বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। মানব সভ্যতার উন্নতির চরম শিখরে আরোহণের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান বিজ্ঞানের। বিজ্ঞান ছাড়া আধুনিক সভ্যতা চিন্তাই করা যায় না। বস্ত্তবাদ হচ্ছে এক প্রকার বৈজ্ঞানিক দর্শন। বিগত শতাব্দীগুলোতে যার ছিল আকাশচুম্বি জনপ্রিয়তা। মাইকেল ফ্যারাডে সহ অসংখ্য বিখ্যাত বিজ্ঞানি বস্ত্তবাদী দর্শনে বিশ্বাসি ছিলেন। বর্তমান সময়েও পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের অনেকেই বস্ত্তবাদী দর্শনে বিশ্বাস করেন। এজন্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনেকেই মনে করেন বিজ্ঞান মানেই বস্ত্তবাদীতা। যদিও দিনকে দিন এর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে।
বস্ত্তবাদী দর্শনের মূল বক্তব্য হল-অদৃশ্যে বিশ্বাস স্থাপন করা যাবে না। অর্থাৎ যা দেখি না তা মানি না! এজন্যে বস্ত্তবাদীরা স্রষ্টাকে না দেখার অজুহাতে তার অস্তিত্বকে দিব্যি অস্বিকার করে চলেছেন। যে বস্ত্তবাদ নিয়ে এত কথা এবার আসুন আধুনিক বিজ্ঞানর মাপকাঠিতে, বাস্তবতার আলোকে এর গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করে দেখি! বাস্তবিক অর্থে বর্তমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার ফলে বস্ত্তবাদের অবস্থান বড়ই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে বস্ত্তবাদের ভিত্তি কতটা নড়বড়ে হয়ে পড়েছে তা প্রমাণ করার জন্যে কয়েকটি উদাহরণই যথেষ্ট বস্ত্তবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীরা ‘যা দেখি না তা মানি না’ এই অজ্ঞতাপূর্ণ বাক্যটি উচ্চারণ করে এমন এক মহান স্রষ্টাকে দর্শন লাভ করার আকাঙ্খায় জেদ ধরে বসে আছেন, অথচ সেই স্রষ্টার অসংখ্য অগণিত সৃষ্টিকেই তারা দেখার যোগ্যতা রাখেন না। এই যেমন, যে বাতাসের সাগরে মানব সম্প্রদায় ডুবে আছে, সেই বাতাসের উপাদান অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি মৌলিক পদার্থগুলোকে মানুষ মোটেই দেখতে পায় না।
প্রতিবার নি:শ্বাস নেয়ার সময় কোটি কোটি অক্সিজেন পরমাণু গ্রহণ করছে কিন্তু এর একটি পরমাণুকেও দর্শন লাভ করতে পারছে না। অথচ শুধুমাত্র একটি অক্সিজেন পরমাণুতে আটটি ইলেকট্রন, আটটি প্রোটন ও আটটি নিউট্রন কণিকা বর্তমান আছে। মানুষের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করেও এই মৌলিক কণিকাগুলোর দর্শন লাভ করা সম্ভব নয়। তাই বলে কি বস্ত্তবাদে বিশ্বাসীরা ‘যা দেখিনা তা মানি না’ এই নীতির উপর ভিত্তি করে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন এবং তাদের ভিতরে অবস্থিত মৌলিক কণিকাগুলোর অস্তিত্বকে অস্বিকার করার দুঃসাহস দেখাবেন।
মহাবিশ্বের সূচনা লগ্নে Stable Alom হিসেবে মৌলিক পদার্থ হাইড্রোজেনই সর্বপ্রথম আবির্ভূত হয়। বর্তমান মহাবিশ্বের শতকরা ৭৫ ভাগ পদার্থই হচ্ছে এই হাইড্রোজেন নামক মৌলিক পদার্থ। প্রতিটি নক্ষত্রের ভেতর জ্বালানি হিসেবে এটি ব্যবহৃত হচ্ছে। সমগ্র মহাবিশ্বটি এই হাইড্রোজেন নামক মহাসুক্ষ্ম পরমাণুতে ভরপুর। বস্ত্তবাদীরাও অদৃশ্য হাইড্রোজেন দ্বারা এ মহাবিশ্বটি পূর্ণ হয়ে আছে বলে বিশ্বাস করেন। অথচ তারা এই অদৃশ্য হাইড্রোজেনের স্রষ্টাকে অদৃশ্যের অজুহাতে তার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে শুধু মানব সভ্যতার সাথেই প্রতারণা করছেন না, তারা নিজেরাও নিজেদেরকে প্রতারিত করছেন। অদৃশ্য সৃষ্টি মানবেন আর অদৃশ্য স্রষ্টা মানবেন না এটা কোনো ধরণের মূর্খতা? দ্বিমুখী নীতির এর চেয়ে নির্লজ্জ উদাহরণ আর কী হতে পারে?
এই মহাবিশ্বে শূন্য বলতে কিছুই নেই। কার্যত সর্বত্র শক্তি, তেজস্ক্রিয়তা ও মহাসুক্ষ্ম কণিকা দ্বারা ভরপুর। দৃষ্টি আওতার বহির্ভূত বলে আমরা তা দেখতে পাই না। প্রায় ভরশূন্য মহাসুক্ষ্ম কণিকা নিউট্রিনো প্রায় আলোর গতিতে সকল প্রকার বস্ত্তকে ভেদ করে মহাবিশ্বব্যাপি পরিভ্রমণরত রয়েছে। প্রতি ইঞ্চি জায়গা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন (১ মিলিয়ন = ১০ লক্ষ) মহাসুক্ষ্ম নিউট্রিনো কণিকা অতিক্রম করে চলে যাচ্ছে। এদের গতিপথ কেউই রুখতে পারে না।
এমন কি একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের ভিতর দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ১০০ বিলিয়ন (১ বিলিয়ন=১০০০ মিলিয়ন) পরিমাণ নিউট্রিনো কণিকা ভেদ করে চলে যাচ্ছে। অথচ আমরা তা অনুভব করতে পারি না। অদৃশ্য নিউট্রিনো কণাগুলোর এসব নীরব কর্মকান্ড প্রমাণ করছে যে, ‘যা দেখিনা তা মানি না’ উক্তিটি শুধু অজ্ঞ বা মূর্খলোকদের জন্যই সাজে, জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য কখনোই তা শোভনীয় নয়। বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে হাস্যকর এবং অচল ব্যাকটি হচ্ছে- `unseen is nothing.’আমাদের চতুর্দিকে বিরাজমান বেশিরভাগ বস্ত্ত এবং শক্তি অদৃশ্য থাকার পরওযদি তাদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা না যায়, তবে অদৃশ্য প্রভুকে অস্বীকার করা হবে কোন যুক্তিতে? দেখিনা বলেই তো আর বাস্তবতাকে অস্বীকার করা যায় না।
আমাদের পৃথিবী নামক গ্রহের ৭০ ভাগই হচ্ছে পানি, যখন ল্যাবরেটরীতে পানির বিন্দুকে তার মৌলিক উপাদান অক্সিজেন ও হাইট্রোজেন এ বিভক্ত করে ফেলা হয় তখন আমরা তা আর দেখতে পাই না। এই মৌলিক পদার্থগুলোকে আরো বিভক্ত করলে ইলেকট্রন, প্রেট্রোন, নিউট্রনের মত অসংখ্য মৌলিক কণিকা পাওয়া যাবে। এগুলোকে আরো বিভক্ত করলে পাওয়া যাবে কোয়ার্ক। কোয়ার্ক হচ্ছে পদার্থের সবচেয়ে ক্ষুদ্রতম অংশ। এভাবে যে কোনো বস্ত্তকে বিভক্ত করতে করতে তার মৌলিক গঠন উপদান ‘কোয়ার্ক’ পর্যায়ে নিয়ে গেলে তাকে দর্শন লাভ করার প্রশ্নই সম্পূর্ণরূপে অবাস্তব হয়ে পড়ে। অথচ মহাসুক্ষ্মতার কোয়ার্ক জগৎ কোনো কল্পকাহিনী নয় বরং শতভাগ প্রমাণিত সত্য ঘটনা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সমগ্র মহাবিশ্বের সৃষ্টি যে কোয়ার্ক থেকে, মানবজাতি সে কোয়ার্ককেই যেখানে দর্শন লাভ করতে সমর্থ নয়, সেখানে সমগ্র মহাবিশ্বের স্রষ্টাকে কি করে দেখার জেদ ধরতে পারে? হয়ত মহান স্রষ্টা তার অস্তিত্বের প্রমাণ খুঁজে বের করার জন্যই তিনি নিজে অদৃশ্যে অবস্থান করে মহাবিশ্বের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে অদৃশ্যে স্থাপন করেছেন। সুতরাং স্রষ্টাকে অস্বীকার করা বর্তমান বিজ্ঞানকেই অস্বীকার করার শামিল।
বিগত শতাব্দীগুলোতে যে সকল বিজ্ঞানী বস্ত্তবাদে বিশ্বাস করতেন তাদের পক্ষে না হয় যুক্তি আছে যে, তখন বিজ্ঞান এতটা উন্নত ছিল না যার কারণে তারা মহাবিশ্ব বলতে চোখের সামনে দৃশ্যমান এই নগণ্য বস্ত্ত জগৎকেই মনে করতেন। তারা এই মহাসুক্ষ্ম বিষয়গুলো এবং এদের জটিল কার্যক্রম সম্পর্কে জানা তো দূরের কথা ঠিক মত কল্পনাও করতে পারতেন না। কিন্তু অবাক হওয়ার বিষয় হচ্ছে বর্তমান উন্নত বিজ্ঞানের যুগেও কতিপয় বিজ্ঞানী সমস্ত যুক্তি, তর্কের ঊর্দ্ধে ওঠে বস্তবাদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গুড়ামি ও সংকীর্ণমনতার এর চেয়ে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে?
ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস নামক দুইটি মহাসুক্ষ্ম জগৎ রয়েছে। এদের আকৃতি ও গঠন আমাদের দৃষ্টি শক্তির আওতার বহির্ভূত, তাই আমরা এদেরকে দেখতে পাই না। এরা এতই ক্ষুদ্রজগতের বাসিন্দা যে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে এরা রীতিমত আসা, যাওয়া করলেও আমরা এদের দেখতে বা অনুভব করতে পারি না। এদের কারণেই আমরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হই, কখনো বা মৃত্যুও ঘটে। এই মহাসুক্ষ্ম ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া জগৎও যেন ঐ সব বস্ত্তবাদে বিশ্বাসী বিজ্ঞানীদের প্রশ্ন করছে-হে জ্ঞানী সমাজ কেন মিথ্যা ভান করছ? আমাদের না দেখেও যদি শুধুমাত্র আমাদের উপস্থিতির চিহ্ন দিয়ে বিশ্বাস করা যায় তাহলে স্রষ্টাকে না দেখে তার অনন্য, মহাবিস্ময়কর, কল্পনাতীত অগণিত জীবন্ত দর্শণ দেখার পরও কেন তাকে অস্বীকার করা হবে? এর কি কোনো যুক্তি আছে? এটাতো স্পষ্টত আত্মপ্রবঞ্চনার শামিল।
উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো অনেক বেশি সুক্ষ্ম বলে আমরা তা দেখতে পাই না। কিন্তু মজার ব্যাপার হল এই মহাবিশ্বের বেশির ভাগ বৃহত জিনিসই আমরা দেখতে পাই না। মাথার উপর কি বিশাল বিস্তৃত আকাশ। তাতে অবস্থান করছে লক্ষ কোটি মহাজাগতিক বস্ত্ত। যেমন, ধুমকেতু, কোয়াসার, ব্লাকহোল, সুপার নোভা, নিউট্রন স্টার, গ্যালাক্সী ইত্যাদি। এই বস্ত্তগুলো কতটা বিশাল তা শুধু গ্যালাক্সীর কথা বিবেচনা করলেই বুঝা যাবে। এক একটি গ্যালাক্সীর আয়তন এক থেকে দেড় লক্ষ আলোকবর্ষ। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে মহাবিশ্বের যতটুকু অবস্থান অবলোকন করতে পেরেছি বিজ্ঞানীদের অনুমান তা মোট মহাবিশ্বের বড়জোড় দশ ভাগ হবে। এই দশ ভাগের মধ্যেই চারশ কোটি গ্যালাক্সীসহ বিলিয়ন বিলিয়ন মহাজাগতিক বস্ত্তর সন্ধান পাওয়া গেছে। তাহলে সহজেই অনুমান করা যায় বাকি ৯০ ভাগ মহাবিশ্বে গ্যালাক্সীর মত কিংবা তার চেয়ে বহুগুণ বড় কত বিলিয়ন বিলিয়ন মহাজাগতিক বস্ত্ত অবস্থান করছে। আজ পর্যন্ত আমরা যার সন্ধান লাভ করতে পারিনি।
সত্য কথা হল বর্তমান বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগেও মহাবিশ্বের বাকি ৯০ ভাগ এখনো মানুষের প্রযুক্তির বাইরে রয়ে গেছে। তবে বিজ্ঞান এ ব্যাপারে বেশ আশাবাদীও নয়। কারণ পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে যে, আমাদের গ্যালাক্সী হতে ১৩০০০ মিলিয়ন আলোক বর্ষ দূরের বস্ত্তর গতিবেগ প্রায় ১৮৬০০০ মাইল / সেকেন্ড। ফলে ঐ দূরত্ব থেকে বস্ত্তর আলো পৃথিবীতে পৌঁছানোর সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ফলে কোনো ভাবেই তাদের দেখা যাবে না। তাই বলা যায় বাকি ৯০ ভাগ চিরকাল অদৃশ্যই থেকে যাবে। মহাবিশ্বের মাত্র ১০ ভাগ কে অবলোকন করে এবং এ ব্যাপারে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান লাভ করেই যদি ১০০ ভাগ মহাবিশ্বের সৃষ্টিকারী সেই অদৃশ্য মহাপ্রকৌশলীকে না দেখার অজুহাতে অস্বীকার করা হয় তাহলে গোটা বিষয়টি কি জ্ঞানী সমাজের নিকট হাসির খোরাক জোগায় না? সমগ্র মহাবিশ্বের সাথে তুলনা করলে আমাদের পৃথিবী ক্ষুদ্র বালি কণার মানও পায় না। ব্যক্তি মানুষের তো প্রশ্নই আসে না।
বর্তমান সময় পর্যন্ত মানুষ যেখানে তার সর্বোচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করে সৌর পরিবারের সবার কাছে স্বশরীরে পৌঁছাতে পারেনি সেখানে গ্যালাক্সী, ক্লাস্টার, ব্লাকহোল ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক জ্ঞান লাভের পূর্বেই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তাকে দর্শন লাভ করার এবং তার কাজকে সরাসরি প্রত্যক্ষ করার অযৌক্তিক আবদার পেশ করা বোকামীই বলা চলে। আলোর ব্যাপারে মানুষের দৃষ্টি ক্ষমতা হচ্ছে 4×10-5 হতে 8×10-5 পর্যন্ত। সুতরাং মহাবিশ্বের বিশাল আলোক (Readition) ক্ষেত্রের মাঝে মাত্র সামান্য দৃশ্যযোগ্য আলো 4×10-5 হতে 8×10-5cm এর নগণ্য সীমাকে কাজে লাগিয়ে মানুষ কিভাবে স্রষ্টাকে দর্শন করতে চায়? মি: স্টিফেন হকিংস কি একটি বারও উক্ত বিষয়গুলো নিয়ে ভেবে দেখেছেন? ভেবে দেখলে হয়তো মুর্খের মত স্রষ্টাকে দেখার বায়না ধরতেন না, আর বোকার মত বলতেন না-Show me God. ভাবতেও অবাক লাগে বস্ত্তবাদীরা এই বিষয়গুলোকে অতি সহজেই মেনে নিচ্ছেন, এতে তাদের কোনো কষ্ট হচ্ছে না। তবে স্রষ্টাকে মেনে নিতে তাদের এত কষ্ট হচ্ছে কেন? কিসের মোহ তাদেরকে (বস্ত্তবাদীদের) মহাসত্যের পথ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে? তাহলে কি তারা পার্থিব স্বার্থের কাছে নিজেদের বিবেককে বিসর্জন দিয়ে জ্ঞান পাপীদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন? নাকি তাদের অন্তরে মোহর লেগে গেছে?
এখনো যারা সমস্ত যুক্তি, তর্ক, প্রমাণের উদ্ধে উঠে শুধুমাত্র নিজেদের ব্যক্তিগত ইমেজকে ব্যবহার করে পৃথিবী ব্যাপী বস্ত্তবাদের বিষবাক্য ছড়িয়ে দেয়ার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছেন অচিরেই তাদের এ পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে। বর্তমান বিজ্ঞানের বলিষ্ঠ অগ্রযাত্রাই তাদের এ পথ রুদ্ধ করে দেবে। মিঃ স্টিফেন হকিংস সহ আমাদের দেশের যে সকল স্বনামধন্য অধ্যাপকগণ এখনো বস্ত্তবাদে বিশ্বাস করেন এবং এই ভিত্তিহীন দর্শনটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার ঘৃণ্য চেষ্টায় নিয়োজিত আছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, সেদিন হয়তো বেশি দূরে নয় যখন অগ্রসরমান বিজ্ঞানের বদৌলতে ছোট শিশুরাও আপনাদেরকে মিথ্যুক ও প্রতারক হিসেবে চিহ্নিত করবে। তারাও বুঝতে শিখবে যে, আপনারা প্রাথমিক পর্যায়ের ভাসা ভাসা কিছু অস্পষ্ট তথ্যকে সম্বল করে নিজেদের ব্যক্তিগত, অপরিপক্ক, কাল্পনিক ও অপরিনামদর্শী মতামতকে বিজ্ঞানের মোড়কে সাজিয়ে মানব সমাজে ছড়িয়ে দেয়ার জঘন্য চেষ্টায় নিয়জিত রয়েছেন। সুতরাং মিথ্যার পথ পরিহার করে সত্যকে আকড়ে ধরুন। কেবলমাত্র সত্যই মানুষকে মুক্তি দিতে পারে। তাই সত্যকে উপলব্ধি করুন, কেননা সত্য অনেক সুন্দর হয়। আমরা এটাও আশা করি যে, মাইকেল ফ্যারাডে (সারাটি জীবন বস্ত্তবাদে বিশ্বাসী ছিলেন) সহ অন্যান্য বস্ত্তবাদীদের ন্যায় জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে হলেও আপনারা স্রষ্টার অস্তিত্ব স্বীকার করে নেবেন! যেভাবে আপনাদের পূর্বসুরিদের অনেকেই স্বীকার করে নিয়েছিলেন।
মাইকেল ফ্যারাডে যখন মৃত্যু শয্যায় তখন তার এক সহকর্মী তাকে প্রশ্ন করেছিলেন, ফ্যারাডে স্রষ্টা সম্পর্কে এখন তোমার ধারণা কী? মৃত্যুপথ যাত্রী ফ্যারাডে প্রশ্নটি পুনরাবৃত্তি করে বললেন, ধারণা? স্রষ্টাকে অশেষ ধন্যবাদ আমাকে আর কোনো ধ্যান ধারণার উপর নির্ভর করতে হবে না। আমি কাকে বিশ্বাস করতাম জানতে পেরেছি। পরিশেষে ১৬শ’ শতাব্দির বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও দার্শনিক ফ্রান্সিস বেকন বলেছিলেন-সামান্য দর্শন জ্ঞান মানুষকে নাস্তিকতার দিকে নিয়ে যায়, আর গভীর দর্শন জ্ঞান মানুষকে ধর্মের পথে টেনে আনে।
No comments:
Post a Comment