মোঃ রাগিব শাহরিয়ার
ইইই ১/২
আমাদের চৌম্বক রেখা দক্ষিণ মেরু থেকে শুরু হয়ে পৃথিবী ঘুরে উত্তর মেরুতে পৌঁছায়। এই রেখার দিক গত প্রায় সাড়ে আট কোটি (তিরাশি মিলিয়ন) বছরে অন্তত ১৮৪ বার পাল্টেছে। এটুকু রেকর্ড অন্তত আমাদের কাছে আছে, শিলা গবেষণা থেকে। এর আগেও এমন ঘটেছে, পৃথিবীর শুরুর দিক থেকেই ঘটছে।
এই চৌম্বক ক্ষেত্র আমাদেরকে বেশ কিছু জিনিস থেকে রক্ষা করে। যেমন - মহাজাগতিক রেডিয়েশন, তড়িৎপ্রাপ্ত কণার স্টেলার উইন্ড, এবং আমাদের বায়ুমণ্ডল আর পানিকেও ধরে রাখে, নইলে হয়তো আমাদের গ্রহ মঙ্গলের মত হয়ে যেতো। ধারণা করা হয়, মঙ্গলেরও পৃথিবীর মতই জীবনধারণযোগ্য পরিবেশ ছিলো, চৌম্বকক্ষেত্র হারিয়ে ফেলার আগে।
পৃথিবীর ঠিক মধ্যখানে, অভ্যন্তরে গলিত ধাতব পদার্থের একটা বলের মত আছে, যাকে বলা হয় Core. এই core যদি কোনোদিন শুকিয়ে কঠিন পদার্থ হয়ে যায়, তাহলে পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র নষ্ট হয়ে যাবে, আর আসলেই আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো। এখন যে হারে তাপমাত্রা কমছে, অর্থাৎ এক বিলিয়ন বছরে একশো ডিগ্রী, সেই হারে core শুকিয়ে যেতে লাগবে আরো বিলিয়ন বিলিয়ন বছর। তো, সেটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।
চৌম্বক ক্ষেত্রের স্থির থাকার পিরিয়ডকে বলা হয় Chron. সাত লক্ষ আশি হাজার বছর আগে, আমাদের পৃথিবীর পোলারিটি (দুই মেরুর টান) ভিন্ন ছিলো, এর মধ্যে আর পাল্টায়নি। শুধু মাঝখানে ৪০০ বছরের জন্য একবার পাল্টেছিলো, তাও ৪১ হাজার বছর আগে।
শিলার রেকর্ড থেকে বোঝা যায় যে গড়ে প্রত্যেক দুই লক্ষ বছরে একবার পোলারিটি পাল্টায়। অবশ্য, সুপারক্রন বলতে একটা ঘটনা আছে, যেখানে এক কোটি বছর পর্যন্ত পোলারিটি স্থির ছিলো। আরেক সুপারক্রন তো আরো এক কাঠি সরেস! পুরো চার কোটি বছর স্থায়ী ছিলো সেই পোলারিটি।
এখন যদি আরেকবার পোলারিটি উল্টে যায়, তাহলে গড়ের সাথে তুলনা করে বলতে হয় পাঁচ লক্ষ বছর পর পৃথিবী তার পাওনা ফিরিয়ে দিলো। তো, কে জানে, আমরা আরেকটা অসাধারণ সুপারক্রনের শুরুর দিকের বাসিন্দা কিনা !! অবশ্য সময় ঘনিয়ে আসছে আরেকবার পাল্টানোর, কম্পিউটার সিম্যুলেশনে চৌম্বক ক্ষেত্রকে দুর্বলই মনে হচ্ছে।
ঘুরেফিরে আবারো, মারা যাবো না তো !!
জ্বি না, জিনিসটা এতোবার ঘটেছে এবং পরেও যে ঘটবে, সেই সম্ভাবনা এতোই বেশি যে এটা নিয়ে প্যানিক করার কোনো কারণ নেই। তবে একটা কাহিনী আছে,
একবার রিভার্স করা শুরু করলে সেটা হাজার থেকে দশ হাজার বছর লাগে প্রসেস শেষ করতে। ঐ সময়টাতে আপনি কম্পাস ব্যবহার করতে পারবেন না, হয়তো সমুদ্রে পথ খুঁজে পাবেন না, অবশ্য ম্যাগনেটিক কম্পাস দিয়ে চালানো জাহাজের সংখ্যা এখন নিতান্তই হাতে গোণা।
শেষ হবার পর নতুন উত্তর মেরু হয়তোবা বাংলাদেশেও হতে পারে। তখন বাংলাদেশের আকাশেও আলাস্কার আকাশের মত অরোরা দেখা যাবে। নববর্ষের বৈশাখেও ঠাণ্ডা পড়বে ভয়াবহ অবশ্য।
যাই হোক, আইসন ধূমকেতুর ফলে সবচেয়ে ভয়াবহ যে সমস্যাটা হবে, সেটা হচ্ছে গ্লোবাল ইন্টারনেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর যদি এক মাস ইন্টারনেট বন্ধ থাকে, এর চেয়ে তো মৃত্যু ভালো।
No comments:
Post a Comment