Tuesday, December 10, 2013

ঈশ্বর কণা (দি গড পার্টিকল) কি পারবে সব অজানা প্রশ্নের উত্তর বের করতে?

৪ জুলাই, ২০১২, সার্ন ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানীরা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন যে তারা পরম আরাধ্য ঈশ্বর কণার অস্তিত্ব শনাক্ত করতে পেরেছেন। এই সরকারী ঘোষণার মাধ্যমে আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের নতুন দ্বার খুলে যায়। পুরো পৃথিবীজুড়ে খবরের শিরোনাম হয় এই ঘোষণাটি। বলা হয়ে থাকে বিজ্ঞানের সমস্ত অজানা রহস্যের জট একে একে খুলে যাবে এই ঈশ্বর কণার ছোঁয়ায়! আসলেই কি তা সম্ভব? এই কণা কি প্রমান করতে পারবে ঈশ্বরের অস্তিত্ব? নাকি ঈশ্বরতত্বের বিপক্ষে বিজ্ঞানের নতুন যুক্তি হবে এটি? এইসব প্রশ্নের উত্তর, ঈশ্বর কণার ইতিহাস, আবিস্কার, কেন এই অদ্ভুত নামকরণ, কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে এই মহামুল্য আবিস্কার- এসব নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে এই লেখায়।

আলোচনার প্রথমেই যে বিষয়টির উপর পরিষ্কার ধারণা থাকে উচিত তা হচ্ছে ঈশ্বর কণা কি। মৌলিক কণাগুলোর ১টি শ্রেণী হচ্ছে "বোসন কণা", যার নামকরণ করা হয় অমিত প্রতিভাবান বাঙ্গালি পদার্থবিজ্ঞানি সত্যেন বসুর নামে। প্রথম দিকে ৪টি বোসন কনাকে মৌলিক কণাসমুহের গাণিতিক মডেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয় যাদেরকে একত্রে গজ-বোসন কণা বলা হত। পরবর্তীতে, ১৯৬৪ সালে ব্রিটিশ পদার্থবিদ পিটার হিগস আর ৫ জন বিজ্ঞানীর সাহায্যে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রে নতুন ১টি বোসন কণা সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করেন যাকে হিগস-বোসন কণা নামে গাণিতিক মডেলে স্থান দেয়া হয়। এই হিগস-বোসন কণাই হচ্ছে ঈশ্বর কণা, যার নামকরণ করেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী লিওন লেডারম্যান। অর্থাৎ ঈশ্বর কণা বা দি গড পার্টিকল হচ্ছে হিগস-বোসন কণার প্রচলিত ডাকনাম।

হিগস-বোসন কণার এই অদ্ভুত নামকরণ পরবর্তী সময়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি করে। অনেকেই একে ঈশ্বরের অস্তিত্বের সাথে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু এই নামকরণের আসল কারণটি সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং একইসাথে অদ্ভুত ও মজার। হিগস-বোসন কণার তত্ব বের হওয়ার পর বিজ্ঞানীরা প্রাণান্ত চেস্টা শুরু করলেন এর অস্তিত্ব বের করার। কিন্তু সোনার হরিণের দেখা তো আর মিলে না! ত্যাক্ত-বিরক্ত হয়ে বিজ্ঞানীরা এই কণাকে "গডড্যাম পার্টিকল" (ইসসর-নিকুচি কণা)নামে ডাকা শুরু করলেন। সেই সময় বিজ্ঞানী লেডারম্যান এই কণার উপর একটি বই লিখলেন এবং তার নাম দিতে চাইলেন "দি গডড্যাম পার্টিকলঃ ইফ ইউনিভার্স ইজ দি আনসার, হোয়াট ইজ দি কোয়েশ্চেন?" অর্থাৎ, " ঈশ্বর-নিকুচি কণাঃ যদি মহাবিশ্ব এর উত্তর হয়, প্রশ্নটা কি?" কিন্তু বইটির সম্পাদক এবং প্রকাশক এতে "গডড্যাম" শব্দটি ব্যবহার করতে চাইলেন না, তার পরিবর্তে শুধু "গড" বসিয়ে দিলেন তারা। যার ফলে হিগস-বোসন কণা হয়ে যায় ঈশ্বর কণা। যদিও অনেক বিজ্ঞানী (বিশেষত বিজ্ঞানী হিগস) এই নামকরণের বিরোধিতা করেন এই ভেবে যে নামটি অনেকের ধর্মীও অনুভূতিতে আঘাত করতে পারে, কিন্তু এই নামটিই প্রচলিত হয়ে যায়।

সুতরাং এটা বুঝা গেল যে ঈশ্বর-তত্বের সাথে ঈশ্বর কণার কোন সম্পর্ক নেই। এর সম্পর্ক হচ্ছে ভরের সাথে এবং একে বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি রহস্য উদঘাটনের সবচেয়ে উপযুক্ত ও শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়! যখন মৌলিক কণাসমূহের গাণিতিক মডেল তৈরি করা হয়, তখন কণাদের ভরের উৎস নিয়ে একটা অসামঞ্জস্যতা সৃষ্টি হয়। হিগস-বোসন কণাই হচ্ছে সেই নিয়ামক যা অনুতে ভরের সৃষ্টি করে। যে সমস্ত কণা ভরহীন অবস্থায় বিরাজ করে (ফোটন), ধরে নেয়া হয় তাদের সাথে ঈশ্বর কণার কোন সংযোগ নেই। সেই সাথে এটাও ধরে নেয়া হয়েছিল যে এই মহাবিশ্ব জুড়ে একটি অবিচ্ছিন্ন মাধ্যম আছে যা বিভিন্ন মৌলিক কণার ভরের জন্য দায়ী। এই মাধ্যমের নাম হচ্ছে হিগস-ফিল্ড বা হিগস-ক্ষেত্র, একে অনেকটা আলোকবিদ্যার ইথারের সাথে তুলনা করা যায়। তবে এই তুলনাটা শুধুমাত্র বুঝার সুবিধার জন্য, বাস্তবে হিগস-ফিল্ড এবং ইথার সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি ধারণা। সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি হচ্ছে- পরবর্তীতে ইথারের অস্তিত্ব প্রমাণ করা যায়নি, তাই এই তত্বকে আর কাজে লাগানো যায়নি। কিন্তু হিগস-ফিল্ড যে অস্তিত্বশীল, তার স্বপক্ষে অনেকগুলো যুক্তি-প্রমাণ বের করা হয়েছে। আর এই হিগস-ফিল্ডের ক্ষুদ্রতম একক হচ্ছে হিগস-বোসন কণা বা প্রচলিত অর্থে ঈশ্বর কণা।

ঈশ্বর কণার কিছু স্বতন্ত্র ও অত্যন্ত অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন আমরা জানি যে প্রত্যেক কণার জন্য একটি বিপরীত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন প্রতিকণা আছে (এন্টিমেটার)। কিন্তু এই কণার প্রতিকণা সে নিজেই, অর্থাৎ একে আয়নায় উল্টে দিলে একই বৈশিষ্ট্য দেখাবে। এ থেকে বুঝা যায় যে এর কোন ধনাত্মক বা ঋণাত্মক চার্জ নেই এবং ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা শূন্য। কোন মৌলিক কণিকা ঠিক যতটুক ঘুরে আসলে প্রথম অবস্থার মত দেখায় তাকে কণাটির স্পিন (S) বা ঘূর্ণন কোয়ান্টাম সংখ্যা বলে। যেহেতু ঈশ্বর কণা সবসময় একই রকম দেখায়, তাই এর কোন স্পিন নেই, বা স্পিন শূন্য। এই কণার ভর ধরা হয় ১১৪ থেক ১৮৫ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট (১ গিগা ইলেকট্রন ভোল্ট = ১.৮ X ১০^-২৮ কেজি)। তবে এর সবচেয়ে অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য হচ্ছে স্থায়িত্বকাল। একটি ঈশ্বর কণার অর্ধায়ু সর্বোচ্চ ১০ঁ-২৫ সেকেন্ড, অর্থাৎ ১ সেকেন্ডের দশ হাজার কোটি কোটি কোটি ভাগের এক ভাগ। এই সময়কাল যে কতটুক ক্ষুদ্র সেটা বোঝানর জন্য এটা বলা যেতে পারে যে একটা একক সময়ে যতগুলো ঈশ্বর কণা সৃষ্টি হয়, অই সময়টা পেরনোর আগেই তার অর্ধেক কণা বিলীন হয়ে যায়!

এখন যে প্রশ্ন মনে জাগতে পারে তা হল কি দিয়ে এই অদ্ভুত কণা তৈরি হয়! এটি এখনও একটি দুরূহ প্রশ্ন! তবে এটা বলা যায় যে ঈশ্বর কণা তৈরি হয়ার পর আপনাআপনিই ভেঙ্গে যায় এবং অনেকগুলো মৌলিক কণায় রুপান্তরিত হয়। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে বিজ্ঞানীরা একে কৃত্তিমভাবে তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন, যা অবশেষে সফল হয় লার্জ হেড্রন কলিডারের মাধ্যমে। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮, এই ১০ বছর ধরে একে নির্মাণ করা হয়। সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের অদূরে অবস্থিত হ্রদ এবং জুড়া পাহাড়ের মাঝখানে মাটির ১০০ মিটার গভীরে ২৭ কিঃমিঃ পরিধির একটি বৃত্তাকার সুড়ঙ্গ বানানো হয়। সেখানে হাজার হাজার প্রোটন ঝাঁক (এক ঝাঁকে ১০ হাজার কোটি প্রোটন) প্রায় আলোর বেগে প্রবাহিত করা হয়। এরকম সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন দুটি প্রোটন কণার সম্পূর্ণ মুখোমুখি সংঘর্ষের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় ঈশ্বর কণা। তবে যত সহজে এখানে বলা হয়েছে, সৃষ্টির ব্যপারটা তার থেকে কয়েক হাজার গুন কঠিন ও জটিল।

এখন কথা হচ্ছে, এই ঈশ্বর কণাকে মানব সভ্যতার কতটুক কাজে লাগানো যেতে পারে। আর এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করছে যে ব্যবহার করছে তার উপর। অনেক উদ্ভাবনই আপাতদৃষ্টিতে সাধারণ লেগেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে তা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছিল। আবার অনেক আশীর্বাদই ভুল হাতে গিয়ে অভিশাপ হয়ে ছুটে এসেছিল। তবে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা একে দেখছেন নতুন আশার আলো হিসেবে, যে আলোর পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে হয়তো খুজে পাওয়া যাবে সৃষ্টির আদিমতম রহস্য, হয়তো এই ঈশ্বর কণাই বলে দিবে কিভাবে কেমন হবে মানব সভ্যতার সমাপ্তি। কিন্তু তার আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে এই ঈশ্বর কণা রহস্য কোন ভুল হাতে গিয়ে যেন মানব সভ্যতার অভিশাপ হয়ে না উঠতে পারে।

References: http://www.christianpost.com/news/can-the-god-particle-predict-the-end-times-108152/

http://www.gotquestions.org/God-particle.html\

http://forum.daffodilvarsity.edu.bd/

http://www.techspate.com

জগদীপ দাশ

১ম বর্ষ ২য় সেমিস্টার

REG- 2011133039

গনিত (MAT) বিভাগ

jdtonu@gmail.com

Size-M

2 comments:

  1. (2) square = 4. at the same time -(2) square = 4.
    surely exists. We can see everything is in balanced

    ReplyDelete