সাধারণত, এরা খাবারের উদ্দেশ্যে বের হয় লক্ষ্যহীণভাবে । কিন্তু নেস্ট থেকে বের হয়ে এরা কিভাবে আবার নেস্টে ফিরে আসে ? মজার বিষয় হলো, এরা খাবার আর নেস্টের মাঝে যে রাস্তাটা তৈরি করে তা হচ্ছে নেস্ট আর খাবারের উৎসের মাঝে ক্ষুদ্রতম এবং দ্রুততম রাস্তা । পিঁপড়া আর মানুষের চিন্তা করার ক্ষমতা নিশ্চই এক নয়? তাহলে তারা কিভাবে এই ক্ষুদ্রতম রাস্তাটা খুঁজে বের করে ? মানুষের দৃষ্টিশক্তি এবং ব্রেইন পিঁপড়ার চেয়ে বহুগুনে বেশি । মানুষ তার ব্রেইনের ২৫% এর চেয়ে বেশি অংশ ব্যবহার করে দেখার কাজে। পিঁপড়ার এতো বিকশিত ব্রেইন নেই। তাহলে এরা কিভাবে এতো নিয়ন্ত্রিত চলাফেরা করে?
আমরা এখন এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো। সাধারণত পিঁপড়া একে অপরের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে থাকে শব্দ, স্পর্শ আর ফেরোমোনের সাহায্যে । ফেরোমোন এক ধরনে রাসায়নিক পদার্থ। পিঁপড়া যখন খাবারের সন্ধানে অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে বের হয়, তার শরীর থেকে ফেরোমোন নিসৃত হয় যা পিঁপড়ার গতি পথে লেগে থাকে । ফেরোমোনের এই পথকে বলা হয় ফেরোমোন ট্রেইল ।
পিঁপড়া ফেরোমোনের ঘ্রাণ সনাক্ত করে তার লম্বা, পাতলা, আর সঞ্চরনশীল এন্টেনার সাহায্যে। পিঁপড়া তার এন্টেনার সাহায্যে ফেরোমোনের ট্রেইল অনুসরণ করে শুধু পথই চলে না, এমনকি সে ফেরোমোনের ঘ্রাণ শনাক্ত করে আক্রমণও করে থাকে। মনে করো, কোনো পিঁপড়া আহত হলে তার শরীর থেকে এক ধরনের ফেরোমোন নিসৃত হয় যার ঘ্রাণ অন্য কোনো পিঁপড়া পেলে বুঝতে পারে কেউ বিপদ্গ্রস্থ। তখন সে বিশেষ ধরনের ঘ্রাণের ফেরোমোন ট্রেইল অনুসরণ করে বিপদ্গ্রস্থ পিঁপড়াকে খুঁজে বের করে। তুমি হয়তো কখনও দেখে থাকবে, একটা মৃত পিঁপড়াকে অনেকগুলো সুস্থ পিঁপড়া টেনে নিয়ে যাচ্ছে। অতএব বোঝা গেলো পিঁপড়ার জন্য ফেরোমোন খুবি গুরুত্বপূর্ণ একটা জিনিস।
এরপরও প্রশ্ন থেকে যায়, এরা কিভাবে খাবার আর নেস্টের মাঝে ক্ষুদ্রতম রাস্তাটা খুঁজে বের করে?
ACO (Ant colony optimization algorithms) হচ্ছে কম্পিউটার সায়েন্সের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের একটা পদ্ধতি যা পিঁপড়ার সারিবদ্ধ চলনের অনুপ্রেরণার ফসল, অর্থাৎ পিঁপড়া যেমন দ্রুততম ক্ষুদ্রতম পথে খাবার সংগ্রহ করে, এই এলগরিদমে কম্পিউটেশনাল সমস্যার সমাধানও একই উপায়ে করা হয়। খাবারের উদ্দেশে এরা অনেকেই এলোমেলো ভাবে বের হয়ে যায় । আর পিছনে রেখে যায় ফেরোমোনের (টাইপ-১ ফেরোমোন) ট্রেইল, যা অনুসরণ করে এরা ফিরে আসতে পারে । কোন পথে এরা খাবার না পেলে, এবার সে উল্টো পথে খাবার খুঁজতে বের হয় আর পিছনে রেখে যায় ফেরোমোন। যখন কোনো পিঁপড়া খাবার খুঁজে পায়, সে তার ফেলে যাওয়া পথেই ফিরে আসে । কিন্তু যখন সে খাবার সহ তার নেস্ট বা কোলোনিতে ফিরে আসে তখন যে ফেরোমোন সে গতি পথে ফেলে আসে তার ধরন একটু অন্যরকম (ধরা যাক টাইপ-২ ফেরোমোন)। এলোমেলো ভাবে ঘুর্ণনরত পিঁপড়া যখন টাইপ-২ ফেরোমোন এর ট্রেইল খুঁজে পায়, তখন সে বুঝতে পারে এ পথে গেলে সে খাবারের সন্ধান পাবে। তখন সে আর এলোমেলো ভাবে ঘুরে বেরায় না। ফেরোমোন টাইপ-২ এর পথ ধরে সে খাবার সংগ্রহ করতে থাকে। ধরো, চারটি পিঁপড়া একই সময়ে একটি খাবারের উৎস খুঁজে পেলো । কিন্তু তাদের গতি পথ নিশ্চই একই হবে না।
পিঁপড়া চলার সময় বিভিন্ন উপায়ে রাস্তা চিনতে পারে, এবং দূরত্ব সম্পর্কেও ধারণা করতে পারে । খাবার আর নেস্টের মাঝে দূরত্বটা বেশি হলে ফেলে আসা ফেরোমোনের গন্ধ কমে যায় । কারন ফেরোমোন ধীরে ধীরে বাষ্পীভূত হয়ে যায় । বাষ্পীভূত হওয়া মানে হলো বাতাসের সাথে মিলিয়ে যাওয়া। তাই যখন সে তার রাস্তা ছেড়ে তার সাথী পিঁপড়ার রাস্তায় খাবার আনতে যায়, সে ফেরোমোনের গন্ধের তীব্রতা মনে রাখে । যদি নতুন পথে ফেরোমোনের গন্ধ বেশি থাকে, তখন সে এই পথেই খাবার সংগ্রহ করে। একসময় দেখা যায়, পিঁপড়া সব দল বেঁধে একটি মাত্র পথ অনুসরণ করেই খাবার সংগ্রহ করে । এবং এই পথটিই হলো ক্ষুদ্রতম পথ।
সত্যিই কি পিঁপড়া ক্ষুদ্রতম পথ দিয়ে চলাফেরা করে নাকি দ্রুততম পথে ? গবেষণায় দেখা গেছে ফায়ার এন্ট (Wasmannia auropunctata) নামক পিঁপড়া, এমন পথে চলে যেন তাদের চলার পথে সময় কম লাগে। তাই এরা অমসৃণ পথ এড়িয়ে মসৃণ পথ বেঁছে নেয়। এতে করে দূরত্ব বেশি হলেও, পিঁপড়া দ্রুত পথ অতিক্রম করতে পারে। একটা উদাহরণ দিলে বিষটা পরিষ্কার হয়ে যাবে তোমার কাছে । মনে করো, তুমি সাগরের তীর ঘেঁষে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে চাও। পথটা যদি তুমি দৌড়ে যাও তবে যে দূরত্ব হয়, সাঁতরে গেলে দূরত্ব লাগে কম। অর্থাৎ তুমি আড়াআড়িভাবে চলে যাচ্ছ। কিন্তু সাঁতরে গেলে তোমার সময় লাগবে বেশি। তাই, তুমি যদি দ্রুততম পথটা বেঁছে নিতে চাও, তোমাকে সাগরের তীর ঘেঁষেই যেতে হবে। ঠিক একইভাবে পিঁপড়া তার দ্রুততম ক্ষুদ্রতম পথটি বেঁছে নেয়। এ পথ ধরে সে রাত দিন সবসময় খাবার সংগ্রহ করতে পারে, কেননা পিঁপড়া এ পথে ফেরোমোনের ট্রেইল অনুসরণ করে, আলো নয় ।
এতো গেলো শুধু পিঁপড়ার দ্রুততম পথ খুঁজে নেয়ার রহস্য উন্মোচন। তুমি চাইলে জীবনের আরো ক’টা দিন কাটিয়ে দিতে পারবে শুধু এদের জীবন পদ্ধতি ঘেটেই। চারপাশটার দিকে তাকিয়ে দেখো, জীবনটা কত রহস্য আর বৈচিত্রে ভরা। মাঝে মাঝে একঘেঁয়ে জীবনের ঘানি না টেনে এই সৌন্দর্য অবলোকন করা কিন্তু মন্দ নয়।
লেখক কে ধন্যবাদ এমন তথ্যবহুল একটি টপিক লিখার জন্য। আশা করি অনেকেই অনেক কিছু জানতে পারবেন এই লিখা থেকে। শুভ কামনা...
ReplyDeleteVery Good...
ReplyDeleteতথ্য ও লেখার সাবলিল ধাছ অসাধারন
ReplyDeleteAlhamdulillah, Golpota Pore Onek Valo Laglo. Allah Tayala, Lekoker kolomke Aro Shanito koruk.
ReplyDeleteপিঁপড়ার পথ খুজার রহস্য ভাল লাগল ।
ReplyDeleteMind blowing writting -NAMUL
ReplyDeleteIt was funny :D
ReplyDeleteবেশ মজার বলে মনে হচ্ছে । শেষ লাইনটা ভাল লাগল
ReplyDeleteপিঁপড়া শিপড়া ;)
ReplyDeleteএখন হাতির গল্প লিখেন :D
ReplyDeleteKeep Up Buddy !!
ReplyDeleteঅনেক ধন্যবাদ সায়িদ ভাই।
ReplyDeleteThank you reader.
ReplyDeleteআপনার মন্তব্যটাও কিন্তু অসাধারন ;)
ReplyDeleteInn sha Allah !!!
ReplyDeleteঅনেক অনেক ধন্যবাদ জাভেদ !!! :D
ReplyDeleteYou are the only one classmate of mine who commented something in my article. SPECIAL THANKS GOES TO YOU DEAR !! And many many thanks :)
ReplyDeleteআসলে অনেক ছোট ছোট জিনিস আমরা এড়িয়ে যাই প্রতিদিন। সৌন্দর্য হচ্ছে উপলব্দির বিষয় ;p ধন্যবাদ আপনাকে।
ReplyDeleteসবাইকে ধন্যবাদ ।
ReplyDeleteosadharon
ReplyDelete