Tuesday, December 10, 2013

প্রিয়জনকে মেঘ উপহার দিনঃ বোতলেই তৈরি করুন মেঘ!

মোঃ তারেক বিন আবদুল্লাহ


পিএমই ১/২


 

 

মেঘ ছোঁয়ার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। কবি সাহিত্যিকরা মেঘকে তাদের কবিতায় নানান উপমা দিয়েছেন। আর বিজ্ঞানীরা কবিদের চেয়ে বরাবরই বেরসিক। কবিরা জটিল করে মেঘের উপমা দেন। আর বিজ্ঞানীরা বলেন- আরেহ! মেঘ, সেটা তো জলীয়বাষ্পের পিণ্ড- সোজা জিনিস।

“সোজা জিনিসটাকে” এবার আকাশ থেকে হাতের কাছেই নামিয়ে এনেছেন তারা। হয়ত, কদিন পর আপনি আপনার প্রিয়জনকে জন্মদিনে মেঘ উপহার দিতে পারবেন। হ্যাঁ! চোখ কপালে তুলার কিছু নেই। একটি বোতলে মেঘ বানিয়ে  নেবেন নিজেই। সম্প্রতি বোতলে মেঘ তৈরির পদ্ধতি বের করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেটা আপনি আমিও তৈরি করতে পারব ঘরে বসেই।

যেভাবে মেঘ তৈরি হবে-

একটি প্লাস্টিকের বোতলে দুই চা চামচ রাবিং অ্যালকোহল নিয়ে এমনভাবে বোতলটিকে ঘুরাতে হবে- যাতে বোতলের ভিতরকার দেয়ালের সবটুকুতেই অ্যালকোহল লাগে।

filling Bottle

বোতলের মুখে কর্ক বা পেপার দিয়ে বন্ধ করে ওই কর্ক বা পেপারের মাঝে একটি ফুটো করা হয়।ওই ফুটো দিয়ে বোতলের মধ্যে ধীরে ধীরে একটি বাইসাইকেল পাম্পার দ্বারা বায়ু প্রবেশ করানো হয়। সাধারণত পাঁচবার পাম্প করা হয় বায়ু।

pressure

এতে করে বোতলের ভিতরে বায়ুচাপ বেড়ে যায় এবং কর্কটি বেরিয়ে  আসতে চায়। হঠাৎ করে বায়ু বের হতে দেয়া হয়, অর্থাৎ চাপ কমিয়ে দেয়া হয়। তাহলে বোতলের ভিতরে মেঘ দেখা যায়, যা বোতল থেকে বেরিয়ে আসতে চেষ্টা করে।

come out

বোতল থেকে বের হতে চেষ্টা করছে মেঘ


এই পরীক্ষা করার সময় সতর্কতাস্বরূপ চোখে সেফটি গ্লাস পরা উচিত। বোতলকে একটি রঙ্গিন (সবুজ/হলুদ) কাগজের উপর রেখে পরীক্ষাটি করলে মেঘ স্পষ্ট দেখা যায়।

কেন এরকম হয়?-

আদ্র বাতাস উপরে উঠে এবং ধীরে ধীরে শীতল হতে থাকে। যত উপরে উঠে তত শীতল হয়।প্রকৃতপক্ষে, আদ্র বাতাস, জলীয় বাষ্প মিলেই মেঘ। বায়ুমণ্ডলে এমন কিছু ক্ষুদ্র ধূলিকণা আছে যেগুলো খালি চোখে দেখা যায়না। আর জলীয় বাষ্পের সাধারণত এমন জায়গায় জমা হওয়ার প্রবণতা বেশী যেখানে ধূলিকণা রয়েছে।কারণ, জলের ফোঁটা বা বৃষ্টি হয়ে পড়ার জন্য বাষ্পকে অবশ্যই ঘনীভূত হতে হবে। এই ধূলিকণাগুলো বাষ্পকে ঘনীভূত হয়ে পড়তে সাহায্য করে। ধূলিকণার ওজন থাকায়, সেটি অভিকর্ষের প্রভাবে মাটিতে পড়তে চায়- যা বাষ্পের ঘনীভবনে সহায়তা করে। এভাবে ধূলিকণার সাথে যুক্ত হয়েই গঠিত হয় মেঘ- যা আমরা প্রতিনিয়ত আকাশে ভাসতে দেখি।

float

একই ঘটনা ঘটে এই বোতলে। এখানে রাবিং এলকোহল ব্যবহার করা হয়েছে- যা ধূলিকণার ভুমিকা পালন করছে বোতলের ভিতরের বায়ুতে।বাতাসে অনেক পানির কণা থাকে যা আমরা খালি চোখে দেখিনা।  অ্যালকোহল বোতলের ভেতরে থাকা এসব অণুকে একত্রিত করে, যেমনটা বায়ুতে অদৃশ্য ধূলিকণায় বাষ্প জমে। যখন পাম্পিংযের মাধ্যমে বোতলে বায়ু প্রবেশ করানো হয়, তখন বোতলের ভেতরে থাকা বায়ুর অণুগুলোতে সংঘর্ষ বাড়ে। এজন্য বোতলের ভেতরে চাপ ও তাপমাত্রা দুটোই বৃদ্ধি পায়। হঠাৎ করে যদি কর্কটি খুলে দেয়া হয় তাহলে বোতলের ভেতরের চাপ ও তাপমাত্রা হঠাৎ করেই হ্রাস পায়( ঠিক ওই মুহূর্তে যদি বোতলের মুখে হাত দেখা হয়, দেখা যায় বোতল থেকে শীতল বায়ু বের হচ্ছে).. বোতলের ভেতরের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় ভেতরকার জলীয়বাষ্প ও রাবিং অ্যালকোহল শীতল হয়ে মেঘে রুপ নেয়, যা স্পষ্ট দেখা যায়।

হয়তো কিছুদিন পর কবিরা মেঘ ছেড়ে বিজ্ঞানের কবিতাই লিখা শুরু করবেন।

No comments:

Post a Comment