Tuesday, December 10, 2013

অন্য জীবন, অন্য কোনখানে

মিনহাজ ইসলাম


সিইপি ৩/২




সময়ের প্রথম অংশ


ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে একটা অস্পষ্ট ছায়া হেঁটে যাচ্ছে। অন্ধকারেও তার অতিরিক্ত সতর্ক সঞ্চরণ বালকের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়নি। আরথারের ‘থ্রি ইনভেসটিগেটরস’ পড়া বালকের ঘটনার প্রতি কৌতূহল জাগাটাই স্বাভাবিক। ছায়ামূর্তি যেদিকে যাচ্ছে তাতে তার উদ্দেশ্য অস্পষ্ট। বাড়ির কাজের মেয়ে রহিমার ঘরে তেমন মূল্যবান কিইবা থাকতে পারে! দরজা খোলাই ছিল। ভিতরে হারিকেনের মৃদু আলো ঝিমাচ্চে যেন। হালকা আলোয় ছায়ামূর্তি স্পষ্ট হতে না হতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেলো। ছোটোচাচাকে চিনতে মাহির কষ্ট হলোনা। নতুন কিছু আবিস্কার না করতে পারার হতাশা নিয়ে মাহি নিজের ঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়লো।

বেশ কয়েকমাস কেটে গেলো। কাশেম মাস্টারের বাড়িতে মানুষের ঢল নেমেছে। তবে কোন উৎসব নয়, এরা পঞ্চায়েতের লোকজন। ভিড়ের মাঝখানে কাশেম মাস্টার আর রহিমা দাঁড়িয়ে আছে। মাহি উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে। বাবাকে সে কখনো এমন অপরাধীর মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেনি। বালকের ভয় হচ্ছে।পাশ থেকে কেউ বলে উঠলো

-এমন বউ ছেলে রেখে বাড়ির কাজের মেয়ের সাথে কিভাবে এমন কাজ করতে পারল। বউ ছেলের কাছে পিচাশটা মুখ দেখাবে কিভাবে!

-ভদ্রলোকের মাঝেই শয়তান থাকে।

মাহি তেমন কিছুই বুঝতে পারল না। শুধু মনে হল তার বাবাকে অপমান করা হচ্ছে । এ বয়সের ছেলেদের কাছে বাবা হচ্ছে একমাত্র নায়ক। সকলের সামনে স্বপ্নের নায়কের অপদস্থ হবার দৃশ্য তাকে সারাজীবন তাড়িয়ে বেড়াবে সন্দেহ নেই। ভিড়ের মধ্য দিয়ে বাবার মুখ দেখা যাচ্ছে। অপমানে আরক্ত মুখের মাঝেও কেন জানি তৃপ্তির ছাপ ছিল। একসময় সবাই চলে গেলো। উঠোনে কাশেম মাস্টার হাঁটুগেড়ে বসে আছে। তার চুল দাঁড়ি কামিয়ে দেয়া হয়েছে। যে দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে কাশেম মাস্টার ছাত্রদের ২২ নাম্বার উপপাদ্য পড়াতেন, তার সেই দাঁড়ি খামচে উঠিয়ে নিয়েছে পঞ্চায়েতের বিচার। মাহি গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরল। কাশেম মাস্টার শরীরের সব শক্তি দিয়ে ছেলেকে বুকে জড়ালেন। মাহির মনে হল বাবার এতো কাছে সে কখনোই আসতে পারেনি।

ছেলেকে কোলে নিয়ে কাশেম মাস্টার ঘরে গেলেন। তার মা অনেকদিন ধরেই অসুস্থ। এখন আর কাউকে তেমন চিনতে পারেন না। কাশেম মাস্টার মায়ের পাশে গিয়ে বসলো। জুলেখা বেগমের হাত ধরে বলল

-এখন কেমন আছেন, মা।

-তুই কাশেম না রশিদ?

-আমি তোমার বড় ছেলে,কাশেম।

-তুই দাঁড়ি ফেলছিস কেন? চল্লিশ দিনের পর দাঁড়ি ফেলা কবিরা গুনাহ্‌। রশিদকে ডাক, তোর সাথে কথা বলতে ইচ্ছা হচ্ছে না। তোকে বলেছি রশিদকে একটা কাজে লাগিয়ে দিতে।তুই তার বড় ভাই, তোর দায়িত্ব আছে।

রশিদ মাথা নিচু করে ঘরে ঢুকল। ঢুকেই কাশেম মাস্টারের পা ধরে কাঁদতে লাগলো।কাশেম মাস্টার ভাইয়ের মাথায় হাত রেখে বলল

-আমার দায়িত্ব আমি পালন করছি। মাকে একথা বল। আর আমার কিছু জমানো টাকা আছে, তুই শহরে চলে যাহ্‌।

এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই কাশেম মাস্টার গলায় ফাঁস দিলেন। মাহির মা শয্যাশায়ী হল। মারা যাবার আগে মাহিকে একটা চিরকুট লিখে গেলেন__

‘তোর বাবাকে ভুল বুঝিস না’

মাহি তার বাবাকে ভুল বুঝেনি। সত্যটা সে জানতো। পৃথিবীতে মাঝে মাঝে খুব গভীরভাবে সত্যের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। মাঝে মাঝে কিছু মানুষের বেঁচে থাকা মাহিদের জন্য হয়ে পড়ে অপরিহার্য। তবুও মানুষ বিদায় নেয় , সময়ে কিংবা অসময়ে; স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়। সত্য থেকে যায় বলিষ্ঠভাবে। কিন্তু প্রায়ই তার থেকে যাওয়া কোন অর্থ প্রকাশ করেনা।

 

সময়ের দ্বিতীয় অংশ


 

এদিকে বিদেশীদের আগমন তেমন চোখে পড়েনা। গ্রামের ছেলেবুড়ো সবাই ঘিরে আছে ধবধবে সাদা চামড়ার মানুষগুলোকে। মাঝে মাঝে মজিদ সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছে। এরা ডাচ এনজিও ‘আ শেলটার ফর হেল্পলেস চিলড্রেনে’র লোকজন। মজিদ এনজিওটির কাছে বিশেষ ঋণী। একসময় তার তিনবেলা খাবার জোগানো কঠিন ছিল। সাতকানিয়ার পীর সাহেবের মাজারে সে বেশ কিছুদিন কাজ করে। কিন্তু এখন সময় প্রতিকূল। মাজার কর্তৃপক্ষ সব গুটিয়ে নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ালো এনজিওটি। এখন সে মেয়ের বাড়িতে কেনাকাটা করে যায়। তার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। সুখীর মানদণ্ড বিচারে যে দেশকে আদর্শ ধরা হয়, সেখান থেকে কিছু মানুষ এই নির্জন গ্রামের এতিমখানায় বসে আছে শিশুদের সাহায্য করতে, বিদেশে নিয়ে পড়ালেখা শিখিয়ে মানুষ করতে, ভাবতেই মজিদের চোখে পানি এসে যায়।

মাহির বেশ আনন্দ হচ্ছে। মা-বাবাহীন কোন ছেলের মাথায় হাত বুলানোর মানুষের অভাব নেই কিন্তু বুকে নেয়ার মানুষ খুবই সীমিত। এনজিওর কর্মকর্তা এন্টোনিও মাহিকে কোলে নিয়ে বসে আছে। ভাবলেশহীন মুখে এন্টোনিও হাসি ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে যদিও তার সামান্যই মানবিক ভাব প্রকাশ করে। মাহিকে সে সঙ্গে করে ডেনমার্ক নিয়ে যাবে। মাহির মনে ক্ষীণ সন্দেহ সেখানে হয়তো সে তার বাবা-মাকে খুঁজে পাবে। এতিমখানার খাদেমকে মাহি বিশ্বাস করে। তিনি মাহিকে বলেছেন অন্তর থেকে চাইলে সবই পাওয়া সম্ভব।

ডেনমার্কের ছোটো শহর গ্রিনা যেখানে বিশালতার প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে এক কৃষকের ভাস্কর্য, যে তার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রক্ষা করেছিল ডুবে যাওয়া জাহাজের ক্যাপ্টেনকে তাকে সম্মান না দেখিয়ে ডেনমার্ক তার উদারতা বিসর্জনের ঝুঁকি নিতে চায়নি। তবে এ শহর বিখ্যাত হল মানবতার অন্য ধারা বিজ্ঞানের চিত্তাকর্ষক উন্নতির জন্য। পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় কোয়ান্টাম ল্যাবরেটরী এই গ্রিনা শহরে। ‘গ্রিনা কোয়ান্টাম ল্যাব’ থেকেই প্রথম কোয়ান্টাম কম্পিউটার আলোর মুখ দেখে যা মুহূর্তের মধ্যে বদলে দিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি। তবে এই ল্যাবের গবেষণার খুব কম অংশই বাইরে প্রকাশ করা হয়। তেমনি একটি প্রজেক্ট হচ্ছে ‘লাইফ এজ কোয়ান্টাম বিট’। জীবনকে শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকিয়ে রাখার জন্য জীববিজ্ঞানী এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারদের প্রচেষ্টা বেশ পুরনো। এ শতাব্দীর শুরুতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার এবং রিপ্রোডাকটিভ এনার্জির আবিস্কার পদার্থবিদদেরকেও বিষয়টা নিয়ে ভাবতে উৎসাহিত করে। গত কয়েক শতকেই মানুষ অ্যানটি ম্যাটারের সাথে পরিচিত ছিল যা পদার্থকে শক্তিতে রুপান্তর করতে সক্ষম। রিপ্রোডাকটিভ এনার্জি অনেকটা অ্যানটি ম্যাটারের বিপরীত যা এনার্জিকে পদার্থে পরিণত করতে সক্ষম। কোন বস্তুকে সম্পূর্ণভাবে এনার্জিতে পরিণত করে তার এনার্জি প্রোফাইল বিশ্লেষণ করে তাকে তথ্য হিসেবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে সংরক্ষন করা যায়। পরবর্তীতে রিপ্রোডাকটিভ এনার্জির মাধ্যমে শক্তি হতে পুনরায় ফিরে পাওয়া যায় প্রায় অবিকৃত বস্তু। গ্রিনা ল্যাব বহুদিন থেকে জীবিত প্রানের উপর এ গবেষণা করে আসছে।এর জন্য তারা তৈরি করেছে কোয়ান্টাম রিসোলিউসন যন্ত্র। কিছু নিম্ন শ্রেণীর প্রাণীতে পরীক্ষাটির সাফল্যও পাওয়া গেছে। যেহেতু থারমোডিনামিক্স বলে কোন প্রক্রিয়াই সম্পূর্ণরূপে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসেনা ফলে প্রাণীজো সত্ত্বায় কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু তা সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পরীক্ষাটি কোন মানুষের মত বুদ্ধিমান প্রাণীতে করা জরুরী হয়ে পড়েছে। যেহেতু ল্যাবোরেটরী পরীক্ষায় মানুষ ব্যাবহার বেআইনি এবং অমানবিক তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে এবং পৃথিবীর প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে স্বজনহীন মানব শিশুকে সংগ্রহ করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে একটি এনজিওকে। এ পৃথিবী অনেক অর্থহীন কাজের জন্য অজস্র প্রানের আত্মত্যাগকে মেনে নিয়েছে, উল্লাস করেছে অসংখ্য লাশের উপর দাঁড়িয়ে। কিছু মহান কাজে গুটিকয়েক মানুষের প্রানের ঝুঁকি এখানে তেমন গুরুতর অপরাধ হতে পারেনা।

মাহি ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে। তার দিকে তাকিয়ে আছে কিছু চিন্তিত এবং দুর্বোধ্য মুখ। একজন বাংলাদেশী বয়স্ক লোক মাহির হাত ধরে আছে মমতার সাথে আর সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করছে। মাহি কিছুই বুঝতে পারছে বলে মনে হয়না। তাকে বিশেষ ধরনের পলিমারের পোশাক পরানো হয়েছে। ইঞ্জিনিয়ার পল ডঃ সুশান্তকে বললেন মাহিকে কিছু নিয়ম সম্পর্কে ধারণা দিতে।

সুশান্ত ঃ মাহি, তোমার কেমন বোধ হচ্ছে?

মাহি ঃ ভালো।

সুশান্ত ঃ ভয় পাবার কিছু নেই, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার। পৃথিবীর বেশিরভাগ ভয় তৈরি হয় আতঙ্ক   থেকে। প্রকৃত ঘটনা তেমন ভীতিকর হয়না। সুতরাং আতঙ্কিত হইয়ো না। কিন্তু তোমাকে কিছু কথা মনে রাখতে হবে। তুমি কি শুনতে প্রস্তুত?

মাহি ঃ জি।

সুশান্ত ঃ আমরা তোমার বাহ্যিক বিষয় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো কিন্তু তোমার অনুভূতি কেমন হবে তা বলতে পারবো না । কিন্তু যাই হোক না কেন তুমি কোনভাবেই নিজে থেকে কিছু করার চেষ্টা করোনা। তোমার কোন কার্যক্রম ভয়ানক প্রভাব ফেলতে পারে।

মাহি ঃ আচ্ছা।

ডঃ সুশান্ত এবং কণাপদার্থবিদ সোয়ারস্‌ মাহিকে নিয়ে একটা স্বচ্ছ এবং অতিমাত্রায় তাপনিরোধী পলিমারের বাক্সে দাঁড় করাল। ইঞ্জিনিয়ার পল মাহির শরীরে পদার্থের পরিমান, ম্যাগনেটিক ফিল্ডসহ বেশকিছু প্যারামিটার পরিমাপ করে নিলো। তারপর ফ্লাক্স ক্যাপাচিটরের সুইচ অন করার সাথে সাথে প্রায় ৫০,০০০ ভোল্ট বিদ্যুৎ গিয়ে অ্যানটিম্যাটার ইউনিটকে আঘাত করলো। মুহূর্তের মধ্যে একটা আলোর ঝলসানির মাধ্যমে একটি প্রাণীসত্ত্বার অস্তিত্ব হারিয়ে গেলো। যে পরিমান এনার্জি তৈরি হল তা যদি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে করা না হতো তবে প্রায় অর্ধেক পৃথিবীকে প্রাণহীন করার জন্য যথেষ্ট ছিল।

মাহির মনে হল ক্ষণিকের জন্য সব অন্ধকার হয়ে গেছে। এর মধ্যেও একটা ছায়ামূর্তির হেঁটে যাওয়া তার দৃষ্টি এড়ায়নি। গুটিগুটি পায়ে তা হেঁটে যাচ্ছে একটি দোচালা ঘরের দিকে। ঘরটা তার চেনা মনে হল। ঘরটা রহিমার। হঠাত করেই মাহি যেন দিকভ্রান্ত হয়ে গেলো। তার মনে হল যেভাবেই হোক ছোটোচাচাকে রহিমার ঘরে ঢুকতে দেয়া যাবেনা। টেবিলের ফল কাটার চুরি নিয়ে মাহি ছায়ামূর্তির পিছু নিলো এবং একসময় সজোরে বসিয়ে দিলো ছায়ামূর্তির পিঠে। চিৎকার শুনে হ্যারিকেন নিয়ে বেরিয়ে এলো রহিমা। হ্যারিকেনের মৃদু আলোয় একটা শরীর কেঁপে কেঁপে উঠে নিথর হয়ে যাচ্ছে। উপচে বেরিয়ে আসছে লাল রক্তের স্রোত। মাহির মনে হল এ রক্তের স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন ছিল। জড় শরীরের বন্দীদশা তাকে মানায় না।

ইঞ্জিনিয়ার পল নিবিষ্ট মনে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের স্ক্রিনে তাকিয়ে আছে। ডাটা কনভার্টার ক্রমাগত এনার্জি প্রোফাইলকে তথ্যে রুপান্তর করছে যা কোয়ান্টাম বিট হিসেবে জমা হচ্ছে। কাজ শেষ হবার পর পুনরায় জমা তথ্যের ভিত্তিতে এনার্জির বিন্যাস ঘটানো শুরু হল এবং রিপ্রোডাকটিভ এনার্জির সাহায্যে এনার্জিকে বস্তুতে পরিণত করার কাজ চলতে লাগলো। ধীরে ধীরে স্বচ্ছ পলিমার কক্ষে একটা মানুষের অবয়ব প্রতীয়মান হতে লাগলো। প্রক্রিয়া শেষ হবার পর মাহিকে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা গেলো। ডঃ সুশান্ত দ্রুত দেহটিকে বাইরে এনে যথাযথ মেডিকেশন দেয়া শুরু করলেন।

জ্ঞান ফেরার পর মাহি পুরো ঘটনা ডঃ সুশান্তকে খুলে বলল। পদার্থবিদ সোয়ারসের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। এমন কিছু তিনি যে একেবারে ভাবেননি তা না।তার মানে মাহি কোনভাবে অতীতে ফিরে গেছে। কিন্তু সময় ভ্রমনে অতীতে ফিরে যাওয়া তাত্ত্বিক ভাবে অসম্ভব। তাছাড়া মাহি যদি তার চাচাকে হত্যা করে তবে তার বাবা-মা বেঁচে থাকার কথা যা পুরো ইউনিভার্সেই প্রভাব ফেলবে এবং মাহির ডেনমার্কে আসাও সম্ভব হতো না। কেওস থিওরি অনুযায়ী একটি অবশ্যম্ভাবী বিশৃঙ্খলা তৈরি হবার কথা। তাহলে আর একটিই সম্ভাব্য সমাধান আছে। প্যারালাল ইউনিভার্সের সত্যতা। মিশিও কাকু যে বিষয় নিয়ে বহুবছর কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাত্ত্বিকভাবে এর সত্যতা দেখিয়েছেন। অসংখ্য প্যারালাল ইউনিভার্সের কোনটিতে মাহি তার চাচাকে হত্যা করেছে যেখানে বিশৃঙ্খলা ঘটতে বাধ্য।

মেহেরপুরের ছোট্ট ছেলেটি হয়তো কখনোই বুঝবে না কিভাবে সে নির্ধারণ করে দিয়েছে একটি মহাবিশ্বের ভাগ্য। একজন কাশেম মাস্টার হয়তো একটি মহাবিশ্বের তুলনায় নগণ্য হতে পারে কিন্তু মাহির পৃথিবীতে তার বাবাকে ঝাপটে ধরার আনন্দের কাছে এরকম অসংখ্য মহাবিশ্ব নিতান্তই তুচ্ছ হবারই কথা।

No comments:

Post a Comment