Tuesday, December 10, 2013

'অলৌকিক সুর'

২রা জানুয়ারি’২০৪২

তো আপনি বলতে চাচ্ছেন,ওটা আপনার সৃষ্টি নয়।কিন্তু তা কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য?

আমি তো কাউকে বিশ্বাস করতে বলছি না, যার ইচ্ছে বিশ্বাস করবে, যার ইচ্ছা করবে না।

এটা আমরা সবাই ই জানি যখন আপনি বাজান তখন সেটা আর বেহালার সুর বলে মনে হয় না,কেমন এক অদ্ভুত কান্নার মতো শুনায়।যে কান্নার সুরটি প্রচণ্ড বিষাদ আর প্রবল আনন্দকে একই সাথে একি ছন্দে বেঁধে দেয়,যার ব্যাখ্যা করা কোন সাধারন মানুষের পক্ষে সম্ভব না,কিন্তু স্যার এটা যে এ পৃথিবীর বাইরে কোথাও তৈরি সেটা তো কেউ বিশ্বাস করবে না,আমার নিজেরও অবিশ্বাস্য লাগছে।আমি নিজে স্যার আপনার এক বিরাট ফ্যান,আপনার ঐ প্লে টি আমি দুবার শুনার সুযোগ পেয়েছিলাম।এবং স্যার আপনি বললে বিশ্বাস করবেন না কিছু মানুষ আপনার সুরের জন্য আপনাকে ঈশ্বরের অবতার বলে ভাবে।

আমি জানি,আমি অনেকেকেই অনেক উদ্ভট আচরণ করতে দেখেছি ও শুনেছি,তোমার ব্যাপারেও একটা ঘটনা আমাকে বলা হয়েছে।

আপনার বাবাও ছিলেন একজন উস্তাদ,আমরা ধরেই নিতে পারি এই গুনটি আপনি জন্মগত ভাবে প্রাপ্ত।

উনি সেতারবাদক ছিলেন।আমি তার সুর কখনই বুঝতাম না।আমি বরাবরই ছিলাম সুরের ব্যাপারে অজ্ঞ।আমি আমার বাবার মতো কখনই হতে পারব না,উনি মহান ছিলেন।সুরকে উনি সাধনা বলে মনে করতেন।সুরের জন্য উনি সবকিছু ত্যাগ করতে রাজি ছিলেন।আমি এটুকু জানি এ ক্ষমতাটি,এই সুরটি আমাকে কেউ দান করেছে।এটার জন্য হয়ত আমাকে অনেক কিছু হারাতে হয়েছে,কিন্তু সেটা কী তা আমার মনে নেই।আমি নিজেও যখন সুরগুলো বাজাই আমার নিজের কাছে নিজেই তখন দুর্বোধ্য হয়ে যাই।আমি প্রায়ই এটা নিয়ে ভাবি; তবু কোন কূলকিনারা পাই না।

এমন সময় ড্রেসিং রুমের দরজা ঠেলে একটা লোক বললঃস্যার আপনার শো এর সময় হয়ে গেছে।

এখন তবে উঠি,তোমার সাথে হয়ত অন্য আরেকদিন কথা হবে,ভালো থাক।

এই বলে তিনি বেরিয়ে গেলেন।

 

এতক্ষন কথা বলছিলাম উস্তাদ আবিদ খানের সাথে।

আমি রোনালল্ড রাও।দ্য কারেন্ট টাইমস পত্রিকার চীফ রিপোর্টার।আজকে উস্তাদ আবিদ খানের সাক্ষাৎকার নেবার জন্য আমি এখানে এসেছি।

আজকে গ্র্যান্ড ডে।প্রতিবছর ২রা জানুয়ারি এই উৎসবটি আয়োজন করা হয়।ভ্যানু বিশ্বের সকল বিখ্যাত স্থানে হয়।

আজকের ভেন্যু ঠিক করা হয়েছে বাংলাদেশ,আবিদ খানের জন্মভুমি।

প্রতিবছর অনুষ্ঠানেই জানিয়ে দেয়া হয় পরের বছর কোথায় অনুষ্ঠান হবে।পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে সকল বিখ্যাত শিল্পীরা তাদের নৈপুণ্য এখানে প্রদর্শন করেন।ট্যুরিস্টরাও পুরো পৃথিবী থেকে ঐ দিন ভিড় করেন সে স্থানে।এই অনুষ্ঠান কয়েক দশক ধরে আয়োজিত হচ্ছে,তবে বিগত ২৫বছর ধরে অনুষ্ঠানটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হিসেবে আয়োজিত হচ্ছে।এর একমাত্র কারণ আবিদ খানের বেহালার সেই অলৌকিক ইন্দ্রজাল।যা একবার কেউ শুনলে পৃথিবীর সকল সুরই তার কাছে বেসুরে ঠেকে,এই সুর একবার শুনার পর মরে যেতেও কারো আক্ষেপ থাকবে না।আমার নিজের এই সুরটি দু’বার শুনার ভাগ্য হয়েছে,আর বললে বিশ্বাস করবেন না,আমি দ্বিতীয়বার যখন সুরটি শুনি তখন আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করি,আমার চেতনা আড়ষ্ট হয়ে গিয়েছিল।কাজটি অবশ্যই বেআইনি ছিল।না,আত্মহত্যা নয়,দ্বিতীয়বার সেই সুর শুনাটি ছিল বেআইনি।

এর আগেও অনেকে এমন করেছে,কেউ দুইবার এ সুর সহ্য করতে পারেনা।তাই কাউকে দ্বিতীয়বার এই সুর শুনার অনুমতি দেয়া হয়না।উস্তাদ খানের তাই কোন সিডি বা ক্যাসেট বের হয়না।তার কোন প্লে ও রেকর্ড করা হয়না।এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক আইন প্রণেতারা খুবই অনড়।আমাকে তাই এখান থেকেই বিদায় নিতে হচ্ছে।শুধু সাক্ষাৎকার নেবার অনুমতি আমাকে দেয়া হয়েছে।তবে তার সুরের অলৌকিকতা আর বক্তব্যের মধ্যে আমি একটা অদ্ভুত কিছুর আভাস পাচ্ছি,কিন্তু সেটা যে কী আমি জানিনা।

অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে।সব শিল্পীরা একে একে তাদের সঙ্গীত পরিবেশন করছেন।আবিদ খান দর্শক সারির এক কোণে বসে আছেন,সবার প্লে শেষ হলেই তার ডাক পড়বে।তখন সবার আইডি চেক করা হবে,যে একবার পূর্বে তার প্লেতে অংশগ্রহণ করেছে তার আইডিতে মার্ক দেয়া থাকে।তাকে দ্বিতীয়বার সেখানে অনুমতি দেয়া হয়না,তাকে তাই সেখান থেকে উঠে চলে আসতে হয়।সব ধরনের রেকর্ডেবল ডিভাইসও চেক করে সরিয়ে নেয়া হয়।আবিদ খানকে আবার সেই পুরনো চিন্তা জেকে ধরে কিভাবে তিনি এই সুরের স্রষ্টা হলেন?

 

১২ই ডিসেম্বর’২০১৫ [সসারের গবেষণাকেন্দ্রে]

আচ্ছা, এই প্রাণীটাকে কি আমরা মেরে ফেলেছি।

না,তবে তার সঙ্গিনীটা বোধহয় আর বেঁচে নেই।

এখন আমরা কি করবো?এর অবস্থাও তো ভালো বলে মনে হচ্ছে না।

আমাদের ভুলের কারণে তার সঙ্গিনীর মৃত্যু হয়েছে,আমাদের ওকে আবার বাঁচিয়ে তোলার ক্ষমতা নেই।তবে একে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করতে পারি,এখনও প্রাণীটা বেঁচে আছে বলে মনে হচ্ছে।

দেহের উপরের গোলাকার বস্তুটি মনে হয় মাথা,এখানের আঘাতটা মারাত্মক।ওটা স্ক্যান করো।

অবিশ্বাস্য!

কি হল?

দেখতে পাচ্ছ?

হ্যাঁ,এই বস্তুটা কি?

এটাকে এরা অনুভূতি বলে ডাকে।লক্ষ্য করে দেখো তার সঙ্গিনীর সাথে জুড়ে থাকা অনুভূতিগুলো কি প্রবল আর অদ্ভুত।একেবারে বিপরীত ধরনের দুটো অনুভূতি একই সাথে সক্রিয়।একটার নাম আনন্দ,একটার নাম বিষাদ।দুটোই প্রচণ্ড শক্তিশালী আবেগ।

এই দেখো,এটাকে ওরা ‘ভালবাসা’ বলে।

আমরাতো তাহলে তার বিরাট ক্ষতি করে ফেললাম,তার ভালবাসাকে আমরা হত্যা করেছি।

এটা দুর্ঘটনাবশত ঘটেছে,তবে তার ক্ষতিপূরণ আমরা দেবো।তাকে বিনিময়ে কিছু একটা দেবো যা তাকে অন্যদের থেকে মহান করবে।তাকিয়ে দেখো এর কোন প্রতিভাই নেই।তার জিনে তার পূর্বপুরুষের কিছু প্রতিভার অংশবিশেষ আছে যা সে কাজে লাগাতে পারছে না।আমরা সেটিকে মালটিপ্লাই করে দেবো।তার ভালবাসার প্রাণীর স্মৃতিটি আমাদের মুছে দিতে হবে,নইলে একে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হবে না।তবে অনুভূতিটাকে তার প্রতিভায় পরিণত করে দেব যাতে সে অন্যদের মাঝে তা ছড়িয়ে দিতে পারে।

তবে চল,তাকে সেভাবেই সারিয়ে তুলি।

[মহাজাগতিক দুটো প্রাণী তাদের কাজ করতে লাগলো।]

পরিশেষঃ

আবিদ অনেক কষ্টে রূপাকে রাজি করেছে তার সাথে আসার জন্য।আজকে তার মনের কথা রূপাকে বলতেই হবে।প্রায় ১বছর ধরে সে রূপার পেছনে ঘুরছে,কিন্তু মুখ ফোটে কিছু বলার সাহস পায়নি।আজ অনেক সাহস সঞ্চয় করে রূপাকে বুঝিয়ে সমুদ্র সৈকতে নিয়ে এসেছে।তার হাত-পা কাঁপছে,বুক ধরফর করছে।তবু সে সাহস করে রূপার হাতটা ধরে তার চোখের দিকে তাকায়।রূপা হাত ছাড়িয়ে নেয় না,কেমন ঘোরলাগা চোখে তাকিয়ে থাকে।

আবিদ কিছু বলার জন্য মুখ খুলে,এমন সময় প্রচণ্ড শব্দে একটা গোলাকার থালার মতো খুবই আলোকিত বস্তু আকাশ থেকে তাদের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে আছড়ে পড়ে।তারপর সব অন্ধকার...

 

একটা ছেলে আর মেয়ের দেহ ২৬ডিসেম্বর ভোর বেলা সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকতে দেখে কিছু জেলেরা উদ্ধার করে।ছেলেটি জীবিত ছিল কিন্তু মেয়েটি মৃত।ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করে মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়নি,সে তাকে চেনেনা বলে জানায়।

 

By:: Enamul Haque

roll: 2011238031

Dept. of BANGLA,SUST

contact: mob- [01675370704]   mail- [enam5599@gmail.com]

No comments:

Post a Comment