বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে তারা নিজেরা অন্য মানুষের থেকে কোন না কোন দিক থেকে এগিয়ে আছে (above average)। একজন চোরও নিজেকে বলে যে সে পরিস্থিতির কারণে চুরি করতে বাধ্য হচ্ছে। একজন ঘুসখোর নিজেকে বলে বেতনের টাকায় এই যুগে চলা সম্ভব না- সেজন্য সে ঘুস খেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ওই চোর বা ঘুসখোরকে যদি আকজন চোর বা ঘুসখোরের কথা জিজ্ঞেস করা যায় তাহলে সে বলবে ওই লোকটার আসলে চরিত্রই এমন। সে পরিস্থিতির কারনে এরকম করতে পারে সেটা চিন্তা করার সম্ভবনা অনেক কম।
এটা যেমন ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সমস্টিগত ক্ষেত্রেও সত্য। আমার নিজের পরিবার, গোত্র, দেশের মানুষ অন্য সবার থেকে চারিত্রিক দিক থেকে ভাল। অন্য কেউ রাস্তায় ইভটিজিং করলে সে জঘন্য খারাপ, কিন্তু নিজিের পরিবারের কেউ করলে সেটা দুষ্টামি। সাইকোলজির পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ultimate attribution error [১]. এটার কারণে আমার পছন্দের দল যখন খারাপ কাজ করে তখন সেটা আমার চোখে পড়ে না। চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে আমি গলার রগ মোটা করে অন্য দলের এরচেয়ে খারাপ কাজের উদাহরণ দিয়ে পছন্দের দলকে অপেক্ষাকৃত ভাল প্রমানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজের মত বা বিশ্বাসের স্বপক্ষে যুক্তি খোঁজার জন্য আমরা মতের বিপক্ষ যায় এমন তথ্যপ্রমান চোখের সামনে থাকলেও দেখতে পাই না[২]।
আমরা যারা বিভিন্ন দলের সাপোর্টার তারা এই তথ্যগুলো মনে রাখলে যে দলের সাপোর্ট করি সেই দলের ভুলগুলোকে দেখতে পাব আশা করি। আর আপনি ব্রাজিলের সাপোর্টার হলে সারাজীবন তাদের সাপোর্টার হয়ে থাকার দরকার নেই। কি কারণে একটা দরকে আপনি আপনার সপোর্ট দিচ্ছেন সেটার একটা পরিস্কার ধারণা মনের মধ্যে থাকা চাই। কি কারণে অন্য দলকে কি কারনে অপচন্দ করেন সেটাও জানা দরকার। সেই কারনগুলো যদি উল্টে যায় তাহলে আপনার সাপোর্ট উল্টে যাওয়াই যুক্তিসংগত।
ধরা যাক আপনি আরসেনাল ফুটবল ক্লাবের সাপোর্টার। কেন সাপোর্ট করেন? কারন ক আর খ ওই দলে খেলে এবং তাদের খেলা আপনার ভাল লাগে। আর চেলসি টিম আপনার পছন্দ না। ওইখানে যদিও গ আর ঘ খেলে কিন্তু ওরা মাঝে মধ্যে ভাল খেললেও সেটাকে ভাগ্য বলতে হবে [১]। ঠিক আছে ধরে নিলাম আপনার কথা সত্য। এখন যদি ক আর খ চেলসিতে যোগ দেয় তাহলে কি আপনি চেলসি সাপোর্ট করা শুরু করবেন? কিংবা গ আর ঘ যদি ক আর খ মত এবং ক আর ঞ যদি গ আর ঘ এর মত খেলতে শুরু করে? আপনি তো শুরুতে এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে ভাল খেলার জন্য আমপনি আরসেনালকে সাপোর্ট করেন। অার্সেনাল যদি নিয়মিত খারাপ খেলা শুরু করে তাহলে কেন আপনি তাকে সাপোর্ট দিয়েই যাবেন?
এখন আসুন মানব মনস্তের আরকেটি দিক সম্পর্কে জানি। করির সাহেব ওজন কমাতে চান। তিনি সকালে উঠে ১ ঘন্টা ব্যায়ম করলেন। এখন দুপুরে খাবার সময় বিরিয়ানি অর্ডার দিয়ে দিয়ে দিলেন। জাবির সাহেব অফিসে গিয়ে সকালে ২ ঘন্টায় বেশ ভাল কাজ করলেন। তিনি বিকালে কোন কাজই করলেন না। জামিল সাহেব নিয়মিত নামাজ পড়েন কিন্তু অফিসে একটু আধটু ঘুস নেন। সেটা নিয়ে তার একটু অস্বসবতি আছে - কিন্তু যা দিনকাল পড়েছে বেতনের টাকায় সংসার চালানো দায়। কেউ যদি কোন একটা ভাল কাজ করে তাহলে পরবরতীতে তার একটা খারাপ কাজ করতে কম বাধে। একটা ভাল কাজের মাধ্যমে নিজেকে কিছুটা ভাল এইটা নিজের কাছে বলতে পারলে পরবর্তীতে একটা খারাপ কাজ করতে মনে কোন দ্বিধা আসে না। এটাকে বলা হয় মোরাল লাইসেন্সিং ইফেক্ট [৩]।
মোরাল লাইসেন্সিং ইফেক্ট এর আরেকটি দিক হল অন্য লোকে যদি খারাপ কাজ করে সেটা আমার জন্য হালার হয়ে গেল এটা মনে করা। ঘুস কি শুধু আমি খাই? অফিসের কোন লোকটা খায়না বলেন দেখি?
মনে রাখতে হবে একটা ভাল কাজ করলেই কেউ একটা খারাপ কাজ করার লাইসেন্স পায় না। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে সকালে একটা বৃদ্ধ লোককে রাস্তা পার করে দেয়ার কারণে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়ার লাইসেন্স আপনি পান নাই। একজন সমাজসেবক ঘরে কাজের লোকের গালে চড় দিলে সেটা অবশ্যই অপরাধ। একজন মওলানা মানুষ খুন করে ফেললে সেটা একজন ডাকেতের মানুষ খুনের চেয়ে কোন অংশেই কম অপরাধ না। ক্লাসের ফার্স্ট বয় নকল করলে সেটা ফেলটু ছাত্রের নকল করার চেয়ে কম অপরাধ হয়ে যায় না।
একটা ভাল কাজ করলে একটা খারাপ কাজের অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায় না। সবাই যদি একটা খারাপ কাজ করে তবুও সেটা খারাপ। সেটা আমি যদি করি তাহলে আমিও খারাপ হয়ে গেলাম। দুনিয়ার সব মানুষ যদি করে তবুও। এটা যেমন পুর্বের ভাল কাজার জন্য সত্য। তেমনি পরের ভাল কাজের জন্যও সত্য। খারাপ কাজ করে অনেক ভাল কাজ করলেও পূর্বে করা খারাপ কাজ খারাপই। সেটাকে ভাল মনে করে আনন্দিত হওয়ার কোন কারন নাই।
তথ্যসূত্রঃ
[১]: http://en.wikipedia.org/wiki/Ultimate_attribution_error
[২]: http://en.wikipedia.org/wiki/Cherry_picking_%28fallacy%29
[৩]: http://en.wikipedia.org/wiki/Self-licensing
No comments:
Post a Comment