Tuesday, December 10, 2013

আত্মমৃত্যু

সময়কালঃ ৩১৪১ খ্রিস্টাব্দ


-স্যার !আমার মনে হচ্ছে আমাদের এখানে থাকা ঠিক হবে না!

» কেনো ক্রুজ ? এরকম মনে হবার কারন কি ? দেখো সবগুলো সেন্সর একদম সঠিক রিডিং দিচ্ছে, আমাদের রেকর্ডবুক ঘাটলে দেখতে পাবে এর চেয়ে ভালো অবস্থা এই গ্রহে কখনই পাওয়া যায়নি।  রিডিং দেখ, প্রায় ৯০% পৃথিবীর অনুরুপ... তারপরও কেনো এমন মনে হচ্ছে তোমার ?

-স্যার! এটাইতো আমার কাছে সবচেয়ে বেশি খটকা লাগার কারন। ১০২.১২২১৮৭৭০১ আলোকবর্ষ দূরে এই টিটি ৪০১এন  গ্রহে আমি আজিই প্রথম আসিনি... এর আগে বহুবার এসেছি, একাও এসেছি। আপনিও ছিলেন দুবার । কিন্তু কখনই ৭০% এর বেশি মিল কখনই পাইনি। দেখুন স্যার ? দুবছর আগের টপোগ্রাফি রিডিং আর আজকের  রিডিং এর মাঝে ৮৮.৩২১৩৮৭% বেশি পার্থক্য! স্যার! বিষয়টা কি অদ্ভুত নয় ? দুবছরে এত পরিবর্তন প্রায় অসম্ভব। তাছাড়া ইদানিং কোনও সৌরঝড়ও এই অংশে আঘাত হানে নি, ভুমিকম্পও না! 

» ক্রুজ! তোমার দেয়া তথ্য গুলো আবার যাচাই করো! যদি তোমার এনালাইসিস ঠিক হয় তাহলে আমরা এই মুহুর্তে একটি সুপ্ত আগ্নেয়গিরির জ্বলামুখের উপর দাঁড়িয়ে আছি। তুমি এখনি এই জায়গার আগ্নেয়গিরির ডরমেন্সি রিডিং নাও ! কুইক!

-স্যার! রিডিং বলছে আমরা সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় পাবো মূল স্পেস শিপে যাওয়ার জন্য, স্পেশশিপ এই মুহুর্তে ২১ মিনিট দুরত্বে আছে...স্পেসশিপকে এই মুহুর্তে আমাদের দিকে এপ্রোচ করাতে হবে...

» কিন্তু! শিপে তো তোমার ম্যাডাম অনু আছে! তুমি জানো অনু অন্তসত্বা! রিস্কি হবে না বিষয়টা ?

-স্যার আমাদের সময় নেই... আমি দুঃখিত! আমি আপনার কমান্ডের অপেক্ষা না করে SOS পাঠিয়ে দিয়েছি শিপে! 

» তুমি জানো ? তুমি কত বড় অপরাধ করেছ ? ক্রিটিকাল স্পেস'ল ভঙ্গ করার জন্য আমি এই মুহুর্তে তোমাকে টার্মিনেট করতে পারি ? রোবট হয়ে তুমি কমান্ডারের আদেশের তোয়াক্কা না করে এই কাজ কেনো করলে ?

- স্যার! আপনি প্রায় ৫৫ সেকেন্ড সময় নষ্ট করেছেন। আমি দুঃখিত, আমি আপনাকে মুক্ত রাখতে পারছিনা। আপনাকে আমি বন্দি করলাম। এই মুহুর্তে আমি কনভেওর এক্টিভ করছি, আমি কমান্ডিং পোস্ট নিলাম ! ............

 


স্পেস রেকর্ডে থাকা সবচেয়ে অনুগত একটিভ রোবট গ্রুপ বি-৯। এর আগের রোবট সিরিজ বি-৮ এর একমাত্র ম্যালফাংশন ছিলো বেশি কথা বলা। প্রায় ১০ বছর আগে বি-৫ সিরিজ যখন চালু ছিলো, তখন থেকেই এদেরকে ১০০% হ্যাক প্রুফ বলে ধরা হয়। পৃথিবীর সেরা হ্যাকাররাও এর কপোট্রন হ্যাক করতে গিয়ে ব্যার্থ হয়েছেন। বিজ্ঞানী "স্যার এন নর " এর অসাধারণ টেকনোলজির বদৌলতে হ্যাকিং শব্দটা ডিকশনারির পাতা থেকে মুছে গেছে বলতে গেলে। হঠাত করেই শোরগোল পড়ে গেলো বিজ্ঞানী পাড়ায়... সাধারন মানুষও বেশ আতংকিত! তাদের হাউজ রোবট গুলোকে নিয়ে। একটি ক্রুজ নামের বি-৯ গ্রুপের একটি রোবট নাকি স্পেসশিপ, কম্যান্ডার আর তার অন্তসত্বা স্ত্রীকে জিম্মি করে রেখেছে। কোনো ভাবেই তাদের ট্রেস করা যাচ্ছে না। সর্বশেষ নিউজ পাওয়া গেছে কমান্ডার নীড়ের কমিউনিকেটর ঘড়ি থেকে, তিনি শুধু "ক্রুজের হাতে বন্দি" ম্যাসেজ দিতে পেরেছেন। এরপর থেকে কোনো ট্রেস পাওয়া যাচ্ছেনা স্পেসসিপ, ক্রু, কমান্ডার কিংবা কমান্ডারের অন্তঃসত্বা স্ত্রী ক্যাপ্টেন অনু'র ।



ভিলেনের চেয়ারে বসা লোকটা হাসছে । বিশ্রী রকমের হাসি না। খুব পবিত্র ধাঁচের হাসি। ভিলেনরা সাধারনত ভয়ঙ্কর দর্শন হয়। এই লোকটা দেখতে সুফি সুফি... পৃথিবীর মানুষের কাছেও এই লোকটা অনেক সম্মানী... গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বিজ্ঞানের সকল শাখায় যার শক্তিশালী বিচরন... এরোস্পেস সাইন্স, রোবটিক্স আর বায়োইনফরমেটিক্সে যিনি ঈশ্বরতুল্য ... সেই আপদ মস্তক শুভ্র পোশাকাবৃত লোকটা আর কেউ নন, বিজ্ঞানী স্যার "এন নর" !


-কেমন আছো কমান্ডার নীর ?


» স্যার ! আপনি কেনো আমাদেরকে কিডন্যাপ করবেন ? আপনার কিসের অভাব ? আপনি বললে সারা বিশ্বই আপনার সামনে কুর্নিশ করবে......


-থামো কমান্ডার! তুমি কেমন আছো জানতে চেয়েছি, আমাকে জেরা করার অধিকার দেইনি তোমায়। 


» একজন বন্দি কেমন থাকবে বলে আপনি মনে করেন ?


-গুড ! কাজের কথায় আসি। কেনো তোমাকে বন্দি করা, এটাইতো তোমাদের সবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে ? শোনো তাহলে, টিটি ৪০১এন গ্রহে আমি গত দশ বছর ধরে গোপন গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। এই গ্রহ প্রায় শতভাগ মানুষের বসবাস উপযোগী , কিন্তু আবিষ্কার হবার পর থেকেই আমি রোবট গুলোর সিগন্যাল হ্যাক করে রং ইনফরমেশন পাঠাচ্ছিলাম পৃথিবীতে । তুমি মানুষ। তোমাকে হ্যাক করা সম্ভব না, তাই তুমি যখন মিল ধরে ফেলছিলে তখন আমারই বি-৯ গ্রুপের রোবট তোমাকে মিসগাইড করেছে। কিন্তু আমি জানি... তুমি কতটা খুতখুতে , তুমি আবার আসতে । সত্যটা ঠিকই ধরা পড়তো তোমার কাছে। তখন আমার এই নিষিদ্ধ ল্যাবের কি হত ? যেখানে আমি পৃথিবীর মানুষের ধারনার বাইরে ৪১০টি নতুন স্পিসিস ডেভলাপ করেছি। তুমিতো জানোই হোমোট্রি স্পিসিসের ব্রেকাউটে ৪০,০০০ মানুষের প্রানহানির পর থেকে প্রান গবেষণা গত সাড়ে চারশত বছর ধরে পৃথিবীতে নিষিদ্ধ।... প্রান গবেষণায় আমার আগ্রহ  তোমার মত যুবক বয়স থেকেই।  আমাকে তোমরা একটু শান্তিতে থাকতে দেবে না ?


» কিন্তু স্যার কেনো ? আপনি জানেন পৃথিবীর একটা বিকল্প কতটুকু দরকার ? পৃথিবীর মানুষগুলোর জন্য আপনার একটুও দয়া হয়না ?


- হয়। এজন্যই তোমাদের মারিনি। এখন যা বলি শোনো , তোমার অন্তসত্বা স্ত্রী আমার হেফাজতে থাকবে। ভয়নেই। আমার মেয়ের মতই থাকবে।  অতটা খারাপ ভেবোনা আমাকে। তোমার স্ত্রী এবং সন্তান বেঁচে থাকবে , এটুকুই তোমার পাওনা। বিনিময়ে তোমাকে টিটি ৪০১এন গ্রহে সকল প্রকার হিউম্যান আপ্রোচ বন্ধ করতে হবে। কাজটা কত সহজ তুমি জানো... এলিয়েন এটাক টার্মটার সাথে নিশ্চয়ই পরিচিত আছো... এলিয়েন রোবট ক্রুজ কে হ্যাক করেছে শুনলে কেউ ততটা অবাক হবে না। অনেক উন্নত প্রজাতির এলিয়েনের মুখোমুখি হয়েছে পৃথিবীর মানুষ।  যুবক ! যোগ দাও আমার দলে!


» আমি পারবো না!


-ভেবে দেখো ? তুমি আজ অফার ফিরিয়ে দিচ্ছ... দুদিন পর কেউনা কেউ এটা মেনে নেবে! শর্তে রাজি হয়ে যাও, অনেকগুলো জীবন বেঁচে যাবে... পাই বর্ষে একটা পুন্য করো?


» আপনার মুখে পাই ! পুন্য মানায় না! থু!! থু!! আমি আপনাকে কতটুকু শ্রদ্ধা করতাম...


-ক্রুজ! কম্যান্ডারকে টারমিনেট করো! এই মুহুর্তে। ... ক্রুজ ! তুমি কি করছো! থামো ক্রুজ!!...টারমিনেট টারমিনেট...


বিজ্ঞানী এন নর স্ট্যান হয়ে গেলেন। ক্রুজ অনেকটা টমক্রুজের ভুমিকায় অবতীর্ন হল! লিথাল গানের বদলে ক্রুজ ট্রাঙ্কুইলাইজার গান তুলে নিয়ে বিজ্ঞানীকে শুট করে। কমান্ডার ক্যাপ্টেন ক্রু সবাইকে মুক্ত করে বন্দি বিজ্ঞানী সহ সবাইকে শিপে তুলে দিয়ে হাসি মুখে কম্যান্ডারকে বলল ...


# স্যার! আমার দায়িত্ব শেষ! আমি সেলফ ডেস্ট্রাকশন মুডে আছি। আপনাদের যাত্রা শুভ হউক। আর ৩৯৯ সেকেন্ডের মধ্যে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো। 


»ক্রুজ! তোমাকে ধন্যবাদ


 #আপনাকেও কমান্ডার! আমরা রোবটা ধন্যবাদ পেয়ে অভ্যস্ত নই। আমি কিছু করিনি, এটা আমার প্রোগ্রামেই লেখা ছিলো স্যার! 



সেলে বসে বৃদ্ধ এন নর ভাবছেন... কিভাবে হলো এই ভুল ? একই রোবট দুই দুইবার বিট্রে করলো তার প্রভুকে? তিনি কি প্রোগ্রাম কোড করতে ভুল করছিলেন?


ভাবনার অতলে হারিয়ে যাওয়া বৃদ্ধের মনে নেই যে উনি নিজের প্রোগ্রাম গুলো শুধু হ্যাক প্রুফ নয়, অনন্য এক হ্যাক রিকিভারি সিস্টেমও রেখে দিয়ে ছিলেন... কোনভাবে কেউ কপট্রোন ডেটা অবৈধ ভাবে এক্সেস করলে  সেটি ট্রান্সমিটের বদলে রিকিভারি হওয়া শুরু করবে, পুর্ন রিকভারি হয়ে গেলে সেলফ ডেস্ট্রাকশন মুডে চলে যাবে... বেচারা বিজ্ঞানী! নিজের আবিষ্কারের হাতে নিজেই বধ হলেন। প্রভুত্ব হারিয়ে আজকে তিনি পৃথিবীবাসির চোখে বিশ্বাসঘাতক!


(মৌলিক লেখা, এর আগে কোথাও প্রকাশিত হয়নি, বিচ্ছিন্ন কনসেপ্ট একত্রিত করে কিছু একটা লেখার প্রয়াস ছিলো, আমার লেখা প্রথম সাইন্স ফিকশন, ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন)



লেখকঃ তৌহিদ- আন- নূর


এফইটি বিভাগ


২/২

18 comments:

  1. তৌহিদ- আন- নূরDecember 14, 2013 at 7:56 AM

    মডারেশনে ভুল হয়েছে , আমি এফইটি বিভাগে নই, এফ ই এস বিভাগে ।

    ReplyDelete
  2. খুব ভাল লাগছে ভোট দিতে পেরে ... তৌহিদ সাহেব আপনি ব্যাপক গ্যানি :)

    ReplyDelete
  3. চমৎকার লিখেছেন; একেবারে প্রফেসনাল লেখকদের মতো। বলতেই হবে, এদিকে আপনার লেখার হাত আছে। আশা করবো আরোও অসংখ্য ভালো আর চিন্তাজাগানীয়া লেখায় ভরিয়ে দেবেন আমাদের হৃদয়।

    শুভকামনা।

    ReplyDelete
  4. চমৎকার !

    ReplyDelete
  5. অনেক ভালো লেগেছে !
    বিশেষ করে ভিলেনের নাম ! হা হা হা!!

    ReplyDelete
  6. তৌহিদ- আন- নূরDecember 25, 2013 at 9:33 AM

    ধন্যবাদ :)

    ReplyDelete
  7. তৌহিদ- আন- নূরDecember 25, 2013 at 9:33 AM

    ধন্যবাদ ভাই :D

    ReplyDelete
  8. আমি কিন্তু ফুল ভোট দিসি :D

    ReplyDelete
  9. তাহমিদ আজুওয়াদDecember 27, 2013 at 3:36 AM

    বন্ধু মচত্কার হয়েছে, just awesome :)

    ReplyDelete
  10. প্রথম লেখা হিসেবে অতি সুখাদ্য

    "৯০% অনুরুপ", "৭০% মিল" এই ব্যাপারটা একটু ছেলেমানুষী লাগে। একটু অন্যভাবে বুঝাইলে আরও ভাল হইত।

    ReplyDelete
  11. তৌহিদ- আন- নূরJanuary 10, 2014 at 10:08 AM

    গল্পটি পড়ে রেট এবং মন্তব্য করার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
    নতুন কিছু করার প্ররনা দেয়ার জন্যও ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  12. Sabiha Tasneem JesseJanuary 11, 2014 at 11:50 AM

    onek sundor hoise.concept ta tulonamulokvabe better,r lekhonio chomotkar.

    ReplyDelete