গত পর্বে গরম গরম নাস্তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এবারে একটু পোলাও-বিরিয়ানি এবং ফাস্ট ফুড নিয়ে আলোচনা হবে।
কাচ্চি বিরিয়ানির প্রশ্নে এক নম্বরে থাকে সাত রওজার কোলকাতা কাচ্চি ঘর। এদের কাচ্চি ফার্স্ট ক্লাস। বাসমতি চালের ব্যবহার ও অতিরিক্ত তেল পরিহার বিরিয়ানির স্বাদকে করে অতুলনীয়। প্রথমে দাম একটু বেশি মনে হতে পারে কিন্তু খাবারের মান এবং পরিমাণ প্রত্যক্ষ করার পর আফসোস থাকার কথা নয়। কাচ্চির সাথে অত্যন্ত সুস্বাদু ফ্রি চাটনি দেয়া হয়। ওদের জালি কাবাবটাও মজা। আর খাওয়ার পর বাদামের শরবতটা মিস করা যাবে না। এখন পর্যন্ত আমার খাওয়া সেরা বাদামের শরবত ওদেরই। একটু বেশি চিনি ব্যবহার না করলে পুরান ঢাকার ডিসেন্ট পেস্ট্রি শপের বাদামের শরবতকে এক নম্বরে রাখা যেত। আর কোলকাতা কাচ্চি ঘরের জাফরান দেয়া ফিরনিও ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব প্রিয়।
সুনামির কাচ্চির খুব নামডাক শোনা যায়। জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত সুনামি রেঁস্তোরার কাচ্চি আসলেই ভালো। সামান্য চিনি মিশিয়ে স্বাদ বৃদ্ধি করা হয় যা এতে চমৎকার স্বাদ এনে দেয়। বিরিয়ানির মাংসের সাথে গ্রেভি কিছু একটা ব্যবহার করা হয় যা খেতে খুব ভালো লাগে। বিরিয়ানির সাথে ছোট গ্লাসে ফ্রি বোরহানি দেয়ার কথা কিন্তু প্রায়শ এটা শেষ হয়ে গিয়েছে এরকম বলা হয়ে থাকে। রাত ৮ টার দিকে সেরা বিরিয়ানিটা পাওয়া যায়। দুপুরে কেন যেন তাদের বিরিয়ানি অতটা ভালো হয় না। একই সাথে বলে রাখি, সুনামির নান এবং শিক কাবাবও বেশ ভালো।
মোরগ পোলাওয়ের কথা আসলে প্রথমে মনে পড়ে বেচারাম দেউড়ির হাজী নান্না মিয়ার কথা। নান্না মিয়ার শাহী মোরগ পোলাও আসলেই সেরা। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতিরিক্ত লব সরবরাহ রীতি। কখনোই শুকনো খেতে হবে না। কিন্তু বর্তমানে অধিক তেলের ব্যবহার স্বাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। লালমাটিয়ায় মিরপুর রোডের ওপর অবস্থিত মুসলিমের মোরগ পোলাও আমার বিশেষ প্রিয়। দিনের পর দিন ধরে তারা মান অক্ষুণ্ণ রেখেছে। অধিক কাটতির কারণে দেরি করে গেলে সাধারণত মোরগ পোলাও পাওয়া যায় না।
তেহরীর কথা আগেই বলেছিলাম ধানমন্ডির তেহারী ঘরের কথা। লালমাটিয়ার স্বাদ তেহারী ঘরের তেহারীও অসাধারণ। স্বাদটা অন্যরকম। আর এদের ভুনা খিচুরি তো বিখ্যাত। তেহারী বা ভুনা খিচুরির সাথে আমার যেটা অবশ্যই লাগে সেটা হলো ওদের বোরহানী। দোকানের বোরহানীর মধ্যে ওদের বোরহানীটাই আমার এখন পর্যন্ত সেরা মনে হয়েছে। মাঝে মাঝে গিয়ে শুধু বোরহানী খেয়ে আসতে ইচ্ছা হয়।
এবার একটু ফাস্ট ফুড আর বিদেশি খাবারের প্রসঙ্গে আসি। ফাস্ট ফুড খাওয়ার উপলক্ষ তৈরি হলে যাওয়া হয় হাতিরপুলের হেরিটেজ পিজ্জায়। ওদের শর্মা (বার্গার শেপ), ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এবং পিজ্জা আমার বেস্ট মনে হয়। যতবার গিয়েছি ততবারই স্বাদ অক্ষুণ্ণ ছিল। সম্প্রতি দাম একটু বাড়িয়েছে কিন্তু স্বাদের সাথে আপোষ করে নি। দাম অন্যান্য দোকানের চেয়ে এখনো কম। বিশেষ করে শর্মা হাউজের চেয়ে ওদের দাম কম এবং খাবার অনেক বেশি ভালো। সস এবং মায়োনেজ দেয়ার ব্যাপারে ওরা কার্পণ্য করে না। ওদের মতো মজার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এখন পর্যন্ত অন্য কোনো দোকানে পাই নি। আর পিজ্জার মধ্যে সবগুলো ফ্লেভারই মজা তবে বিশেষ করে পিজ্জা চিকেন, মিট লাভারস, বার্সেলনা বেশি খাওয়া হয় আমার। শর্মা বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ খাওয়ার সময় ধনে পাতার সসটা চেয়ে নিতে ভুলবেন না। হেরিটেজের পাস্তাও খুব ভালো। পাস্তার মধ্যে চিকেন অ্যারাবিয়াটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। তবে ওদের ফ্রাইড চিকেন, বার্গার না খাওয়াই ভালো। এগুলো ওদের চালু আইটেম না। ফ্রাইড চিকেনের মাঝে বিএফসি এখন পর্যন্ত এক নম্বরে। কেএফসির ফ্রাইড চিকেন ভালো লাগে না আমার।
গত পর্বে গ্রিল-শর্মার সেকশনে ভালো গ্রিলের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ঢাকা শহরে স্বপ্নীল রেঁস্তোরার মতো এত ভালো গ্রিল চিকেন আর কোথাও খাই নি। পান্তপথে স্কয়ার হাসপাতালের একটু পাশেই এর অবস্থান। ওদের পরোটা বাসার মতো হয়। বেশ মজা। গ্রিল খাওয়ার সময় শিকের সালাদ চেয়ে নেয়া ভালো। আর একটা চমৎকার সস সরবরাহ করে ওরা গ্রিলের সাথে।
স্ট্রিট ফুড দিয়ে শেষ করি। ধানমন্ডি ৪ নম্বরে লেকের কাছে ৩৬ নম্বর বাসার সামনে অবস্থিত চটপটির গাড়ির ফুচকা এখন পর্যন্ত সেরা আমার কাছে। ৩০ টাকায় ৯ টা ফুচকা দেয়। মিষ্টি টকটা অত্যাধুনিক বাংলায় ‘অস্থির’। চটপটিও ভালো।
ঝালমুড়ি তো আমরা অনেকেই খাই কিন্তু ছোলা মাখা যে অসাধারণ হতে পারে তার প্রমাণ শুক্রাবাদ বাস স্ট্যান্ডের সামনে অবস্থিত সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি রাখা মামার ছোলা। ঐ ছোলা আমি কখনো একটা খেতে পারি নি। একটা খেলে পরেরবার খেতেই হবে। ঐ মামার অদূরেই একজন দাঁড়ায় কোরিয়ান প্যান কেক নিয়ে। ইদানিং এটা বেশ নাম করেছে। কোরিয়ান প্যান কেক জিনিসটা বেশ স্বাস্থ্যসম্মত, সুস্বাদু ও সাশ্রয়ী মনে হয় আমার কাছে। ২০ টাকা মূল্যের মজাদার একটি কেকে একটির বেশি ডিম থাকে।
খাবার-দাবারের নিয়ে কথাবার্তা আসলে দুই পোস্টে শেষ করা খুব কঠিন। অনেক খাবারের কথা বাদ থেকে যায়। ভবিষ্যতে অন্য কোনো পোস্টে খাদ্যবিলাস নিয়ে হয়তো আবার হাজির হবো। ততক্ষণ এগুলো টেস্ট করতে থাকুন। আর হ্যাঁ, শেষে একটা বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিই। বাইরের খাবার খুব ফ্রিকোয়েন্টলি না খাওয়াই ভালো।
ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট
No comments:
Post a Comment