আজ মন খুব ভাল ছিল তুষারের কারণ সে জে.এস.সি পরিক্ষায় জি.পি.এ-৫ পেয়েছে। বাবা ,মা সবাই অনেক খুশি। সবাই তাকে নিয়ে খুব গর্ব করছে। আগামী সপ্তাহে সে বাবার সাথে যাবে স্কুলে নবম শ্রেণীতে ভর্তি হবার জন্য। সে দিন তুষার আর তার বাবা স্কুলে গেল। তুষার বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হবার জন্য আবেদন করেছিল এবং সে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হল। ছোটবেলা থেকে তুষারের বিজ্ঞানের প্রতি একটা ঝোক ছিল। অবশেষে তাদের ক্লাশ শুরু হয়ে গেল। খুব সুন্দর ভাবে চলছিল বিজ্ঞান আর তুষারের যাত্রা। একদিন ক্লাশে বসে তুষার যখন ক্লাশের কাজ করছিল,তখন তার মনে পড়ে গেল তার ছোট বেলা থেকে করে আসা ক্ষুদ্র চিন্তা ভাবনাগুলো। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সে তার চিন্তাগুলোকে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় খুজে পেল, কারণ আজ তাদের পদার্থ বিজ্ঞানের জব্বার স্যার তাদের মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ অধ্যায়টি পড়িয়েছেন। অসম্ভব মেধা আছে তাদের জব্বার স্যারের। তিনি যখন কোন কিছু তার ছাত্রদেও বুঝান তখন এমন কেউ বাকি থাকে না যে বুঝে না। তাই জব্বার স্যারের সাথে কারও তুলনা হয় না।
এবার আমরা দু’বছর অতীতে ফিরে যাব। তুষার তখন নতুন ক্লাশ সেভেনের ছাত্র। আর এ বয়সে তো ছেলেমেয়েদের মনের মধ্যে যতসব আজগুবি প্রশ্ন জন্ম নেয়। তেমন এক প্রশ্ন জেগে উঠেছিল তুষারে মধ্যে। সে সেই ছোটবেলা থেকে জেনে আসতেছিল যে পৃথিবী গোলাকার এবং সূর্যের চারিদিকে ঘুড়ছে। আসলে এই তথ্যটি কমবেশি সবাই জানে। কিন্তু আসল ঘটনাটি হল, যদি কোন লোক পৃথিবীর পৃষ্ঠ ধরে সারা জীবন হাটতে থাকে তবে তার পক্ষে পৃথিবী অতিক্রম করে অন্য একটি গ্রহে যাওয়া সম্ভব না। মানুষ বাস করে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আর পৃথিবী গোলকের মধ্যখানে আছে মাটি,পানি,খনিজ ইত্যাদি। সে আরও জাানতে পারল যে, পৃথিবীর একদেশের বিপরীতে আর এক অন্য দেশ আছে। এসব কিছু যদি সত্য হয় তবে, তার প্রশ্ন হল, যদি বাংলাদেশের বিপরীতে কানাাডা কল্পনা করা যায় তবে বাংলাদেশের ভুমি হতে নিচের দিকে কানাডা পর্যন্ত একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করা সম্ভব হলে, যেখানে সুড়ঙ্গটির মধ্যে কোন রকম মাটি,পানি,খনিজ ইত্যাদি কিছু থাকবে না তবে কোন লোকের পক্ষে কি সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে কানাডা যাওয়া কি সম্ভব?
এখন প্রশ্ন হল লোকটি যেতে পারবে নাকি পারবে না?
আমরা অনেকক্ষন পর্যন্ত অতীতে ছিলাম এখন বর্তমানে ফিরে আসা যাক। তুষার পরের দিন স্কুলে গিয়ে সোজা জব্বার স্যারের রুমের ভিতরে চলে গেল। স্যার তখন অন্য একটি ক্লাশে ছিলেন। বেশিক্ষন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হল না তুষারকে। মাত্র কয়েক মিিিনটের মধ্যে স্যার ফিরে এলেন তার রুমের ভিতর। তুষার জব্বার স্যারকে তার প্রশ্নটি খুব ভালভাবে বুঝিয়ে বলল। ঠিক তেমনি ভাবে, যেভাবে জব্বার স্যার তাদের ক্লাশে বুঝান। স্যার তাকে উত্তরে বললেন যে, তিনি আগামীকাল ক্লাশে তার প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
পরের দিন সকাল বেলা থেকে তুষারের মনের ভিতর কেমন যেন আনন্দ ছিল। কারণ তার মনের ভিতর এই প্রশ্নটি ছিল অনেক দিন থেকে আর সে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিল জব্বার স্যার তার প্রশ্নের উত্তর খুব ভালভাবে দিবেন। তাই সে ঠিক সময়ের কিছুক্ষন আগেই স্কুলের উদ্দেশ্যে রওনা দিল। আজ প্রথম ক্লাশ ছিল জব্বার স্যারের। স্যার সময় মত ক্লাশের মধ্যে এলেন এবং আসার সাথে সাথে সবাইকে প্রশ্ন করা শুরু করে দিলেন কারণ আজ ছিল মহাকর্ষ ও অভিকর্ষ অধ্যায়ের শেষ দিন।
জব্বার স্যার তুষারের দিকে গেলেন এবং তাকে প্রশ্ন করলেন অভিকর্ষ কি? তুষার উত্তরে বলল পৃথিবী ও অন্য কোন বস্তুর যে আকর্ষন তাকে অভিকর্ষ বলে।
জব্বার স্যার তাকে আবার প্রশ্ন করলেন অভিকর্ষজ ত্বরণ কি? এর দিক কোন দিকে? পৃথিবীর কেন্দ্রে এর মান কত? উত্তরে তুষার বলল অভিকর্ষের ফলে যে ত্বরণ হয় তাকে অভিকর্ষজ ত্বরণ বলে। অভিকর্ষজ ত্বরণের দিক হল খাড়া নিচের দিকে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে এর মান শূণ্য। এবার তুষার জব্বার স্যারকে জিজ্ঞাস করল তার সেদিনকার প্রশ্নের উত্তর কি হবে?
জব্বার স্যার বললেন তোমার প্রশ্নে উত্তর হল, সম্ভব না। কোন মানুষের পক্ষে সে সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে কানাডা যাওয়া স¤ভব না। তুষার জব্বার স্যারকে জিজ্ঞাস করল এর কারণ কি ?
জব্বার স্যার তাকে বললেন এর কারণ হল অভিকর্ষজ ত্বরণ। তুষার বলল যে তার মানে সে ঠিক বুঝতে পারল না। জব্বার স্যার তুষারকে বললেন তুমি যে বললা অভিকর্ষজ ত্বরণের দিক খাড়া নিচের দিকে এবং পৃথিবীর কেন্দ্রে এর মান শূণ্য এ কথার মধ্যে তোমার সব প্রশ্নের উত্তর আছে। তার মানে তোমার কল্পিত সেই সুড়ঙ্গের মধ্য দিয়ে কোন লোক বিপরীত দেশে যেতে পারবে না। তোমার সেই সুড়ঙ্গের কেন্দ্রেও অভিকর্ষজ ত্বরণের মান শূণ্য হবে। উপর দিক থেকে সহজে কোন লোক সহজে অভিকর্ষজ ত্বরণের কারণে নিচের দিকে আসতে পারবে কিন্তু সে পৃথিবীর কেন্দ্রের কাাছাকাছি পর্যন্ত এসে আর নিচে নামতে পারবেনা। ধরে নিলাম সে নিচে নেমে গেল তার পরও সে আবার কেন্দ্রের দিকে ফিরে আসবে অর্থাৎ এক্ষেত্রে অভিকর্ষজ ত্বরণের দিক হবে খাড়া উপরের দিকে। এক কথায় বলা যায় লোকটি বাংলাদেশ হতে পৃথিবীর কেন্দ্র পর্যন্ত যেতে পারবে কিন্তু কেন্দ্র থেকে আর কানাডা যেতে পারবে না।
আমরা এই ঘটনাটি একটি চিত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারলে বিষয়টি সহজ হয়ে যাবে।
আমরা একটি গোলককে পৃৃথিবী কল্পনা করি যার কেন্দ্র ০, অ একটি পৃষ্ঠ যাকে বাংলাদেশ ধরি এবং ই একটি পৃষ্ঠ যাকে কানাডা ধরি। এখন আমাদের অ হতে ই এর দিকে যেতে হবে। অভিকর্ষজ ত্বরণ ধরি ম . অ এর জন্য এর দিক খাড়া নিচের দিকে এবং ই এর জন্য এর দিক খাড়া উপরের
দিকে। অঙই হল আমাদের কল্পিত সুড়ঙ্গ। এক লোক সহজে অ হতে ঙ পর্যন্ত অভিকর্ষের ফলে নিচের দিকে নেমে আসতে পারবে কারণ ম এর দিক হল নিচের দিকে কিন্তু সে ঙ হতে ই এর দিকে যেতে পারবে না কারণ সে যেই একটু নিচে নামবে তেমনি অভিকর্ষের কারণে কেন্দ্রের দিকে ফিরে যাবে কারণ ঙই বরাবর ম এর দিক হল খাড়া উপরের দিকে। তাই আমরা বলতে পারি যে, সে লোকের পক্ষে কখনোও অ হতে ই বিন্দুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।
জব্বার স্যারের কথা শেষ হবার আগেই তুষার আনন্দে নেচে উঠল। স্যার বললেন কি ব্যাপার তুষার তোমার কি হয়েছে? তুমি এমন করছ কেন? তুমি কি আমার কথা বুঝতে পার নি? তুষার একটুখানি মুঁচকি হেসে বলল স্যার আপনি একটা জিনিস বুঝিয়েছেন তা কি কখনো না বুঝা সম্ভব?
(মোঃ নাসির উদ্দিন ,পদার্থবিজ্ঞান ২/২,রেজি নং-২০১১১৩২০৩৯,মোবাইল-০১৭৫৬৫৩৯৯৩৯)
No comments:
Post a Comment