Tuesday, December 10, 2013

ভিজিট টু দ্যা ইনফিনিটি


ভিজিট টু দ্যা ইনফিনিটি


১...

মস্তিষ্কের গভীরে একটা তীব্র যন্ত্রণায় হঠাৎ করেই চারপাশটা অন্ধকার হয়ে যায়। প্রাণপণ চেষ্টার পরও চোখ মেলে চাইতে পারে না রুহিন। মনে হয় সবকিছু থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে। বহুদূরের কোন প্রাণহীন ধূসর শুন্য গ্রহে। মায়ের কথা মনে পরে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে “মা আমি ঘুমুতে চাই না। আমি বাঁচতে চাই না। আমি তোমার কোলে মাথা রেখে মরতে চাই।”

রুহিনের নির্বাক আর্তনাদ করোটিক প্রাচীরের প্রতিটি দেয়ালে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে আসে তার হিম শীতল মস্তিষ্কে। একটা সময় সবকিছু শূন্যে মিলিয়ে যায়। নিকষ কালো অন্ধকারে হারিয়ে যায় সবকিছু। নিজেকে প্রাণহীন সরীসৃপের বলে মনে হয়। প্রচণ্ড ভয় পায় রুহিন। প্রতিদিন এভাবে মা... মা... বলে চিৎকার করে ঘুম ভাঙে রুহিনের। পাশের ঘর থেকে রান্না ফেলে ছুটে আসে রাহেলা বেগম। ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে মা বলে “আবার দুঃস্বপ্ন দেখেছিস বাবা...?” লজ্জায় মায়ের কোলে মুখ লুকয় রুহিন। মা হাসে। বোকার মত মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। ভাবে পৃথিবীতে মায়ের হাসির চেয়ে সুন্দর দ্বিতীয় কিছু নেই। মহাবিশ্বের অপার সৌন্দর্য ম্লান মনে হয় এই হাসির কাছে। আজকের পৃথিবীতে খুব কম সংখ্যক মানুষ আছে যাদের রুহিনের মত মায়ের হাসিমুখ দেখার সৌভাগ্য হয়। আজকাল বেশিরভাগ ভ্রূণই বেড়ে ওঠে বায়োকেমিক্যাল ক্যাপসুলে যার প্রতিটি হৃদস্পন্দন পর্জবেক্ষন ও নিয়ন্ত্রণ করে নিউরাল হাইপার কম্পিউটার। এদের সবাই কোন না কোন বিখ্যাত শিল্পী, নামী গায়ক কিংবা মেধাবী বিজ্ঞানীর ক্লোন। পৃথিবী বদলে গেছে। এই পৃথিবীতে সাধারণ মানুষের কোন স্থান নেই।

 

“কিরে খোকা, কি ভাবছিস...?”

“কিছু না, মা।”

“কতবার বললাম, একজন ভাল নিউরোলজিস্ট এর সাথে দেখা কর।”

“আমার কিছুই হয়নি মা, শুধু শুধু চিন্তা কর না তো।”

“আমি কেলি কে একদিন বাসায় আসতে বলি?”
“না। শুধু শুধু ওকে কষ্ট দেবার কোন মানে হয় না মা। আমাকে বিজ্ঞান একাডেমীতে যেতে হবে। তারাতারি নাস্তা দাও।”

 

চতুর্থ প্রজন্মের বায়োবট তিশা-১৮ তার যান্ত্রিক মস্তিষ্কের জটিল ক্যালকুলেশন থেকে বুঝতে পাড়ে এই অবাধ্য ছেলেটা কথা শুনবে না। তাই হিশাব অনুযায়ী ডাটাবেস থেকে দীর্ঘশ্বাসের এক্সপ্রেশনটি দেখিয়ে রান্নাঘরে চলে যায় সে। ভাবে এবার ছেলেকে না জানিয়ে বায়োবট মেয়েটিকে নিয়ে আসতে হবে।

 

 

২...

বিজ্ঞান একাডেমীর প্রধান ই-রিনা অপলক দৃষ্টিতে হলগ্রাফিক স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কংক্রিটের দেয়ালেঘেরা ছোট্ট হলরুমেটাতে বসিয়ে রাখা হয়েছে সাতজন সাধারণ মানুষকে। যাদের কেউই কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির ক্লোন নয়। জিনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড মেধাবী নয়। সিঙ্গল সেলুলার ভ্রূণ থেকে মাত্রিগর্ভে বেড়ে ওঠা সাত জন পরিপূর্ণ মানুষ। এই গ্যালাক্সির শেষ সাত ন্যাচারেলি বর্ন হোমো সেপিয়েন্স। যাদেরকে কিছুক্ষণ পরই পাঠানো হবে মহাশূন্যে। নতুন কোন পৃথিবীর সন্ধানে। হয়তো তারা কখনো জেগে উঠবে সবুজে ঘেরা কোন গ্রহে। ঘর বানাবে, বংশবিস্তার করবে, গরে তুলবে নতুন সভ্যতা। অথবা হারিয়ে যাবে মহাকাশের অসীম শূন্যতায়। ই-রিনা হঠাৎ করেই তার যান্ত্রিক মস্তিষ্কের বাপাশে লো ইলেট্রিক সিগন্যাল অনুভব করে। তার সংবেদনশীল বায়োনিক চোখে একুয়াস হিউমারের ক্ষরণ হতে থাকে। ই-রিনা জানালার পাশে এসে দাড়ায়। বাইরের ধূসর ধুলোমাখা পৃথিবীর দিকে তাকায়। ভাবে, আর মাত্র ৩৭ মিনিট...

 

৩...

রুহিন খুব ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। চোখের ঠিক সামনে রাখা চতুষ্কোণ স্কিনে কতগুলো দুর্বোধ্য লাইন দেখতে পায়। অনেক চেষ্টার পরও কিছুই মনে করতে পারেনা। মাথায় সূক্ষ্ম যন্ত্রনা অনুভব করে। হঠাৎ করে হাত নাড়াতে গিয়ে সে বুঝতে পারে তার শরীরে কোন অনুভূতি নেই। চোখ বন্ধ করে লাইনগুলোর মানে বোঝার চেষ্টা করে।



সেভিং সেশন ২০১০১৩৩০৩৭...

সেশন সাকসেসফুলি সেভড...

রিস্টার্টিং সিস্টেম...

স্টার্টিং নিউ সিমুলেসন...

সেশন নংঃ ২০১০১৩৩০৩৮...

ইরেজিং টেম্পোরারি মেমোরি...



 

সব কিছু মনে পরে রুহিনের। মৃতের মত বেঁচে থাকা জীবন ছেড়ে বেড়িয়ে আসতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর এই অমানুষিক তাড়নাকে সাড়া দিতে পারে না ক্যাপসুলে বন্দি অনুভূতিহীন শরীর। ঠিক তখনই...

মস্তিষ্কের গভীরে একটা তীব্র যন্ত্রণায় হঠাৎ করেই চারপাশটা অন্ধকার হয়ে যায়। প্রাণপণ চেষ্টার পরও চোখ মেলে চাইতে পারে না রুহিন। মনে হয় সবকিছু থেকে অনেক দূরে সরে যাচ্ছে সে। বহুদূরের কোন প্রাণহীন ধূসর শুন্য গ্রহে...

 

পরিশেষ...

২১১৩ সালের ৪ এপ্রিল এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত খ্যাতিমান লেখক রুবাইয়াত রুহিনের মস্তিষ্ককে এভাবেই গত ৩০০ বছর ধরে শীতল ক্যাপসুলে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। ব্রেইন সিগন্যাল এনালাইজেশন এন্ড রিডব্যাক টেকনোলোজির সহায়তায় তার মস্তিষ্ক থেকে প্রাপ্ত ডাটা ২০১০১৩৩০৩৭ কে “ভিসিট টু দ্যা ইনফিনিটি” শিরোনামে ছাপা হয় ১৭ নভেম্বর ২৪১৩।

 

লেখকঃ মোঃ আব্দুস সালাম সম্পদ

২০১০১৩৩০৩৭

গনিত, ২/২

3 comments:

  1. তেমন জমেনি কাহিনীটা

    ReplyDelete
  2. Sabiha Tasneem JesseJanuary 11, 2014 at 11:58 AM

    onk sundor.dehohin mostisker beche thakar jontrona sundorvabe uposthapito hoyechhe.lekhoni onk sundor.

    ReplyDelete