Tuesday, December 10, 2013

হিগস কণার গল্প

বিগত ৪-৫ বছর ধরে টেলিভিশনে এবং পত্রিকায় “হিগস কণা” নামটি বারবারই উঠে এসেছে। কণাটির অস্তিত্ত্ব আসলেই আছে কিনা সেটা পরীক্ষার জন্য CERN ২০০৮ সাল থেকে প্রায় ১০০ টি দেশের আট হাজারেরও বেশি পদার্থবিদ, ইঞ্জিনিয়ার, ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল এ যাবৎকালে পৃথিবীর সবচেয়ে জটিল এবং ব্যয়বহুল পরীক্ষার, এবং অবশেষে ২০১২ সালের ৪ জুলাই CERN এ কণাটির অস্তিত্ত্বের প্রমাণ পায়।

হিগস কণা কী!, কীভাবে পদার্থবিজ্ঞানে এল!, কেন বিজ্ঞানীরা এর অস্তিত্ত্ব প্রমাণের জন্য এত তৎপর ছিল! সে বিষয়গুলো এই লেখাতে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।

প্রথমত, হিগস একটি মৌলিক কণা(elementary particle)। যেসব কণাকে কোন অংশে বিভক্ত করা যায় না তাদেরকে মৌলিক কণা বলে। হিগস সহ এখ পর্যন্ত মহাবিশ্বে মোট ১৮ প্রকার মৌ্লিক কণিকার অস্তিত্ত্ব পাওয়া গেছে যেগুলো দিয়েই আমাদের চারপাশের সবকিছু গঠিত।মৌলিক কণাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- ফার্মিওন এবং বোসন ।ফার্মিওনগুলোকে আবার কোয়ার্ক এবং লেপটন এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।হিগস এক প্রকার বোসন বলে একে হিগস বোসন বলা হয়।

image001

(W+,  W− and Z)  এ তিনটি কণাও বোসন ।হুম্ম, শুধু একটি বর্ণ দিয়েই এদে্র নাম! এদের সবার কাজ একই, এবং অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পরমাণুর প্রোটনকে নিউট্রনে এবং নিউট্রনকে প্রোটনে পরিণত করা। যে বলের মাধ্যমে তারা এ কাজটি করে থাকে তাকে বলা হয় দুর্বল নিউক্লীয় বল। এ কারণে এ কণাগুলোকে দুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহক বলা হয়। আলোর কণা ফোটন আরেকটি মৌলিক কণিকা। ইলেক্ট্রন-ইলেক্ট্রন বিকর্ষণ বা ইলেক্ট্রন-প্রোটনের আকর্ষণ বলকে তড়িৎ-চুম্বক বল বলে এবং এ বলের বাহক ফোটন কণা।দুটি ইলেক্ট্রন পরস্পরকে বিকর্ষণ করছে বলতে বুঝায় যে তারা পরস্পরের সাথে ফোটন আদান-প্রদান করছে।

সুতরাং দুর্বল নিউক্লীয় বল একক কোন কণার মধ্যে কাজ করলেও তড়িৎ-চুম্বক বল দুটি কণার মধ্যে কাজ করে। তড়িৎ-চুম্বক বলের বাহক ফোটন ভরশুন্য হলেও দুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহক তিনটিই যথেষ্ট ভরবিশিষ্ট।

 হিগস কণার কাজ কী?

মৌ্লিক কণিকাগুলোর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করার জন্য পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে বিশুদ্ধ থিওরীর নাম স্ট্যান্ডার্ড মডেল থিওরী। উপরের ছবিতে ১৮ টি মৌ্লিক কণাকে দেখানো হয়েছে।

কণিকাভেদে এদের ভর বিভিন্ন। ষাটের দশকে (১৯৫০-৬০) বিজ্ঞানীরা প্রথম ভরের তাৎপর্য বুঝতে পারল এবং ভরকে যথেষ্ট গুরত্ত্ব দিতে লাগল। তারা ভরবিশিষ্ট কণিকাগুলোতে ভর সৃষ্টি্র কারণ এবং কেন বিভিন্ন কণিকাতে বিভিন্ন ভর হয় তার কারণও খুজতে লাগল।

image002

উপরের ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, টপ কোয়ার্কের ভর ইলেক্ট্রনের ভরের প্রায় ৩৫০,০০০ গুণ!!!!তবে ভরে এত পার্থক্য থাকলেও দুইটার-ই আকার কিন্তু একই। আসলে ভর ভিন্ন হবার কারণ তো ওই ব্যাটা হিগস কণা।মৌলিক কণিকাগুলোর মধ্যে আর সব বোসনগুলো বলের বাহক হলেও শুধু হিগসই এর ব্যতিক্রম। সে অন্যান্য মৌ্লিক কণিকাগুলোতে রসদ, অর্থ্যাৎ ভর সরবরাহ করে।

বিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের চারপাশের সবকিছুই হিগস কণা দিয়ে আচ্ছাদিত। হিগস কণাদের দিয়ে তৈরী অঞলকে হিগস ফিল্ড বলে।সুতরাং বলা যায় আমাদের চারপাশ, এমনকি পরমাণুর ভেতরটাও হিগস ফিল্ডে আচ্ছাদিত। মৌলিক কণাগুলো এই ফিল্ডের মধ্যে দিয়ে চলাচল করে।ফলে হিগস ফিল্ডের(মানে, হিগস কণার) সাথে তাদের মিথস্ক্রিয়া (interaction) ঘটে। যে কণাগুলো হিগসের সাথে যত বেশি মিথস্ক্রিয়া করে তার ভর তত বেশি।যেমনঃ ইলেক্ট্রন হিগস ফিল্ডের সাথে কম মিথস্ক্রিয়া করে বলে তার ভর তুলনামূলক কম।টপ কোয়ার্ক বেশি মিথস্ক্রিয়া করে বলে তার ভর এত বেশি। অন্যদিকে ফোটন কোন মিথস্ক্রিয়াই করেনা বলে ফোটনের ভর শূ্ন্য।

সুতরাং হিগস ফিল্ড না থাকলে কণাগুলোর সাথে তার কোন মিথস্ক্রিয়া হত না এবং, ফলে তাদের কোন ভরই থাকত না।কোন কিছুর ভর না থাকলে তা আলোর বেগে ছুটে(যেমনঃফোটন)।ইলেক্ট্রনের ভর না থাকলে তা দিগ্বিদিক হারিয়ে আলোর বেগে ছুটত।ফলে কোন পরমাণু গঠিত হত, এবং আমাদের কারোরই অস্তিত্ত্ব থাকত না।এবার বুঝলেন হিগসের গুরুত্ত্ব !

তবে হিগস ফিল্ডের সাথে বিভিন্ন কণিকার মিথস্ক্রিয়ার পরিমাণ কেন ভিন্ন রকম, তা এখনো জানা যায় নি।এমনকি হিগস কণা তার নিজের এত ভর কোথায় পেল তাও নিশ্চিত না, তবে ধারণা করা হয় হিগস কণা গুলো তাদের নিজেদের মধ্যেও মিথস্ক্রিয়া করে।

বিগ ব্যাং বা মহাবিশ্ব সৃষ্টির মূহুর্তে কোন কিছুরই ভর ছিল না, কারণ তখন তাপমাত্রা এত বেশি ছিলা যে হিগস ফিল্ডের মান ছিল শুন্য। যখন মহাবিশ্ব কিছুটা ঠান্ডা হল, তখন হিগস ফিল্ড তৈরী হল, এবং কণাগুলোও তাদের ভর পেল।

 কিন্তু ভর ব্যাখ্যার জন্য হিগসফিল্ডের দরকার হল কেন?

এর উত্তর দুইভাবে দেবার চেষ্টা করেছি। সংক্ষেপে এবং একটু বিস্তারিতভাব। সংক্ষিপ্ত অংশটি তুলনামূলক সহজ, তবে একটু বিস্তারিত অংশটি হিগসের ব্যাপারে যারা বেশি আগ্রহী মূলত তাদের জন্য…

 সংক্ষেপে:

“থিওরী অব রিলেটিভিটি” আইনস্টাইনের উন্নত চিন্তশক্তির দ্বা্রা সৃষ্ট একটি উন্নত সৃজনশীল আইডিয়া।কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানে হিগস ফিল্ডের আগমন কোন সৃজনশীল আইডিয়ার মাধ্যমে ঘটে নি, বরং এক প্রকার গাণিতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই এর আবির্ভাব।

দুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহক তিনটিই যথেষ্ট ভরবিশিষ্ট। ষাটের দশকে (১৯৫০-৬০) বিজ্ঞানীরা এই বলের বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া যখন গাণিতিক সমীকরণে প্রকাশ করতে গেলেন তখন পড়লেন এক মহাঝামেলায়।তারা সমীকরণে এই বাহকগুলোর ভর সরাসরি “ভর” টার্মে লিখলে সমীকরণে ব্যাপক অসংগতি দেখা দিতে লাগল [যেমন F=ma সূত্রে ভরকে সরাসরি “ভর(m)” টার্মে লেখা হয়েছে] তাই তারা খুজতে লাগল কীভাবে ভরকে সরাসরি ভরে না লিখে অন্যভাবে প্রকাশ করা যায়।অবশেষে ১৯৬৪ সালে কয়েকজন বিজ্ঞানী এ বিষয়ে স্বাধীনভাবে নিজেদের ধারণার প্রকাশ করলেন। সবার ধারণা্র বিষয়বস্তু মূলত একই ছিল।তারা সেই সমীকরণে সরাসরি “ভর” টার্ম না লিখে নতুন একটা ফিল্ড যুক্ত করলেন।এই ফিল্ড যুক্ত করায়, গাণিতিক অসংগতি যেমন দূর হল, তেমনি কণাগুলো ভরও পেল। পরবর্তীতে অন্যান্য মৌ্লিক কণার সমীকরণেও সরাসরি “ভর” টার্ম না লিখে সেই একই ফিল্ড বসিয়েও সমীকরণে কোন অসংগতি পাওয়া যায়নি। তাই ধরে নেওয়া হল, আমাদের মহাবিশ্বের সব মৌ্লিক কণাকে এই ফিল্ড-ই ভর প্রদান করে, এবং পরবর্তীতে এই ফিল্ডকে “হিগস ফিল্ড” নামে নামকরণ করা হয়। কী সেই অসংগতি? কীভাবে দূর করা হল?- “একটু বিস্তারিত” ব্যাখ্যার কাছে থেকেই শোনা যাক…

 একটু বিস্তারিতভাবেঃ

“If you learn something slowly, you will forget it slowly” ~ Ittzak Perlman. তাই ধীরে শিখুন এবং ধীরে ভুলুন

আইনস্টাইনের জগৎ :

সাস্টের সকল স্টুডেটকে যদি বলা হয় তোমরা পদার্থবিজ্ঞানের যেকোন একটা সূত্র লিখ, তাহলে আমি নিশ্চিত যে E=mc2 সূত্রটি নিরঙ্কুশভাবে জয়লাভ করবে।

আগেই বলেছি ফোটনের ভর শুন্য(m=0)। তাহলে কী ফোটনের শক্তি শূন্য…।নাহ…আসলে সূত্রটির প্রকৃ্তরূপ এরকম।

E=αmc2 , c= শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ
যেখানে, α এর মান   \frac{1}{ \sqrt{1-v^2/c^2} }
সমীকরণটিতে ফোটনের জন্য v=c বসিয়ে আমরা পাই, α=∞

তাহলে, শক্তি সমান কত!! E= αmc2= ∞0c2

গাণিতিক ভাবে এর মান অসংজ্ঞায়িত হলেও, শুন্য নয়। সুতরাং কেবলমাত্র v=c হলেই E≠ 0, কারণ, v এর মান শুন্য না হলে α=∞ হবে না ফলে শক্তির মান শুন্য হয়ে যাবে।

 সিদ্ধান্ত-> ভরশুন্য কোন কিছুকে অবশ্যই আলোর বেগে চলতে হবে, না হলে তার অস্তিত্ত্বই থাকবে না।কারণ শুন্য শক্তির কোন কিছুর অস্তিত্ত্ব থাকতে পারে না।

সমীকরণটিতে v এর মান c এর চেয়ে বড় হলে, শক্তি কাল্পনিক হয়ে যায়। কাল্পনিক সংখ্যা দিয়ে গাণিতিক অনেক জটিলতা দূর করা গেলেও , কোন কিছুর চূড়ান্ত সমীকরণে কাল্পনিক সংখ্যা থাকা মানে বাস্তবে তার কোন অস্তিত্ত্ব নেই। কিন্তু আমরা শক্তির বাস্তব অবস্থা দেখতে পাই। সুতরা, শক্তির সমীকরণে কাল্পনিক সংখ্যা গ্রহণযোগ্য নয়।

সিদ্ধান্ত-> কোন কিছুরই বেগ c এর চেয়ে বেশি হতে পারে না।

 

ফোটন দেখতে কেমন আমরা তা জানি না, কিন্তু তারপরেও তার উপর তাত্ত্বিকভাবে একটু মাতব্বরি করতে পারি।

সব মৌলিক কণাই নিজ অক্ষের চারপাশে ঘুরছে। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এই ঘূর্ণনের দিকের ক্ষেত্রেও কিছু ধরাবাধা নিয়ম করে দেয়। যেমন, যেকোন কণা সর্বোচ্চ তিন দিক বরাবর ঘুরতে পারবে। যেমন একটি ইলেকট্রন তিন দিক বরাবর ঘুরতে পারে- গতির দিক বরাবর হতে পারে বা গতির দিকের সাথে লম্বভাবে হতে পারে, অবস্থা অনুয়ায়ী সে ঠিক করবে কখন কিভাবে ঘুরবে।কিন্তু ফোটনের রিলেটিভিটির নিয়ম মেনে চলার তাগিদে ফোটন তিন নয়, দুই অক্ষ বরাবর ঘুরে।

image003

ফোটন সব সময় c বেগে ছুটছে। ফোটনের উপর একটা বিন্দু কল্পনা করুন। এখন যদি ফোটনটি তার গতির দিক বরাবর ছুটে, এবং নিজ অক্ষে v বেগে ঘুরে, তাহলে সেই বিন্দুর মোট বেগ হয় c+v (চিত্র-A)। কিন্তু আমরা একটু প্রমাণ করলাম যে, মহাবিশ্বে কোন কিছুই c এর চেয়ে বেশি বেগে যেতে পারে না।তাই ফোটনটিও নিজ গতির দিক বরাবর ঘুরতে পারবে না।যদি ফোটনটি গতির দিকের সাথে ৪৫ ডিগ্রী কোণ বরাবর ঘুরে তবুও তার গতির দিক বরাবর তার স্পিনের একটা উপাংশ থাকে। সুতরাং, এভাবেও বেগ c এর চেয়ে বেশি হয়ে যায়।

প্রকৃ্তপক্ষে ফোটনটি একইসাথে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং রিলেটিভিটি মেন চলতে পারবে যদি কেবলমাত্র সে তার গতিপথের অভিলম্ব বরাবর ঘুরে(চিত্র-B)। তাই ফোটন কেবল দুই দিক বরাবর ঘুরতে পারে- তার গতির দিকের সাথে লম্বভাবে ডান দিকে এবং বাম দিকে (নিচের চিত্র)।

image004

তাহলে আমরা কী পেলাম! ভরশুন্য হলে কোন কিছুকে অবশ্যই c বেগে চলতে হবে। আবার c বেগে চলার জন্য মাত্র দুইদিক বরাবর স্পিন থাকতে হবে। সুতরাং, ভরশুন্য যে কোন কিছুরই দুইদিক বরাবর স্পিন থাকবে। অন্যভাবে বলা যায়, মাত্র দুই দিক বরাবর স্পিনবিশিষ্ট যেকোন কণারই ভর শুন্য।

সিদ্ধান্ত-> দুই দিক বরাবর স্পিনবিশিষ্ট যেকোন কণারই ভর শুন্য। কোন কণাতে আরেকটি স্পিন যোগ করার অর্থ হচ্ছে সেই কণাটিকে ভরশুন্য থেকে ভরবিশিষ্ট করে।দুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহকদেরকে ভর প্রদান করতে পিটার হিগস এবং অন্যান্য বিজ্ঞানীরা এই ট্রিকস-ই অবলম্বন করেছিল।

 অনিশ্চয়তার জগৎ: “Anyone who is not shocked by quantum theory has not understood it”~  নীলস বোর।

কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে হাইজেনবার্গের অনিশ্চয়তা নীতি। সূত্রটি বিভিন্নভাবে লেখা যায়। এর একটা রুপ হচ্ছে(বলের বাহকদের জন্য)…
 \triangle E  \propto  \frac{1}{ \triangle t}

সুতরাং, যে বলের বাহকের ভর যত বেশি তার স্থায়ীকাল তত কম। তড়িৎ-চুম্বক বলের বাহক ফোটনের ভর শুন্য বলে তার স্থায়ীকাল অনেক বেশি এবং একারণেই দূর-দূরান্ত থেকে আগত তারকারাজির ফোটন পৃথিবী্তে আসার যথেষ্ট সময় পায় এবং আমরা তা দেখতে পাই Jদুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহকগুলোর স্থায়ীকাল খুবই কম।এ কারণেই ষাটের দশকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিল যে, তারা যথেষ্ট ভরবিশিষ্ট কণা। প্রকৃ্তপক্ষে এরা আবিষ্কৃত হয়েছিল অনেক পরে- ১৯৮৩ সালে।

 অবশেষে হিগস রহস্যের সমাধানঃ

ষাটের দশকে, বিভিন্ন সময় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তড়িৎ-চুম্বক বলের জন্য যে সমীকরণ তৈ্রী করা হল, তাতে কিছু কিছু প্যারামিটার(যেমনঃ ভর একটি প্যারামিটার) এর রেজাল্ট হল ইনফিনিটি। তাও আবার অটিল সব প্যারামিটারেই ইনফিনিটি রেজাল্ট দিল। বিজ্ঞানীরা ভাবল, যদি এই ইনফিনিটিগুলো সহজ প্যারামিটারগুলোতে আসত, তাও কিছু একটা করা যেতে। সহজ বলতে যেগুলো ল্যাবে পরীক্ষার সাহায্যে বের করা যেত আরকি!(যেমনঃ ইলেক্ট্রনের চার্জ)

এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য তারা ধর্ণা দিল তারা গণিতের অন্যতম জটিল তত্ত্ব গজ (gauge) থিওরীর কাছে (ইংরেজীতে প্রকৃ্ত উচ্চারণ হয়- গ্যাইজ থিওরী)। গজ থিওরী ঘোষণা করল, ঠিক আছে আমি সাহায্য করতে রাজি আছিল তবে এক শর্তে। শর্ত হচ্ছে তড়িৎ-চুম্বক বলের অবশ্যই কমপক্ষে একটি বাহক থাকতে হবে এবং অবশ্যই তা ভরশুন্য হতে হবে। বিজ্ঞানীরা তো মহাখুশি, কারণ বাহক হিসেবে তো ফোটন আছেই এবং তা তো ভরশুন্যই। তো এভাবে গজ থিওরীর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা ইনফিনিটি টার্মগুলো এমন সব প্যারামিটারে স্থাপন করল যেগুলো সেসময় ল্যাবে পরিমাপ করা যেত।

এরপর কী? এরপর তারা এর জুয়াখেলা শুরু করল। ল্যাবে এসব প্যারামিটারের মান বের করে, মূল সমীকরণ থেকে ইনফিনিটি হটিয়ে সেই মানগুলো বসিয়ে দিক, বাকি সব কিছু ঠিক থাকল। এভাবে ইনফিনিটি দূর করাকে “রিনরমালাইজেসন” বলে।

অবশ্য এই জুয়াখেলায় বিজ্ঞানীরা সফলতার সাথে জয়লাভ করেছিল, এবং সেই থিওরী নিখুতভাবে, সবকিছুর সাথে সংগতি রেখেই অনেক জটিল টার্মের মান বলে দিতে পারত।এই থিওরীকে বলা হয় কোয়ান্টাম ইলেক্ট্রডাইনামিক্স (QED) যা পদার্থবিজ্ঞানের অন্যতম বিশুদ্ধ তত্ত্ব।

 এরপর দুর্বল নিউক্লীয় বলের সমীকরণের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানীরা ইনফিনিটি পেতে শুরু করল। আবার তার গজ থিওরীর কাছে গেল।গজ থিওরী আবার ঘোষণা দিল, বলের বাহকগুলোকে ভরশুন্য হতে হবে।বিজ্ঞানীরা এবার হতাশ। কারণ, (W+,W-,Z) বোসনের ভর সেসময় নির্দিষ্টভাবে জানা না গেলেও, এদের খুব স্বল্প জীবনকাল থেকে বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত ছিল যে, এদের ভর থাকবে এবং একটু বেশিই থাকবে।

তাহলে কী হবে? এ অবস্থায় বিজ্ঞানীরা সংলাপের ডাক দিল, এবং তারা একটি সফল সংলাপেরও আয়োজন করতে পেরেছিল। এ সংলাপের অন্যতম উদ্দোক্তা ছিল ছয়জন বিজ্ঞানী।

image006

তারা থিওরীতে সরাসরি ভর ব্যবহার না করে, স্পিন ০ বিশিষ্ট একটা ফিল্ড জুড়ে দিল। এই ফিল্ড সে থিওরীর মূল সমীকরণে গজ থিওরীর বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখে, শুধু মাত্র গ্রাউন্ড স্ট্যাটে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসল। এই পরিবর্তনের ফলে বলের বাহকগুলোর টার্ম এমন রুপ ধারণ করল যার চেহারা ছিল তিন দিকের “স্পিনবিশিষ্ট” টার্মের মত। আর কোন কণা কণার তিনদিকে স্পিন থাকার অর্থ হচ্ছে কণাটি ভরবিশিষ্ট।এভাবেই F=ma সূত্রের মত সরাসরি ভরের টার্ম যুক্ত না করে দুর্বল নিউক্লীয় বলের বাহকগুলোকে ভর দেওয়া হল।

image007

এতে সমীকরণটিতে গজ থিওরীর বৈশিষ্ট্য সামান্য ভাঙলেও সমীকরণটি রিনরমালাইজেসন করা সম্ভব হয়েছিল এবং ইনফিনিটি প্যারামিটারগুলোও সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল।

image008

সত্তরের দশকে ভর ব্যখ্যার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে বিভিন্ন মতামত আসলেও হিগস ফিল্ডই সবচেয়ে সফল ব্যাখ্যা প্রদান করায়, তার দিকেই ভর সৃষ্টির কৃ্তিত্ত্ব গেছে।

image009

হিগস কণা না ধরা পড়লে কী হতঃ

১৯৭১ সালের পর থেকে হিগস কণার অস্তিত্ত্ব নিয়ে বিজ্ঞানীরা এত বেশি আশাবাদী ছিল যে, এর পর থেকে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের অধিকাংশ গবেষণাতে হিগসের অস্তিত্ত্ব ধরে তাদের গবেষণা কাজ পরিচালনা করেছে এবং সে অনুযায়ী তাদের গবেষণাপত্র তৈরী করেছে। তাহলে এখনচ হিগস কণার অস্তিত্ত্ব নাই- এটা প্রমাণিত হলে গত ৪০ বছরে আধুনিক পদার্থবিজ্ঞানের যে অগ্রগতি সাধিক হয়েছে তা্র, অধিকাংশ-ই পরিবর্তন করতে হত। আর সাথে সাথে ভর সৃষ্টির জন্য কে দায়ী সেটার জন্য আমাদেরকে আবার নতুন করে ভাবতে হত এবং জুড়ে দিতে হত কোন নতুন তর্ক-বিতর্ক।

তথ্যসূত্রঃ

  1. The particle at the end of the universe, by Sean Carrol

  2. Partilce Physics for non-physicists, A tour of microcosmos by Steven Pollock

  3. Wesite url: http://higgsboson.nl/

  4.  CERN official website,url: http://home.web.cern.ch/

  5. Wikipedia

2 comments:

  1. সুন্দর হইসে jibril সহজ এবং তথ্যবহুল।তোর পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম

    ReplyDelete