কার্বন ডাই অক্সাইড একটি প্রাকৃতিক গ্যাস যা সূর্যের আলো পৃথিবীতে পৌছাতে দেয় তবে এর কিছু তাপ মহাশূন্যে বিকিরিত হওয়া রোধ করে, আর তা পৃথিবীকে আরও উত্তপ্ত করে। বিজ্ঞানীরা একে “গ্রীনহাউজ এফেক্ট” বলেন। যখন এটি প্রাকৃতিকভাবে ঘটে তখন এটি পৃথিবীকে প্রাণের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য যথেষ্ট উত্তপ্ত করে। এমনকি যদি এটি না ঘটত তবে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা -৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস হতো।[1]
যদিও কার্বন ডাই অক্সাইড এবং গ্রীনহাউজ এফেক্ট পৃথিবীর অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয়, কিন্তু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র এবং মোটরযান এর মত মানব সৃষ্টি- যা জ্বালানী পোড়ায়, বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত CO2 নিঃসরণ করে। আর একারণে পৃথিবী অতিরিক্ত উত্তপ্ত হয় যাতে পৃথিবীর তাপমাত্রা আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পায়, যে ঘটনাকে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বলে। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন carbon capture and storage (সিসিএস) এ উষ্ণায়নকে একটি সহনীয় পর্যায়ে আনতে পারে।
Carbon capture পদ্ধতিতে প্রথম CO2 তার নিঃসরণের স্থান থেকে সংগ্রহ করা হয়, অতঃপর CO2 কে তার নির্ধারিত সংরক্ষণের স্থানে নিয়ে তাকে সংরক্ষণ করা হয়। বর্তমান অধিকাংশ গবেষণা জীবাশ্ম জ্বালানী দ্বারা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে কার্বন নিঃসরণ রোধ করার উপর গুরুত্ব দেয় কারণ এটি মানুষের তৈরি অধিকাংশ CO2 নিঃসরণের উৎস। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের বেশিরভাগ কয়লা পুড়িয়ে তাপ উৎপাদন করা হয় যা থেকে CO2 নিঃসরণ হয়। অনেক গবেষক বিশ্বাস করেন ভবিষ্যতে সব নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করা হবে।
সিসিএস সাধারণত ৩ ধাপে সম্পন্ন করা হয়- CO2 অন্যান্য গ্যাস থেকে আলাদা করে সংগ্রহ করা, তাকে তার সংরক্ষণ এর স্থান পর্যন্ত পরিবহন করা এবং এই CO2 বায়ুমণ্ডল থেকে অনেক দূরে সংরক্ষণ করা।
কার্বন মূলত তিন উপায়ে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নেয়া হয়- post-combustion, pre-combustion এবংoxyfuel combustion. একটি জীবাশ্ম জ্বালানী দ্বারা চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র জীবাশ্ম জ্বালানী (যেমন কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস) পোড়ায়, যা হতে উৎপন্ন তাপ দিয়ে পানি বাষ্পীভূত করা হয়। জলীয় বাষ্প বৈদ্যুতিক জেনারেটর এর সাথে সংযুক্ত একটি টার্বাইন ঘুরায় যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
Post-combustion carbon capture পদ্ধতিতে জ্বালানী পোড়ানোর পর CO2 সংগ্রহ করা হয়। বর্তমান যুগে এই পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে CO2 আলাদা করা হয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রের চুল্লির উপর একটি পরিশোধক (Filter) স্থাপন করা হয় যাতে একটি দ্রাবক থাকে যা নিঃসরিত গ্যাস থেকে CO2 শুষে নেয়। পরে দ্রবণটি গরম করে CO2 আলাদা করা হয়।[2]
Precombustion carbon capture এ জ্বালানী পোড়ানোর আগেই CO2 সংগ্রহ করা হয়।
Oxy-fuel combustion carbon capture সাধারণত এমন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা হয় যা জীবাশ্ম জ্বালানী অক্সিজেন এর ভেতরে পোড়ায় যার মাধ্যমে জলীয় বাষ্প ও CO2 এর একটি সংমিশ্রণ তৈরি হয়। এই জলীয় বাষ্প ও CO2 শীতলীকরণ ও ঘনীভবন এর মাধ্যমে পৃথকীকরণ করা হয়।[3]
CO2 সংগ্রহের পর একে সংরক্ষণের স্থানে পরিবহন করা। এটি সাধারণত পাইপলাইন এর মাধ্যমে করা হয়। গত কয়েক যুগ ধরে বিশাল পরিমান পানি, গ্যাস ও তেল পরিবহন এর কাজে পাইপলাইন ব্যবহার করা হয়। একটি CO2 পাইপলাইন সাধারণত সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে শুরু হয়ে সরাসরি সংরক্ষন কেন্দ্রে শেষ হয়। পাইপলাইন সাধারণত CO2 বাষ্প আকারে পরিবহন করে। ট্যাংকার ট্রাক অথবা জাহাজ এর মাধ্যমে CO2 তরল অবস্থায় পরিবহন করা সম্ভব। CO2 তরল অবস্থায় রাখতে সর্বাবস্থায় উচ্চচাপ ও নিম্ন তাপমাত্রা প্রয়োজন, এবং তাই কার্গো ট্রাকগুলো সর্বাবস্থায় তাপ ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
এই সংগৃহীত কার্বন-ডাই-অক্সাইড কে নিরাপদ কোথাও এনে ফেলতে হবে। কিন্তু কোথায় ফেলা যায়? আমরা কার্বন ডাই অক্সাইড সংরক্ষণের জন্য এখন পর্যন্ত ২টি জায়গা পেয়েছি- মাটির নিচে এবং পানির নিচে। এমনকি আমরা এভাবে ১০ ট্রিলিওন টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংরক্ষণ করতে পারব বলে অনুমান করা হয়। সত্যি সত্যিই তা সম্ভব হলে ১০০ বছরে মানব-সৃষ্ট সব কার্বন-ডাই-অক্সাইড আমরা এভাবে সংরক্ষণ করতে পারব।[4]
তাহলে প্রথমে মাটির নিচে সংরক্ষণ নিয়ে কথা বলা যাক। পৃথিবীর গভীরে যে উচ্চচাপ বিরাজ করে তাতে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস রুপে আচরণ না করে তরলের ন্যায় আচরণ করে। সচ্ছিদ্র পাথরের ছিদ্রে ছিদ্রে ঢুকে যেতে পারে বিধায় তুলনামূলক ভাবে অল্প জায়গায় প্রচুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংরক্ষণ সম্ভব হয়। এভাবে মাটির নিচে সংরক্ষণকে geological sequestration বলা হয়। এই পদ্ধতিতে মাটির নিচের পাথর স্তরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করানো হয়। এই প্রাকৃতিক সংরক্ষনাগার সমূহের উপরে পাথরের আরেকটি স্তর থাকে যা ভেদ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হতে পারে না, ফলে তা একটি ঢাকনার মত কাজ করে কার্বন-ডাই-অক্সাইড আটকে রাখে। গবেষকরা দেখেছেন যে ব্যাসাল্টে (আগ্নেয় শিলা) কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রবেশ করালে তা পরবর্তীতে চুনাপাথরে রুপান্তরিত হয়।[5]
মাটিতে সংরক্ষণ করা ছাড়াও সমুদ্রে কার্বন-ডাই-অক্সাইড সংরক্ষণ করার উপায় নিয়েও ভাবা হচ্ছে। অনেক বিশেষজ্ঞ দাবি করেন যে আমরা কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিরাপদভাবে সমুদ্রে ফেলতে পারি- যদিও অন্তত ১১,৪৮২ ফুট গভীরতায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করা যায়। তাদের মতে এই গভীরতায় কার্বন-ডাই-অক্সাইড একধরণের থকথকে পদার্থে রুপান্তরিত হয় যা সমুদ্রতলে জমা হবে।[5]
কার্বন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ এর প্রক্রিয়াকে অসাধারণ মনে হলেও, প্রক্রিয়াটি নিয়ে বিতর্কেরও শেষ নেই। যেমন এটি সবসময় মনে রাখা দরকার এই প্রক্রিয়াটি আছে বলে যে বায়ুমন্ডলে কার্বন নিঃসরণ চালিয়ে যাওয়া যাবে তা নয়। কার্বন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়ার সাথে কার্বন নিঃসরন কমানোর জন্য অন্যান্য প্রণালীও প্রয়োগ করা উচিত। তা সত্ত্বেও এই প্রক্রিয়া আমাদের বিরাজমান বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে নিরাপদ করে তোলার একটি উপায় দেখাতে পারে। তারপরও কার্বন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রক্রিয়া গ্রীনহাউজ এফেক্ট এর প্রভাব কমাতে এবং জলবায়ুর পরিবর্তন কে মন্থর করতে সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। কিন্তু কার্বন-ডাই-অক্সাইড যে একটি বৈশ্বিক সমস্যা তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
References:
[1] G.R.I.D Arendal, http://www.grida.no/climate/vital/01.htm, 10-11-13.
[2] GreenFacts, http://www.greenfacts.org/en/co2-capture-storage/l-2/3-capture-co2.htm#1, 10-11-13.
[3] Science Daily, http://www.sciencedaily.com/releases/2007/06/070611153957.htm, 10-11-13.
[4] NBC, http://www.msnbc.msn.com/id/22506764/, 10-11-13.
[5] Bellona, http://www.bellona.org/factsheets/1191928198.67, 10-11-13.
Md. Hashimuddin Ratul
Dept: IPE
Semester: 2/2
Roll no.: 2011334034
Email ID: hashimuddin_ratul@live.com
Phone no.: 01911444722
ভাল লিখেছ ছোট ভাই
ReplyDeleteSob Lekha gula IPE er ken. Are ke besi valo student naki ??
ReplyDeleteHell yeah! B|
ReplyDelete[...] [...]
ReplyDelete