দু-তিন বছর ধরে বিভিন্ন বাংলা ব্লগসাইট এবং ফেসবুকে ঢাকার কোথায় কোন খাবার ভালো সেটা নিয়ে একটা বড়সড় লিস্ট দেখা যায়। খুব নামীদামী আলিশান রেস্টুরেন্ট না বরং ঢাকার অলিতে গলিতে থাকা ছোটখাটো খাবারের দোকানের নামই সেখানে চোখে পড়ে বেশি। নামীদামী সব রেস্টুরেন্টের খাবার মোটামুটি একই স্বাদের। কিন্তু ছোটখাটো অনেক রেঁস্তোরা বা হোটেল রয়েছে যেগুলোতে অসাধারণ খাবার পাওয়া যায়। একজন খাদ্যবিলাসী হিসেবে আমি চেষ্টা করি এ ধরণের বিভিন্ন দোকানে খেতে। বন্ধু-বান্ধব এবং বড় ভাইদের কল্যাণে এ ধরণের বেশ কিছু দোকানে খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। মাঝারী থেকে শুরু করে সাইনবোর্ডবিহীন এ সকল খাবারের দোকান নিয়েই আমার অভিজ্ঞতা থেকে আজকে কথা বলবো। খাদ্যবিলাসীরা রেডি হয়ে যান তাহলে।
দুপুরের বা রাতের খাবার কিংবা সন্ধ্যার নাস্তা পরিবারের সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের সাথে আমরা শখ করে বাইরে খেয়ে থাকি। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শেষে বন্ধুদের দল বেরিয়ে পড়ে পুরান ঢাকায় তেহারী, বিরিয়ানী আর মোরগ-পোলাও খেতে। কিন্তু সকালের নাস্তা যে খুব আয়েশ করে বাইরে খাওয়া যায় তা আবিষ্কার করেছেন শ্রদ্ধেয় মইন ভাই। তিনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করেন। তাই প্রায়শ’ সকাল ৭টা বা ৮টার দিকে ফোন করে বলেন, “১০ মিনিট সময়। বেরিয়ে পড়ো”। অতঃপর একেকদিন একেক হোটেলে চলে নাস্তাবিলাস। শীতের ভোরে এলিফেন্ট রোডের মালঞ্চ, ধানমন্ডি ২ নম্বরের স্টার বা ৬ নম্বরের নতুন দোকান কাবাব ভিলেজে হয় আমাদের নাস্তা। প্রথমেই বলে রাখি স্টারের নাস্তার অবস্থা এখন যাচ্ছেতাই। অতিরিক্ত তেল এবং স্বাদবিহীনতার কারণে স্টার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেব। মালঞ্চের পরোটা আর খাসি ভুনা খুব মজা। আর কাবাব ভিলেজের মুরগির স্যুপ এবং মিক্সড তরকারি অসম্ভব সুস্বাদু। যে কথা না বললেই না সেটা হলো কাবাব ভিলেজের স্পেশাল নান এবং বাটার নান। ৩০ টাকা মূল্যের এই নানগুলা সত্যিই অনেক ভালো। তুলতুলে, সুঘ্রাণযুক্ত একটা নান মুরগির স্যুপে ডুবিয়ে মুখে পুরলেই জীবনে আর কী লাগে? নাস্তা শেষে স্টার এবং কাবাব ভিলেজ উভয়ের চা-ই খুব ভালো।
সন্ধ্যার নাস্তাটা একটু মোগলাই হওয়া চাই। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অবস্থিত নিউ নাহার হোটেলের জুড়ি মেলা ভার। ১৫ টাকা মূল্যে তারা যে নান দেয় অনেক নামকরা রেস্টুরেন্টে ৫০ টাকাতেও সেই নান হয় না। নানের সাথে শিক কাবাব, চিকেন ঝালফ্রাই, বিফ চাপ, কালা ভুনা, গরুর বট- সবই চলতে পারে। সাথে দই মিশ্রিত সালাদ নিতে ভুলবেন না যেন। ঝোল শেষ হলে রিফিল হবে অনেকখানি। নান আর ঝাল ফ্রাইয়ের ঝোল বা এক্সট্রা বট চলতেই থাকবে। আর খাওয়া শেষে এক কাপ মালাই চা থাকতেই হবে। আহা! জাকির হোসেন রোডের মাঞ্জারের দোকান নিয়ে নতুন করে কী বলবো? বছর দুয়েক আগে এ দোকান আবিষ্কার করি। পরে মোহাম্মদপুর অঞ্চলে বড় হওয়া শ্রদ্ধেয় জামি ভাইয়ের কল্যাণ ও অর্থায়নে (:p) জানতে পারি তাদের খ্যাতির কথা। দোকানের উপরে সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। ফিটফাট বৃদ্ধ মাঞ্জার ভাইই দোকানের সাইনবোর্ড। এ দোকানের সবকিছুই আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পরোটা, লুচি, শিক কাবাব, চিকেন টিক্কা। এদের গরুর পায়া এবং গুর্দা কাবাবও শুনেছি চমৎকার। কিন্তু এখনো খাওয়া হয় নি। তবে মাঞ্জারের চিকেন টিক্কা দোকানে খাওয়া টিক্কার মধ্যে সেরা। আর সাথে দইয়ের যে আনলিমিটেড সালাদ সাপ্লাই থাকে তার কথা আর না বলি। একবারে গিয়ে চেখে দেখলেই বুঝবেন। সেখানে আরো আছে ঝাল ফ্রাই এবং গরুর ঝুরা মাংস।
ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে গলির মুখে রয়েছে পর পর তিনটি দোকান। তার মাঝে তেহারী ঘর তো খুবই বিখ্যাত। এদের তেহারী আমার খাওয়া সেরা তেহারী বলা যায়। ভুনা খিচুড়িটাও এক্সিলেন্ট। তবে ভুলেও এদের মোরগ-পোলাও ছুঁয়ে দেখা যাবে না। তেহারীর সাথে পেঁয়াজ-মরিচ-শসার মাখানো সালাদ অন্যতম উপসঙ্গ। তেহারী ঘরের পাশেই রয়েছে কস্তুরী সুলতান নামে গ্রিল আর শর্মার একটি দোকান। ওদের চিকেন শর্মা আমার খাওয়া সেরা শর্মা। এক বসায় ৫টা শর্মা খাওয়া রেকর্ড আছে আমার। শর্মার সাথে মেয়োনেজ আর সস মেশানো যে আনলিমিটেড বস্তুটি ওরা সরবরাহ করে সেটির তুলনা হয় না। আর শর্মার ওপরে ছিটিয়ে নেয়ার জন্য থাকে বিশেষ কাবাব মসলা। মিরিন্ডার চুমুকে চুমুকে চলতে থাকে শর্মায় কামড়। তেহারী ঘর আর কস্তুরী সুলতানের পাশে রয়েছে আরেকটি তেহারীর দোকান হাজী উজ্জ্বল বিরিয়ানী হাউজ। ওদের তেহারী তেমন ভালো না। তবে ওদের পুরি এবং সিঙ্গারা আমার কাছে ক্লাস মনে হয়। সকালে ভাজে সিঙ্গারা আর সন্ধ্যায় পুরি।
ধানমন্ডি ৮ নম্বরে রবীন্দ্র সরোবরের গরুর চাপ মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পের চাপের চেয়ে বহুগুণ ভালো। ওদিকে গেলে ঐ চাপ না খেয়ে ফেরা খুব কঠিন। অত্যন্ত সুস্বাদু চাপের সাথে সুস্বাদু বাচ্চা লুচি কিন্তু চোখের নিমিষে শেষে হতে থাকে। আর সাথে টক মেশানো সালাদ তো রয়েছেই।
(চলবে)
No comments:
Post a Comment