Tuesday, December 10, 2013

ঈশ্বর কণা !!!

ঈশ্বর কণা !!!



‘হিগস-বোসন কণা’ বা ‘ঈশ্বর কণা’ সাম্প্রতিক বিজ্ঞানের সবচেয়ে চমকপ্রদ আবিষ্কার। হিগস কণার আবিস্কার বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির অসীম রহস্য উন্মোচনের জন্য এক উল্লেখযোগ্য মাইল ফলক হয়ে দাঁড়াবে। বলা যায় এই কণাই রয়েছে সকল অস্তিত্বের মূলে। পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসু -এর নামে এই কণার নামকরন করা হয়।


 

১৯৬৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানী পিটার হিগস ও ফ্রাঁসোয়া ইংলার্ট এমন একটি কণার ধারণা দেন, যা বস্তুর ভর সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে এ কণাটিই ‘ঈশ্বর কণা’ বা ‘গড পার্টিকল’ নামে পরিচিতি পায়। বোসন নামটি সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম আনুসারে রাখা হয়। তবে এই কণার সাথে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সরাসরি সম্পৃকত্তা নেই। পার্টিক্যাল সায়েন্সের ক্ষেত্রে বাঙালি বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্র নাথ বসুর অবদান অনস্বীকার্য।‘হিগস-বোসন কণা’ খুজে পাওয়ার ক্ষেত্রে বোসের আবিষ্কৃত সংখ্যাতত্ত্বের অবদান আছে৷ পরমাণুর চেয়ে ক্ষুদ্র ‘বোসন' জাতের কণা সত্যেন্দ্রনাথ বসুর সংখ্যাতত্ত্ব মেনে চলে। এ কারণেই বিজ্ঞানীরা ‘ঈশ্বর কণা’র সাথে সত্যেন্দ্রনাথ বসুর নাম জুড়ে দিলেন।

 

২০১২ সালের ৪ জুলাই, সার্ন (CERN) গবেষণাগারের গবেষকরা ঘোষণা দিলেন যে তারা ‘হিগস-বোসন কণা’ খুজে পেয়েছেন।  এই কণার খোজ করতে গিয়ে  সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নির্মাণ করা হয় Large Hadron Collider (এলএইচসি)। মাটির ৫০ থেকে ১৭০ মিটার নিচে একটি সুড়ঙ্গ তৈরি করে তাতে প্রোটন কণার সংঘর্ষ ঘটানো হয়। কিন্তু সংঘর্ষে  হিগস কণা উৎপন্ন হবার পরিমান খুব কম (১০ বিলিয়নে একটি)। বিগ ব্যাংয়ের ‘ছোট সংস্করণ’ সৃষ্টির চেষ্টায় বিজ্ঞানীরা লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারের  আলোর গতির কাছাকাছি অতি উচ্চ মাত্রায় কণিকাগুলোর সংঘর্ষ ঘটান। দু’দফা চলে তাদের এ পরীক্ষা। সার্নের এলএইচসি’র  ২৭ কিলোমিটার ডিম্বাকৃতির সুড়ঙ্গপথে আলোর গতির কাছাকাছি এক ন্যানো সেকেন্ডে রেকর্ড ৭ বিলিয়ন বিলিয়ন ইলেক্ট্রন ভোল্ট ক্ষমতায় এই পরীক্ষা চালানো হয়। লার্জ হ্যাড্রন কলাইডারে প্রায় আলোর গতিতে ধাবমান বিপরীতমুখী প্রোটন কণার সংঘর্ষ ঘটানো হয়। এই সংঘর্ষে বিপুল পরিমান শক্তি উৎপন্ন হয়। এই বিপুল পরিমান শক্তিই জন্ম দেয় ‘ঈশ্বর কণা’র!

 

লার্জ হ্যাড্রন কলাইডা তৈরি করা ছিল বিজ্ঞানীদের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ। বলা হয় লার্জ হ্যাড্রন কলাইডার মানব সৃষ্ট জটিল যন্ত্র। এলএইচসির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত আছেন ১০০টি দেশের প্রায় ১০ হাজার বিজ্ঞানী ও প্রকৌশলী। এটি তৈরিতে আপাতত খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচশ কোটি ডলার। এলএইচসি যন্ত্রের মূলে আছে প্রায় এক হাজার ৬০০টি উচ্চ ক্ষমতাশালী তড়িতচুম্বক যা প্রোটনসহ বিভিন্ন আধানযুক্ত কণাগুলোকে একটি চক্রাকার সুড়ঙ্গে পরিচালিত করে। ২৭ টন ওজনের একেকটি চুম্বককে সব সময় পরম শুন্য তাপমাত্রার কাছাকাছি রাখতে হয়। এই হিমায়নপ্রক্রিয়ার জন্য প্রায় ১০ হাজার টন তরল নাইট্রোজেন ও ১২০ টন তরল হিলিয়ামের প্রয়োজন। বিশ্বের ৩৩টি দেশের ১৫২টি কম্পিউটার কেন্দ্রের সমন্বয়ে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার প্রসেসর দিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কম্পিউটার, যা এলএইচসির উপাত্ত বিশ্লেষণ করবে।

 

একবিংশ শতাব্দীর অন্যতম এই আবিষ্কার হয়তোবা বিশ্ব সৃষ্টির রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হবে। হিগস কণা কিভাবে ঈশ্বর কণা হিসেবে পরিচিতি পায় তা নিয়ে অনেক কথা। বলা হয় যে বিজ্ঞানীরা হিগস কণার সন্ধান করতে গিয়ে একপর্যায়ে বিরক্ত হয়ে “ GOD DAMN PARTICLE” নামে আখ্যায়িত করেন। পরবর্তীতে সংবাদ মাধ্যম একে ‘গড পার্টিকল’ বা ঈশ্বর কণা নাম দেয়।

 

আপাত দৃষ্টিতে অত্যন্ত নিরীহ হিগস কণা। এর না আছে কোন চার্জ, না আছে কোন বর্ণ, না আছে কোন স্পিন। তবে ভর অত্যন্ত বেশি, যা প্রোটনের চেয়ে ১৩০ গুণেরও বেশি ভারী। এর ভর 134.2 ও 136.3 amu । এর আয়ু 1.56×10−22 s । হিগস কণা নিয়ে এখনো অনেক তথ্য উপাত্ত জানার রয়েছে, এটি কি আসলেই ‘STANDARD MODEL’ সমর্থন করে কিনা। বলা হয় যে, এটিই প্রকৃতিতে আবিষ্কৃত ‘SCALAR PARTICLE’।

 

'হিগস বোসন' থিওরির ওপর কাজের জন্য এ বছর পিটার হিগস ও ফ্রাঁসোয়া ইংলার্টকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। বিজ্ঞানী সত্যেন বসু হয়তো স্বর্গে বসে সবকিছুই দেখছেন।

 

তথ্যসুত্রঃ উইকিপিডিয়া।

1 comment: