Tuesday, December 10, 2013

তাপীয় বিক্ষোভ ও বোলৎস্মান ব্রেইন

বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যদি মহাজাগতিক ধ্রুবক শাসিত হয়, যদি এর স্থানিক জ্যামিতি সমতল হয়, যদি এর বস্তু-ঘনত্ব ২৫% এর কম হয়, তাহলে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে এর পরিণতি উন্মুক্ত হবে। উন্মুক্ত (এবং হয়ত ত্বরিত) প্রসারমান বিশ্বে ধীমান সত্তার ভবিতব্য আমরা আলোচনা করেছি। তবে এখানে কিছু কথা না বলা হলে বিষয়টি অপূর্ণ থেকে যায়। উন্মুক্ত প্রসারমান বিশ্বে পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল পর আর কোনো কাঠামোই থাকে না। গ্যালাক্সি বিলুপ্ত হয়ে যায়, সব তারা নিভে যায়, কৃষ্ণবিবরগুলি হকিং বিকিরণ দিয়ে উবে যায়। বিশ্ব গিবন্স-হকিং তাপমাত্রায় (১০^-২৯ কেলভিন) পর্যবসিত হয়। দেখানো যায়, মহাবিশ্বের তাপমাত্রা এই তাপমাত্রার নিচে কখনোই নামবে না। এ অবস্থায় মহাবিশ্বে থাকে শুধু কিছু ব্যাপ্ত গ্যাস আর মৌলিক কণার সমাহার। কোনো কাঠামো নেই, কোনো শক্তির উৎস নেই – শুধুই পরিব্যাপ্ত ও অত্যন্ত হাল্কা গ্যাস। এই অবস্থা গ্যাসের প্রচলিত গতিতত্ত্ব অনুযায়ী তাপীয় সুস্থিতির (থার্মাল ইকুইলিব্রিয়াম) সমতুল্য। তাপীয় সুস্থিতি বা ইকুইলিব্রিয়ামে থাকলে কোনো ব্যবস্থার আর কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়, কারণ ঐ অবস্থায় সিস্টেমের এনট্রপি বা বিশৃঙ্খলার মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। ‘তাপীয় সুস্থিতির’ অন্য অর্থ ‘মৃতবৎ অবস্থা’। কোনো সিস্টেমের সকল উপাংশ যদি পরস্পরের সাথে একই তাপমাত্রায় থাকে, অর্থাৎ থার্মাল ইকুইলিব্রিয়ামে থাকে, তাহলে তাপের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। কাজেই শক্তির রূপান্তরও বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে ভৌত বিবর্তন থেমে যায়। একটি জীবন্ত কোষ সবসময়েই তার বাইরের পরিবেশের সাথে স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখে। এই নন-ইকুইলিব্রিয়ামই প্রাণের লক্ষ্মণ। কোষ যখন মারা যায় তখন বাইরের সাথে তার ইকুইলিব্রিয়াম ফিরে আসে। কিন্তু থার্মাল ইকুইলিব্রিয়াম বা তাপীয় সুস্থিতি কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়। সাধারণ গ্যাসের কণারা নিউটনীয় বলবিদ্যা মেনে চলে যা আদতে প্রত্যাবর্তী বা রিভার্সিব্ল – অর্থাৎ সময়ের অতীত-বর্তমান বলে কিছু নেই, সময়কে উলটে দিলেও নিউটনীয় গতিবিদ্যা একই থাকে। অন্তর্নিহিত গতিবিজ্ঞান রিভার্সিবল হলেও তাপীয় সুস্থিতিতে সিস্টেম নন-রিভার্সিবিলিটি প্রদর্শন করে। অর্থাৎ একটি সুস্থিত ব্যবস্থা অস্থিতিতে ফিরে যায় না। কিন্তু গ্যাসের গতিতত্ত্ব প্রতিষ্ঠার সময়ে বোলৎস্মান দেখিয়েছিলেন যে, যেহেতু নিউটনীয় গতিবিজ্ঞান আদতে রিভার্সিব্ল, তাই তাপীয় সুস্থিতিও কোনো চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত হতে পারে না, পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল অপেক্ষা করলে দেখা যাবে, সুস্থিতিতে চিড় ধরেছে। দেখা যাবে, প্রায়শই অস্থিতির দেখা মিলছে, তবে তা খুবই কম সময়ের জন্য। সুস্থিতিতে থাকা সিটেমের মোট এনট্রপি সর্বোচ্চ মানে পৌঁছলেও হঠাৎ কোথাও অত্যল্প সময়ের জন্য এনট্রপির মান কমে যেতে পারে, তবে শীঘ্রই তা আবার সুস্থিতিতে ফিরে যাবে। এই ক্ষণস্থায়ী অস্থিতি সৃষ্টির ব্যাপারটাকে ফ্লাকচুয়েশন বা বিক্ষোভ বলে। ফলে মহাবিশ্ব যদি পরিব্যপ্ত গ্যাসে পূর্ণ হয়ে যায়, অর্থাৎ তাপীয় সুস্থিতিতে চলে যায়, তখনো তার কোনো কোনো জায়গায় ক্ষণস্থায়ী ফ্লাকচুয়েশন দেখা দিতে পারে। ফলে কোথাও কোথাও হঠাৎ কাঠামোর সৃষ্টি হতে পারে, অর্থাৎ গ্যালাক্সি-নক্ষত্রের বিন্যাস সৃষ্টি হতে পারে। কিন্তু তা ক্ষণস্থায়ী হবে। কারণ আদতে এটা একটা তাপীয় বিক্ষোভ বা ফ্লাকচুয়েশন মাত্র। থার্মাল ফ্লাকচুয়েশন ব্যাপারটা আরেকটু স্পষ্ট বোঝা দরকার। ধরা যাক, আপনি একটি কক্ষে এরোসোল ছিটালেন মশা মারার জন্য। এরোসোলের অণুগুলো সারা ঘরময় ছড়িয়ে যাবে। কিন্তু এমন আমরা সচরাচর দেখি না যে অণুগুলো আবার এক কোণে জড়ো হয়েছে। এর কারণ একটাই – সিস্টেমের এনট্রপি সবসময়ে বাড়ে। কিন্তু যদি কক্ষটিকে একদম সিল করে দেয়া যায় যাতে করে বাইরের কোনো প্রভাব না পড়ে, তাহলে অনেক অনেক সময় পর হঠাৎ দেখা যাবে, এক কোণে কিছু এরোসোল অণু বেশি জমা হয়েছে। অবশ্য সেটা ঘটবে খুব কম সময়ের জন্য। কিন্তু এই সম্ভাবনাটুকু বাস্তব। এটাই ফ্লাকচুয়েশন। মনে রাখতে হবে, এইসব ফ্লাকচুয়েশন ক্ষণস্থায়ী। যদিও সিস্টেমের এনট্রপি কমে যাবে, কিন্তু সিস্টেমটি তার অস্থিতি থেকে দ্রুতই সুস্থিতিতে প্রত্যাবর্তন করবে। কমপিউটার সিমুলেশন করে সাধারণ গ্যাসের ক্ষেত্রে এইসব ফ্লাকচুয়েশনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়েছে। দেখা গেছে, একটা বাক্সে গ্যাস কণা রাখা থাকলে অনেক অনেক কাল পরে হঠাৎ বাক্সের এক দিকে গ্যাস কণার সংখ্যা স্বাভাবিক গড়ের থেকে বেশ খানিকটা বেশী। কিন্তু পরক্ষণেই সেটা আবার মিলিয়ে যাবে। কাজেই ইকুইলিব্রিয়াম চিরস্থায়ী হলেও নন-ইকুইলিব্রিয়াম দশা ক্ষণিকের জন্য পাওয়া সম্ভব।

১৮৯৭ সালে বোলৎস্মান লিখেছেন,

There must then be in the universe, which is in thermal equilibrium as a whole and
therefore dead, here and there relatively small regions of the size of our galaxy
(which we call worlds), which during the relatively short time of eons deviate
significantly from thermal equilibrium. Among these worlds the state probability
[entropy] increases as often as it decreases.
এমনকি এই নিয়ে আঁরি পঁয়কারের একটি উপপাদ্য আছে যার নাম ‘রিকারেন্স থিওরেম’ – সসীম স্বাধীনতার মাত্রা বিশিষ্ট, সসীম মোট শক্তি এবং সসীম গতিশক্তি বিশিষ্ট, সসীম স্থানিক মাত্রায় বিবর্তিত হতে পারে এমন যেকোনো নিউটনীয় যান্ত্রিক সিস্টেম, যেভাবেই শুরু হোক না কেন, তার শুরুর দশায় বা তার খুব কাছাকাছি দশায় প্রত্যাবর্তন করবেই, এবং বেশ ঘনঘনই করবে। এই প্যারাডক্সের নাম পঁয়কারে রিকারেন্স প্যারাডক্স বা পঁয়কারের পৌনঃপুনিকতার কূটাভাষ। এই পৌনঃপুনিকতা অবশ্যম্ভাবী বলেই থার্মাল ফ্লাকচুয়েশন সংঘটিত হয়। একটি ব্যবস্থার কত সময় পর তার পূর্বের দশায় ফিরে যাবে তাকে বলা হয় রিকারেন্ট পিরিয়ড বা পৌনঃপুনিকতার পর্যায়কাল যা ঐ সিস্টেমের সর্বোচ্চ এনট্রপির সূচকীয় মানের সমানুপাতিক (এনট্রপি s হলে পৌনঃপুনিকতার পর্যায়কাল exp(s)এর সমানুপাতিক হবে). ফলে উন্মুক্ত মহাবিশ্বের সর্বোচ্চ এনট্রপি যদি ১০^১২০ হয় তবে exp(১০^১২০) সময় পর মহাবিশ্ব ঠিক আরেকটি বিগ ব্যাং বা তার অনুরূপ দশার সৃষ্টি হতে পারে। এই সময়কাল অসম্ভব দীর্ঘ, খেয়াল করতে হবে আমাদের বিশ্ব মাত্র ১০^৯ বছরের পুরনো। যদিও এই সময়কাল কল্পনাতীতভাবে দীর্ঘ, কিন্তু তথাপি এই ফ্লাকচুয়েশন সম্ভব। একারণে অনেকেই চক্রাকার বিশ্বের ধারণায় আকৃষ্ট হয়েছিলেন। তবে এইসব ক্ষণস্থায়ী ফ্লাকচুয়েশনের সম্ভাবনার ফলে উন্মুক্ত বিশ্ব আর কৌতূহলশূন্য থাকে না। এক পর্যায়ে সেখানে হয়ত শুধু কিছু হাল্কা গ্যাসের সমাহার দেখা দিলেও বহু দিন অপেক্ষা করলে আবার সুজলা-সুফলা-শস্য-শ্যামল গ্রহ-প্রান্তরের দেখা মিলতেই পারে। কিন্তু কিছু সময় পরে তারা আবার সেই অনন্ত সুস্থিতিতে মিলিয়ে যাবে। এক বাক্স গ্যাসে যেমন তাপীয় বিক্ষোভ দেখা দিতে পারে, উন্মুক্ত প্রসারমান বিশ্বেও তা দেখা দিতে পারে। মহাবিশ্বের সব কাঠামো উবে যাওয়ার পর যখন কিছু পরিব্যাপ্ত গ্যাস বিরাজ করবে, তখন নিযুত-কোটি বছর পর হঠাৎ দেখা যাবে, একটা ছোট্ট অঞ্চলে গ্যাসের ঘনত্ব স্বাভাবিকের থেকে সামান্য বেশী। যেই ঘনত্ব একটু বাড়বে, ওমনি মহাকর্ষ প্রভাব বিস্তার শুরু করবে। মহাকর্ষ প্রাধান্য পেলেই গ্যাসের মহাকর্ষীয় সংকোচন শুরু হবে। এভাবে কাঠামোর সৃজন সম্ভব, কিন্তু ডি-সিটার বিশ্বে সেটা স্থানীয়ভাবে স্বল্পমাত্রায় ঘটবে। এটাই মহাজাগতিক ফ্লাকচুয়েশন। এটা আবার সুস্থিতিতে মিলিয়ে যাবে। এভাবে যদি জীন্সের ভরপিণ্ডের ঘনত্ব অতিক্রম করা যায় তাহলেই সাময়িকভাবে গ্যালাক্সি-নক্ষত্র সৃজন সম্ভব হবে। কিন্তু সেটা সর্বত্র ঘটবে না, ঘটবে স্থানীয়ভাবে। অতীব ক্ষুদ্র হলেও এই সম্ভাবনার কারণেই উন্মুক্ত ডি-সিটার বিশ্বে ধীমান সত্তার আবির্ভাব ও বিলয় নিয়ে নতুন করে ভাবনার প্রয়াস পেয়েছে।

থার্মাল ফ্লাকচুয়েশনের মাধ্যমে পরিব্যাপ্ত গ্যাস থেকে যদি পুনরায় কাঠামোর সৃজন করা যায়, ক্ষণস্থায়ী হলেও, ধীমান সত্তারও আবির্ভাব হতে পারে। উন্মুক্ত বিশ্বে এইসব ধীমান সত্তা হঠাৎ হঠাৎ আবির্ভূত হয়ে আবারো মিলিয়ে যাবে। কাজেই উন্মুক্ত প্রসারমান বিশ্ব কিন্তু আর ম্যাড়ম্যাড়ে সাদামাটা থাকছে না। সেখানে হয়ত হঠাৎ কোথাও দেখা মিলবে নিঃসঙ্গ বুদ্ধিমত্তার। এইসব দুঃখী ধীমান সত্তার নিঃসঙ্গতা নিয়ে কাব্যচর্চার সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না, কারণ অচিরেই তারা আবার থার্মাল ইকুইলিব্রিয়ামে মিলিয়ে যাবে। তাপীয় বিক্ষোভ থেকে জন্ম নেওয়া এসব ধীমান সত্তার নাম দেওয়া হয়েছে “বোলৎস্মান মস্তিষ্ক”,

A century ago Boltzmann considered a “cosmology” where the observed universe should be regarded as a rare fluctuation out of some equilibrium state. The prediction of this point of view, quite generically, is that we live in a universe which maximizes the total entropy of the system consistent with existing observations. Other universes simply occur as much more rare fluctuations. This means as much as possible of the system should be found in equilibrium as often as possible.
From this point of view, it is very surprising that we find the universe around us in such a low entropy state. In fact, the logical conclusion of this line of reasoning is utterly solipsistic. The most likely fluctuation consistent with everything you know is simply your brain (complete with “memories” of the Hubble deep fields, microwave background data, etc.) fluctuating briefly out of chaos and then immediately equilibrating back into chaos again. This is sometimes called the “Boltzmann’s Brain” paradox. (-অ্যান্ড্রিয়াস আলব্রেখট ও লোরেঞ্জো সরবো, ফিজিকাল রিভিউ ডি-৭০, ৬৩৫২৮, ২০০৪)


এ কথার অর্থ হলো যদি থার্মাল ফ্লাকচুয়েশন থেকে আস্ত গ্যালাক্সি-নক্ষত্র সৃজন সম্ভব, তাহলে তো চিন্তাশীল মস্তিষ্কও তৈরি সম্ভব। উন্মুক্ত প্রসারমান বিশ্বের কথা চিন্তা করা যাক – কোথাও কিছু নেই, শুধু হাল্কা পরিব্যাপ্ত গ্যাস চতুর্দিকে বিরাজমান। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি বছর পার হয়ে যাচ্ছে, কোথাও কোনো হেলদোল নেই। পঁয়কারে রিকারেন্ট পিরিয়ডের কাছাকাছি সময়ে হঠাৎ দেখা গেল, একটা ছোট্ট জায়গায় সুস্থিতির ছন্দপতন দেখা যাচ্ছে। সেখানকার গ্যাস ঘনত্ব আশপাশের গড় ঘনত্বের বেশী। আরো কিছুদিন অপেক্ষা করলে দেখা যাবে, এখানেই একটি ধীমান মস্তিষ্কের আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু সে নিঃসঙ্গ আর দুঃখী হবে। অনন্ত বিস্তৃত শীতলতার মাঝে সে কেবল এক অনন্য সত্তা। যেহেতু বোলৎস্মান-কথিত ফ্লাকচুয়েশন থেকে এর জন্ম, তাই একে “বোলৎস্মান ব্রেইন” বলা হয়।

আমরা কি তবে “বোলৎস্মান মস্তিষ্ক”? মনে হয় না। বিগ ব্যাং কোনো ফ্লাকচুয়েশন নয়। এটি একটি সুনির্দিষ্ট ভৌত প্রক্রিয়া যা ধীরে ধীরে তাপীয় সুস্থিতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কিন্ত এটি যদি ফ্লাকচুয়েশন হতো তাহলে, বিশ্বের সর্বত্র একইরকম দেখা যেত না। পটভূমি বিকিরণের সুষমতা থেকে আমরা জানি যে, বিশ্ব অতিবৃহৎ স্কেলে সর্বত্র সুষম। এটাই আধুনিক কসমোলজিকাল প্রিন্সিপ্ল – যদিও এটি স্রেফ একটি অনুমান, কিন্তু তথাপি এর জোরালো প্রমাণ আছে এবং এর ওপর বিশ্বাস হারানোর মতো কোনো বড় প্রপঞ্চ ঘটেনি। শন ক্যারল তাঁর সুলিখিত গ্রন্থ “ফ্রম এটার্নিটি টু হিয়ার”-এ লিখেছেন,

When we take quantum effects in de Sitter space into account, the universe acts like a box of gas at a fixed temperature, and that situation will last forever. Even if we have a past that features a dramatic Big Bang, the future is an eternity of ultra-cold temperature that never drops to zero. Hence, we should expect an endless future of thermal fluctuations – including Boltzmann brains and any other sort of thermodynamically unlikely configuration we might have worried about in an eternal box of gas. … If we wait long enough, our universe will empty out until it looks like de Sitter space with a tiny temperature, and stay that way forever. There will be random fluctuations in the thermal radiation that lead to all sorts of unlikely events – including the spontaneous generation of galaxies, planets, and Boltzmann brains. The chance that any one such thing happens at any particular time is small, but we have an eternity to wait, so every allowed thing will happen.

১৯৯৮ সালে মহাবিশ্বের ত্বরণ আবিষ্কারের পর যখন জানা গেল যে এই মুহূর্তে মহাবিশ্বে ভ্যাকুয়াম এনার্জি বা শূন্যস্থানের শক্তির প্রাধান্য বিরাজ করছে, এবং স্থানের জ্যামিতি সমতল, ফলত মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতি পরিব্যাপ্ত গ্যাস সমৃদ্ধ উন্মুক্ত বিশ্বের দিকে নির্দেশ করে; তখনই এইসব বোলৎস্‌মান ব্রেইন ও তৎসংশ্লিষ্ট তাপীয় বিক্ষোভ-জনিত নানান অসম্ভব ঘটনার সম্ভাব্যতা নিয়ে চিন্তায় পড়া গেল। এমনও হতে পারে যে পূর্বোল্লিখিত পৌনঃপুনিকতার পর্যায়কালের আগেই ডার্ক এনার্জি ফুরিয়ে যাবে। অর্থাৎ বর্তমানে পর্যবেক্ষিত ডার্ক এনার্জি আইনস্টাইন-কথিত মহাজাগতিক ধ্রুবকের সাথে সম্পর্কিত নয়। ফলে এটা একটা ক্ষণস্থায়ী শক্তি-ক্ষেত্র যা পঁয়কারে রিকারেন্ট পিরিয়ডের আগেই ক্ষাত্রতেজ হারিয়ে ফেলবে। সেক্ষেত্রে তাপীয় অস্থিতি-জনিত ফ্লাকচুয়েশন থেকে উদ্ভূত বিচিত্র পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

আমাদের মহাবিশ্বের আদিতে বিগ ব্যাং সঙ্ঘটিত হবার কালে এনট্রপি ছিল ১০^৮৮, বর্তমানে এর মান ১০^১০১. আমাদের জানা ব্রহ্মাণ্ডের সর্বোচ্চ এনট্রপি হবে ১০^১২০. যদি স্ফীতির তত্ত্ব সত্যি হয়, তাহলে স্ফীতির পূর্বে মহাবিশ্বের এনট্রপি ছিল ১০^১২. কাজেই আমরা কেন নিজেদেরকে এমন এক বিশ্বে দেখি যার আদিতে ছিল অত্যল্প এনট্রপি, এবং যে বিশ্বটি একটি উচ্চ-এনট্রপির দিকে ধাবিত হচ্ছে, অর্থাৎ কেন আমরা বোলৎস্‌মান ব্রেইন নই (যাদের উৎপত্তি কোনো তাপীয় ফ্লাকচুয়েশন থেকে এবং বিলয় তাপীয় সুস্থিতিতে) – এই প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। এর জন্য চাই বিগ ব্যাং কেন অত্যল্প এনট্রপি নিয়ে সংঘটিত হলো তার একটি ভাল ব্যাখ্যা। এই মূহুর্তে সেরকম কোনো তত্ত্ব আমাদের হাতে নেই। কাজেই আপাতত আমাদেরকে বোলৎস্‌মান উত্তরসূরীর সম্ভাবনা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।

সূত্রঃ
১/ শন ক্যারল, ফ্রম এটার্নিটি টু হিয়ার, ২০১০। ২/ জন ব্যারো ও ফ্র্যাঙ্ক টিপলার, দ্য অ্যানথ্রোপিক কসমোলজিকাল প্রিন্সিপল, ১৯৮৬। ৩/ লিসা ডাইসন ও অন্যান্য, জার্নাল অব হাই এনার্জি ফিজিক্স ২১০, পৃষ্ঠা ১১, ২০০২। ৪/ আলব্রেখট ও সরবো, ফিজিকাল রিভিউ ডি-৭০, ৬৩৫২৮, ২০০৪।

No comments:

Post a Comment