Tuesday, December 10, 2013

দুরবিনের কথা

মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফুলানো বেলুনের ফুটকীর মতো ছায়াপথগুলো সরে যাচ্ছে পরষ্পর থেকে। ১৯২০ এর দশকে এডুইন হাবলের এমনই একটি আবিষ্কার পাল্টে দিল মহাবিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের ধারণা। সে থেকে আমাদের মনে ধারণা এলো মহাবিশ্ব বুঝি আগে ছোট একটা জায়গার মধ্যেই আবদ্ধ ছিল আর একট মহাবিস্ফোরণের ফলে এর উপাদানগুলো বৃহত্তর পটভূমিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে চলে যাচ্ছে পরষ্পর থেকে। কিন্তু ঠিক কি হারে সম্প্রসারিত হচ্ছে আমাদের মহাবিশ্ব?

১৯৯৩ সালে পৃথিবীর নিচের দিককার কক্ষপথে স্থাপিত হাবল মহাশূন্য দুরবিনই আমাদের পুঙ্খনুপুঙ্খভাবে জানিয়েছে এই তথ্য। ভারগো তারকাপুঞ্জের বিষম তারাগুলোর রঙের পরিবর্তন মেপে এটি আমাদেরকে হাবল ধ্রুবকের মান নির্ভুলভাবে জানাতে সক্ষম হয়। এই তথ্যের সাহায্যে আমরা পরবর্তীতে বের করতে পারি মহাবিশ্বের প্রকৃতি বয়স। ১৯৯৪ সালে এটি সফলভাবে ধারণ করে বৃহস্পতির সাথে শুমেকার লেভি-৯ নামক এক ধূমকেতুর সংঘর্ষ। সূর্যের মত অন্যান্য তারারও যে বহিঃস্থ গ্রহ ব্যবস্থা আছে তা জানা যায় হাবল দূরবীনের তোলা ওরিয়ন নেব্যুলার ছবি থেকে। শুধু তাই নয় এই হাবল দুরবিন দিয়েই অন্য কোনো আলোক উৎসজনিত ব্যাঘাত বিহীন মহাবিশ্বের প্রথম ছবি নিতে পারি আমরা। অবলোহিত আর অতিবেগুনি রশ্মির ছবির সাথে দৃশ্যমান আলোর ছবির মিল ঘটিয়ে এটি আবিষ্কার করল এক অনন্য মহাবিশ্ব।

একটু পেছন ফিরে তাকানো যাক। ১৬০৮ সালের কথা। হল্যান্ডের একটি চশমা দোকানে বসেছিলেন দোকানের মালিক ইয়ান লিপার্শি। হঠাৎ তাঁর নজরে পড়লো তাঁর নতুন একজন তরুণ সহকারী খেলা করছে লেন্স নিয়ে। একটা লেন্সকে স্থির রেখে অন্য একটা লেন্সকে সামনে পেছনে আনা নেয়া করে কি যেন করছে ছেলেটি। কাছে গিয়ে তিনিও ব্যাপারটা দেখলেন। অবাক বিষ্ময়ে দেখলেন এই দ্বৈত লেন্স ব্যবস্থা দিয়ে অনেক দূরের বস্তুও দেখা যায় সাবলীলভাবে। সেই সময় ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যলয়ের জ্যোতির্বিদ ও পদার্থবিদ বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলিওর কানে আসে এই আবিষ্কারের সংবাদটি। তিনি ভাবলেন এই যন্ত্র দিয়ে তিনি আরো স্পষ্টভাবে দেখতে পারবেন স্বর্গীয় বস্তুসমূহকে। যেই ভাবা সেই কাজ। একটা টিউওবের দুই মাথায় দুটো লেন্স লাগিয়ে বানিয়ে ফেললেন প্রায় ৩০ গুণ বিবর্ধন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি দুরবিন। এই যন্ত্রের সাহায্যে জাহাজ ডেকে আসার অনেক আগেই দেখা যেত বলে তাঁর ভেনিসের বন্ধুরা খুবই অবাক হয়েছিল। কিন্তু গ্যালিলিওকে অবাক করল উপরের আকাশ। আকাশের শুকতারার পানে দুরবিন ফেলে তিনি প্রথমবারের মত দেখলেন যে এটি আসলে পৃথিবীকে নয়,ঘুরছে সূর্যকে কেন্দ্র করে। এভাবে তাঁর হাত ধরেই সূর্য কেন্দ্রিক জগতের কোপার্নিকাসীয় ধারণাটি পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হল।

এবার আসি রেডিও টেলিস্কোপের কথায়। সূর্যে প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া রেডিও নয়েজ বা সৌর ঝড় কিংবা দূর মহাকাশের কোয়েজার এর ছবি সধারণ প্রতিফলক কিংবা প্রতিসারক দুরবিন দিয়ে তোলা অসম্ভব বলে বর্তমানে এদের স্থলে বিশাল বিশাল ফুটবল মাঠের আকৃতি সম্পন্ন থালার মত দেখতে এক ধরনের দুরবিন ব্যবহার করা হয় অনেকটা আমাদের দেশের ডিশ এন্টেনার মত। এরাই রেডিও টেলিস্কোপ,যেখানে আলোর পরিবর্তে মহাবিশ্ব থেকে আগত বড় তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বেতার তরঙ্গ নিয়েই কাজ করা হয়। মহাবিশ্বে বুদ্ধিমান প্রাণীর খোঁজ কিংবা ঘন মহাজাগতিক মেঘের আড়ালে থাকা তারকামণ্ডলের ছবি তুলতে এর কোন জুড়ি নেই।

No comments:

Post a Comment