার পর ‘স্যার’ শব্দটি বসিয়েছি। এটি বাহুল্য। কিন্তু স্যারের নামের পরে স্যার না বলে থাকতে পারি নি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসিয়েছি।
৩।ওপর এবং উপর: আমরা প্রায়শ ইচ্ছেমতো বাক্যে ‘উপরে’ কিংবা ‘ওপরে’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শব্দগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন ওপর হলো On আর উপর হলো Up. অর্থাৎ, “টেবিলের ওপর গ্লাসটি রাখা আছে”। কিন্তু “আমার মাথার উপর ফ্যানটি ঘুরছে”। ‘উপর’ এবং ‘ওপরে’র যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।
৪। লক্ষ্য এবং লক্ষ: আমরা সবাই জানি, লক্ষ্য হলো খেয়াল করা। আর লক্ষ হলো শূন্য ব্যতীত কোনো অংকের পর ৫ শূন্য থাকলে যা হয় তা অর্থাৎ লাখ। কিন্তু আমরা যদি ‘লক্ষ্য’ শব্দটির পর কোনো ক্রিয়া ব্যবহার করি তাহলে ‘লক্ষ্যে’র পর আর য-ফলা না দিলেও চলে। যেমন- লক্ষ করুন। তবে য-ফলা দিলেও ভুল হবে, তা নয়। যথারীতি শ্রদ্ধেয় আবদুস সোবহান স্যারের কাছ থেকেই শেখা।
৫। বাহুল্য দোষ: বাক্যে অনেক সময় আমাদের বাহুল্য দোষ হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লিখে ফেলি এরকম- “সভায় সব শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন”। ‘সব’ বলার পর ‘শিক্ষকগণ’ বলার প্রয়োজন ছিল না। অথবা ‘শিক্ষকগণ’ বললে আর ‘সব’ বলার প্রয়োজন ছিল না। এখানে দু’ বার বহুবচন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে যা বাহুল্য।
৬। সত্য এবং সত্যি: সত্য হলো বিশেষ্য আর সত্যি হলো বিশেষণ। আমরা একটিকে অপরটির সমার্থক হিসেবে বাক্যে ব্যবহার করে ফেলি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত ভুল হয় না। উদাহরণ দেই। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। এটা কী?” উত্তর হবে, “এটা চিরন্তন সত্য”। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে- “এটা কেমন কথা?” উত্তর হবে- “সত্যি কথা”। দেখা যাচ্ছে, বিশেষণের পর বসছে ‘সত্য’। আর বিশেষ্যের আগে বসছে ‘সত্যি’। ঠিক যেভাবে বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে এখানেও সেভাবেই বসছে।
(চলবে)
১। অত্র: অত্র অর্থ এখানে বা এ স্থানে। রাস্তাঘাটে আমরা অনেক সময় লেখা দেখি, “অত্র এলাকার কাজি অফিসের ঠিকানা ...”। এটি কিন্তু ভুল। অত্র শব্দটি নিজেই এই এলাকা বোঝাচ্ছে। এর পরে আবার এলাকা শব্দটি জুড়ে দিলে তা বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে পড়ে। সে হিসেবে সঠিক বাক্যটি হলো, “অত্র কাজি অফিসের ঠিকানা ...”।
২। কী এবং কি: আধুনিক বাংলায় 'কি' এবং 'কী' এর মধ্যে পার্থক্য করা হয় না। সাধারণত যেকোনো স্থানে একটি ব্যবহার করলেই হয়। কিন্তু দু’টোর মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। স্কুলের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ কিংবা না দিয়ে দেয়া যায় সে সকল বাক্যে যে ‘কি’ বসে সেটি হলো ‘কি’। যেমন- আপনি চা খাবেন কি? আর যে সকল প্রশ্নসূচক বাক্যের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেয়া যায় না সে সকল বাক্যে হয় ‘কী’। যেমন- আপনি কী খাবেন? অর্থাৎ, ‘কি’ হলো এক ধরণের অব্যয়। আর ‘কী’ হলো এক ধরণের সর্বনাম। প্রথম উদাহরণের ‘কি’ বাক্যের অর্থ প্রকাশে সহায়তা করছে। কোনো বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছে না। কিন্তু পরের উদাহরণের ‘কী’ একটি বিশেষ্যের স্থলাভিষিক্ত হয়েছে। উত্তরের সময়ে ‘কী’ এর স্থানে বসছে কোনো খাবারের নাম।
ঠিক ওপরের অনুচ্ছেদে আমি একটি ভুল করেছি। শ্রদ্ধেয় শিক্ষক আবদুস সোবহান বলার পর ‘স্যার’ শব্দটি বসিয়েছি। এটি বাহুল্য। কিন্তু স্যারের নামের পরে স্যার না বলে থাকতে পারি নি। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বসিয়েছি।
৩।ওপর এবং উপর: আমরা প্রায়শ ইচ্ছেমতো বাক্যে ‘উপরে’ কিংবা ‘ওপরে’ শব্দ দু’টি ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু শব্দগুলো প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আবদুস সোবহান স্যার শিখিয়েছিলেন ওপর হলো On আর উপর হলো Up. অর্থাৎ, “টেবিলের ওপর গ্লাসটি রাখা আছে”। কিন্তু “আমার মাথার উপর ফ্যানটি ঘুরছে”। ‘উপর’ এবং ‘ওপরে’র যথেচ্ছ ব্যবহার করা যাবে না।
৪। লক্ষ্য এবং লক্ষ: আমরা সবাই জানি, লক্ষ্য হলো খেয়াল করা। আর লক্ষ হলো শূন্য ব্যতীত কোনো অংকের পর ৫ শূন্য থাকলে যা হয় তা অর্থাৎ লাখ। কিন্তু আমরা যদি ‘লক্ষ্য’ শব্দটির পর কোনো ক্রিয়া ব্যবহার করি তাহলে ‘লক্ষ্যে’র পর আর য-ফলা না দিলেও চলে। যেমন- লক্ষ করুন। তবে য-ফলা দিলেও ভুল হবে, তা নয়। যথারীতি শ্রদ্ধেয় আবদুস সোবহান স্যারের কাছ থেকেই শেখা।
৫। বাহুল্য দোষ: বাক্যে অনেক সময় আমাদের বাহুল্য দোষ হয়ে যায়। অনেক সময় আমরা লিখে ফেলি এরকম- “সভায় সব শিক্ষকগণ উপস্থিত ছিলেন”। ‘সব’ বলার পর ‘শিক্ষকগণ’ বলার প্রয়োজন ছিল না। অথবা ‘শিক্ষকগণ’ বললে আর ‘সব’ বলার প্রয়োজন ছিল না। এখানে দু’ বার বহুবচন ব্যবহার করা হয়ে গিয়েছে যা বাহুল্য।
৬। সত্য এবং সত্যি: সত্য হলো বিশেষ্য আর সত্যি হলো বিশেষণ। আমরা একটিকে অপরটির সমার্থক হিসেবে বাক্যে ব্যবহার করে ফেলি। তবে সেক্ষেত্রে সাধারণত ভুল হয় না। উদাহরণ দেই। যদি কেউ জিজ্ঞেস করে “সূর্য পূর্ব দিকে উঠে। এটা কী?” উত্তর হবে, “এটা চিরন্তন সত্য”। আবার কেউ যদি জিজ্ঞেস করে- “এটা কেমন কথা?” উত্তর হবে- “সত্যি কথা”। দেখা যাচ্ছে, বিশেষণের পর বসছে ‘সত্য’। আর বিশেষ্যের আগে বসছে ‘সত্যি’। ঠিক যেভাবে বিশেষণ বিশেষ্যের আগে বসে এখানেও সেভাবেই বসছে।
(চলবে)
Labels:
Informative,
অব্যয়,
বাংলা ভাষা,
বাহুল্য দোষ,
ব্যাকরণ,
শুদ্ধ,
সঠিক প্রয়োগ,
সর্বনাম
Thursday, May 1, 2014
মিষ্টির দোকান
আমি বড় হয়েছি আজিমপুর এলাকায়। ইডেন কলেজের সামনে দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। দেখতাম হাতে করে, মাথায় করে কিছু বৃদ্ধ ব্যক্তি মিষ্টি আর বাকরখানি বিক্রি করেন। পথিক তাদের থামিয়ে তৃপ্তি নিয়ে বাকরখানি দিয়ে মিষ্টি খেয়ে তেলের ক্যান থেকে পানি ঢেলে ঢক ঢক পান করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে। আজিমপুরের বটতলায় দেখেছি হরিপদের মিষ্টির দোকান সকালে নাস্তার দোকানে পরিণত হতো। পরোটা, ভাজি, মিষ্টির শিরা দিয়ে তৈরি অসাধারণ সুজি। চাইলে পরোটা নিয়ে হরেক রকম মিষ্টি, জিলাপি সব খাওয়া যাবে। মনে পড়ে, আব্বা ঢাকা কলেজের উল্টা দিকের যাদব ঘোষ থেকে দই-মিষ্টি আনতেন। ইচ্ছা হলেও যাদব ঘোষে বসে এক পিস কালোজাম আর এক প্লেট দই খাওয়া যেত। আমাদের মিষ্টির দোকানগুলোতে সকাল বেলা অবধারিতভাবে পরোটা আর সুজি পাওয়া যেত। আমাদের মিষ্টির দোকানগুলোর নাম ছিল যাদব ঘোষ এন্ড গ্র্যান্ড সন্স, মরণ চাঁদ, মোহন চাঁদ, বিক্রমপুর, আলাউদ্দিন, বোম্বে সুইটস, মুসলিম, বনফুল কিংবা ভাগ্যকুল। এই নামগুলো যেন মিষ্টির দোকানের জন্যেই তৈরি। কিন্তু কোথায় গেল সেই দিনগুলো? আমাদের মিষ্টির দোকানগুলো করপোরেট হয়ে গেল। সকালে সেখানে পরোটা ভাজা হয় না। দোকানে এসি লেগে গেল। প্রাচীন আমলের ফোম দেখা যাওয়া সোফায় বসে তৃপ্তি নিয়ে নিমকি দিয়ে এক পিস মিষ্টি আর ছোট্ট স্টেইনলেস স্টিলের বাটিতে একটু খানি দই খাওয়া যায় না। মিনিমাম হাফ কেজি মিষ্টি নিতে হবে, মিনিমাম এক পাতিল দই নিতে হবে। আমরা ইংরেজ হয়ে গিয়েছি। আমাদের আর আধা কেজি নাই, আমাদের সব ‘হাফ’ হয়ে গিয়েছে। আমাদের নূন্যতম এখন মিনিমাম। এখন আর পাতিলের ওজন বেড়েছে, সমানুপাতিক হারে দইয়ের জন্য কমেছে। বাইরে থেকে পাতিলের অনেক ঘোপ, কিন্তু তলায় অনেকটাই পুরু সে পাতিল। সব যেন ছদ্মবেশ! ইংরেজদের ভাষায় ক্যামোফ্লজ।
মিষ্টির দোকানের সহকারীরা আর কম দামী সাফারি স্যুট টাইপের পোশাক পরেন না। তারা এখন শার্ট-প্যান্ট শু পরা ফর্মাল। যেন সব এমবিএ। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে “স্যার, সুইটস লাগবে?”। মিষ্টি এখন সুইটস। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে রিসিট হাতে চলে আসে তাদের। দোকানে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু তা বসে এক পিছ মিষ্টি খাওয়ার জন্য না। অনেক অর্ডার করলে বসে অপেক্ষা করার জন্য। দোকানের নাম আর যাদব ঘোষ, বিক্রমপুর, মুসলিম না, সব ইংরেজ নাম। প্রিমিয়াম, প্রিমিয়ার, প্রমিনেন্ট। ইংরেজি মানেই ইশট্যান্ডার্ড। কোথায় আমার সেই রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো বাকরখানি আর মিষ্টি আলা? কোথায় আমার সেই তেলের ক্যান? সব তো ফিল্টারের জার! সব কর্পোরেট। সবখানে ফর্মালিটিজ।
কয়েকদিন আগে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে বসেই একটু স্টেইনলেস স্টিলের ছোট্ট থালায় দই খাবো। এক পাতিল নিতে হবে। ভালো কথা। নিলাম। নিমকি দিয়ে কালোজাম আমার খুব পছন্দের। বাসায় কালোজাম ছিল। ভাবলাম ‘হাফ’ কেজি নিমকি নিয়ে যাই। এরপরই বাধলো গলদ। দোকানে ঠোঙ্গা নাই। এদিকে মিষ্টির প্যাকেটে নিমকি দিতেও তাদের খুব আপত্তি। ৫০ টাকার নিমকির জন্য একটা প্যাকেট চলে যাবে??? জান যাবে তো প্যাকেট যাবে না। প্যাকেটের দাম নাকি ৮ টাকা। সব কথা আমার সামনেই হলো। কোনো লাজ-লজ্জার বালাই-ই নেই। অতঃপর বুদ্ধিমান কর্মচারী একখানা তরিকা বের করতে সক্ষম হলেন। দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসে থাকা ফলের দোকানদারের থেকে একটা ঠোঙ্গা চেয়ে আনলেন। আমাকে সেই ঠোঙ্গায় নিমকি দেয়া হলো। মনে আছে, বাল্যকালে মিষ্টির দোকানে রস চুয়ায় যাতে না পড়ে সেজন্য ডবল প্যাকেটে মিষ্টি দিতেও আপত্তি করতো না দোকানীরা। যা হোক, এখন আধুনিক যুগ বলে কথা। এখন তরমুজ, পেঁপে, বাঙি সব গুঁড়ের মতো থুক্কু স্যাকারিনের মতো মিষ্টি।
‘সুইটস’ এর প্যাকেটের দামও বাড়তি, আআআআট টাকা। আগের মতো সাদা প্যাকেটের ওপর রং-বেরঙের ঢাকনা নাই। ঢাকনা আর তলা একসাথে। মিষ্টির চেয়ে প্যাকেট ভারী। মিষ্টি উঠায় রাখার পর প্যাকেটের ওজনও আড়াইশো গ্রামের মতো অনুভূত হয়। একবিংশ শতক বলে কথা। আচ্ছা, চিনির দাম বাড়লে মিষ্টির দাম বাড়ে কিন্তু চিনির দাম কমলে মিষ্টির দাম কমে না কেন?
মিষ্টির দোকানের সহকারীরা আর কম দামী সাফারি স্যুট টাইপের পোশাক পরেন না। তারা এখন শার্ট-প্যান্ট শু পরা ফর্মাল। যেন সব এমবিএ। দোকানে ঢোকার সাথে সাথে “স্যার, সুইটস লাগবে?”। মিষ্টি এখন সুইটস। কথা বলতে বলতে পকেট থেকে রিসিট হাতে চলে আসে তাদের। দোকানে চেয়ার-টেবিল আছে। কিন্তু তা বসে এক পিছ মিষ্টি খাওয়ার জন্য না। অনেক অর্ডার করলে বসে অপেক্ষা করার জন্য। দোকানের নাম আর যাদব ঘোষ, বিক্রমপুর, মুসলিম না, সব ইংরেজ নাম। প্রিমিয়াম, প্রিমিয়ার, প্রমিনেন্ট। ইংরেজি মানেই ইশট্যান্ডার্ড। কোথায় আমার সেই রাস্তায় ফেরি করে বেড়ানো বাকরখানি আর মিষ্টি আলা? কোথায় আমার সেই তেলের ক্যান? সব তো ফিল্টারের জার! সব কর্পোরেট। সবখানে ফর্মালিটিজ।
কয়েকদিন আগে গেলাম এক মিষ্টির দোকানে। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল দোকানে বসেই একটু স্টেইনলেস স্টিলের ছোট্ট থালায় দই খাবো। এক পাতিল নিতে হবে। ভালো কথা। নিলাম। নিমকি দিয়ে কালোজাম আমার খুব পছন্দের। বাসায় কালোজাম ছিল। ভাবলাম ‘হাফ’ কেজি নিমকি নিয়ে যাই। এরপরই বাধলো গলদ। দোকানে ঠোঙ্গা নাই। এদিকে মিষ্টির প্যাকেটে নিমকি দিতেও তাদের খুব আপত্তি। ৫০ টাকার নিমকির জন্য একটা প্যাকেট চলে যাবে??? জান যাবে তো প্যাকেট যাবে না। প্যাকেটের দাম নাকি ৮ টাকা। সব কথা আমার সামনেই হলো। কোনো লাজ-লজ্জার বালাই-ই নেই। অতঃপর বুদ্ধিমান কর্মচারী একখানা তরিকা বের করতে সক্ষম হলেন। দোকানের বাইরে ফুটপাতে বসে থাকা ফলের দোকানদারের থেকে একটা ঠোঙ্গা চেয়ে আনলেন। আমাকে সেই ঠোঙ্গায় নিমকি দেয়া হলো। মনে আছে, বাল্যকালে মিষ্টির দোকানে রস চুয়ায় যাতে না পড়ে সেজন্য ডবল প্যাকেটে মিষ্টি দিতেও আপত্তি করতো না দোকানীরা। যা হোক, এখন আধুনিক যুগ বলে কথা। এখন তরমুজ, পেঁপে, বাঙি সব গুঁড়ের মতো থুক্কু স্যাকারিনের মতো মিষ্টি।
‘সুইটস’ এর প্যাকেটের দামও বাড়তি, আআআআট টাকা। আগের মতো সাদা প্যাকেটের ওপর রং-বেরঙের ঢাকনা নাই। ঢাকনা আর তলা একসাথে। মিষ্টির চেয়ে প্যাকেট ভারী। মিষ্টি উঠায় রাখার পর প্যাকেটের ওজনও আড়াইশো গ্রামের মতো অনুভূত হয়। একবিংশ শতক বলে কথা। আচ্ছা, চিনির দাম বাড়লে মিষ্টির দাম বাড়ে কিন্তু চিনির দাম কমলে মিষ্টির দাম কমে না কেন?
Sunday, April 20, 2014
হার্টব্লিড বাগ নিয়ে একজন ননটেকির কিছু কথা
বাল্যকালে “ডাকঘর চাই” এই মর্মে একখান লেখা লিখে তা ছাপানোর জন্য বহুল আলোচিত দৈনিক পত্রিকার সম্পাদক বরাবর আরেকখানা আবেদনপত্র লিখতে হতো। তবে বাস্তবে না, পরীক্ষার খাতায়। বাংলা দ্বিতীয় পত্রে। ডাকঘর কেন চাই তার একটা অব্যর্থ যুক্তি হিসেবে দিতে হতো, “এলাকায় ডাকঘর না থাকাতে অনেক দূর থেকে পিয়ন চিঠি ও মানি অর্ডার নিয়ে আসে। অনেক সময় মানি অর্ডারের টাকা ‘পথিমধ্যে খোয়া যায়’।” পয়েন্ট টু বি নোটেড। এই অব্যর্থ বাক্যখানা লিখতে পারলে মনে হয় ডাকঘর স্থাপনের সম্ভাবনা বেড়ে যেত। যাই হোক, এখন ডিজিটাল যুগ। পথিমধ্যে মানি অর্ডারের টাকা খোয়া যাওয়ার সুযোগ নাই কিন্তু ইন্টারনেটের অবাধ তথ্য প্রবাহের মধ্যে ক্রেডিট কার্ড নাম্বারের তথ্য খোয়া যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আর এই সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হয়েছে হার্টব্লিড নামক এক বাগ। ব্যাপক হৈচৈ অবস্থা। হালকা টেকি লোকজন এইটা নিয়ে রসায় রসায় নাতিদীর্ঘ বক্তৃতা দিয়ে ফেলছে। আমি টেকনিক্যাল লাইনের লোক না। প্রযুক্তি বুঝি কম। হার্টব্লিড সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না তবে গুগলিং এর কল্যাণে যতটুকু জানলাম তা হলো এটা কোনো ভাইরাস না। কোনো দুষ্টু সফটওয়্যার এমপ্লয় করে তথ্য হাতিয়ে নেয়া বা সিস্টেম ধ্বংস করার কারবার এখানে নেই। ভূত সর্ষের মধ্যেই বসবাস করছেন।
ইন্টারনেটে আমরা বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়াই। কত জায়গায় লগইন করি, মেইল পাঠাই, অর্থ আদান-প্রদান করি। এখানে কিন্তু গোপনীয়তার প্রয়োজন রয়েছে। ইচ্ছা করলেই যেন আমি কোন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করছি তা যেন সবাই দেখতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তা বলয় থাকে। ৬৪ শতাংশ ওয়েবপেইজ তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে থাকে Open Security Sockets Layer বা OpenSSL সফটওয়্যার। এর কাজ হলো আমরা যখন কোনো তথ্য দিয়ে সার্ভারে হিট করি এবং বিনিময়ে আরেকটি তথ্য আমাদের কাছে আসে তখন পুরো প্রক্রিয়ায় তথ্য আদান-প্রদানকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া। অনেকটা মোর্স কোডের মতো। একটা শব্দ প্রথমে এনক্রিপ্ট করে পাঠানো হয়। গ্রাহকের কাছে গিয়ে তা ডিক্রিপ্টেড হয় তখন গ্রাহক তা পড়তে পারে। ইমেইল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং (আইএম), ওয়েবপেইজে লগইন এ ধরণের সব কাজে আমরা ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য আদানপ্রদান করে থাকি সিস্টেম বা অপর পাশে আরেকজনের সাথে। এখন এই তথ্য বাহিত হয় Transport Layer Security Protocol বা TLS এর মাধ্যমে। আর এই প্রোটোকলটি ব্যবহার করা হয় ওপেনসোর্স TLS সফটওয়্যার OpenSSL দিয়ে। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া OpenSSL ভার্সন 1.0.1f এ একটি বাগ থাকে। জার্মান ডেভেলপার রবিন সেগেলম্যানের প্রোগ্রামিং এর ভুলের কারণে এই বাগের জন্ম হয়। সফটওয়্যারের নকশায় ভুল ছিল না। ভুলটি কোডিং করার সময় হয়। ধারণা করা হয়, হ্যাকাররা এই ভুলের সুযোগ নিয়ে অনেক তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। গুগলের সফটওয়্যার নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা নিল মেহতা সম্প্রতি এ বাগ আবিষ্কার করেন। তখনই OpenSSL তাদের বাগ সারানোর কাজ শুরু করে। অবশেষে বাগমুক্ত করে গত ৭ এপ্রিল ভার্সন 1.0.1g ছাড়া হয়। বাগ ঠিক করেন অ্যাডাম ল্যাংলি এবং বোডো মোলার। বিভিন্ন ওয়েবপেইজ ও সিস্টেম সার্ভার সেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের নতুন ভার্সনে তাদের সিস্টেমকে উন্নীত করছেন। তবে হ্যাকাররা আগেই আপনার গোপনীয় তথ্য পেয়ে থাকতে পারে। সেজন্য অনলাইন ট্রানজেকশনে সকল ধরণের পাসওয়ার্ড এবং কি পরিবর্তন করে নেয়া উচিৎ। নয়তো আগে পেয়ে থাকা তথ্য ব্যবহার করে হ্যাকাররা ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে বা কোনো ওয়েবপেইজে ছদ্মবেশে আপনার হয়ে প্রবেশ করে আপনার ক্ষতি করতে পারে।
হার্টব্লিড বাগ সম্পর্কে আরো জানতে ঘুরে আসতে পারেন হার্টব্লিড.কম থেকে।
ইন্টারনেটে আমরা বিভিন্ন সাইটে ঘুরে বেড়াই। কত জায়গায় লগইন করি, মেইল পাঠাই, অর্থ আদান-প্রদান করি। এখানে কিন্তু গোপনীয়তার প্রয়োজন রয়েছে। ইচ্ছা করলেই যেন আমি কোন ইউজার নেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করছি তা যেন সবাই দেখতে না পারে সেজন্য কেন্দ্রীয়ভাবে নিরাপত্তা বলয় থাকে। ৬৪ শতাংশ ওয়েবপেইজ তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ব্যবহার করে থাকে Open Security Sockets Layer বা OpenSSL সফটওয়্যার। এর কাজ হলো আমরা যখন কোনো তথ্য দিয়ে সার্ভারে হিট করি এবং বিনিময়ে আরেকটি তথ্য আমাদের কাছে আসে তখন পুরো প্রক্রিয়ায় তথ্য আদান-প্রদানকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া। অনেকটা মোর্স কোডের মতো। একটা শব্দ প্রথমে এনক্রিপ্ট করে পাঠানো হয়। গ্রাহকের কাছে গিয়ে তা ডিক্রিপ্টেড হয় তখন গ্রাহক তা পড়তে পারে। ইমেইল, ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং (আইএম), ওয়েবপেইজে লগইন এ ধরণের সব কাজে আমরা ব্যক্তিগত বা গোপনীয় তথ্য আদানপ্রদান করে থাকি সিস্টেম বা অপর পাশে আরেকজনের সাথে। এখন এই তথ্য বাহিত হয় Transport Layer Security Protocol বা TLS এর মাধ্যমে। আর এই প্রোটোকলটি ব্যবহার করা হয় ওপেনসোর্স TLS সফটওয়্যার OpenSSL দিয়ে। ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া OpenSSL ভার্সন 1.0.1f এ একটি বাগ থাকে। জার্মান ডেভেলপার রবিন সেগেলম্যানের প্রোগ্রামিং এর ভুলের কারণে এই বাগের জন্ম হয়। সফটওয়্যারের নকশায় ভুল ছিল না। ভুলটি কোডিং করার সময় হয়। ধারণা করা হয়, হ্যাকাররা এই ভুলের সুযোগ নিয়ে অনেক তথ্য বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে হাতিয়ে নিয়েছে। গুগলের সফটওয়্যার নিরাপত্তা বিভাগের কর্মকর্তা নিল মেহতা সম্প্রতি এ বাগ আবিষ্কার করেন। তখনই OpenSSL তাদের বাগ সারানোর কাজ শুরু করে। অবশেষে বাগমুক্ত করে গত ৭ এপ্রিল ভার্সন 1.0.1g ছাড়া হয়। বাগ ঠিক করেন অ্যাডাম ল্যাংলি এবং বোডো মোলার। বিভিন্ন ওয়েবপেইজ ও সিস্টেম সার্ভার সেবা প্রদানকারী সংস্থা তাদের নতুন ভার্সনে তাদের সিস্টেমকে উন্নীত করছেন। তবে হ্যাকাররা আগেই আপনার গোপনীয় তথ্য পেয়ে থাকতে পারে। সেজন্য অনলাইন ট্রানজেকশনে সকল ধরণের পাসওয়ার্ড এবং কি পরিবর্তন করে নেয়া উচিৎ। নয়তো আগে পেয়ে থাকা তথ্য ব্যবহার করে হ্যাকাররা ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে পারে বা কোনো ওয়েবপেইজে ছদ্মবেশে আপনার হয়ে প্রবেশ করে আপনার ক্ষতি করতে পারে।
হার্টব্লিড বাগ সম্পর্কে আরো জানতে ঘুরে আসতে পারেন হার্টব্লিড.কম থেকে।
Labels:
heartbleed,
Informative,
Technology,
বাগ,
সাইবার নিরাপত্তা সফটওয়্যার,
সিকিউরিটি,
হার্টব্লিড,
হ্যাক,
হ্যাকার
Sunday, April 6, 2014
কীভাবে অনলাইনে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করবেন- ২য় পর্ব
ভিসার আবেদন করতে হলে আপনাকে অবশ্যই ভারতে কারো রেফারেন্স দিতে হবে। ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গেলে হোটেলে নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর প্রয়োজন হবে। একই সাথে বাংলাদেশেরও একজনের রেফারেন্স দিতে হবে। এরপর ৩য় পৃষ্ঠার কাজ শেষ করে নেক্সট দিলে আপনার দেয়া সকল তথ্য একটি পূরণকৃত ফরমে দেখাবে। একদম নিচে থাকবে দু’টি বোতাম, modify/edit এবং verified and continue। তথ্যগুলো দেখে সংশোধনের প্রয়োজন হলে modify বোতামে চেপে আবার সংশোধণের সুযোগ পাবেন আর সব ঠিক থাকলে verified and continue বোতামে চেপে পরের পৃষ্ঠায় যেতে হবে। এই পৃষ্ঠায় আপনি ভারতে গেলে যেখানে থাকবেন সেখানকার জায়গা/হোটেলের নাম, ঠিকানা, রাজ্যের নাম এবং জেলার নাম দিতে হবে। যেমন- আপনার হোটেল কোলকাতায় হলে হোটেলের নাম, ঠিকানা এবং রাজ্যের নাম হিসেবে West Bengal এবং জেলার নাম হিসেবে দিতে হবে Kolkata. শেষে দিতে হবে ফোন নাম্বার। কয়েকটি হোটেলের নাম, ঠিকানা দেয়ার অপশন থাকলেও একটির বেশি দেয়ার প্রয়োজন নেই। এরপর continue বোতামে চাপলে Date and Time Allotment to Applicant নামে একটি পাতা আসবে। সেখানে আপনার নাম এবং ওয়েব ফাইল নাম্বার বলে একটি নাম্বার দিবে। এই নাম্বারটা অবশ্যই লিখে রাখতে হবে। যদি আপনাকে সময় দেয়া হয় তাহলে পেইজের একদম নিচে ডানদিকে সময় ও তারিখ লেখা থাকবে আর যদি সময় না দেয়া হয় তাহলে লেখা থাকবে No appointment dates are available. এক্ষেত্রে লেখার প্রথমে দেয়া লিংকে গিয়ে পেইজের নিজের দিকের reprint registered application বোতামে ক্লিক করে প্রথমে ক্যাপচা পূরণ করতে হবে। এরপর সাবমিট বোতামে ক্লিক করে পরের পাতায় গিয়ে যে ভারতীয় মিশনে আপনি আবেদন করছেন সেটি নির্বাচন করে, ওয়েব ফাইল নাম্বার, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে আরেকটি ক্যাপচা পূরণ করে reprint বোতামে ক্লিক করলে একটি পিডিএফ ফাইল খুলবে যার ডানদিকে আপনার সাক্ষাতকারের সময় লেখা থাকবে। ফাইলটি কম্পিউটারে সেইভ করে রাখবেন। আর যদি তারিখ না থাকে তাহলে বুঝতে হবে সাক্ষাতকারের জন্য কোনো সময় খালি নেই।
সময় খালি পাবেন সে আশা করাও ঠিক নয়। কারণ ওদের সার্ভারে সময় খালি না থাকার বলার জন্যই কমান্ড দেয়া থাকে। দিনের অজানা কোনো সময় অল্প কয়েক মিনিটের জন্য সার্ভার খোলা রাখে যখন আবেদন করলে সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এ তথ্য কেউ জানে না। এ কারণে কিছু দালাল রয়েছে যাদের কাজই হলো অর্থের বিনিময়ে আপনাকে ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে সাক্ষাতকারের জন্য আপনাকে তারিখ পাইয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে উপরের প্রক্রিয়ায় পুরো আবেদনপত্র পূরণ করে তারিখ না পেলে দালালকে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার, জন্ম তারিখ, ওয়েব ফাইল নাম্বার দিয়ে দিলে তারা সারাদিন ধরে চেষ্টা করে তারিখ পাইয়ে দেয়। সেজন্য তারা ৩০০ থেকে শুরু করে ১০০০ বা ১৫০০ টাকা নিয়ে থাকে। অনেকজনের ভিসার কাজ দিলে তারা টাকা কম নেয়। সাধারণত ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই নেয় মাথাপিছু। আর নিজে যদি আপনি তারিখ ও সময় পেয়ে যান তাহলে তো কেল্লা ফতে। তারিখ পাওয়ার পর নির্ধারিত দিনে আপনাকে দূতাবাসে যে সকল কাগজপত্রের ফটোকপি ও আসল কপি নিয়ে যেতে হবে তা হলো-
১। সাক্ষাতকারের তারিখ লেখা পিডিএফ ফাইলটির প্রিন্ট করা কপি
২। পাসপোর্ট
৩। ইউটিলিটি বিল
৪। জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্মনিবন্ধন সনদ
৫। ২”/ ২” সিল-ছাপ্পড়, স্বাক্ষর না করা সদ্য তোলা রঙিন ছবি ৪ টি
৬। অফিস/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া পরিচয়পত্র
৭। প্রতিষ্ঠান থেকে দলগত ভ্রমণ বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গমন হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত প্রয়োজনীয় সুপারিশের কাগজ
ভিসা প্রক্রিয়ার খরচ ৪০০ টাকা। আর ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভারতে যেতে চাইলে নূন্যতম ১৫০ ডলার পাসপোর্টে এনডোর্স করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় তারা বিগত ৩ বা ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টও চেয়ে থাকে।
সময় খালি পাবেন সে আশা করাও ঠিক নয়। কারণ ওদের সার্ভারে সময় খালি না থাকার বলার জন্যই কমান্ড দেয়া থাকে। দিনের অজানা কোনো সময় অল্প কয়েক মিনিটের জন্য সার্ভার খোলা রাখে যখন আবেদন করলে সময় পাওয়া যায়। কিন্তু এ তথ্য কেউ জানে না। এ কারণে কিছু দালাল রয়েছে যাদের কাজই হলো অর্থের বিনিময়ে আপনাকে ভিসার জন্য ভারতীয় দূতাবাসে সাক্ষাতকারের জন্য আপনাকে তারিখ পাইয়ে দিবে। সেক্ষেত্রে উপরের প্রক্রিয়ায় পুরো আবেদনপত্র পূরণ করে তারিখ না পেলে দালালকে আপনার পাসপোর্ট নাম্বার, জন্ম তারিখ, ওয়েব ফাইল নাম্বার দিয়ে দিলে তারা সারাদিন ধরে চেষ্টা করে তারিখ পাইয়ে দেয়। সেজন্য তারা ৩০০ থেকে শুরু করে ১০০০ বা ১৫০০ টাকা নিয়ে থাকে। অনেকজনের ভিসার কাজ দিলে তারা টাকা কম নেয়। সাধারণত ৭০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যেই নেয় মাথাপিছু। আর নিজে যদি আপনি তারিখ ও সময় পেয়ে যান তাহলে তো কেল্লা ফতে। তারিখ পাওয়ার পর নির্ধারিত দিনে আপনাকে দূতাবাসে যে সকল কাগজপত্রের ফটোকপি ও আসল কপি নিয়ে যেতে হবে তা হলো-
১। সাক্ষাতকারের তারিখ লেখা পিডিএফ ফাইলটির প্রিন্ট করা কপি
২। পাসপোর্ট
৩। ইউটিলিটি বিল
৪। জাতীয় পরিচয়পত্র/ জন্মনিবন্ধন সনদ
৫। ২”/ ২” সিল-ছাপ্পড়, স্বাক্ষর না করা সদ্য তোলা রঙিন ছবি ৪ টি
৬। অফিস/ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দেয়া পরিচয়পত্র
৭। প্রতিষ্ঠান থেকে দলগত ভ্রমণ বা চিকিৎসার উদ্দেশ্যে গমন হলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত প্রয়োজনীয় সুপারিশের কাগজ
ভিসা প্রক্রিয়ার খরচ ৪০০ টাকা। আর ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভারতে যেতে চাইলে নূন্যতম ১৫০ ডলার পাসপোর্টে এনডোর্স করিয়ে নিতে হবে। অনেক সময় তারা বিগত ৩ বা ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টও চেয়ে থাকে।
Labels:
How To,
Informative,
Visa Processing,
অনলাইনে ভিসা,
ইন্ডিয়া,
ইন্ডিয়ান হাইকমিশন,
ইন্ডিয়ার ভিসা,
পাসপোর্ট,
ভারত,
ভিসা,
ভ্রমণ
Saturday, April 5, 2014
কীভাবে অনলাইনে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করবেন- ১ম পর্ব
বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ভারত যেতে হতে পারে। চিকিৎসা, ভ্রমণ হলো সাধারণ কিছু কারণ। আর অনেকের তো বিয়ের কেনাকাটা কোলকাতা থেকে করতে না পারলে জীবনই বৃথা। এছাড়া অনেকের আত্মীয়-স্বজন আছে সে দেশে। আমাদের দেশের তিনদিকে ভারত হওয়ায় স্থলপথে নেপাল কিংবা ভুটান যেতে হলেও ভারতের ট্রানজিট ভিসা নিতে হয়। যেকোনো দেশের ভিসা পাওয়ার চেয়ে এখন ভারতের ভিসা পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর অন্যতম কারণ প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি ভারতে যাওয়ার জন্য আবেদন করে থাকেন। এক সময় ভারতীয় হাইকমিশনের সামনে দাঁড়িয়ে সিরিয়াল নিতে হতো। এখন অনলাইনে আবেদন করে সাক্ষাতের তারিখ নিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাথে নিয়ে ভারতের হাইকমিশনে হাজির হতে হয়। আজকে আলোচনা করবো কীভাবে অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় তা নিয়ে।
প্রথমেই http://indianvisaonline.gov.in/visa/ এই পেইজে গিয়ে Online Visa Application Registration বাটনে ক্লিক করলেই ফরম চলে আসবে। ফরমের উপরের দিকে Temporary Application ID বলে একটা নাম্বার দেয়া থাকবে। ফরম পূরণের আগেই নাম্বারটি লিখে রাখুন। কেননা ফরমের কিছু অংশ পূরণ করে পরে বাকিটা পূরণ করতে চাইলে ঐ আইডি ব্যবহার করে যতটুকু আগেই করে রেখেছেন তার পর থেকে বাকিটা পূরণ করা যাবে। বিভিন্ন ঘর পূরণ করতে গিয়ে আমাদেরকে বেশকিছু সংশয়ের মধ্যে পড়তে হয়। সেজন্য খুব মনোযোগ দিয়ে ফরম পূরণ করা জরুরি। প্রথম পৃষ্ঠার সবগুলো আবশ্যিক ঘর পূরণ না করে আপনি পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতে পারবেন না। একদম প্রথম ঘরে আপনি বাংলাদেশে ভারতের কোন মিশন অফিসে থেকে আবেদন করছেন তা নির্বাচন করবেন। ওখানে অপশনের মধ্যে ঢাকা, চিটাগাং এবং রাজশাহী রয়েছে। আপনি আপনার নিকটস্থ মিশন নির্বাচন করবেন। এরপর আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান (জেলার নাম) এগুলো পূরণ করে citizenship/national id নম্বরের ঘরে যাবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের Personal Identification Number টি দিবেন। অর্থাৎ, পাসপোর্টে ব্যক্তিগত নম্বরের ঘরে যে সংখ্যাটি থাকে সেটিই দিতে হবে। কেননা পাসপোর্টের ঐ সংখ্যাটি আসলে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আর তা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকেই নেয়া হয়। Visible Identification Mark এর ঘরে আপনাকে দেখেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন কোনো চিহ্নের উল্লেখ করবেন যেমন- মুখের কোনো কাটা দাগ, তিল, জন্মদাগ বা হাত কিংবা পায়ের নিচের দিকের কোনো দাগ যা সহজেই দেখা যায়। এরপর আপনাকে পাসপোর্টে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, আপনার পাসপোর্ট যদি মেশিন রিডেবল হয়, তাহলে আপনি বাংলাদেশের যে অঞ্চল থেকেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন না কেন Place of Issue হবে ঢাকা।
প্রথম পৃষ্ঠা পূরণ শেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করে ২য় পৃষ্ঠায় যেতে হবে। সেখানে রয়েছে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লেখার ঘর। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এক হলে বর্তমান ঠিকানা লিখে একটা জায়গায় রয়েছে টিক চিহ্ন দেয়ার সেখানে ক্লিক করলেই স্থায়ী ঠিকানার ঘর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আপনার মা-বাবার নাম ও বিস্তারিত লেখার ঘর আসবে। তারপর একটা অপশনে রয়েছে যে আপনার নানা-নানী, দাদা-দাদী কি পাকিস্তান বা পাকিস্তানের দখলকৃত অঞ্চলের নাগরিক বা সেখানে বাস করতেন কিনা। এখানে No দেয়াই শ্রেয়। এখানে পাকিস্তান বলতে পাকিস্তানই বোঝানো হয়েছে। ৭১ এর আগের পূর্ব পাকিস্তানকে নির্দেশ করা হয় নি। মা-বাবার জন্মস্থান বলতে জন্মের জেলাকে বোঝানো হয়েছে। Occupation Detail of Applicant অংশে আপনার পেশার বিস্তারিত দিতে হবে। তবে আপনি ছাত্র হলে যখন Student নির্বাচন করবেন তখন আরেকটি অপশন আসবে আপনার বাবা অথবা স্বামী/স্ত্রী’র পেশার বিস্তারিত দেয়ার জন্য বলা হবে। বাবা মৃত হলে এবং আপনি অবিবাহিত হলে বাবার শেষ পেশা, চাকরি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা দিতে হবে। আর Designation অংশে Retired লিখে এরপর পদের নাম লিখতে হবে। বাবা অবসরে থাকলেও একই কথা প্রযোজ্য। তৃতীয় পৃষ্ঠায় আপনার ভিসার ধরণ, ভিসার মেয়াদ, ভ্রমণের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত অপশন নির্বাচন করতে হবে। কোন পথে ভারতে প্রবেশ করবেন এবং কোন পথে বের হবেন তাও আপনাকে নির্বাচন করে দিতে হবে। আকাশপথ হলে by air দিতে হবে। যেমন- বেনাপোল দিয়ে যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে বের হন তাহলে port of entry দিতে হবে By road Haridaspur. ওদিক দিয়ে বের হলেও একই। আর বুড়িমারী দিয়ে বাংলাদেশ দিয়ে বের হলে দিতে হবে by road Changrabandha. (চলবে)
প্রথমেই http://indianvisaonline.gov.in/visa/ এই পেইজে গিয়ে Online Visa Application Registration বাটনে ক্লিক করলেই ফরম চলে আসবে। ফরমের উপরের দিকে Temporary Application ID বলে একটা নাম্বার দেয়া থাকবে। ফরম পূরণের আগেই নাম্বারটি লিখে রাখুন। কেননা ফরমের কিছু অংশ পূরণ করে পরে বাকিটা পূরণ করতে চাইলে ঐ আইডি ব্যবহার করে যতটুকু আগেই করে রেখেছেন তার পর থেকে বাকিটা পূরণ করা যাবে। বিভিন্ন ঘর পূরণ করতে গিয়ে আমাদেরকে বেশকিছু সংশয়ের মধ্যে পড়তে হয়। সেজন্য খুব মনোযোগ দিয়ে ফরম পূরণ করা জরুরি। প্রথম পৃষ্ঠার সবগুলো আবশ্যিক ঘর পূরণ না করে আপনি পরবর্তী পৃষ্ঠায় যেতে পারবেন না। একদম প্রথম ঘরে আপনি বাংলাদেশে ভারতের কোন মিশন অফিসে থেকে আবেদন করছেন তা নির্বাচন করবেন। ওখানে অপশনের মধ্যে ঢাকা, চিটাগাং এবং রাজশাহী রয়েছে। আপনি আপনার নিকটস্থ মিশন নির্বাচন করবেন। এরপর আপনার নাম, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান (জেলার নাম) এগুলো পূরণ করে citizenship/national id নম্বরের ঘরে যাবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের Personal Identification Number টি দিবেন। অর্থাৎ, পাসপোর্টে ব্যক্তিগত নম্বরের ঘরে যে সংখ্যাটি থাকে সেটিই দিতে হবে। কেননা পাসপোর্টের ঐ সংখ্যাটি আসলে আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আর তা না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদ থেকেই নেয়া হয়। Visible Identification Mark এর ঘরে আপনাকে দেখেই খুঁজে পাওয়া যায় এমন কোনো চিহ্নের উল্লেখ করবেন যেমন- মুখের কোনো কাটা দাগ, তিল, জন্মদাগ বা হাত কিংবা পায়ের নিচের দিকের কোনো দাগ যা সহজেই দেখা যায়। এরপর আপনাকে পাসপোর্টে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে। এখানে মনে রাখতে হবে, আপনার পাসপোর্ট যদি মেশিন রিডেবল হয়, তাহলে আপনি বাংলাদেশের যে অঞ্চল থেকেই পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন না কেন Place of Issue হবে ঢাকা।
প্রথম পৃষ্ঠা পূরণ শেষে একটি ক্যাপচা পূরণ করে ২য় পৃষ্ঠায় যেতে হবে। সেখানে রয়েছে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা লেখার ঘর। বর্তমান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা এক হলে বর্তমান ঠিকানা লিখে একটা জায়গায় রয়েছে টিক চিহ্ন দেয়ার সেখানে ক্লিক করলেই স্থায়ী ঠিকানার ঘর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পূরণ হয়ে যাবে। এরপর আপনার মা-বাবার নাম ও বিস্তারিত লেখার ঘর আসবে। তারপর একটা অপশনে রয়েছে যে আপনার নানা-নানী, দাদা-দাদী কি পাকিস্তান বা পাকিস্তানের দখলকৃত অঞ্চলের নাগরিক বা সেখানে বাস করতেন কিনা। এখানে No দেয়াই শ্রেয়। এখানে পাকিস্তান বলতে পাকিস্তানই বোঝানো হয়েছে। ৭১ এর আগের পূর্ব পাকিস্তানকে নির্দেশ করা হয় নি। মা-বাবার জন্মস্থান বলতে জন্মের জেলাকে বোঝানো হয়েছে। Occupation Detail of Applicant অংশে আপনার পেশার বিস্তারিত দিতে হবে। তবে আপনি ছাত্র হলে যখন Student নির্বাচন করবেন তখন আরেকটি অপশন আসবে আপনার বাবা অথবা স্বামী/স্ত্রী’র পেশার বিস্তারিত দেয়ার জন্য বলা হবে। বাবা মৃত হলে এবং আপনি অবিবাহিত হলে বাবার শেষ পেশা, চাকরি/ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানা দিতে হবে। আর Designation অংশে Retired লিখে এরপর পদের নাম লিখতে হবে। বাবা অবসরে থাকলেও একই কথা প্রযোজ্য। তৃতীয় পৃষ্ঠায় আপনার ভিসার ধরণ, ভিসার মেয়াদ, ভ্রমণের উদ্দেশ্য সংক্রান্ত অপশন নির্বাচন করতে হবে। কোন পথে ভারতে প্রবেশ করবেন এবং কোন পথে বের হবেন তাও আপনাকে নির্বাচন করে দিতে হবে। আকাশপথ হলে by air দিতে হবে। যেমন- বেনাপোল দিয়ে যদি আপনি বাংলাদেশ থেকে বের হন তাহলে port of entry দিতে হবে By road Haridaspur. ওদিক দিয়ে বের হলেও একই। আর বুড়িমারী দিয়ে বাংলাদেশ দিয়ে বের হলে দিতে হবে by road Changrabandha. (চলবে)
Labels:
How To,
Informative,
Travel,
Visa Processing,
অনলাইনে ভিসা,
আবেদন,
ইন্ডিয়া,
কীভাবে করবেন,
কীভাবে ভিসা,
কোলকাতা,
পাসপোর্ট,
ভারত,
ভারতের ভিসা,
ভিসা,
ভ্রমণ
Tuesday, April 1, 2014
কীভাবে করাবেন নাগরিকত্বের সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র
বিভিন্ন প্রয়োজনের আমাদের লাগতে পারে নাগরিকত্বের সনদপত্র। সিটি করপোরেশন এলাকায় নাগরিকত্বের সনদপত্র দিয়ে থাকেন ওয়ার্ড কমিশনার। অনেক কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকলে জন্ম নিবন্ধন সনদের সাথে নাগরিকত্বের সনদপত্রও প্রয়োজন হয়। বিশেষ করে ১৮ বছরের কম বয়সী ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এ সনদ লাগতে পারে। কেননা তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র থাকে না। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বর্তমানে নির্বাচিত মেয়র ও ওয়ার্ড কমিশনাররা না থাকায় এ সনদ বর্তমানে ওয়ার্ড সচিবের সুপারিশক্রমে প্রদান করেন সিটি করপোরেশনের সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা। এ সনদ কীভাবে করাবেন তা নিয়ে আজকের আলোচনা।
এক কপি পাসপোর্টের সাইজের ছবি, নিজেদের বাসা হলে হোল্ডিং ট্যাক্সের ফটোকপি, ভাড়া বাসা হলে ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তার ফটোকপি নিয়ে চলে যান স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের। সেখানে গিয়ে নাগরিকত্বের সনদের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পূরণ করে সঙ্গে নেয়া অন্যান্য নথি ও ছবির সাথে জমা দিন। সিটি করপোরেশনে যাতায়াতের জন্য কিছু টাকাপয়সা দিতে হবে তাদের হাতে। সাধারণত দুই কর্মদিবসের মধ্যে তারা নগরভবন থেকে স্বাক্ষর করিয়ে এনে আপনার হাতে তুলে দেবে নাগরিকত্বের সনদ। সনদ গ্রহণের সময় আরো কিছু টাকা চাইবে তারা। পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা খরচ হতে পারে। কোনো সরকারি ফি নেই এ কাজের জন্য।
এবার আসি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রসঙ্গে। বয়স ১৮ বছর বা তার উর্ধ্বে হলেই কেবলমাত্র আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারবেন। মূলত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার আইডি ও ন্যাশনাল আইডি করার হিড়িক পড়ে। তখন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প করে করে এ সেবাগুলো প্রদান করে থাকেন। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের বয়স বেশ আগেই ১৮ বছর হয়ে গেলেও বিবিধ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র করান নি এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন নি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন বলে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা। অর্থাৎ, নির্বাচনের আগে আগে দেশের বাইরে থাকায় অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারেন নি। অনেকে আবার দেশে থেকেও কাজটি করাতে পারেন নি। যেমন- আমি। বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসে নি। আমিও গাফিলতি করে স্থানীয় বিদ্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধন ফরম পূরণ করি নি। এখন এ অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে হলে প্রথমেই জেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। ঢাকা মহানগরীর স্থানীয় নির্বাচন অফিস হলো ৬৭, পশ্চিম আগারগাঁওয়ে। আবারো বলছি, এ কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হবে না, যেতে হবে জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। ওখানে গেলে ওরা প্রথমেই জানতে চাইবে কেন আপনি নির্বাচনের আগে ভোটার হন নি। তখন আপনি কারণ জানাবেন যে দেশের বাইরে ছিলেন বা বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসেন নি এরকম। অতঃপর তারা আপনাকে ফরম-২ দিবে। আরেকটি ফরম (ফরম-১১) নিতে হবে সামনের ফটোকপির দোকান থেকে ৪-৫ টাকা দিয়ে। পূরণকৃত ফরমের সাথে কি কি কাগজের ফটোকপি লাগবে তাও তারা একটি কাগজে লিখে দেবে। সুবিধার্থে আমি বলে দিই এখানে।
১। পাসপোর্টের ফটোকপি
২। জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
৩। সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের ফটোকপি
৪। হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদের (নিজেদের বাসা হলে) ফটোকপি
৫। বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের ফটোকপি
৬। এসএসসি সনদের ফটোকপি
৭। সনাক্তকারীর (মা/বাব/স্বামী/স্ত্রী) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
প্রতিটি কপি অবশ্যই প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে।
এসব কাগজপত্র প্রথমবার যাওয়ার সময়েই নিয়ে যেতে পারেন। তাহলে অফিসে বসেই ফরমগুলো পূরণ করে জমা দিয়ে আসতে পারবেন। তবে কাগজগুলো তারা ঐদিন জমা নাও নিতে পারে। ৭ দিন পরে ছবি তোলার একটি তারিখ দেবে। ঐ দিন এসব কাগজ নিয়ে আপনাকে হাজির হতে হবে অফিসে। তারা কাগজপত্র জমা নিয়ে আপনার ছবি তুলে একটি ডেলিভারি স্লিপ ধরিয়ে দেবে আপনাকে। এর এক মাস পরে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় অর্থাৎ আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ৭ম তলায় গিয়ে স্লিপ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সারা বছর কার্যকর থাকে না। বিভিন্ন কাজে তারা অফিস বন্ধ করে অন্যান্য জেলা-উপজেলায় চলে যায়। তাই সেখানে গিয়ে কয়েকবার খোঁজ-খবর নিতে হতে পারে।
সকল ফরম ডাউনলোডের লিংক
ছবি:বাংলানিউজ২৪
এক কপি পাসপোর্টের সাইজের ছবি, নিজেদের বাসা হলে হোল্ডিং ট্যাক্সের ফটোকপি, ভাড়া বাসা হলে ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি, জন্ম নিবন্ধন সনদ অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তার ফটোকপি নিয়ে চলে যান স্থানীয় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ের। সেখানে গিয়ে নাগরিকত্বের সনদের জন্য প্রয়োজনীয় আবেদনপত্র পূরণ করে সঙ্গে নেয়া অন্যান্য নথি ও ছবির সাথে জমা দিন। সিটি করপোরেশনে যাতায়াতের জন্য কিছু টাকাপয়সা দিতে হবে তাদের হাতে। সাধারণত দুই কর্মদিবসের মধ্যে তারা নগরভবন থেকে স্বাক্ষর করিয়ে এনে আপনার হাতে তুলে দেবে নাগরিকত্বের সনদ। সনদ গ্রহণের সময় আরো কিছু টাকা চাইবে তারা। পুরো প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ ২০০ টাকা খরচ হতে পারে। কোনো সরকারি ফি নেই এ কাজের জন্য।
এবার আসি জাতীয় পরিচয়পত্র প্রসঙ্গে। বয়স ১৮ বছর বা তার উর্ধ্বে হলেই কেবলমাত্র আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারবেন। মূলত প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ভোটার আইডি ও ন্যাশনাল আইডি করার হিড়িক পড়ে। তখন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্যাম্প করে করে এ সেবাগুলো প্রদান করে থাকেন। কিন্তু আমাদের মাঝে এমন অনেকেই আছেন যাদের বয়স বেশ আগেই ১৮ বছর হয়ে গেলেও বিবিধ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র করান নি এবং ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হন নি। এর অন্যতম কারণ হিসেবে নির্বাচন কমিশন বলে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কথা। অর্থাৎ, নির্বাচনের আগে আগে দেশের বাইরে থাকায় অনেকে জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে পারেন নি। অনেকে আবার দেশে থেকেও কাজটি করাতে পারেন নি। যেমন- আমি। বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসে নি। আমিও গাফিলতি করে স্থানীয় বিদ্যালয়ে গিয়ে নিবন্ধন ফরম পূরণ করি নি। এখন এ অবস্থায় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে হলে প্রথমেই জেলা নির্বাচন অফিসে যেতে হবে। ঢাকা মহানগরীর স্থানীয় নির্বাচন অফিস হলো ৬৭, পশ্চিম আগারগাঁওয়ে। আবারো বলছি, এ কাজের জন্য নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয়ে যেতে হবে না, যেতে হবে জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে। ওখানে গেলে ওরা প্রথমেই জানতে চাইবে কেন আপনি নির্বাচনের আগে ভোটার হন নি। তখন আপনি কারণ জানাবেন যে দেশের বাইরে ছিলেন বা বাসায় ভোটার নিবন্ধন কর্মী আসেন নি এরকম। অতঃপর তারা আপনাকে ফরম-২ দিবে। আরেকটি ফরম (ফরম-১১) নিতে হবে সামনের ফটোকপির দোকান থেকে ৪-৫ টাকা দিয়ে। পূরণকৃত ফরমের সাথে কি কি কাগজের ফটোকপি লাগবে তাও তারা একটি কাগজে লিখে দেবে। সুবিধার্থে আমি বলে দিই এখানে।
১। পাসপোর্টের ফটোকপি
২। জন্ম নিবন্ধন সনদের ফটোকপি
৩। সিটি করপোরেশন কর্তৃক প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদপত্রের ফটোকপি
৪। হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদের (নিজেদের বাসা হলে) ফটোকপি
৫। বিদ্যুৎ/পানি/গ্যাস বিলের ফটোকপি
৬। এসএসসি সনদের ফটোকপি
৭। সনাক্তকারীর (মা/বাব/স্বামী/স্ত্রী) জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি
প্রতিটি কপি অবশ্যই প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাকে দিয়ে সত্যায়িত করাতে হবে।
এসব কাগজপত্র প্রথমবার যাওয়ার সময়েই নিয়ে যেতে পারেন। তাহলে অফিসে বসেই ফরমগুলো পূরণ করে জমা দিয়ে আসতে পারবেন। তবে কাগজগুলো তারা ঐদিন জমা নাও নিতে পারে। ৭ দিন পরে ছবি তোলার একটি তারিখ দেবে। ঐ দিন এসব কাগজ নিয়ে আপনাকে হাজির হতে হবে অফিসে। তারা কাগজপত্র জমা নিয়ে আপনার ছবি তুলে একটি ডেলিভারি স্লিপ ধরিয়ে দেবে আপনাকে। এর এক মাস পরে নির্বাচন কমিশনের প্রধান কার্যালয় অর্থাৎ আগারগাঁওয়ের ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনের ৭ম তলায় গিয়ে স্লিপ দেখিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে হবে। উল্লেখ্য, জাতীয় পরিচয়পত্র করাতে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হয় না। জেলা নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সারা বছর কার্যকর থাকে না। বিভিন্ন কাজে তারা অফিস বন্ধ করে অন্যান্য জেলা-উপজেলায় চলে যায়। তাই সেখানে গিয়ে কয়েকবার খোঁজ-খবর নিতে হতে পারে।
সকল ফরম ডাউনলোডের লিংক
ছবি:বাংলানিউজ২৪
Monday, March 17, 2014
কীভাবে ওঠাবেন জন্ম নিবন্ধন সনদ
দেশ অনেক এগিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন কাজে নিজের পরিচয় তুলে ধরতে আজকাল জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট কিংবা জন্মনিবন্ধন সনদ লাগছে। আমাদের কারো কারো হয়তো শুধু পাসপোর্ট বা শুধু জন্ম নিবন্ধন সনদ বা শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। আবার কারো এ তিনটি মহামূল্যবান বস্তুই রয়েছে। অনেক কাজ করতে গেলে এ তিনটি কাগজই প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় জাতীয় পরিচয়পত্র করতে বা বিদেশে ভিসার জন্য লাগতে পারে জন্ম নিবন্ধন সনদ। জাতীয় পরিচয়পত্রের কাজ সারা বছর হয় না। কিন্তু হঠাৎ করে পাসপোর্ট করতে হলে জন্ম নিবন্ধন থাকা বাধ্যতামূলক। আজকে আলোচনা করবো কীভাবে সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয় থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করতে হয়।
প্রথমে নিজ এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়টি খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেখানে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন ফরম বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। অনলাইনেও এ ফরম পাওয়া যায়। অনলাইনে ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার ব্যবস্থাও আছে কিন্তু আমি নিজে সে চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। সম্ভবত ওদের সার্ভারে কোনো সমস্যা ছিল। সে কারণে ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। জিজ্ঞেস করতে পারেন যে জমা দেয়ার সময় কী কী কাগজের ফটোকপি সাথে দিতে হবে। তাও বলে রাখি, প্রাপ্তবয়স্ক বা যার পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের সনদ রয়েছে তাকে এসব কাগজের যেকোনো একটি বা দু’টির ফটোকপি জমা দিতে হবে। যারা একদম বাচ্চা বা নবজাতক তাদের জন্য জমা দিতে হবে তার মা এবং বাবা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি। ফটোকপি সত্যায়িত না করলেও কাজ হয় কিন্তু করে রাখাই ভালো।
ইচ্ছে করলে কমিশনার অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে কেউ সরাসরি সিটি করপোরেশনে গিয়েও কাজ করাতে পারেন। কিন্তু সেটি অসম্ভব পরিশ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। একটা পুরো দিন সেখানে চলে যেতে পারে। তাই ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ের কর্মরত ব্যক্তিদের কিছু টাকাপয়সা দিয়ে এ কাজটি করানো সুবিধাজনক। টাকাপয়সার প্রসঙ্গে বলি। দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারিভাবে কোনো টাকা লাগে না। আর দুই বছরের ওপরে যেকোনো বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়সের প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা করে দিতে হয়। তবে কমিশনার অফিসের লোকদের দিয়ে কাজ করাতে তাদের চা-নাশতা-যাতায়াতের জন্য কিছু খরচ দিতে হয়। সেটা আবার এলাকার ওপর ভিত্তি করে। অভিজাত এলাকায় একটু বেশি টাকা দাবি করা হয়। যেদিন ফরম জমা দেবেন সেদিন তাদেরকে ন্যায্য টাকা অর্থাৎ বয়সের প্রতি বছরের জন্য যত টাকা আসে তত টাকা দিয়ে দিতে হবে আর সাথে হয়তো আরো ১০০-২০০ টাকা দিতে হতে পারে যাতায়াতের জন্য। তবে তারা আরো টাকা দাবি করতে থাকে নানান কারণ দেখিয়ে। তাদের ভাষ্য হলো সিটি করপোরেশনে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য কম্পিউটারে ইংরেজিতে টাইপ যে করে সে ১০০ টাকা নেয়। আবার যে চিকিৎসক নিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর করেন তিনিও ১০০ টাকা নেন। সনদের কার্ডের মূল্য ২০ টাকা, কেউ বলে ৩০ টাকা। এসব কথার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। মোট কথা ন্যায্য টাকার পাশাপাশি তারা যেভাবেই হোক আরো ২০০-৩০০ টাকা নিতে চাইবে। আরো কারণ দেখিয়ে তারা হাজার টাকাও চেয়ে বসতে পারে। বিশেষ করে কমিশনার অফিসে কিছু দালাল থাকে। তাদের দেখে আপনি মনে করবেন যে অফিসেরই লোক। তারা টাকা আরো বেশি নেয়। এ কারণে অফিসে গিয়ে ভালো করে যাচাই করে নেবেন যে কারা আসলেই সেখানকার কর্মচারি। খরচ নিয়ে মূলামূলি করতে হবে। কখনোই মনে করবেন না ফরম জমা দেয়ার সময় যা টাকা দিয়েছেন সেটিই সব। কারণ সনদ নেয়ার সময় আবার ১০০ টাকা দিতেই হবে। তাই ন্যায্য টাকার বাইরে আগে ১০০ টাকার মতো দিয়ে রাখবেন। আর নেয়ার সময় বাকিটা দিবেন। তবে সিটি করপোরেশনেও তাদেরকে কিছু খরচাপাতি করতে হয়। কিন্তু সব সময়েই চেষ্টা করতে হবে দামাদামি করে যথাসম্ভব কম টাকা দেয়ার। সাধারণত ফরম জমা দেয়ার ২ থেকে ৩ কর্ম দিবসের মধ্যেই তারা জন্ম নিবন্ধন সনদ এনে দেয়। তখন কমিশনার অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। ফরম জমা দেয়ার সময় অবশ্যই তাদের মোবাইল নম্বর রেখে দেবেন। সাধারণত এ অফিসগুলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে আরো জানতে যেতে পারেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্য নিবন্ধন প্রকল্পের সাইটে।
প্রথমে নিজ এলাকার ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়টি খুঁজে বের করতে হবে। এরপর সেখানে গিয়ে জন্ম নিবন্ধন ফরম বিনামূল্যে সংগ্রহ করা যাবে। অনলাইনেও এ ফরম পাওয়া যায়। অনলাইনে ফরম পূরণ করে জমা দেয়ার ব্যবস্থাও আছে কিন্তু আমি নিজে সে চেষ্টা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলাম। সম্ভবত ওদের সার্ভারে কোনো সমস্যা ছিল। সে কারণে ওয়ার্ড কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়ে ফরম নিয়ে তা পূরণ করতে হবে। জিজ্ঞেস করতে পারেন যে জমা দেয়ার সময় কী কী কাগজের ফটোকপি সাথে দিতে হবে। তাও বলে রাখি, প্রাপ্তবয়স্ক বা যার পাসপোর্ট অথবা জাতীয় পরিচয়পত্র বা নাগরিকত্বের সনদ রয়েছে তাকে এসব কাগজের যেকোনো একটি বা দু’টির ফটোকপি জমা দিতে হবে। যারা একদম বাচ্চা বা নবজাতক তাদের জন্য জমা দিতে হবে তার মা এবং বাবা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি। ফটোকপি সত্যায়িত না করলেও কাজ হয় কিন্তু করে রাখাই ভালো।
ইচ্ছে করলে কমিশনার অফিস থেকে ফরম সংগ্রহ করে কেউ সরাসরি সিটি করপোরেশনে গিয়েও কাজ করাতে পারেন। কিন্তু সেটি অসম্ভব পরিশ্রমসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। একটা পুরো দিন সেখানে চলে যেতে পারে। তাই ওয়ার্ড কমিশনার কার্যালয়ের কর্মরত ব্যক্তিদের কিছু টাকাপয়সা দিয়ে এ কাজটি করানো সুবিধাজনক। টাকাপয়সার প্রসঙ্গে বলি। দুই বছর বয়সের নিচের শিশুদের জন্ম নিবন্ধন করতে সরকারিভাবে কোনো টাকা লাগে না। আর দুই বছরের ওপরে যেকোনো বয়সী ব্যক্তির ক্ষেত্রে বয়সের প্রতি বছরের জন্য ১০ টাকা করে দিতে হয়। তবে কমিশনার অফিসের লোকদের দিয়ে কাজ করাতে তাদের চা-নাশতা-যাতায়াতের জন্য কিছু খরচ দিতে হয়। সেটা আবার এলাকার ওপর ভিত্তি করে। অভিজাত এলাকায় একটু বেশি টাকা দাবি করা হয়। যেদিন ফরম জমা দেবেন সেদিন তাদেরকে ন্যায্য টাকা অর্থাৎ বয়সের প্রতি বছরের জন্য যত টাকা আসে তত টাকা দিয়ে দিতে হবে আর সাথে হয়তো আরো ১০০-২০০ টাকা দিতে হতে পারে যাতায়াতের জন্য। তবে তারা আরো টাকা দাবি করতে থাকে নানান কারণ দেখিয়ে। তাদের ভাষ্য হলো সিটি করপোরেশনে জন্ম নিবন্ধনের তথ্য কম্পিউটারে ইংরেজিতে টাইপ যে করে সে ১০০ টাকা নেয়। আবার যে চিকিৎসক নিবন্ধন সনদে স্বাক্ষর করেন তিনিও ১০০ টাকা নেন। সনদের কার্ডের মূল্য ২০ টাকা, কেউ বলে ৩০ টাকা। এসব কথার তেমন কোনো ভিত্তি নেই। মোট কথা ন্যায্য টাকার পাশাপাশি তারা যেভাবেই হোক আরো ২০০-৩০০ টাকা নিতে চাইবে। আরো কারণ দেখিয়ে তারা হাজার টাকাও চেয়ে বসতে পারে। বিশেষ করে কমিশনার অফিসে কিছু দালাল থাকে। তাদের দেখে আপনি মনে করবেন যে অফিসেরই লোক। তারা টাকা আরো বেশি নেয়। এ কারণে অফিসে গিয়ে ভালো করে যাচাই করে নেবেন যে কারা আসলেই সেখানকার কর্মচারি। খরচ নিয়ে মূলামূলি করতে হবে। কখনোই মনে করবেন না ফরম জমা দেয়ার সময় যা টাকা দিয়েছেন সেটিই সব। কারণ সনদ নেয়ার সময় আবার ১০০ টাকা দিতেই হবে। তাই ন্যায্য টাকার বাইরে আগে ১০০ টাকার মতো দিয়ে রাখবেন। আর নেয়ার সময় বাকিটা দিবেন। তবে সিটি করপোরেশনেও তাদেরকে কিছু খরচাপাতি করতে হয়। কিন্তু সব সময়েই চেষ্টা করতে হবে দামাদামি করে যথাসম্ভব কম টাকা দেয়ার। সাধারণত ফরম জমা দেয়ার ২ থেকে ৩ কর্ম দিবসের মধ্যেই তারা জন্ম নিবন্ধন সনদ এনে দেয়। তখন কমিশনার অফিসে গিয়ে নিয়ে আসতে হয়। ফরম জমা দেয়ার সময় অবশ্যই তাদের মোবাইল নম্বর রেখে দেবেন। সাধারণত এ অফিসগুলো সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ছুটির দিনে বন্ধ থাকে।
জন্ম নিবন্ধন বিষয়ে আরো জানতে যেতে পারেন স্থানীয় সরকার বিভাগের জন্ম ও মৃত্য নিবন্ধন প্রকল্পের সাইটে।
Labels:
How To,
Informative,
ওয়ার্ড কমিশনার,
কীভাবে করবেন,
জন্ম নিবন্ধন,
পরিচয়পত্র,
সনদ,
সিটি করপোরেশন
Saturday, March 15, 2014
কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্টের কপি সত্যায়িত করে বিদেশে পাঠাবেন
আগের লেখায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলেছিলাম। আজকের লেখায় এই ট্রান্সক্রিপ্টের ফটোকপি সত্যায়ন করে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানাবো। বলে রাখা ভালো, বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মূল ট্রান্সক্রিপ্ট পাঠানোর নিয়ম। ট্রান্সক্রিপ্টের মূল কপি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে ভরে সিলগালা করে নিতে হয়। এরপর নিজ দায়িত্বে ডিএইচএল, ফেডএক্স বা অন্য নির্ভরযোগ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠাতে হয়। কিন্তু পঠিত কোর্স বা অর্জিত ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট বা সমতুল্য করার জন্য মূল ট্রান্সকক্রিপ্ট পাঠানোর প্রয়োজন পড়ে না। উত্তর আমেরিকাতে পড়াশুনা বা কাজের জন্য যাওয়ার প্রয়োজন হলে বিভিন্ন ইকুইভ্যালেন্স এজেন্সির মাধ্যমে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করে নেয়ার প্রয়োজন পড়ে। এ ধরণের ইকুইভ্যালেন্স সংস্থায় মূল ট্রান্সক্রিপ্ট না পাঠিয়ে ফটোকপি ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন থেকে সত্যায়ন করে পাঠাতে হয় যথারীতি সিলগালা করা বিশ্ববিদ্যালয়ের খামে। উল্লেখ্য, বিদেশে ইকুইভ্যালেন্ট সংস্থার কাছে ট্রান্সক্রিপ্টের কপির পাশাপাশি সার্টিফিকেটের ফটোকপিও সত্যায়ন করে পাঠাতে হয়।
ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর পর তা ফটোকপি করে সেই কপি সত্যায়নের জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে বিনামূল্যে সত্যায়নের আবেদনপত্র বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পূরণ শেষে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের মোট যে কয়টি পাতা রয়েছে অর্থাৎ যে কয়টা পাতা আপনি সত্যায়ন করাতে চান তার সংখ্যা ৩০৫ এর কর্মকর্তাকে জানাবেন। তখন তিনি ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় টাকার অংক লিখে দেবেন। প্রতি পাতা সত্যায়নের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ধরা যাক, আপনার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ৫ টি পাতা। মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ২ টি পাতা। আর এ দু’টি ডিগ্রির জন্য রয়েছে ২টি সার্টিফিকেট। অর্থাৎ, এসবগুলো কাগজ ফটোকপি করলে মোট কাগজ হচ্ছে ৯ পাতা। এখন এই ৯ পাতা সত্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪৫০ টাকা। ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর সময়েই যদি খাম উঠিয়ে রাখেন তাহলে আর খামের প্রয়োজন হবে না। যদি খাম না ওঠান তাহলে খামের জন্য আরো ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করার জন্য আরেকটু তথ্য প্রয়োজন হয়। সেটি হলো ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখ। যদি আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কশিট/গ্রেডশিটে সে তারিখের উল্লেখ থাকে তাহলে আর সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেখানে এ তথ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। ৩০৯ কক্ষ থেকে আপনি যে ক’টি ডিগ্রির ফলাফলের তারিখ জানতে চান সে ক’টি আবেদনপত্র প্রতিটি ১৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে। সে আবেদনপত্র পূরণ করে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা প্রবেশপত্র না থাকলে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে ৩০৮ নম্বর কক্ষে জমা দিতে হবে। তখন তারা আবেদনপত্রের ওপর টাকার অংক লিখে দেবে। প্রতিটি ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হয়।
এবার আপনার কাছে রইলো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট সত্যায়নের আবেদনপত্র এবং আপনার পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র। নিশ্চয়ই মনে আছে যে সকল আবেদনপত্রের ওপরেই কত টাকা জমা দিতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। এবার আপনাকে চলে যেতে হবে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে। সেখানে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। যে ক’টি আবেদনপত্র সে ক’টি ডিপোজিট স্লিপ নিতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে আবেদনপত্র ক্যাশিয়ারকে প্রদর্শন করে টাকা জমা দিতে হবে। স্লিপে ব্যাংকের সিল এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিলে স্লিপ ও আবেদনপত্র নিয়ে আপনি পুনরায় ফিরে আসবেন রেজিস্ট্রার ভবনে। ৩০৫ নম্বর কক্ষে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তখন তখনই তারা সবগুলো কপি সত্যায়িত করে দেয়। কখনো কখনো পরে আসতে বলে। আর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র জমা দিলে তারা টাকা জমা দেয়ার স্লিপের পেছনে কবে এসে সনদ সংগ্রহ করতে হবে তা লিখে দেবে। নির্দিষ্ট দিনে সত্যায়িত সনদ এবং ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ যথাক্রমে ৩০৫ ও ৩০৮ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। এবার যে ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থায় আপনার কাগজপত্র পাঠাবেন তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে হবে। ফরম আগে থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে রাখতে হবে। আর সেই ফরমের একটা অংশ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট শাখাকে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। এরপর সেই ফরমটিসহ সকল সত্যায়িত কাগজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিলেই হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানোর আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঐ সংস্থার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে রাখতে হবে।
ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর পর তা ফটোকপি করে সেই কপি সত্যায়নের জন্য রেজিস্ট্রার ভবনের তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ থেকে বিনামূল্যে সত্যায়নের আবেদনপত্র বা ফরম সংগ্রহ করতে হয়। ফরম পূরণ শেষে সার্টিফিকেট এবং ট্রান্সক্রিপ্টের মোট যে কয়টি পাতা রয়েছে অর্থাৎ যে কয়টা পাতা আপনি সত্যায়ন করাতে চান তার সংখ্যা ৩০৫ এর কর্মকর্তাকে জানাবেন। তখন তিনি ফরমের নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োজনীয় টাকার অংক লিখে দেবেন। প্রতি পাতা সত্যায়নের জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হয়। ধরা যাক, আপনার অনার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ৫ টি পাতা। মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্টে রয়েছে ২ টি পাতা। আর এ দু’টি ডিগ্রির জন্য রয়েছে ২টি সার্টিফিকেট। অর্থাৎ, এসবগুলো কাগজ ফটোকপি করলে মোট কাগজ হচ্ছে ৯ পাতা। এখন এই ৯ পাতা সত্যায়নের জন্য প্রয়োজন ৪৫০ টাকা। ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর সময়েই যদি খাম উঠিয়ে রাখেন তাহলে আর খামের প্রয়োজন হবে না। যদি খাম না ওঠান তাহলে খামের জন্য আরো ৪০০ টাকা দিতে হবে। বিদেশে ডিগ্রি ইকুইভ্যালেন্ট করার জন্য আরেকটু তথ্য প্রয়োজন হয়। সেটি হলো ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখ। যদি আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার মার্কশিট/গ্রেডশিটে সে তারিখের উল্লেখ থাকে তাহলে আর সমস্যা নেই। কিন্তু যদি সেখানে এ তথ্য না থাকে সেক্ষেত্রে আরেকটু পরিশ্রম করতে হবে। ৩০৯ কক্ষ থেকে আপনি যে ক’টি ডিগ্রির ফলাফলের তারিখ জানতে চান সে ক’টি আবেদনপত্র প্রতিটি ১৫ টাকার বিনিময়ে কিনতে হবে। সে আবেদনপত্র পূরণ করে আপনার চূড়ান্ত পরীক্ষার প্রবেশপত্র অথবা প্রবেশপত্র না থাকলে সার্টিফিকেটের সত্যায়িত ফটোকপি আবেদনপত্রের সাথে ৩০৮ নম্বর কক্ষে জমা দিতে হবে। তখন তারা আবেদনপত্রের ওপর টাকার অংক লিখে দেবে। প্রতিটি ডিগ্রির ফল প্রকাশের তারিখের জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হয়।
এবার আপনার কাছে রইলো ট্রান্সক্রিপ্ট ও সার্টিফিকেট সত্যায়নের আবেদনপত্র এবং আপনার পরীক্ষাসমূহের ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র। নিশ্চয়ই মনে আছে যে সকল আবেদনপত্রের ওপরেই কত টাকা জমা দিতে হবে তা উল্লেখ করা আছে। এবার আপনাকে চলে যেতে হবে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে। সেখানে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ সংগ্রহ করে পূরণ করতে হবে। যে ক’টি আবেদনপত্র সে ক’টি ডিপোজিট স্লিপ নিতে হবে। ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে আবেদনপত্র ক্যাশিয়ারকে প্রদর্শন করে টাকা জমা দিতে হবে। স্লিপে ব্যাংকের সিল এবং স্বাক্ষর দিয়ে দিলে স্লিপ ও আবেদনপত্র নিয়ে আপনি পুনরায় ফিরে আসবেন রেজিস্ট্রার ভবনে। ৩০৫ নম্বর কক্ষে টাকা জমা দেয়ার স্লিপ দেখালে তখন তখনই তারা সবগুলো কপি সত্যায়িত করে দেয়। কখনো কখনো পরে আসতে বলে। আর ৩০৮ নম্বর কক্ষে ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ ওঠানোর আবেদনপত্র জমা দিলে তারা টাকা জমা দেয়ার স্লিপের পেছনে কবে এসে সনদ সংগ্রহ করতে হবে তা লিখে দেবে। নির্দিষ্ট দিনে সত্যায়িত সনদ এবং ফল প্রকাশের তারিখ সম্বলিত সনদ যথাক্রমে ৩০৫ ও ৩০৮ থেকে সংগ্রহ করতে হবে।
কাজ কিন্তু প্রায় শেষ। এবার যে ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থায় আপনার কাগজপত্র পাঠাবেন তাদের ওয়েবসাইটে আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট খুলে রাখতে হবে। ফরম আগে থেকেই ডাউনলোড করে প্রিন্ট দিয়ে পূরণ করে রাখতে হবে। আর সেই ফরমের একটা অংশ রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ট্রান্সক্রিপ্ট শাখাকে দিয়ে পূরণ করাতে হবে। এরপর সেই ফরমটিসহ সকল সত্যায়িত কাগজ নির্দিষ্ট ঠিকানায় কুরিয়ার করে দিলেই হবে। আর হ্যাঁ, অবশ্যই পাঠানোর আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ঐ সংস্থার প্রয়োজনীয় ফি প্রদান করে রাখতে হবে।
Labels:
How To,
Informative,
ইকুইভ্যালেন্সি সংস্থা,
উচ্চশিক্ষা,
ট্রান্সক্রিপ্ট,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
রেজিস্ট্রার বিল্ডিং,
সত্যায়ন,
সনদ,
সার্টিফিকেট
Friday, March 14, 2014
কীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠাবেন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা এর অধিভুক্ত কলেজ/প্রতিষ্ঠানে যারা পড়াশুনা করেছেন বা করছেন তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠাতে হতে পারে। একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টের সাথে মার্কশিট বা গ্রেডশিটের বেশ কিছু পার্থক্য রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট বলতে বোঝায় ডিগ্রির বিস্তারিত নম্বরপত্র যেখানে শুধু আপনি কত মার্ক বা গ্রেড পেয়েছেন তাই নয় বরং কোর্সের নাম, ক্রেডিট ঘন্টা, প্রতি বছরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ, পরীক্ষা রোল নম্বর, শ্রেণিতে মোট কত সংখ্যক শিক্ষার্থী ছিল, ভর্তি শিক্ষাবর্ষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধন নম্বর- এসব কিছুই থাকবে। বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো অত্যাবশ্যক। আবার অনেক সময় বিদেশে কোনো প্রতিষ্ঠানে মূল ট্রান্সক্রিপ্ট না পাঠিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন দ্বারা সত্যায়িত কপি পাঠাতে হয়। আজকের লেখায় ট্রান্সক্রিপ্ট ওঠানোর বিস্তারিত পদ্ধতি ও পরবর্তী লেখায় তা সত্যায়নের প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করবো।
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন
ট্রান্সপ্রিপ্ট ওঠানোর জন্য যে কাগজপত্রগুলো আগে থেকেই জোগাড় করে ফটোকপি করে সত্যায়িত করে রাখতে হবেঃ
১। বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র
২। পরিচয় এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
৩। কলেজ/ ইনস্টিটিউট/বিভাগ বা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে প্রাপ্ত প্রতি বছরের নম্বরপত্র বা গ্রেডশিট। চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার নম্বরপত্র/গ্রেডশিট রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর নম্বরপত্রী শাখা প্রদান করে থাকে।
৪। সম্পূর্ণ ডিগ্রির সিলেবাসের কপি
উল্লেখ্য, এসএসসির সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের দিয়ে সত্যায়িত করাতে পারেন। প্রতি বছরের নম্বরপত্র এবং সিলেবাসের কপি সত্যায়িত না করালেও চলে কিন্তু হঠাৎ করে সত্যায়িত করা কপিও চেয়ে বসতে পারে। তাই নম্বরপত্র বা সিলেবাস নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষক/ কলেজের অধ্যাপক/বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত করিয়ে রাখা শ্রেয়।
এবার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ দৌড়াদৌড়ি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ হলো ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন। এই কক্ষ থেকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে ট্রান্সক্রিট উত্তোলনের ফরম নিতে হবে। কক্ষের দরজায় উপরে বর্ণিত নিয়মাবলী দেয়া রয়েছে। ফরমটির কয়েকটি পৃষ্ঠা রয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম পৃষ্ঠাটি পূরণ করতে হবে। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলো পূরণ করার প্রয়োজন নেই। উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সাথে থাকলে তখনই ফরমটি পূরণ করে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে দিতে পারবেন। তখন সংযুক্ত কাগজপত্র নিরীক্ষা করে তিনি কত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে তা ফরমের ওপরে লিখে দেবেন। প্রতি কপি ট্রান্সক্রিপ্টের মূল্য ৪০০ টাকা। ইম্প্রুভমেন্ট অথবা রেফার্ড থাকলে প্রতিটি ইম্প্রুভমেন্ট বা রেফার্ডের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট একত্রে তুলতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স বা অন্য ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট আলাদা তুলতে চাইলে শুরুতেই একাধিক ফরম নিতে হবে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত মেডিকেল কলেজের/ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস, এমফিল, এমএস, এফসিপিএস ডিগ্রির আলাদা ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে হবে। সেজন্য প্রতিটি ডিগ্রির জন্য আলাদা ফরম নিতে হবে। বিদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত খামও নিতে হয়। সেটির মূল্য ৪০০ টাকা।
ফরমের ওপর খামসহ মোট টাকার পরিমাণ লিখে দিলে তা নিয়ে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার সময় টাকার অংক লেখা ফরম অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। ডিপোজিট স্লিপে নাম, ঠিকানা, কি বাবদ টাকা জমা দিতে হচ্ছে (এক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপ্ট) তা লিখতে হবে। টাকা জমা দেয়ার পর ব্যাংকের স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে দিলে এই পে-স্লিপ নিয়ে আবারো রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ৩০৫ নম্বর কক্ষে যেতে হবে। সেখানে ফরম ও পে স্লিপ প্রদর্শন করলে তারা স্লিপের পেছনে ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের একটি তারিখ লিখে দেবে (সাধারণত ২০ দিন থেকে ৩০ দিন পর)। এরপর ফরমটি একটি বাক্সে রেখে দিয়ে হলুদ রঙের স্লিপটি সাথে নিয়ে আসতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ছবি: টিএসসি
স্লিপে লেখা তারিখে সকাল সকাল ৩০৫ নম্বর কক্ষে চলে যেতে হবে। স্লিপ দেখালে তারা খসড়া ট্রান্সক্রিপ্ট বের করে দিবে। এরপর বসে বসে চেক করে দেখতে হবে কোনো ভুল আছে কিনা। ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। চেক করা শেষ হলে কম্পিউটার অপারেটরের পাশে বসে তা কম্পিউটারে অবস্থিত সফট কপিতে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। সংশোধন সম্পন্ন হলে তারা ট্রান্সক্রিপ্টের সংশোধিত কপি ওখানেই প্রিন্ট দিয়ে বের করে দিবে। এরপর তারা বিকেল ৪ টার দিকে আসতে বলবে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের জন্য। ৪ টার দিকে গিয়ে প্রতি পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর আছে কিনা তা চেক করে ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করার সময় একটি রেজিস্ট্রার খাতায় তারা আপনার স্বাক্ষর নেবে এবং রেজিস্ট্রার খাতার একটি সিরিয়াল নম্বর ট্রান্সক্রিপ্টের প্রথম পৃষ্টার নিচে বাম দিকে DUTN এর পাশে লিখে দেবে।
উল্লেখ্য, জরুরি ভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে চাইলে প্রথম ফরম গ্রহণের সময়েই তা বলতে হবে এবং প্রতি কপির জন্য অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে জমা দিতে হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: dutimz এবং somewhereinblog
ছবি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন
ট্রান্সপ্রিপ্ট ওঠানোর জন্য যে কাগজপত্রগুলো আগে থেকেই জোগাড় করে ফটোকপি করে সত্যায়িত করে রাখতে হবেঃ
১। বয়স প্রমাণের জন্য এসএসসি পরীক্ষার সনদপত্র
২। পরিচয় এবং স্থায়ী ঠিকানা প্রমাণের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট
৩। কলেজ/ ইনস্টিটিউট/বিভাগ বা রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে প্রাপ্ত প্রতি বছরের নম্বরপত্র বা গ্রেডশিট। চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষার নম্বরপত্র/গ্রেডশিট রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর নম্বরপত্রী শাখা প্রদান করে থাকে।
৪। সম্পূর্ণ ডিগ্রির সিলেবাসের কপি
উল্লেখ্য, এসএসসির সনদপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি প্রথম শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তাদের দিয়ে সত্যায়িত করাতে পারেন। প্রতি বছরের নম্বরপত্র এবং সিলেবাসের কপি সত্যায়িত না করালেও চলে কিন্তু হঠাৎ করে সত্যায়িত করা কপিও চেয়ে বসতে পারে। তাই নম্বরপত্র বা সিলেবাস নিজ বিভাগ/ইনস্টিটিউটের শিক্ষক/ কলেজের অধ্যাপক/বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষ কর্তৃক সত্যায়িত করিয়ে রাখা শ্রেয়।
এবার শুরু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এ দৌড়াদৌড়ি। রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর তিন তলার ৩০৫ নম্বর কক্ষ হলো ট্রান্সক্রিপ্ট সেকশন। এই কক্ষ থেকে ৫০ টাকা পরিশোধ করে ট্রান্সক্রিট উত্তোলনের ফরম নিতে হবে। কক্ষের দরজায় উপরে বর্ণিত নিয়মাবলী দেয়া রয়েছে। ফরমটির কয়েকটি পৃষ্ঠা রয়েছে কিন্তু শুধুমাত্র প্রথম পৃষ্ঠাটি পূরণ করতে হবে। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলো পূরণ করার প্রয়োজন নেই। উপরে উল্লিখিত কাগজপত্রগুলো সাথে থাকলে তখনই ফরমটি পূরণ করে দায়িত্বরত কর্মকর্তার কাছে দিতে পারবেন। তখন সংযুক্ত কাগজপত্র নিরীক্ষা করে তিনি কত টাকা ব্যাংকে জমা দিতে হবে তা ফরমের ওপরে লিখে দেবেন। প্রতি কপি ট্রান্সক্রিপ্টের মূল্য ৪০০ টাকা। ইম্প্রুভমেন্ট অথবা রেফার্ড থাকলে প্রতিটি ইম্প্রুভমেন্ট বা রেফার্ডের জন্য অতিরিক্ত ১০০ টাকা করে জমা দিতে হবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান) এবং মাস্টার্সের ট্রান্সক্রিপ্ট একত্রে তুলতে হলে ৫০০ টাকা লাগবে। স্নাতক, স্নাতক (সম্মান), মাস্টার্স বা অন্য ডিগ্রির ট্রান্সক্রিপ্ট আলাদা তুলতে চাইলে শুরুতেই একাধিক ফরম নিতে হবে। যেমন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত মেডিকেল কলেজের/ ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস, এমফিল, এমএস, এফসিপিএস ডিগ্রির আলাদা ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে হবে। সেজন্য প্রতিটি ডিগ্রির জন্য আলাদা ফরম নিতে হবে। বিদেশে পাঠানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সিল ও স্বাক্ষরযুক্ত খামও নিতে হয়। সেটির মূল্য ৪০০ টাকা।
ফরমের ওপর খামসহ মোট টাকার পরিমাণ লিখে দিলে তা নিয়ে টিএসসিতে অবস্থিত জনতা ব্যাংকে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে গিয়ে হলুদ রঙের ডিপোজিট স্লিপ পূরণ করে টাকা জমা দিতে হবে। টাকা জমা দেয়ার সময় টাকার অংক লেখা ফরম অবশ্যই প্রদর্শন করতে হবে। ডিপোজিট স্লিপে নাম, ঠিকানা, কি বাবদ টাকা জমা দিতে হচ্ছে (এক্ষেত্রে ট্রান্সক্রিপ্ট) তা লিখতে হবে। টাকা জমা দেয়ার পর ব্যাংকের স্বাক্ষর ও সিল দিয়ে দিলে এই পে-স্লিপ নিয়ে আবারো রেজিস্ট্রার বিল্ডিং এর ৩০৫ নম্বর কক্ষে যেতে হবে। সেখানে ফরম ও পে স্লিপ প্রদর্শন করলে তারা স্লিপের পেছনে ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের একটি তারিখ লিখে দেবে (সাধারণত ২০ দিন থেকে ৩০ দিন পর)। এরপর ফরমটি একটি বাক্সে রেখে দিয়ে হলুদ রঙের স্লিপটি সাথে নিয়ে আসতে হবে এবং সংরক্ষণ করতে হবে।
ছবি: টিএসসি
স্লিপে লেখা তারিখে সকাল সকাল ৩০৫ নম্বর কক্ষে চলে যেতে হবে। স্লিপ দেখালে তারা খসড়া ট্রান্সক্রিপ্ট বের করে দিবে। এরপর বসে বসে চেক করে দেখতে হবে কোনো ভুল আছে কিনা। ভুল থাকলে তা চিহ্নিত করতে হবে। চেক করা শেষ হলে কম্পিউটার অপারেটরের পাশে বসে তা কম্পিউটারে অবস্থিত সফট কপিতে সংশোধন করিয়ে নিতে হবে। সংশোধন সম্পন্ন হলে তারা ট্রান্সক্রিপ্টের সংশোধিত কপি ওখানেই প্রিন্ট দিয়ে বের করে দিবে। এরপর তারা বিকেল ৪ টার দিকে আসতে বলবে উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের স্বাক্ষরসহ ট্রান্সক্রিপ্ট সংগ্রহের জন্য। ৪ টার দিকে গিয়ে প্রতি পৃষ্ঠায় স্বাক্ষর আছে কিনা তা চেক করে ট্রান্সক্রিপ্ট গ্রহণ করতে হবে। গ্রহণ করার সময় একটি রেজিস্ট্রার খাতায় তারা আপনার স্বাক্ষর নেবে এবং রেজিস্ট্রার খাতার একটি সিরিয়াল নম্বর ট্রান্সক্রিপ্টের প্রথম পৃষ্টার নিচে বাম দিকে DUTN এর পাশে লিখে দেবে।
উল্লেখ্য, জরুরি ভিত্তিতে ৭ দিনের মধ্যে ট্রান্সক্রিপ্ট তুলতে চাইলে প্রথম ফরম গ্রহণের সময়েই তা বলতে হবে এবং প্রতি কপির জন্য অতিরিক্ত ৪০০ টাকা করে জমা দিতে হবে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: dutimz এবং somewhereinblog
Labels:
How To,
Informative,
কীভাবে করবেন,
ট্রান্সক্রিপ্ট,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়,
মার্কশিট,
রেজিস্ট্রার বিল্ডিং,
সত্যায়ন
Monday, March 10, 2014
আমার শহুরে ছেলেবেলা-২
আমাদের ঢাকা শহরে কাকডাকা ভোর নামতো। এখনো গাড়িডাকা ভোর নামে। যাই হোক, কাকডাকা ভোরে কাকের ডাকে প্রথম উঠতাম। আলসেমি করে বিছানায় গড়াগড়ি দিতে দিতে মা চূড়ান্তভাবে ওঠাতেন। গ্রামের বালক বা কিশোরের মতো ঠান্ডা পানিতে হাতমুখ ধুতে হতো না। মা পানি গরম করে রাখতেন। পান্তা ভাত খাওয়ার সুযোগ ছিল না। ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকার সন্তান হিসেবে আটা রুটি, আলুভাজি অথবা ডিমভাজি খেতে হতো নাস্তায়। ছুটির দিন অর্থাৎ শুক্রবারে হতো ‘ইম্প্রুভ ডায়েট’। পরোটা, আলুভাজি বা ডিমভাজি আর ডেজার্ট হিসেবে সুজি। নাস্তা খুব আয়েশ করে খাওয়ার অবকাশ ছিল না। স্পাইডারম্যান, মোগলী অথবা জনি কোয়েস্ট দেখতে দেখতে নাকেমুখে কোনোক্রমে নাস্তা গোঁজা হতো।
দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফিরে গ্রামীণ কিশোরের মতো পুকুরে ঝাঁপ দিতাম না। ঢাকা ওয়াসার বালতি অথবা ড্রামভরা পানি দিয়ে গোসল সারতাম। খেয়ে দেয়ে অপেক্ষা করতাম আসরের আযানের জন্যে। আসরের আযান দিলে নিউ মার্কেট থেকে ৬০ টাকা দিয়ে কেনা ক্যাপটা মাথায় চাপিয়ে খেলতে নামতাম। খেলার বর্ণনা আগেই দিয়ে ফেলেছি অবশ্য। আমার খেলার সাথীরা ছিল অদ্ভুত। কেউ আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় আবার কেউ হয়তো ৪ বছরের ছোট। সবাই সবাইকে অবলীলায় তুমি তুমি করে নাম ধরে ডাকতো। আমাদের টিমে কখনো কখনো ‘অতিথি খেলোয়াড়’ হিসেবে স্থানীয় বস্তি থেকে ছেলেরা আসতো। কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ছিল না কোনো কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন। ডিশের সংযোগ বিহীন টিভিতে বিটিভিই ছিল ভরসা। রবিবারে হতো ধারাবাহিক নাটক আর সোমবারে হতো প্যাকেজ নাটক। মঙ্গলবারে হয়তো প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদের কোনো ধারাবাহিক নাটক থাকতো। তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করে রাত নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত নাটক দেখা চাই। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে হতো না তখনকার নাটক। মনে আছে, হূমায়ুন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক যেদিন হতো সেদিন পাড়ায় চুরি হতো সবচেয়ে বেশি। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তখনকার গায়ে সইষ্যার তেলমাখা থ্রি কোয়ার্টারস প্যান্ট পরা চোরেরা বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের জামাকাপড় চুরি করতো। রাত সাড়ে দশটার পড়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হতাম সপরিবারে। সপরিবারে রাতে হাঁটতে বের হওয়ার একটা ঐতিহ্য তখন ছিল। আর লোডশেডিং মানে অবধারিতভাবে রাস্তায় হাওয়া খেতে বের হওয়া থুক্কু বন্ধুদের সাথে আরেক দফা হৈ চৈ আড্ডা।
আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে এভাবে আমাদের শহুরে শৈশব এবং কৈশোরের দিনগুলো পার হতে লাগলো। হরতালে রাস্তায় ইট গেঁড়ে আর কোনো কোনো মৌসুমে পাড়ার বড় ছাদওয়ালা বাড়ির ছেলেটার ছাদে ক্রিকেট খেলার ধুম পড়তো। শীতের ছুটিতে হতো টেস্ট ম্যাচ। সকালে এক ইনিংস আর বিকেলে আরেক ইনিংস। যথারীতি ফলো অন এবং এলবিডব্লিউ বলে কিছু ছিল না সেই খেলাগুলোতে। ছাদের বাইরে বল গেলে সবচেয়ে বড় আউট। আমার কৈশোরের এই খেলাময় দিনগুলোতে ভাঁটা পড়ে যখন আজিমপুর ছেড়ে ধানমন্ডিতে চলে আসি। হঠাৎ করে খেলার সাথীদের হারিয়ে ফেলে একা হয়ে যাই। বেশ বড়সড় একটা নিঃসঙ্গ সময় পার করে অবশেষে আবারো রাস্তায় আমাদের খেলাধুলা শুরু হয়। এলাকার স্থানীয় ছেলেপেলে এবং ড্রাইভাররা একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হরতালের দিনগুলোতে ক্রিকেট খেলতো তখন ধানমন্ডিতে। মাঝে মাঝে এই গলির সাথে ঐ গলির সাকিব আল হাসানদের ‘চ্যালেঞ্জ ম্যাচ’ হতো।
সন্ধ্যার পরে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে পড়তাম তিন গোয়েন্দা। তিন গোয়েন্দা পড়তে পড়তে এক সময় ধরলাম হূমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল। মনে পড়ে, অর্ধ-বার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষা কিছুই আমার তিন গোয়েন্দা বা হূমায়ুন আহমেদ পড়ায় ছেদ ঘটাতে পারতো না। রাত জেগে টর্চের আলোতে তিন গোয়েন্দা শেষ করেছি কত। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়োও চলেছে বেশ। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ তখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল ফোন আর প্রযুক্তির হাবিজাবি এসব ছিল না। আমার শৈশব আর কৈশোরটা হয়তো গ্রামীণ শিশু বা কিশোরের মতো খুব দাপুটে যায় নি কিন্তু ঢাকা শহরের বুকে যতটা দস্যিগিরি করা যায় ততটাই করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রাণের শহরের সমস্যা-সুবিধা সবগুলোকেই আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে খুব অভাববোধ করি সহজ-সরল, প্রযুক্তিহীন অথচা আবেগে ভরপুর সেদিনগুলোর। আর তাই তো প্রায়ই হারিয়ে যাই আজিমপুরের ছেলেবেলার সেই দিনগুলোতে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: beauty-places.com
দুপুরে বিদ্যালয় থেকে ফিরে গ্রামীণ কিশোরের মতো পুকুরে ঝাঁপ দিতাম না। ঢাকা ওয়াসার বালতি অথবা ড্রামভরা পানি দিয়ে গোসল সারতাম। খেয়ে দেয়ে অপেক্ষা করতাম আসরের আযানের জন্যে। আসরের আযান দিলে নিউ মার্কেট থেকে ৬০ টাকা দিয়ে কেনা ক্যাপটা মাথায় চাপিয়ে খেলতে নামতাম। খেলার বর্ণনা আগেই দিয়ে ফেলেছি অবশ্য। আমার খেলার সাথীরা ছিল অদ্ভুত। কেউ আমার চেয়ে ৫ বছরের বড় আবার কেউ হয়তো ৪ বছরের ছোট। সবাই সবাইকে অবলীলায় তুমি তুমি করে নাম ধরে ডাকতো। আমাদের টিমে কখনো কখনো ‘অতিথি খেলোয়াড়’ হিসেবে স্থানীয় বস্তি থেকে ছেলেরা আসতো। কোনো ভেদাভেদ ছিল না। ছিল না কোনো কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন। ডিশের সংযোগ বিহীন টিভিতে বিটিভিই ছিল ভরসা। রবিবারে হতো ধারাবাহিক নাটক আর সোমবারে হতো প্যাকেজ নাটক। মঙ্গলবারে হয়তো প্রয়াত হূমায়ুন আহমেদের কোনো ধারাবাহিক নাটক থাকতো। তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ করে রাত নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত নাটক দেখা চাই। বিজ্ঞাপনের ফাঁকে ফাঁকে হতো না তখনকার নাটক। মনে আছে, হূমায়ুন আহমেদের ধারাবাহিক নাটক যেদিন হতো সেদিন পাড়ায় চুরি হতো সবচেয়ে বেশি। গ্রিলের ফাঁক দিয়ে হাত ঢুকিয়ে তখনকার গায়ে সইষ্যার তেলমাখা থ্রি কোয়ার্টারস প্যান্ট পরা চোরেরা বিছানার চাদর, শাড়ি, লুঙ্গি, বাচ্চাদের জামাকাপড় চুরি করতো। রাত সাড়ে দশটার পড়ে মাঝে মাঝে হাঁটতে বের হতাম সপরিবারে। সপরিবারে রাতে হাঁটতে বের হওয়ার একটা ঐতিহ্য তখন ছিল। আর লোডশেডিং মানে অবধারিতভাবে রাস্তায় হাওয়া খেতে বের হওয়া থুক্কু বন্ধুদের সাথে আরেক দফা হৈ চৈ আড্ডা।
আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে এভাবে আমাদের শহুরে শৈশব এবং কৈশোরের দিনগুলো পার হতে লাগলো। হরতালে রাস্তায় ইট গেঁড়ে আর কোনো কোনো মৌসুমে পাড়ার বড় ছাদওয়ালা বাড়ির ছেলেটার ছাদে ক্রিকেট খেলার ধুম পড়তো। শীতের ছুটিতে হতো টেস্ট ম্যাচ। সকালে এক ইনিংস আর বিকেলে আরেক ইনিংস। যথারীতি ফলো অন এবং এলবিডব্লিউ বলে কিছু ছিল না সেই খেলাগুলোতে। ছাদের বাইরে বল গেলে সবচেয়ে বড় আউট। আমার কৈশোরের এই খেলাময় দিনগুলোতে ভাঁটা পড়ে যখন আজিমপুর ছেড়ে ধানমন্ডিতে চলে আসি। হঠাৎ করে খেলার সাথীদের হারিয়ে ফেলে একা হয়ে যাই। বেশ বড়সড় একটা নিঃসঙ্গ সময় পার করে অবশেষে আবারো রাস্তায় আমাদের খেলাধুলা শুরু হয়। এলাকার স্থানীয় ছেলেপেলে এবং ড্রাইভাররা একত্রে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হরতালের দিনগুলোতে ক্রিকেট খেলতো তখন ধানমন্ডিতে। মাঝে মাঝে এই গলির সাথে ঐ গলির সাকিব আল হাসানদের ‘চ্যালেঞ্জ ম্যাচ’ হতো।
সন্ধ্যার পরে পড়ায় ফাঁকি দিয়ে পড়তাম তিন গোয়েন্দা। তিন গোয়েন্দা পড়তে পড়তে এক সময় ধরলাম হূমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল। মনে পড়ে, অর্ধ-বার্ষিক বা বার্ষিক পরীক্ষা কিছুই আমার তিন গোয়েন্দা বা হূমায়ুন আহমেদ পড়ায় ছেদ ঘটাতে পারতো না। রাত জেগে টর্চের আলোতে তিন গোয়েন্দা শেষ করেছি কত। সত্যজিৎ রায়ের ছোটগল্প, প্রফেসর শঙ্কু, তারিণীখুড়োও চলেছে বেশ। এসবই সম্ভব হয়েছে কারণ তখন ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল ফোন আর প্রযুক্তির হাবিজাবি এসব ছিল না। আমার শৈশব আর কৈশোরটা হয়তো গ্রামীণ শিশু বা কিশোরের মতো খুব দাপুটে যায় নি কিন্তু ঢাকা শহরের বুকে যতটা দস্যিগিরি করা যায় ততটাই করা সম্ভব হয়েছে। এই প্রাণের শহরের সমস্যা-সুবিধা সবগুলোকেই আনন্দ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু প্রযুক্তির এই যুগে খুব অভাববোধ করি সহজ-সরল, প্রযুক্তিহীন অথচা আবেগে ভরপুর সেদিনগুলোর। আর তাই তো প্রায়ই হারিয়ে যাই আজিমপুরের ছেলেবেলার সেই দিনগুলোতে।
ছবি কৃতজ্ঞতা: beauty-places.com
Saturday, March 8, 2014
আমার শহুরে ছেলেবেলা
আমার জীবনে কোনো গ্রাম ছিল না। আমার বিদ্যালয়ের পেছন দিয়ে কোনো নদী কুলু কুলু ধ্বণি তুলে বয়ে যেত না। আমি আপাদমস্তক শহুরে লোক। শহুরে মানে একদম মেট্রোপলিটন সিটির বাসিন্দা। গ্রামের পথ ধরে বিদ্যালয়ে যাওয়া, গ্রীষ্মের দুপুরে পুকুরে দাপাদাপি করা, আম-কাঁঠালের ছুটিতে মামাবাড়ি যাওয়ার সুযোগ আমার জীবনে ছিল না। “ছায়া সুবিবিড়, শান্তির নীড়, আমাদের গ্রামগুলি”- এটি বাংলা দ্বিতীয়পত্র বইয়ের রচনা অংশের ‘পল্লী উন্নয়ন’ শীর্ষক রচনাতেই দেখে এসেছি। বাস্তবে অবলোকন করার খুব বেশি সুযোগ হয় নি। নিজের দাদা বাড়িতে গিয়েছি মাত্র একবার। গ্রামের ঠিকানা আর বৈশিষ্ট্য নিয়ে কেউ প্রশ্ন করলে একটু ঘাবড়ে যেতে হয়। ঠিকঠাক উত্তর দিতে পারি না। ঐ যে বললাম, আমি আপাদমস্তক ঢাকা শরের বাসিন্দা। আমার বাল্যকাল কেটেছে আজিমপুর চায়না বিল্ডিং এর গলিতে। খালি পায়ে গ্রামের মেঠোপথ দিয়ে বিদ্যালয়ে গমন করিনি। এলাকার বিদ্যালয়ের বেলি কেডস পরে গিয়েছি। যাত্রাপথে শালিক-চড়ুই, বাঁশঝাড় পার হতে হয় নি। বরং রিকশা, টেম্পু, বেবি ট্যাক্সির ভেঁপুর শব্দ শুনতে শুনতে নর্দমার ধার দিয়ে ফুটপাত দিয়ে চলতে হয়েছে। ধানক্ষেতের আইল ধরে পথ চলতে পারি নি কিন্তু মেট্রোপলিটন সিটির সুসজ্জিত ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ধানক্ষেতের সেই চালের বস্তা আমি দেখেছি। আমার শরীরে তাই মাটির গন্ধ নেই। ধোঁয়ার গন্ধে ভরপুর। এই ধোঁয়া গাড়ির ধোঁয়া, এই ধোঁয়া কল-কারখানার ধোঁয়া।
[caption id="attachment_2242" align="aligncenter" width="600"] Dhaka. Source: http://internsanonymous.co.uk/category/charity/[/caption]
বিশাল মাঠে জাম্বুরা দিয়ে গ্রাম্য বালকের মতো কাঁদায় হুটোপুটি খেয়ে ফুটবল খেলার সৌভাগ্য ছিল না। চিকন গলিতে টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল। প্রতি দুই পর পর সেই বলখানা ড্রেনে গিয়ে পড়তো। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না। মাটিতে জোরে আছাড় মারলেই ড্রেনের কালোপানিসিক্ত ওসাকা টেপমারা বলখানা সুন্দর লাল হয়ে যেত। গ্রামের বালকের মতো লুঙ্গি পরে আমরা খেলতাম না। আমাদের পরণে থাকতে ঢাকা কলেজের উল্টাদিকের ফুটপাতের হাফপ্যান্ট। পায়ে থাকতো লাইটিং কেডস। গলিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতে এক সময় আবিষ্কার করলাম আমরা কেউ ডানে-বাঁয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারি না। ছক্কা-চার সব সামনের দিকেই মারতে পারি। কারণ, আমাদের গলিতে যে ডানে-বাঁয়ে কোনো জায়গা ছিল না, ছিল শুধু ড্রেন। যেদিন ক্রিকেট খেলা হতো না সেদিন হয়তো লুকোচুরি খেলা হতো। বনে-বাঁদাড়ে লুকোবার সুযোগ ছিল না। আমরা লুকাতাম উচ্চতল ভবনের সানশেডে, গ্যারেজে বা বাড়ির দারোয়ানের ঘরের চিপাতে। এভাবে লুকোচুরি আর ক্রিকেট খেলতে খেলতে আবিষ্কার করলাম আমরা হাডুডু, কাবাডি, সাতচারা খেলি না। আমরা খেলি বোম বাস্টিং। যেদিন ব্যাটয়ালা ছেলেটা আসে না সেদিন আমরা ব্যাটের অভাবে খেলা বন্ধ রাখি না। টেপ টেনিস দিয়ে বোম বাস্টিং খেলি। যার হাতে বল থাকে সে গায়ের জোরে অন্যের দিকে তা ছুঁড়ে মারে। হাতে-পায়ে-পিঠে বল লেগে গা জ্বলে যায়, লাল হয়ে যায় শরীর। নৃশংস, নিষ্ঠুর এই খেলা চলতে থাকে ঠিক মাগরিবের আযান পর্যন্ত। মাগরিবের আযান আমাদের সূর্যাস্ত আইনের কথা মনে করিয়ে দিত। বাসায় ফিরে চাপকলের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে আমরা হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতাম না। আমাদের ছিল প্লাস্টিকের কল আর পড়ার জন্য ছিল টিউবলাইট। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে গ্রাম্য কিশোরের মতো মাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হতো না। বৈদ্যুতিক পাখাটা মাথার ওপর ঘটাং ঘটাং করে ঘুরতো। বেশি গরম পড়লে স্ট্যান্ড ফ্যানটাও ছাড়া হতো। বইখাতা সব উড়ে যেত তখন। একটু পরে শুরু হতো লোডশেডিং। না, হারিকেন লাগতো না তখনো। মোমবাতির দিনও ফুরিয়ে এসেছিল তখন। স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কেনা ন্যাশনাল চার্জার লাইটে চলতো পড়াশুনা। না, গ্রামীণ বালকের মতো ৮ টায় আমাদের জীবনে নিশুতি রাত নামতো না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তাম না আমরা। মেট্রোপলিটন শহরের খাস বাসিন্দা হিসেবে ভাত খাওয়া হতো রাত ১১ টায়। ৯টা থেকে শুরু হতো ম্যাকগাইভার, রোবোকপ বা রবিনহুড দেখা। শুতে শুতে বাজতো সেই সাড়ে ১১ টা। ভোরবেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙত না আমার। আমার ঘুম ভাঙাতো ঢাকা শহরের কাকেরা।
(চলবে)
ছবি কৃতজ্ঞতা: risingbd
[caption id="attachment_2242" align="aligncenter" width="600"] Dhaka. Source: http://internsanonymous.co.uk/category/charity/[/caption]
বিশাল মাঠে জাম্বুরা দিয়ে গ্রাম্য বালকের মতো কাঁদায় হুটোপুটি খেয়ে ফুটবল খেলার সৌভাগ্য ছিল না। চিকন গলিতে টেপ টেনিস দিয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ ছিল। প্রতি দুই পর পর সেই বলখানা ড্রেনে গিয়ে পড়তো। তাতে আমাদের কোনো সমস্যা হতো না। মাটিতে জোরে আছাড় মারলেই ড্রেনের কালোপানিসিক্ত ওসাকা টেপমারা বলখানা সুন্দর লাল হয়ে যেত। গ্রামের বালকের মতো লুঙ্গি পরে আমরা খেলতাম না। আমাদের পরণে থাকতে ঢাকা কলেজের উল্টাদিকের ফুটপাতের হাফপ্যান্ট। পায়ে থাকতো লাইটিং কেডস। গলিতে ক্রিকেট খেলতে খেলতে এক সময় আবিষ্কার করলাম আমরা কেউ ডানে-বাঁয়ে ছক্কা হাঁকাতে পারি না। ছক্কা-চার সব সামনের দিকেই মারতে পারি। কারণ, আমাদের গলিতে যে ডানে-বাঁয়ে কোনো জায়গা ছিল না, ছিল শুধু ড্রেন। যেদিন ক্রিকেট খেলা হতো না সেদিন হয়তো লুকোচুরি খেলা হতো। বনে-বাঁদাড়ে লুকোবার সুযোগ ছিল না। আমরা লুকাতাম উচ্চতল ভবনের সানশেডে, গ্যারেজে বা বাড়ির দারোয়ানের ঘরের চিপাতে। এভাবে লুকোচুরি আর ক্রিকেট খেলতে খেলতে আবিষ্কার করলাম আমরা হাডুডু, কাবাডি, সাতচারা খেলি না। আমরা খেলি বোম বাস্টিং। যেদিন ব্যাটয়ালা ছেলেটা আসে না সেদিন আমরা ব্যাটের অভাবে খেলা বন্ধ রাখি না। টেপ টেনিস দিয়ে বোম বাস্টিং খেলি। যার হাতে বল থাকে সে গায়ের জোরে অন্যের দিকে তা ছুঁড়ে মারে। হাতে-পায়ে-পিঠে বল লেগে গা জ্বলে যায়, লাল হয়ে যায় শরীর। নৃশংস, নিষ্ঠুর এই খেলা চলতে থাকে ঠিক মাগরিবের আযান পর্যন্ত। মাগরিবের আযান আমাদের সূর্যাস্ত আইনের কথা মনে করিয়ে দিত। বাসায় ফিরে চাপকলের পানিতে হাতমুখ ধুয়ে আমরা হারিকেনের আলোতে পড়তে বসতাম না। আমাদের ছিল প্লাস্টিকের কল আর পড়ার জন্য ছিল টিউবলাইট। মাথার কাছে দাঁড়িয়ে গ্রাম্য কিশোরের মতো মাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করতে হতো না। বৈদ্যুতিক পাখাটা মাথার ওপর ঘটাং ঘটাং করে ঘুরতো। বেশি গরম পড়লে স্ট্যান্ড ফ্যানটাও ছাড়া হতো। বইখাতা সব উড়ে যেত তখন। একটু পরে শুরু হতো লোডশেডিং। না, হারিকেন লাগতো না তখনো। মোমবাতির দিনও ফুরিয়ে এসেছিল তখন। স্টেডিয়াম মার্কেট থেকে কেনা ন্যাশনাল চার্জার লাইটে চলতো পড়াশুনা। না, গ্রামীণ বালকের মতো ৮ টায় আমাদের জীবনে নিশুতি রাত নামতো না। খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়তাম না আমরা। মেট্রোপলিটন শহরের খাস বাসিন্দা হিসেবে ভাত খাওয়া হতো রাত ১১ টায়। ৯টা থেকে শুরু হতো ম্যাকগাইভার, রোবোকপ বা রবিনহুড দেখা। শুতে শুতে বাজতো সেই সাড়ে ১১ টা। ভোরবেলা মোরগের ডাকে ঘুম ভাঙত না আমার। আমার ঘুম ভাঙাতো ঢাকা শহরের কাকেরা।
(চলবে)
ছবি কৃতজ্ঞতা: risingbd
Subscribe to:
Posts (Atom)