Tuesday, December 10, 2013

ওয়ার্মহোল

বিজ্ঞানের খোঁজ খবর রাখে অথচ ব্ল্যাক হোল নাম শুনেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবার বিজ্ঞানে আগ্রহী ছাত্র কিন্তু ওয়ার্মহোল নাম শুনেনি এমনটাও পাওয়া যায় না। ব্ল্যাক হোল, নামটা অনেক নবীন। নতুন ওয়ার্মহোল নামটাও। এই দুটি শব্দের অবতারণা করেন একজন আমেরিকান পদার্থবিজ্ঞানী। নাম জন হুইলার। ১৯৬৯ সালে জন হুইলার প্রথম ব্ল্যাক হোল শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
পৃথিবী তাকে পেয়েছে মোটামোটি অনেক বছর। বেচেছিলেন ৯৬ বছর। ১৯১১ সালের ৯ই জুলাই তিনি জন্ম গ্রহণ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। কণা পদার্থবিজ্ঞানের বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যান ছিল তার ছাত্র। কোয়ান্টাম পদার্থবিজ্ঞানে যার নাম অগ্রভাগে স্মরণীয়। টাইম মেশিন নিয়ে গবেষণাকারী বিখ্যাত বিজ্ঞানী কিপ থরনও(Kip Thorne) ছিল তার ছাত্র।

ওয়ার্মহোল হলো তত্ত্বীয়ভাবে পাওয়া এমন একটি সংক্ষিপ্ত গমনপথ যা স্থান-কালের ভেতর দিয়ে মহাবিশ্বের এক স্থান থেকে দীর্ঘ দূরত্বে অন্য স্থানে ভ্রমণ অনুমোদন করে। কিন্তু মানুষের জন্য এই ভ্রমণ কাজটি অত্যন্ত বিপজ্জনক হবে, কারণ উচ্চমাত্রার বিকিরণ এবং বাইরের পদার্থের সঙ্গে বিপজ্জনক সংযোগের দরুন এসব ওয়ার্মহোল যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সমীকরণগুলো ঘাঁটাঘাঁটি করে পদার্থবিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন ও নাথান রোজেন ১৯৩৫ সালে প্রস্তাব করেন, স্থান-কালের অভ্যন্তরে এক প্রকার সেতুর (নৎরফমবং) অস্তিত্ব রয়েছে। এ পথগুলোকেই বলা হয় আইনস্টাইন রোজেন সেতু অথবা ওয়ার্মহোল যা স্থান-কালের দুটি বিন্দুকে সংযুক্ত করে। তত্ত্বীয়ভাবে দীর্ঘ পথে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই গমনপথগুলো ব্যবহার করে দূরত্ব এবং সময় দুটোই ব্যাপক হারে হ্রাস করা যায়। ওয়ার্মহোলে লম্বা একটা গলার দুই প্রান্তে দুটি মুখ থাকে। এগুলো অনেকটা উপগোলাকার আর গলাটি সোজাসুজি বিস্তৃত কিন্তু ভেতরে একটু মোচড়ানোও হতে পারে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব গাণিতিকভাবে ওয়ার্মহোলের অস্তিত্বের ভবিষ্যদ্বাণী করে যেখানে ওয়ার্মহোলের দুই মুখে দুটি বস্ন্যাকহোল থাকবে। যা হোক, একটি মৃত্যুকালীন নক্ষত্র চুপসে গিয়ে বস্ন্যাকহোলে পরিণত হওয়ার সময় নিজে থেকে কোনো ওয়ার্মহোল সৃষ্টি করতে পারে না। ওয়ার্মহোল শুধু মহাবিশ্বের দুটি পৃথক অঞ্চলকেই সংযুক্ত করে না বরং দুটি মহাবিশ্বকেও সংযুক্ত করতে পারে। কয়েকজন বিজ্ঞানী অনুমান করেছেন, যদি ওয়ার্মহোলের কোনো মুখ একটি নির্দিষ্ট উপায়ে গতিশীল হয় তবে এর দ্বারা সময় পরিভ্রমণ সম্ভব। তবে ব্রিটিশ পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং এমনটি সম্ভব নয় বলে যুক্তি দেখিয়েছেন। ওয়ার্মহোল তত্ত্বটি এখনো একটি তত্ত্বীয় প্রকল্প। আজ পর্যন্ত কেউ এর অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করতে পারেনি।

ব্ল্যাক হোল ও ওয়ার্মহোলের পার্থক্যঃ

ব্ল্যাক হোল হচ্ছে স্পেস টাইমের মধ্যকার খালি অংশ,  এমন একটি জায়গা অথবা এরিয়া যেখানে গ্রাভিটির আকর্ষণ এতই বেশি যে আলো পর্যন্ত হারিয়ে যায়, ঠিক এমন টাই ঘটে যখন ব্ল্যাক হোলের মাঝে পরে কোনও নক্ষত্রের মৃত্যু হয়। ব্ল্যাক হোলের মাঝে হারিয়ে যাওয়া আলো বা নক্ষত্রের কোনও প্রকার ট্রেস বের করা আজ অবধি সম্ভব হয়নি।

ওয়ার্ম হোল হচ্ছে একটি থিওরিটিকাল প্যাসেজ অথবা টানেল যা শর্টকাট তৈরি করে স্পেসটাইমে এক অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে যেতে এবং যার ফলস্বরূপ ইউনিভারসে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় ভ্রমন টা সময়ের সাথে কমে যায়।

No comments:

Post a Comment