Tuesday, December 31, 2013

SSA-iFeri Science based Article and Sci-Fi Writing Competition 2013

 

 

প্রতিযোগিতায় স্বাগত। আমাদের প্রাথমিক বাছাই পর্ব শেষ করে এখন আমরা ভোটিং পর্বে আছি, অন্যদিকে চলছে বিচারকদের বিচারকাজ। অনলাইন ভোটিং পর্বে দুই বিভাগ থেকে নির্বাচিত হয়েছে দশটি করে বিশটি লেখা। এ বিশটির মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভোট এবং বিচারকদের নাম্বারের সমন্বয়ে দেয়া হবে গ্র্যান্ড পুরস্কারঃ ট্যাব। ভোট দেয়ার জন্য আপনাকে অবশ্যই আইফেরি ব্লগে একাউন্ট খোলা লাগবে। আপনি ম্যানুয়ালি ফর্ম ফিল আপ করার মাধ্যমে যেমন একাজ করতে পারেন, তেমনি ব্লগের ফেবসবুক প্লাগ-ইন ব্যবহার করেও কাজটি করা সম্ভব।

 

ভোটিং এর জন্য নির্বাচিত বিশটি লেখা এবং ব্লগ লিংক নিম্নে দেয়া হলঃ

 

 

নির্বাচিত প্রবন্ধ-সমূহের তালিকাঃ

 

১. এস্ট্রো-ভাইরোলজি

২. কার্বন ন্যানোটিউব

৩. পিঁপড়ার গল্প

৪. প্রাণীদের সামাজিক আচরণ ও বুদ্ধিমত্তা

৫. ভূ-তাপসম্ভাবনাময় নবায়নযোগ্য সবুজ জ্বালানি

৬. ফুগু–পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ

৭. ব্ল্যাক হোল

৮. ঈশ্বর কণা (দি গড পার্টিকল) কি পারবে সব অজানা প্রশ্নের উত্তর বের করতে?

৯. কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ: একটি সম্ভাবনাময় সমাধান

১০. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ন্যানোকণা

 

 

নির্বাচিত বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর তালিকাঃ

 

১. রোবটের প্রতারণা!

২. দিগন্তে

৩. নিঃসঙ্গ নিহান

৪. আত্মমৃত্যু

৫. ভিজিট টু দ্যা ইনফিনিটি

৬. নীল মানব সবুজ মানবী

৭. ভালো থেকো নাবিলা

৮. পৃথিবীর বুকে প্রত্যাবর্তন

৯. ফোর্স কন্ট্রোলার

১০. রিমোভেবল ডি.এন.এ

 

 

সব পাঠককে ভোটিং এ আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনার একটি ভোট আপনার প্রিয় লেখার লেখককে জিতিয়ে দিতে একটি ট্যাব... জলদি করুন।

ভোটিং এর শেষ তারিখঃ ১০ই জানুয়ারি, ২০১৪।

উল্লেখ্য, এই প্রতিযোগিতার পুরষ্কার বিতরণের তারিখ ও স্থান পরবর্তীতে ঘোষণা করা হবে। ধন্যবাদ।

 

যেকোন প্রয়োজনেঃ ইশতিয়াক (০১৭১০-৩১২৯১৫)।

Sunday, December 29, 2013

খাদ্যব্লগ: আনাম ভাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে- ২য় ও শেষ পর্ব

গত পর্বে গরম গরম নাস্তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। এবারে একটু পোলাও-বিরিয়ানি এবং ফাস্ট ফুড নিয়ে আলোচনা হবে।

কাচ্চি বিরিয়ানির প্রশ্নে এক নম্বরে থাকে সাত রওজার কোলকাতা কাচ্চি ঘর। এদের কাচ্চি ফার্স্ট ক্লাস। বাসমতি চালের ব্যবহার ও অতিরিক্ত তেল পরিহার বিরিয়ানির স্বাদকে করে অতুলনীয়। প্রথমে দাম একটু বেশি মনে হতে পারে কিন্তু খাবারের মান এবং পরিমাণ প্রত্যক্ষ করার পর আফসোস থাকার কথা নয়। কাচ্চির সাথে অত্যন্ত সুস্বাদু ফ্রি চাটনি দেয়া হয়। ওদের জালি কাবাবটাও মজা। আর খাওয়ার পর বাদামের শরবতটা মিস করা যাবে না। এখন পর্যন্ত আমার খাওয়া সেরা বাদামের শরবত ওদেরই। একটু বেশি চিনি ব্যবহার না করলে পুরান ঢাকার ডিসেন্ট পেস্ট্রি শপের বাদামের শরবতকে এক নম্বরে রাখা যেত। আর কোলকাতা কাচ্চি ঘরের জাফরান দেয়া ফিরনিও ব্যক্তিগতভাবে আমার খুব প্রিয়।

shahi-morog-polow-online-dhaka-guide

1

সুনামির কাচ্চির খুব নামডাক শোনা যায়। জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের কাছে অবস্থিত সুনামি রেঁস্তোরার কাচ্চি আসলেই ভালো। সামান্য চিনি মিশিয়ে স্বাদ বৃদ্ধি করা হয় যা এতে চমৎকার স্বাদ এনে দেয়। বিরিয়ানির মাংসের সাথে গ্রেভি কিছু একটা ব্যবহার করা হয় যা খেতে খুব ভালো লাগে। বিরিয়ানির সাথে ছোট গ্লাসে ফ্রি বোরহানি দেয়ার কথা কিন্তু প্রায়শ এটা শেষ হয়ে গিয়েছে এরকম বলা হয়ে থাকে। রাত ৮ টার দিকে সেরা বিরিয়ানিটা পাওয়া যায়। দুপুরে কেন যেন তাদের বিরিয়ানি অতটা ভালো হয় না। একই সাথে বলে রাখি, সুনামির নান এবং শিক কাবাবও বেশ ভালো।

মোরগ পোলাওয়ের কথা আসলে প্রথমে মনে পড়ে বেচারাম দেউড়ির হাজী নান্না মিয়ার কথা। নান্না মিয়ার শাহী মোরগ পোলাও আসলেই সেরা। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অতিরিক্ত লব সরবরাহ রীতি। কখনোই শুকনো খেতে হবে না। কিন্তু বর্তমানে অধিক তেলের ব্যবহার স্বাদ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। লালমাটিয়ায় মিরপুর রোডের ওপর অবস্থিত মুসলিমের মোরগ পোলাও আমার বিশেষ প্রিয়। দিনের পর দিন ধরে তারা মান অক্ষুণ্ণ রেখেছে। অধিক কাটতির কারণে দেরি করে গেলে সাধারণত মোরগ পোলাও পাওয়া যায় না।

তেহরীর কথা আগেই বলেছিলাম ধানমন্ডির তেহারী ঘরের কথা। লালমাটিয়ার স্বাদ তেহারী ঘরের তেহারীও অসাধারণ। স্বাদটা অন্যরকম। আর এদের ভুনা খিচুরি তো বিখ্যাত। তেহারী বা ভুনা খিচুরির সাথে আমার যেটা অবশ্যই লাগে সেটা হলো ওদের বোরহানী। দোকানের বোরহানীর মধ্যে ওদের বোরহানীটাই আমার এখন পর্যন্ত সেরা মনে হয়েছে। মাঝে মাঝে গিয়ে শুধু বোরহানী খেয়ে আসতে ইচ্ছা হয়।

tehari-online-dhaka

এবার একটু ফাস্ট ফুড আর বিদেশি খাবারের প্রসঙ্গে আসি। ফাস্ট ফুড খাওয়ার উপলক্ষ তৈরি হলে যাওয়া হয় হাতিরপুলের হেরিটেজ পিজ্জায়। ওদের শর্মা (বার্গার শেপ), ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এবং পিজ্জা আমার বেস্ট মনে হয়। যতবার গিয়েছি ততবারই স্বাদ অক্ষুণ্ণ ছিল। সম্প্রতি দাম একটু বাড়িয়েছে কিন্তু স্বাদের সাথে আপোষ করে নি। দাম অন্যান্য দোকানের চেয়ে এখনো কম। বিশেষ করে শর্মা হাউজের চেয়ে ওদের দাম কম এবং খাবার অনেক বেশি ভালো। সস এবং মায়োনেজ দেয়ার ব্যাপারে ওরা কার্পণ্য করে না। ওদের মতো মজার ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ এখন পর্যন্ত অন্য কোনো দোকানে পাই নি। আর পিজ্জার মধ্যে সবগুলো ফ্লেভারই মজা তবে বিশেষ করে পিজ্জা চিকেন, মিট লাভারস, বার্সেলনা বেশি খাওয়া হয় আমার। শর্মা বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাইজ খাওয়ার সময় ধনে পাতার সসটা চেয়ে নিতে ভুলবেন না। হেরিটেজের পাস্তাও খুব ভালো। পাস্তার মধ্যে চিকেন অ্যারাবিয়াটা আমার সবচেয়ে ভালো লাগে। তবে ওদের ফ্রাইড চিকেন, বার্গার না খাওয়াই ভালো। এগুলো ওদের চালু আইটেম না। ফ্রাইড চিকেনের মাঝে বিএফসি এখন পর্যন্ত এক নম্বরে। কেএফসির ফ্রাইড চিকেন ভালো লাগে না আমার।

thumb_600

 

গত পর্বে গ্রিল-শর্মার সেকশনে ভালো গ্রিলের কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ঢাকা শহরে স্বপ্নীল রেঁস্তোরার মতো এত ভালো গ্রিল চিকেন আর কোথাও খাই নি। পান্তপথে স্কয়ার হাসপাতালের একটু পাশেই এর অবস্থান। ওদের পরোটা বাসার মতো হয়। বেশ মজা। গ্রিল খাওয়ার সময় শিকের সালাদ চেয়ে নেয়া ভালো। আর একটা চমৎকার সস সরবরাহ করে ওরা গ্রিলের সাথে।

স্ট্রিট ফুড দিয়ে শেষ করি। ধানমন্ডি ৪ নম্বরে লেকের কাছে ৩৬ নম্বর বাসার সামনে অবস্থিত চটপটির গাড়ির ফুচকা এখন পর্যন্ত সেরা আমার কাছে। ৩০ টাকায় ৯ টা ফুচকা দেয়। মিষ্টি টকটা অত্যাধুনিক বাংলায় ‘অস্থির’। চটপটিও ভালো।

fuchka2

ঝালমুড়ি তো আমরা অনেকেই খাই কিন্তু ছোলা মাখা যে অসাধারণ হতে পারে তার প্রমাণ শুক্রাবাদ বাস স্ট্যান্ডের সামনে অবস্থিত সম্প্রতি ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি রাখা মামার ছোলা। ঐ ছোলা আমি কখনো একটা খেতে পারি নি। একটা খেলে পরেরবার খেতেই হবে। ঐ মামার অদূরেই একজন দাঁড়ায় কোরিয়ান প্যান কেক নিয়ে। ইদানিং এটা বেশ নাম করেছে। কোরিয়ান প্যান কেক জিনিসটা বেশ স্বাস্থ্যসম্মত, সুস্বাদু ও সাশ্রয়ী মনে হয় আমার কাছে। ২০ টাকা মূল্যের মজাদার একটি কেকে একটির বেশি ডিম থাকে।

খাবার-দাবারের নিয়ে কথাবার্তা আসলে দুই পোস্টে শেষ করা খুব কঠিন। অনেক খাবারের কথা বাদ থেকে যায়। ভবিষ্যতে অন্য কোনো পোস্টে খাদ্যবিলাস নিয়ে হয়তো আবার হাজির হবো। ততক্ষণ এগুলো টেস্ট করতে থাকুন। আর হ্যাঁ, শেষে একটা বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দিই। বাইরের খাবার খুব ফ্রিকোয়েন্টলি না খাওয়াই ভালো।

 

ছবি কৃতজ্ঞতা: ইন্টারনেট

Thursday, December 26, 2013

খাদ্যব্লগ: আনাম ভাইয়ের অভিজ্ঞতা থেকে- ১ম পর্ব

দু-তিন বছর ধরে বিভিন্ন বাংলা ব্লগসাইট এবং ফেসবুকে ঢাকার কোথায় কোন খাবার ভালো সেটা নিয়ে একটা বড়সড় লিস্ট দেখা যায়। খুব নামীদামী আলিশান রেস্টুরেন্ট না বরং ঢাকার অলিতে গলিতে থাকা ছোটখাটো খাবারের দোকানের নামই সেখানে চোখে পড়ে বেশি। নামীদামী সব রেস্টুরেন্টের খাবার মোটামুটি একই স্বাদের। কিন্তু ছোটখাটো অনেক রেঁস্তোরা বা হোটেল রয়েছে যেগুলোতে অসাধারণ খাবার পাওয়া যায়। একজন খাদ্যবিলাসী হিসেবে আমি চেষ্টা করি এ ধরণের বিভিন্ন দোকানে খেতে। বন্ধু-বান্ধব এবং বড় ভাইদের কল্যাণে এ ধরণের বেশ কিছু দোকানে খাওয়ার সুযোগ হয়েছে। মাঝারী থেকে শুরু করে সাইনবোর্ডবিহীন এ সকল খাবারের দোকান নিয়েই আমার অভিজ্ঞতা থেকে আজকে কথা বলবো। খাদ্যবিলাসীরা রেডি হয়ে যান তাহলে।

দুপুরের বা রাতের খাবার কিংবা সন্ধ্যার নাস্তা পরিবারের সদস্য বা বন্ধুবান্ধবের সাথে আমরা শখ করে বাইরে খেয়ে থাকি। ইউনিভার্সিটিতে ক্লাস শেষে বন্ধুদের দল বেরিয়ে পড়ে পুরান ঢাকায় তেহারী, বিরিয়ানী আর মোরগ-পোলাও খেতে। কিন্তু সকালের নাস্তা যে খুব আয়েশ করে বাইরে খাওয়া যায় তা আবিষ্কার করেছেন শ্রদ্ধেয় মইন ভাই। তিনি আমাকে বিশেষ স্নেহ করেন। তাই প্রায়শ’ সকাল ৭টা বা ৮টার দিকে ফোন করে বলেন, “১০ মিনিট সময়। বেরিয়ে পড়ো”। অতঃপর একেকদিন একেক হোটেলে চলে নাস্তাবিলাস। শীতের ভোরে এলিফেন্ট রোডের মালঞ্চ, ধানমন্ডি ২ নম্বরের স্টার বা ৬ নম্বরের নতুন দোকান কাবাব ভিলেজে হয় আমাদের নাস্তা। প্রথমেই বলে রাখি স্টারের নাস্তার অবস্থা এখন যাচ্ছেতাই। অতিরিক্ত তেল এবং স্বাদবিহীনতার কারণে স্টার এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেব। মালঞ্চের পরোটা আর খাসি ভুনা খুব মজা। আর কাবাব ভিলেজের মুরগির স্যুপ এবং মিক্সড তরকারি অসম্ভব সুস্বাদু। যে কথা না বললেই না সেটা হলো কাবাব ভিলেজের স্পেশাল নান এবং বাটার নান। ৩০ টাকা মূল্যের এই নানগুলা সত্যিই অনেক ভালো। তুলতুলে, সুঘ্রাণযুক্ত একটা নান মুরগির স্যুপে ডুবিয়ে মুখে পুরলেই জীবনে আর কী লাগে? নাস্তা শেষে স্টার এবং কাবাব ভিলেজ উভয়ের চা-ই খুব ভালো।

সন্ধ্যার নাস্তাটা একটু মোগলাই হওয়া চাই। মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেটে অবস্থিত নিউ নাহার হোটেলের জুড়ি মেলা ভার। ১৫ টাকা মূল্যে তারা যে নান দেয় অনেক নামকরা রেস্টুরেন্টে ৫০ টাকাতেও সেই নান হয় না। নানের সাথে শিক কাবাব, চিকেন ঝালফ্রাই, বিফ চাপ, কালা ভুনা, গরুর বট- সবই চলতে পারে। সাথে দই মিশ্রিত সালাদ নিতে ভুলবেন না যেন। ঝোল শেষ হলে রিফিল হবে অনেকখানি। নান আর ঝাল ফ্রাইয়ের ঝোল বা এক্সট্রা বট চলতেই থাকবে। আর খাওয়া শেষে এক কাপ মালাই চা থাকতেই হবে। আহা! জাকির হোসেন রোডের মাঞ্জারের দোকান নিয়ে নতুন করে কী বলবো? বছর দুয়েক আগে এ দোকান আবিষ্কার করি। পরে মোহাম্মদপুর অঞ্চলে বড় হওয়া শ্রদ্ধেয় জামি ভাইয়ের কল্যাণ ও অর্থায়নে (:p) জানতে পারি তাদের খ্যাতির কথা। দোকানের উপরে সাইনবোর্ড পর্যন্ত নেই। ফিটফাট বৃদ্ধ মাঞ্জার ভাইই দোকানের সাইনবোর্ড। এ দোকানের সবকিছুই আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে। পরোটা, লুচি, শিক কাবাব, চিকেন টিক্কা। এদের গরুর পায়া এবং গুর্দা কাবাবও শুনেছি চমৎকার। কিন্তু এখনো খাওয়া হয় নি। তবে মাঞ্জারের চিকেন টিক্কা দোকানে খাওয়া টিক্কার মধ্যে সেরা। আর সাথে দইয়ের যে আনলিমিটেড সালাদ সাপ্লাই থাকে তার কথা আর না বলি। একবারে গিয়ে চেখে দেখলেই বুঝবেন। সেখানে আরো আছে ঝাল ফ্রাই এবং গরুর ঝুরা মাংস।

ধানমন্ডির ১৩ নম্বর রোডে সোবহানবাগ মসজিদের কাছে গলির মুখে রয়েছে পর পর তিনটি দোকান। তার মাঝে তেহারী ঘর তো খুবই বিখ্যাত। এদের তেহারী আমার খাওয়া সেরা তেহারী বলা যায়। ভুনা খিচুড়িটাও এক্সিলেন্ট। তবে ভুলেও এদের মোরগ-পোলাও ছুঁয়ে দেখা যাবে না। তেহারীর সাথে পেঁয়াজ-মরিচ-শসার মাখানো সালাদ অন্যতম উপসঙ্গ। তেহারী ঘরের পাশেই রয়েছে কস্তুরী সুলতান নামে গ্রিল আর শর্মার একটি দোকান। ওদের চিকেন শর্মা আমার খাওয়া সেরা শর্মা। এক বসায় ৫টা শর্মা খাওয়া রেকর্ড আছে আমার। শর্মার সাথে মেয়োনেজ আর সস মেশানো যে আনলিমিটেড বস্তুটি ওরা সরবরাহ করে সেটির তুলনা হয় না। আর শর্মার ওপরে ছিটিয়ে নেয়ার জন্য থাকে বিশেষ কাবাব মসলা। মিরিন্ডার চুমুকে চুমুকে চলতে থাকে শর্মায় কামড়। তেহারী ঘর আর কস্তুরী সুলতানের পাশে রয়েছে আরেকটি তেহারীর দোকান হাজী উজ্জ্বল বিরিয়ানী হাউজ। ওদের তেহারী তেমন ভালো না। তবে ওদের পুরি এবং সিঙ্গারা আমার কাছে ক্লাস মনে হয়। সকালে ভাজে সিঙ্গারা আর সন্ধ্যায় পুরি।

ধানমন্ডি ৮ নম্বরে রবীন্দ্র সরোবরের গরুর চাপ মোহাম্মদপুরের বিহারী ক্যাম্পের চাপের চেয়ে বহুগুণ ভালো। ওদিকে গেলে ঐ চাপ না খেয়ে ফেরা খুব কঠিন। অত্যন্ত সুস্বাদু চাপের সাথে সুস্বাদু বাচ্চা লুচি কিন্তু চোখের নিমিষে শেষে হতে থাকে। আর সাথে টক মেশানো সালাদ তো রয়েছেই।

(চলবে)

Monday, December 23, 2013

চলছে জব্বর কেনাকাটার মৌসুম, বাড়ছে ভুয়া ই-কমার্স সাইটের দৌরাত্ম্য: যেভাবে নকল পণ্যে সয়লাব প্রতারক ওয়েবসাইট থেকে বাঁচবেন

অবকাশ মৌসুমে ক্রেতারা ঝুঁকছেন কেনাকাটার দিকে, প্রতারকরাও কিন্তু বসে নেই।

যেহেতু বছরের এ সময়টাতে খুচরা বিক্রেতারা সর্বোচ্চ মূল্যছাড় দিয়ে থাকেন সেহেতু প্রতারকরাও এ সময়টাকেই বেছে নেয় ভুয়া অনলাইন সাইটের মাধ্যমে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য।

ভুয়া ই-কমার্স সাইটগুলো আজকাল ভালোই কামিয়ে নিচ্ছে। কারণ ইন্টারনেটের এ যুগ প্রতারক ব্যবসায়ীদের ফুলে-ফেঁপে উঠতে যথেষ্ঠ সহায়ক।

মার্কমনিটরের তথ্যানুযায়ী, অনলাইনে বিশ্বজুড়ে নকল ও পাইরেটেড পণ্যের রয়েছে ৩৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিশাল বাজার। উল্লেখ্য, মার্কমনিটর বিভিন্ন ব্র্যান্ডপণ্যের সুরক্ষায় সেবা ও সমাধান প্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠান।

মার্কমনিটরের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা ফ্রেড ফেল্ডম্যান অনলাইনের ভুয়া মার্কেটের একটি চিত্র তুলে ধরেছেন এবং সুকৌশলী স্ক্যামারদের চিহ্নিত করার জন্য ক্রেতাদের প্রয়োজনীয় টিপস দিয়েছেন। আর এ টিপসগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরছে iferi.com ।

অবকাশ মৌসুমে ভুয়া শপিং সাইটগুলো কতটা তৎপর থাকে?

নকল পণ্যের কেনাবেচা এ মৌসুমে অন্যান্য পণ্যের মতোই বেশি হয়ে থাকে। বৈধ পণ্য বিক্রয়কারী ও নকল পণ্য বিক্রয়কারী উভয় সাইটের বিক্রিই এ সময়ে বেশি হয়ে থাকে।

এ মৌসুমে প্রতারকরা কী কৌশল অবলম্বন করে?

বৈধ পণ্য বিপণনকারীদের মতোই প্রতারকরা ডিজিটাল মার্কেটিং এর সেরা কৌশলগুলোই ব্যবহার করে থাকে। ক্রেতারা সাধারণত যে শব্দগুলো দিয়ে সার্চ করে প্রয়োজনীয় পণ্য খুঁজে বের করে সে ধরণের শব্দ তারাও তাদের সাইটে যুক্ত করে ক্রেতাদের নিজেদের সাইটের দিকে নিয়ে আসে। কেনাকাটার এ মৌসুমে তারা আরো যেটা করে সেটা হলো ক্রেতাদের ক্রয়ে উৎসাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হানা দেয়। বিশেষ করে সেই মাধ্যমগুলোতে যেগুলোতে প্রচুর সম্ভাব্য ক্রেতা ভিড় করে যেমন- Pinterest।

প্রতারকরা পিন্টারেস্টের মতো সাইটগুলোতে ব্র্যান্ডের সাইট থেকে নেয়া আসল পণ্যের ছবি দেয় কিন্তু তাকে লিংক করে রাখে ভুয়া পণ্য বিক্রয়কারী সাইটের সাথে। নিজের চোখে দেখার জন্য আপনার পছন্দের কোনো জুতা বা খেলাধুলার সরঞ্জাম প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ডের পণ্যের নাম দিয়ে সার্চ করে দেখতে পারেন। আর, পণ্যের আগে cheap বা discount শব্দগুলো জুড়ে দিতে ভুলবেন না যেন। বহু ভুয়া সাইট হাজির হয়ে যাবে। প্রতারক বিক্রেতারা এ বিষয়ে সিদ্ধহস্ত। এই সময়টাতে সবাই যখন সাধ ও সাধ্যের সমন্বয়ে ব্যস্ত তখন তারাও ব্যস্ত নকল ও অবৈধ পণ্য ক্রেতাদের গছিয়ে দিতে।

অবকাশ মৌসুমে কোন কোন পণ্যে সাধারণত ছাড় দেয়া হয়?

জুতা, তৈরি পোশাক, বিলাসদ্রব্য ও আনুষঙ্গিক অন্যান্য ডিজাইন ভিত্তিক পণ্যে এই সময়টাতে ছাড় দেয়া হয়। আর তাই প্রতারকদের টার্গেট হয় এসব পণ্যকে ঘিরেই। এ সকল ক্যাটাগরির নামীদামী ব্র্যান্ডগুলোই প্রতারকদের মূল লক্ষ্য। “really big brand” “cheap” “Christmas” এসব কি-ওয়ার্ড একত্রে লিখে সার্চ দিলে ভুয়া পণ্যে বিক্রির একগাদা সাইটের ঠিকানা এসে হাজির হবে। ইলেক্ট্রনিক পণ্যও কিন্তু প্রতারকদের অন্যতম টার্গেট।

কীভাবে গ্রাহকরা ভুয়া ই-কমার্স সাইটগুলোকে চিহ্নিত করতে পারবে?

  • মূল্য: মূল্য যদি অপ্রত্যাশিত রকমের কম হয় তাহলে তা সন্দেহজনক। গ্রাহককে এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

  • সাইটটি চেহারা: কিছু কিছু সাইটকে প্রথম দর্শনে পেশাদার মনে হলেও ব্র্যান্ড-নকলকারী ভুয়া সাইটগুলো সাধারণত About বা FAQ পেইজের সতর্ক থাকে না। সেখানে গেলে তাদের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যেতে পারে।

  • অতিরিক্ত মূল্যহ্রাসের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন: অপ্রত্যাশিত রকমের ডিসকাউন্ট কিন্তু সন্দেহজনক। প্রতারকরা দামের ব্যাপারে খুব ছাড় দিতে চাইলেও পণ্যের মান ও টেকার প্রশ্নে ইতস্তত করতে থাকে।

  • দিন কে দিন নকল পণ্য সরবরাহকারী সাইটগুলো নিজেদের পরিশীলিত ও বৈধ চেহারা দিয়ে যাচ্ছে। একজন সাবধানী ক্রেতার উচিৎ হবে সাইটের লিংকগুলো (প্রাইভেসি পলিসি, অ্যাবাউট আস, রিটার্ন পলিসি ইত্যাদি) ভালোভাবে চেক করা। সেই সাথে সার্চ ইঞ্জিনে ঐ সাইটের নামের সাথে “Scam” শব্দটি জুড়ে দিয়ে সার্চ করে দেখা যে পূর্বে অন্য কোনো ক্রেতা ঐ সাইট সম্পর্কে কোনো অভিযোগ করেছেন কিনা। অনেকগুলো ব্র্যান্ড তাদের সাইটে নকল পণ্য বিক্রয়কারী সাইটগুলোর তালিকা দিয়ে রাখে। সেগুলোও চেক করা যেতে পারে।

  • রিটার্ন পলিসি ভালো করে জেনে নিতে হবে। খ্যাতিসম্পন্ন সাইটগুলো প্রথমেই স্পষ্ট করে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য দিয়ে দেয়।

  • প্রাইভসি পলিসি নিয়ে ঘেঁটে দেখতে হবে। নকল ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রয়কারী সাইটগুলো শক্তিশালী প্রাইভেসি পলিসি তৈরির পেছনে সময় ব্যয় করে না।

  • নাম-ডাক কেমন? ঐ সাইটের নাম কি স্ক্যাম সতর্ককারী কোনো সাইটের তালিকায় রয়েছে? “vendor+scam” লিখে সার্চ করে দেখতে হবে কী ফল আসে। সার্চ দেয়ার ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকতে হবে: প্রতারকরা নিজেদের গা বাঁচানোর জন্য মৌসুম পরিবর্তনের সাথে সাথে কি-ওয়ার্ড বদলে ফেলে। মার্কমনিটরের একটি অনুসন্ধানে দেখা গিয়েছে, মৌসুম ভিত্তিক ব্যবহৃত সার্চ টার্মগুলো দিয়ে সার্চ করলে যে সকল পেইড অ্যাড হাজির হয় তার ১৭% ই সন্দেহজনক নকল ও পাইরেটেড পণ্যের সাইট। আর পণ্যের নামের আগে “cheap” অথবা “discount” শব্দগুলো জুড়ে দিয়ে সার্চ করলে শতকরা ৫০ ভাগ পাইরেটেড বা নকল পণ্যের সাইট এসে হাজির হয়।

  • অ্যাড্রেসবারে ওয়েবসাইটের নামের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। প্রতারকরা প্রায়ই ইচ্ছা করে সম্ভাব্য ভুল বানানে নামকরা ব্র্যান্ডের নাম.com এভাবে ডোমেইন কিনে রাখে যাতে করে অ্যাড্রেসবারে টাইপ করার সময় ভুল হলে সরাসরি তাদের ভুয়া ই-কমার্স সাইটে গ্রাহক পৌঁছে যায়। টাইপের ভুলে অনেক সময় অ্যাডাল্ট সাইটেও চলে যেতে হতে পারে। এ সবই প্রতারকদের কারসাজি।


নিজের কষ্টের পয়সা দিয়ে মানসম্মত আসল পণ্যটি কেনাই তো ভালো তাই না? গ্রাহকগণ যেন কখনোই ভুয়া পণ্য বিক্রিকারী কোনো ই-কমার্স সাইট দ্বারা প্রতারিত না হন সে লক্ষ্যেই আজকে iferi.com কর্তৃক এ আয়োজন। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত অনলাইন ডিপার্টমেন্টাল স্টোর iferi.com ২০১১ সাল থেকে বিশ্বস্ততার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। Iferi সব সময় চায় গ্রাহকদের কাছে গ্যারান্টি সহকারে মানসম্মত পণ্যটি পৌঁছে দিতে। পণ্যের মানের সাথে কখনোই আপোষ না করায় সম্মানিত গ্রাহকরাও iferi.com এর ওপর আস্থা রাখছেন।

Friday, December 20, 2013

ভাল খারাপ বিচারে স্বার্থপরতা

বেশিরভাগ মানুষ মনে করে যে তারা নিজেরা অন্য মানুষের থেকে কোন না কোন দিক থেকে এগিয়ে আছে (above average)। একজন চোরও নিজেকে বলে যে সে পরিস্থিতির কারণে চুরি করতে বাধ্য হচ্ছে। একজন ঘুসখোর নিজেকে বলে বেতনের টাকায় এই যুগে চলা সম্ভব না- সেজন্য সে ঘুস খেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু ওই চোর বা ঘুসখোরকে যদি আকজন চোর বা ঘুসখোরের কথা জিজ্ঞেস করা যায় তাহলে সে বলবে ওই লোকটার আসলে চরিত্রই এমন। সে পরিস্থিতির কারনে এরকম করতে পারে সেটা চিন্তা করার সম্ভবনা অনেক কম।

এটা যেমন ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে সত্য তেমনি সমস্টিগত ক্ষেত্রেও সত্য। আমার নিজের পরিবার, গোত্র, দেশের মানুষ অন্য সবার থেকে চারিত্রিক দিক থেকে ভাল। অন্য কেউ রাস্তায় ইভটিজিং করলে সে জঘন্য খারাপ, কিন্তু নিজিের পরিবারের কেউ করলে সেটা দুষ্টামি। সাইকোলজির পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ultimate attribution error [১]. এটার কারণে আমার পছন্দের দল যখন খারাপ কাজ করে তখন সেটা আমার চোখে পড়ে না। চোখে আংগুল দিয়ে দেখিয়ে দিলে আমি গলার রগ মোটা করে অন্য দলের এরচেয়ে খারাপ কাজের উদাহরণ দিয়ে পছন্দের দলকে অপেক্ষাকৃত ভাল প্রমানে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নিজের মত বা বিশ্বাসের স্বপক্ষে যুক্তি খোঁজার জন্য আমরা মতের বিপক্ষ যায় এমন তথ্যপ্রমান চোখের সামনে থাকলেও দেখতে পাই না[২]।

আমরা যারা বিভিন্ন দলের সাপোর্টার তারা এই তথ্যগুলো মনে রাখলে যে দলের সাপোর্ট করি সেই দলের ভুলগুলোকে দেখতে পাব আশা করি। আর আপনি ব্রাজিলের সাপোর্টার হলে সারাজীবন তাদের সাপোর্টার হয়ে থাকার দরকার নেই। কি কারণে একটা দরকে আপনি আপনার সপোর্ট দিচ্ছেন সেটার একটা পরিস্কার ধারণা মনের মধ্যে থাকা চাই। কি কারণে অন্য দলকে কি কারনে অপচন্দ করেন সেটাও জানা দরকার। সেই কারনগুলো যদি উল্টে যায় তাহলে আপনার সাপোর্ট উল্টে যাওয়াই যুক্তিসংগত।

ধরা যাক আপনি আরসেনাল ফুটবল ক্লাবের সাপোর্টার। কেন সাপোর্ট করেন? কারন ক আর খ ওই দলে খেলে এবং তাদের খেলা আপনার ভাল লাগে। আর চেলসি টিম আপনার পছন্দ না। ওইখানে যদিও গ আর ঘ খেলে কিন্তু ওরা মাঝে মধ্যে ভাল খেললেও সেটাকে ভাগ্য বলতে হবে [১]।  ঠিক আছে ধরে নিলাম আপনার কথা সত্য। এখন যদি ক আর খ চেলসিতে যোগ দেয় তাহলে কি আপনি চেলসি সাপোর্ট করা শুরু করবেন? কিংবা গ আর ঘ যদি ক আর খ মত এবং ক আর ঞ যদি গ আর ঘ এর মত খেলতে শুরু করে? আপনি তো শুরুতে এই যুক্তি দেখিয়েছেন যে ভাল খেলার জন্য আমপনি আরসেনালকে সাপোর্ট করেন। অার্সেনাল যদি নিয়মিত খারাপ খেলা শুরু করে তাহলে কেন আপনি তাকে সাপোর্ট দিয়েই যাবেন?

এখন আসুন মানব মনস্তের আরকেটি দিক সম্পর্কে জানি। করির সাহেব ওজন কমাতে চান। তিনি সকালে উঠে ১ ঘন্টা ব্যায়ম করলেন। এখন দুপুরে খাবার সময় বিরিয়ানি অর্ডার দিয়ে দিয়ে দিলেন। জাবির সাহেব অফিসে গিয়ে সকালে ২ ঘন্টায় বেশ ভাল কাজ করলেন। তিনি বিকালে কোন কাজই করলেন না। জামিল সাহেব নিয়মিত নামাজ পড়েন কিন্তু অফিসে একটু আধটু ঘুস নেন। সেটা নিয়ে তার একটু অস্বসবতি আছে - কিন্তু যা দিনকাল পড়েছে বেতনের টাকায় সংসার চালানো দায়। কেউ যদি কোন একটা ভাল কাজ করে তাহলে পরবরতীতে তার একটা খারাপ কাজ করতে কম বাধে। একটা ভাল কাজের মাধ্যমে নিজেকে কিছুটা ভাল এইটা নিজের কাছে বলতে পারলে পরবর্তীতে একটা খারাপ কাজ করতে মনে কোন দ্বিধা আসে না। এটাকে বলা হয় মোরাল লাইসেন্সিং ইফেক্ট [৩]।

মোরাল লাইসেন্সিং ইফেক্ট এর আরেকটি দিক হল অন্য লোকে যদি খারাপ কাজ করে সেটা আমার জন্য হালার হয়ে গেল এটা মনে করা। ঘুস কি শুধু আমি খাই? অফিসের কোন লোকটা খায়না বলেন দেখি?

মনে রাখতে হবে একটা ভাল কাজ করলেই কেউ একটা খারাপ কাজ করার লাইসেন্স পায় না। আপনি যদি ওজন কমাতে চান তাহলে সকালে একটা বৃদ্ধ লোককে রাস্তা পার করে দেয়ার কারণে চিকেন বিরিয়ানি খাওয়ার লাইসেন্স আপনি পান নাই। একজন সমাজসেবক ঘরে কাজের লোকের গালে চড় দিলে সেটা অবশ্যই অপরাধ। একজন মওলানা মানুষ খুন করে ফেললে সেটা একজন ডাকেতের মানুষ খুনের চেয়ে কোন অংশেই কম অপরাধ না। ক্লাসের ফার্স্ট বয় নকল করলে সেটা ফেলটু ছাত্রের নকল করার চেয়ে কম অপরাধ হয়ে যায় না।

একটা ভাল কাজ করলে একটা খারাপ কাজের অপরাধ ক্ষমা হয়ে যায় না। সবাই যদি একটা খারাপ কাজ করে তবুও সেটা খারাপ। সেটা আমি যদি করি তাহলে আমিও খারাপ হয়ে গেলাম। দুনিয়ার সব মানুষ যদি করে তবুও। এটা যেমন পুর্বের ভাল কাজার জন্য সত্য। তেমনি পরের ভাল কাজের জন্যও সত্য। খারাপ কাজ করে অনেক ভাল কাজ করলেও পূর্বে করা খারাপ কাজ খারাপই। সেটাকে ভাল মনে করে আনন্দিত হওয়ার কোন কারন নাই।

তথ্যসূত্রঃ
[১]: http://en.wikipedia.org/wiki/Ultimate_attribution_error
[২]: http://en.wikipedia.org/wiki/Cherry_picking_%28fallacy%29
[৩]: http://en.wikipedia.org/wiki/Self-licensing

Wednesday, December 18, 2013

অবসরে ঘুরে আসুন মজার কিছু ওয়েবপেইজ থেকে

হরতাল-অবরোধে কোনোভাবে জান হাতে নিয়ে অফিসে যেতে হচ্ছে। বেড়াতে যাওয়া তো সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। অনেকেই একঘেয়েমি জীবন কাটাচ্ছেন। শহরের বাইরে ঘুরতে যাওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। গেলে ফিরে আসাও এক বিরাট টেনশন। লাগাতার অবরোধ তো চলছেই। অবরোধ থাকুক বা না থাকুক, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ চলছেই। এর মধ্যে বাসায় থাকাই সবচেয়ে নিরাপদ। বাইরে বেড়ানো হয়তো হচ্ছে না, তাই বলে ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াতে কিন্তু বাধা নেই কোনো। এখন পর্যন্ত সাইবার জগতে হরতাল যেহেতু দেওয়ার কোনো পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় নি তাই যত দিন নেট জগত অবরোধমুক্ত ততদিন নেটেই ঘুরে বেড়ানো যাক মজার এবং ইন্টারেস্টিং কিছু সাইটে। সেরকম ইন্টারেস্টিং সাইট নিয়ে আজকের আয়োজন। অনেক সাইটের সাথে হয়তো ইতিমধ্যেই আপনারা পরিচিত, অনেকগুলো হয়তো অজানা।

১। http://www.cleverbot.com

Cleverbot.com - a clever bot - speak to an AI with some Actual Intelligence_ - 2013-12-18_17.10.44

এ সাইটে গিয়ে কথোপকথন চালাতে পারবেন তবে তা কোনো মানুষের সাথে নয়, কম্পিউটারের সাথে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করে অ্যাপ্লিকেশনটি বানানো হয়েছে। আপনি যে কথাই বলুন না কেন, এমনভাবে ক্লেভারবট আপনাকে উত্তর দিবে যে মনে হবে সে বোধহয় আপনার সব কথাই বুঝতে পারছে। এমনকি সে অনেক সময় জোকও করে বসে।

২। http://www.gillesvidal.com/blogpano/paris.htm

আমার মতো যাদের প্যারিস যাওয়া সুযোগ হয় নি তাদের জন্য। আইফেল টাওয়ারের চূড়া থেকে প্যারিস শহর দেখতে চান? তাহলে ঘুরে আসুন এই সাইট থেকে। নিরাশ হবেন না।

৩। http://twistedsifter.com

মূলত একটি ছবি ব্লগ। তবে এখানে অনেক অনেক মজার মজার পোস্ট পাওয়া যায়। যেমন- নিত্যদিন কাজে লাগে এমন কিছু লাইফ হ্যাক নিয়ে যেমন পোস্ট রয়েছে তেমনি রয়েছে “পারফেক্টলি টাইমিং” এ তোলা একগাদা মজার ছবি নিয়ে পোস্ট। দেখতে দেখতে সময় কাবার হয়ে যায়।

http://twistedsifter.com/2013/01/50-life-hacks-to-simplify-your-world  লিংকে গিয়ে জীবনকে সহজ করার কিছু কৌশল ছবিতে দেখানো হয়েছে। পাশে ‘পপুলার পোস্ট’ অংশে আরো মজার ছবি নিয়ে পোস্ট দেখতে পাবেন। আর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময় তোলা চমৎকার সব ছবিও পাবেন ওয়েবসাইটটিতে।

৪। মাত্র দুই সেকেন্ডে টি-শার্ট ভাঁজ করার ভিডিও দেখুন নিচের লিংকে গিয়ে।
http://www.youtube.com/watch?v=dZRd5ulBna4

৫। www.earthcam.com

এখানে গিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে বসানো সিকিউরিটি ক্যামেরায় ধারণকৃত ভিডিও সরাসরি ঘরে বসে দেখতে পারবেন। ঘুরে আসতে পারবেন নিউ ইয়র্কের টাইমস স্কয়ার বা ব্রাজিলের রিও ডি জেনেরিও থেকে।

৬। http://watchthiscam.com/blog/2011/09/21/traffic-cams-live/

এখানে গিয়েও ট্রাফিক চলাচল দেখতে পারবেন আপনারা।

৭। ইউটিউবে লাইভ চ্যানেল দেখা যায়। সেজন্য আপনাকে যেতে হবে

www.youtube.com/live লিংকে। ক্যাটাগরি অনুসারে চ্যানেল ভাগ করা আছে। মিউজিক, নিউজ, স্পোর্টস, কমেডি ইত্যাদি।

৮। বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো টিভি চ্যানেল লাইভ দেখতে পারবেন http://www.jagobd.com এ।

৯। ক্রিকেটপ্রেমীদের জন্য একটি সাইট হলো http://www.cricket-365.tv/ । বছরের যেকোনো সময় যেকোনো চ্যানেলে অনুষ্ঠিত ক্রিকেট ম্যাচ এখানে লাইভ স্ট্রিমিং হয়।

১০। শীতকাল। বৃষ্টি তো হয় না। খুব ইচ্ছে করছে বৃষ্টির শব্দ শুনোট। একটা বর্ষণমুখর সময় কাটাতে। প্রযুক্তির কল্যাণে তাও আজ সম্ভব। চলে যান http://www.rainymood.com/  এ।

১১। বিনামূল্যে অনলাইনে এমআইটির কোর্স করতে পারেন যে কেউ। বিভিন্ন সাবজেক্টের নামজাদা শিক্ষকগণ এ সকল কোর্সগুলো পরিচালনা করে থাকেন। কোর্স করতে চাইলে ঘুরে আসুন http://ocw.mit.edu/courses/ থেকে।

১২। গুগল ডট কম এ গিয়ে টাইপ করুন inurl:”CgiStart?page=” । এরপর সার্চ রেজাল্টগুলো ক্লিক করে আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের সিকিউরিটি ক্যামেরায় দৃশ্য দেখতে পারবেন। এমনকি ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে ক্যামেরা নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন।

১৩। http://9gag.com

চরম হাস্যরসাত্মক ট্রোলের ওয়েবপেইজ হিসেবে 9gag.com খুবই জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সম্প্রতি পেইজটিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নিয়ে মজার একটি ট্রোল সামাজিক নেটওয়ার্কের সাইটগুলোতে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।

aBKdqNx_700b

১৪। http://www.bgfl.org/bgfl/custom/resources_ftp/client_ftp/ks2/music/piano/

এই লিংকে গিয়ে অনলাইনে পিয়ানো বাজাতে পারবেন। আমি আন্দাজে টিপাটিপি অসাধারণ কিছু সুরও তৈরি করে ফেলেছিলাম :p

১৫। http://9gag.tv/v/1363

নাইনগ্যাগ ডট টিভিতে গিয়ে চমৎকার কিছু সৃজনশীল বিষয় নিয়ে ভিডিও দেখতে পাবেন। কোনোটা চরম হাসির, কোনোটা প্রচণ্ড ইন্সপায়ারিং।

১৬। সবশেষে ইউটিউব নিয়ে একটা মজা। কৌশলটি আমার বন্ধু বায়েজিদের কাছ থেকে শিখেছিলাম। ইউটিউবে ভিডিও বাফারিং হওয়ার সময় স্ক্রিনের মাঝখানে অপেক্ষা বোঝানোর জন্য কিছু ছোট ছোট বৃত্ত ঘুরতে থাকে। সেই সময় আপনি যদি কি-বোর্ডের আপ-ডাউন-লেফট-রাইট অ্যারো কিগুলো চাপতে শুরু করেন তাহলে বৃত্তগুলো দিয়ে “স্নেক” খেলতে পারবেন।

blog-post-2-pic11

snake-youtube

অবরোধে নেট নিয়ে গুঁতোগুঁতি করুন। অবসর আনন্দে পার করুন। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার জন্য ফেসবুক তো আছেই।

তথ্যসূত্র: নেটে গুঁতোগুঁতি

Saturday, December 14, 2013

শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবসের শিক্ষা

এফবিসিসিআই এর কোনো এক সভাপতি একবার বলেছিলেন, “শিক্ষা নয়, ব্যবসায়কে জাতির মেরুদণ্ড ঘোষণা করতে হবে”। ভদ্রলোককে আমি দোষ দেই না। যে যার জ্ঞানবুদ্ধি মতো মন্তব্য করবে সেটাই স্বাভাবিক। স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যে উন্নতি কিন্তু কম হয় নি। বহু শিল্প কল-কারখানা গড়ে উঠেছে, বিদেশে রপ্তানি বেড়েছে, জন্ম হয়েছে অনেক সফল ব্যবসায়ীর। কিন্তু তারপরও দেশ হিসেবে আমরা কিন্তু খুব একটা এগিয়ে নেই। কারণ কী? কারণ, শিক্ষা। কেন কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে শিক্ষার অগ্রগতি হয় নি এ প্রশ্নের উত্তর একটাই। মুক্তিযুদ্ধে বুদ্ধিজীবি হত্যা। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা রাও ফরমান আলির লিস্ট ধরে ধরে দেশের বুদ্ধিজীবিদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে গিয়েছে বদর বাহিনী ও আল শামসের লোকজন। যারা শিক্ষার আলো ছড়াবেন তাদেরকে সরিয়ে দিলে ঐ রাজনীতি আর ব্যবসায় দিয়ে দেশের উন্নতি করা যায় না।

১৪ ডিসেম্বরকে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস বলা হলেও পুরো ৭১ সাল জুড়েই কিন্তু চলেছে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিকভাবে বুদ্ধিজীবি নিধন। বিশেষ করে যুদ্ধের শেষ সময়ে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধি মোটা হলেও তারা কিন্তু সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসেই বুঝে গিয়েছিল যুদ্ধে জেতা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। “জিততে যেহেতু পারব না সুতরাং স্বাধীন দেশ যেন সহজে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেজন্য তার শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে শেষ করে দেই”- এরকম মনোভাব থেকে শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনের শেষ দিক থেকে শুরু করে পুরো পাকিস্তান আমল জুড়ে গড়ে ওঠা দেশের সেরা সেরা শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, সাহিত্যিকদের হত্যাযজ্ঞ। পূর্ব পাকিস্তানের সূর্য সন্তানদের নাম পাক বাহিনীর জানার কথা না। তাই বুদ্ধিজীবিদের তালিকা করতে তাদের সহায়তা করে রাজাকার, আল বদর, আল শামস নামক কোলাবোরেটররা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টার্সে গিয়ে গিয়ে পাক বাহিনীর বুটের তলা চোষা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের ডেকে নিয়ে যায় বাসা থেকে। কিন্তু তাদের লাশও ঘরে ফেরে না। লাশ  পাওয়া যায় রায়ের বাজারের খালের পাশে।

eKaisar_1260800321_1-chuknagar

সেজন্য ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। আজকের বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতি, ভ্রষ্ট সমাজনীতি আর কলঙ্কিত সব মানুষের জন্ম কিন্তু ঐ ১৪ ডিসেম্বরের ফসল। যাদের দেখে পরের প্রজন্ম সৎ, কর্মঠ, নিবেদিতপ্রাণ দেশপ্রেমিক হতে শিখবে তাদেরকে যদি সরিয়ে দেয়া যায় তাহলে শুরু হয়ে যায় প্রজন্ম পার্থক্য। মেধা-মননের ধারাবাহিকতা ভুলুণ্ঠিত হয়। আজকের সমাজের রাজনীতিবিদ, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, আইনজীবী, পুলিশ তথা পাবলিক যে অভব্য হয়ে ওঠেছে তার পেছনে দায়ী ‘৭১ সালের ঐ ১৪ ডিসেম্বর। এরা শিখবে কোত্থেকে? ভালোদের শেষ করে দিলে ভালো হওয়া শেখাবে কে?

৬০ এর দশকে বাংলার মাটিতে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের বীজ বপন শুরু হচ্ছিল। শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু আজ? আজ পেট্রোল বোমা দিয়ে মানুষ মারা হয়, ব্যবসায়কে জাতির মেরুদণ্ড আখ্যা দেয়ার আহ্বান জানানো হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে জ্ঞানচর্চার পরিবর্তে হয় ক্যানভাসিং। বিবেক হলো মস্তিষ্ক আর শিক্ষা হলো মেরুদণ্ড। মস্তিষ্ক না থাকলে পা’কে মেরুদণ্ড মনে হতেই পারে।

আজ ১৪ ডিসেম্বর। স্বাধীনতার ৪২ তম শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস। এদিনে নাম ধরে কোনো বুদ্ধিজীবিকে স্মরণ করে বাদ পড়া বুদ্ধিজীবিদের আত্মায় কষ্ট দিতে চাই না। খালি এটুকুই বলতে চাই, “আমরা তোমাদের ভুলব না?” বুদ্ধিজীবিদের ভোলা সম্ভব নয়। যাদের অনুপস্থিতি মেরুদণ্ডের কশেরুকা অনুপস্থিতির সমতুল্য তাদের কি ভোলা যায়?

rayerbazarmemorial14

দু’দিন বাদে বিজয় দিবস। শুধু জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে কুচকাওয়াজ, প্যারাট্রুপিং করে আর ঘরে বসে ব্লগ লিখে নয়, সকল কর্মের মাধ্যমে দেশকে ভালোবাসার পরিচয় দিই। তাহলে আর থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার মতো আমাদের হতে হবে না, বরং তারাই বাংলাদেশের মতো হতে চাইবে।

জয় বাংলা।

 

ছবি কৃতজ্ঞতা: অ্যামাজননিউজ.কম ও স্কাইস্ক্র্যাপারসিটি.কম

Wednesday, December 11, 2013

টেসলাঃ বিস্মৃত এক প্রতিভা

আসিফ হালিম দীপন


আইপিই ২/২




২০০৭ সালে MIT-র গবেষকদের একটা দল বিদ্যুৎ উৎস থেকে সাত মিটার দূরে তারহীনভাবে বিদ্যুৎ সঞ্চারণ করতে সক্ষম হয়। সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায় এ নিয়ে। কতো সম্ভাবনার কথা আসতে থাকে চারদিক থেকে, কতো অভিবাদন। অত্যাধুনিক এবং সূক্ষ্ম সব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে আর সুপারকম্পিউটারের সাহায্য নিয়ে কতো বিশাল বিশাল হিসাবনিকাশ আর কষ্টের ফল ওই সফল পরীক্ষণ। অথচ, নিকোলা টেসলা নামের এক ‘পাগলা বিজ্ঞানী’ সেই আদ্দিকালে, ১৮৯৯ তে, ২৬ মাইল দূরের শক্তির উৎস থেকে ধূ ধূ মরুভূমির মাঝখানে রাখা ২০০ লাইট বাল্ব জ্বালিয়ে দেখিয়েছিলেন! তাও ভাঙাচোরা, পুরনো জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়ে!


আধুনিক বিজ্ঞানের বাঘা বাঘা সব বিজ্ঞানী, গবেষকদের নামের ভিড়ে ফ্লুরোসেন্ট লাইটিং, টেসলা কয়েল, ইনডাকশন মোটর, অল্টারনেটিং কারেন্ট ইলেক্ট্রিক্যাল সাপ্লাই সিস্টেমের (একটি মোটর, একটি ট্রান্সফরমার আর থ্রি-ফেইয ইলেক্ট্রিসিটির সাহায্যে) আবিষ্কর্তা টেসলার নামটা কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। যদিও বিজ্ঞানের ইতিহাসের দিকে তাকালে এরকম চরিত্র দ্বিতীয়টি চোখে পড়বে কিনা সন্দেহ।

 image001


নিকোলা টেসলা


ক্রোয়েশিয়ার খুব সাদামাটা একটা পরিবারে জন্ম টেসলার, ১৮৫৬ সালের ১০ই জুলাই। বাবা ছিলেন স্থানীয় গির্জার যাজক। পাঁচ ভাইবোনের মাঝে তিনি ছিলেন চতুর্থ। টেসলা অস্ট্রিয়ান পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন এবং শুরুতে বুদাপেস্টে একটা টেলিগ্রাফ কোম্পানিতে কিছুদিন কাজ করেন। মূলত, ওই সময়টাতেই টেলিফোনির ওপর আগ্রহ আর অভিজ্ঞতা হয় তাঁর। তারপর ১৮৮৪ সালে পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে থমাস আলভা এডিসনের ‘এডিসন মেশিন ওয়ার্কস’ এ কাজ করার সুযোগ পান। বছরখানেক বাদে জর্জ ওয়েস্টিংহাউস নামক এক ব্যবসায়ির বিনিয়োগে নিজেই কোম্পানি খুলে বসেন। পরবর্তীতে, অল্টারনেটিং কারেন্ট সিস্টেম নিয়ে কাজ করার সময়ও ওয়েস্টিংহাউস তাঁর নিজের নামে প্যাটেন্টের লাইসেন্স নিয়ে টেসলাকে কাজ করার সুযোগ দেন। জে.পি. মর্গান নামক আরেক ব্যবসায়ি টেসলার ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার প্রজেক্টের সময় বেশ বড় অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করেন, কিন্তু মার্কনির রেডিও ট্রান্সমিশন প্রযুক্তি আবিষ্কারের পরে তিনি টেসলার সাথে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

পুরো কর্মজীবনে টেসলার রয়েছে ৭০০ টির বেশি সংখ্যাক প্যাটেন্ট। পদার্থবিদ্যা, রোবটিক্স, ষ্টীম টার্বাইন ইঞ্জিনিয়ারিং আর চৌম্বকবিদ্যা নিয়ে তাঁর অসংখ্য যুগান্তকারী কাজ রয়েছে। পরীক্ষণমূলক কাজগুলোর মধ্যে ছিলো - নিউইয়র্ক এবং কলোরাডো স্প্রিংসে উচ্চ-ভোল্টেজ এবং উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন পরীক্ষণ (যার মধ্যে রেডিও আবিষ্কারের তত্ত্বীয় কাজও ছিলো); রঞ্জন-রশ্মি নিয়ে পরীক্ষণ (একবার এক ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের এক হাত গলিয়ে ফেলেছিলেন অতিরিক্ত রঞ্জনরশ্মি প্রয়োগের ফলস্বরূপ!); নায়াগ্রা ফলসে বিশ্বের প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্প স্থাপন; স্রেফ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে মানবদেহের জীবাণু ধ্বংসকরণের চিন্তা; ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার প্রজেক্ট (বিদ্যুতশক্তির আন্তঃমহাদেশীয় তারহীন সঞ্চারণ); সবচেয়ে আলোচিত আর বিতর্কিত ‘টেলিফোর্স বীম’, মানবসৃষ্ট কৃত্রিম বজ্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম বজ্রটা ছিলো তাঁর সৃষ্টি, প্রায় ১৩০ ফুট।

image002


লঙ আইল্যান্ডে স্থাপিত ১৮৭ ফুট উঁচু ওয়ার্ডেনক্লিফ টাওয়ার


একজন প্রতিভাবান বিজ্ঞানী হওয়ার সুবাদে এবং প্রতিনিয়ত আশ্চর্য সব আবিষ্কারের ফল হিসেবে টেসলার খ্যাতি বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্যাটেন্টগুলো থেকে একদিকে যেমন তিনি প্রচুর অর্থ উপার্জন করেছিলেন, অন্যদিকে বিভিন্ন আজব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পেছনে খরচও করেছেন দু’হাতে। আমেরিকার জীবনের বেশ বড় একটা অংশ তিনি কাটিয়েছেন নিউইয়র্কের হাতে গোণা কয়েকটা হোটেলে। প্যাটেন্ট থেকে পাওয়া অর্থ আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যেতে থাকে এবং একটা সময় তিনি হয়ে পড়েন দেউলিয়া। এতকিছুর পরেও টেসলা তাঁর জন্মদিনের পার্টিগুলোতে শহরের সাংবাদিকদের আমন্ত্রণ জানাতেন এবং সেখানেই প্রতি বছর নিত্যনতুন আবিষ্কার আর চলমান কাজের (মাঝেসাঝে উদ্ভটও বটে) কথা ঘোষণা করতেন। উদ্ভট-আজব এসব কাজের সুবাদে সভ্যসমাজে “পাগলা বিজ্ঞানী” (“mad scientist”) নামে তিনি খ্যাত হয়ে গেলেন।

মজার এক চরিত্র ছিলেন এই টেসলা। জীবনটা তাঁর কেটেছে কখনও উদাসীনতায়, আবার কখনও চরম স্নায়ুযুদ্ধে।  গুগলিয়েমো মার্কনির রেডিও সিস্টেম আবিষ্কারের পর ওটিস পণ্ড নামের একজন সহকর্মী ইঞ্জিনিয়ার একবার টেসলাকে ঠাট্টাচ্ছলে বলেছিলেন, ‘মার্কনি দেখি তোমার ওপর দিয়ে লাফিয়ে বেরিয়ে গেলো হে!’ জবাবে টেসলা বলেছিলেন, ‘লোকটার উদ্দেশ্য তো খারাপ না। যা করছে করতে দাও। আমার সতেরোটা প্যাটেন্ট অন্তত ওর কাজে তো লাগছে!’

একসময়কার সহকর্মী থমাস এডিসনের সাথে জীবনের শেষ অংশটা কাটিয়েছেন জাত-শত্রুর মতো। কেউ কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি ছিলেন না। এডিসন যেমন একদিকে প্রথম লাইট বাল্বের আবিষ্কর্তা, অপরদিকে টেসলাও কিন্তু কম যান না, তাঁর এসি পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেমেই ওই লাইট বাল্ব জ্বলে-নেভে। দু’জনের মধ্যে এই পাওয়ার ট্রান্সমিশন সিস্টেম নিয়ে যুদ্ধ চলতেই থাকলো। অতঃপর, অনাকাঙ্ক্ষিত একটা ঘটনা ঘটে গেলো; নোবেল কমিটি এদের দুজনকেই নোবেল পাওয়ার অযোগ্য ধরে নিলো।

বিজ্ঞানের ইতিহাসের অন্যান্য চরম প্রতিভাবানদের মতো টেসলারও কিছু অনন্য খাপছাড়া চোখে পড়ার মতো চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ছিলো, যেমন- নিয়মিত নার্ভাস ব্রেকডাউন, মধ্যরাতের স্বপ্নে উল্টোপাল্টা জিনিস দেখে সকালে বৈজ্ঞানিক থিওরি দেয়া, পাখিদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলা এবং প্রায়ই মঙ্গল থেকে তড়িচ্চুম্বক তরঙ্গ ধরার কথা ঘোষণা। ব্যাক্তিগত জীবনে বেশ অন্তর্মুখী ছিলেন; পছন্দ করতেন গোলক বা গোলকাকৃতির যেকোনো বস্তু (যদিও শেষ বয়সে এসে গোলকাকৃতির প্রতি ভীতি সৃষ্টি হয় তাঁর)। মানুষের চুল, গয়নাগাটি, মানুষের সাথে হাত মেলানো আর তিন দিয়ে অবিভাজ্য কোনো কিছুই সহ্য করতে পারতেন না। দাবা, বিলিয়ার্ড আর তাস খেলতে ভালোবাসতেন। অদ্ভুত একটা দাবী করতেন, জীবনে নাকি কখনই দু’ঘণ্টার বেশি ঘুমাননি! টেসলা কথা বলতে পারতেন আটটি আলাদা ভাষায়, আইডেটিক বা ফটোগ্রাফিক মেমোরি বলা হতো তাঁর স্মৃতিশক্তিকে। মার্ক টোওয়াইনের খুব কাছের একজন বন্ধু ছিলেন টেসলা। বিজ্ঞান সাধনার নামে শেষমেশ আইবুড়ো হিসেবেই কাটিয়ে দিয়েছেন সারাটা জীবন।

১৯২০ এর দিকে তিনি দুম করে একদিন একটা মারণাস্ত্র তৈরির ঘোষণা দিয়ে ফেললেন। জিনিসটা একটা টাওয়ার, যেটা থেকে একটা নির্দিষ্ট দিকে প্রচণ্ড রকম উচ্চমাত্রার ভোল্টেজ পার্থক্য প্রয়োগের মাধ্যমে আয়নিত পদার্থের একটা বিশাল আকারের রশ্মি ছুঁড়ে দেয়া যায়, যেটা কিনা ২০০ মাইল দূর থেকে একটা যুদ্ধবিমানকে টুকরো টুকরো করে ফেলতে সক্ষম; জলজ্যান্ত একটা রাশিয়ান ট্যাঙ্ককে গলিয়ে ফেলতে আর চোখের পলকে শত্রুপক্ষের সৈন্যদলকে হাওয়ায় বাষ্পীভূত করে দিতে এর কোন জুড়ি নেই। ২০০ মাইলের পরেও এর কার্যক্ষমতা যে নষ্ট হয়ে যাবে তা কিন্তু না, ভূপৃষ্ঠের বক্রতার জন্যেই কেবল এটা ২০০ মাইলের পরে তেমন প্রভাব ফেলতে পারবেনা।  পৃথিবীর সুপারপাওয়ারগুলো স্বপ্ন দেখতে শুরু করলো, কোথায় কোথায় তারা এটা ব্যবহার করবে; সাধারণ মানুষ হয়ে পড়লো আতঙ্কিত। তবে খুশির ব্যাপার এই যে, এই জিনিস বানানোর আগেই টেসলা ১৯৪৩ সালের ৭ জানুয়ারি হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, আর এই প্রজেক্টের বেশিরভাগটাই ছিলো টেসলার উর্বর মস্তিষ্কের ভেতর লিপিবদ্ধ; একেবারে নগণ্য একটা অংশ কাগজপত্রে লেখাজোকা হিসেবে ছিলো। ‘পৃথিবীর মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে’ টেসলার মৃত্যুর পর FBI তাঁর সমস্ত ল্যাবনোটস, বিভিন্ন প্রজেক্টের কাগজপত্র, প্যাটেন্টের দলিল, এমনকি তাঁর ব্যাক্তিগত ডায়রিটাও সরকারি বলে জব্দ করে।

টেসলার মৃত্যুর পরপরই তাঁর কাজগুলো হুমকির মুখে পড়ে যেতে লাগলো, ঠিক মেন্ডেলের মতো। কোথাও তাঁর কাজগুলো নিয়ে আলোচনা হয় না, লেখালেখি হয় না; অসম্ভব রকম আধুনিক এবং দূরদর্শী হওয়ার পরও ইলেক্ট্রিসিটি ট্রান্সমিশন সিস্টেমে তাঁর অল্টারনেটিং কারেন্ট পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছিলো না। অবশেষে ৯০ এর দশকের শুরু থেকে তাঁর কাজগুলোর ওপর বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের চোখ পড়ে; ফলস্বরূপ রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে তাঁর আবিষ্কারগুলোর কথা। ১৯৬০ সালে টেসলাকে সম্মান দেখিয়ে General Conference on Weights and Measures এ এস. আই. পদ্ধতিতে চৌম্বকক্ষেত্রের শক্তির পরিমাপের একক হিসেবে ‘টেসলা’ শব্দটি ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সত্যি বলতে কি, নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা এবং কাজের মাধ্যমে পুরো দুনিয়াটাকে কাঁপিয়েছেন, আক্ষরিক এবং রুপক অর্থে, এমন মানুষ একজনই আছেন ছিলেন, নিকোলা টেসলা। এক হাতে দুনিয়াটাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা ছিলো এমন মানুষ একজনই ছিলেন, তিনি নিকোলা টেসলা। শুধু এটাই তাঁকে বিজ্ঞানের ইতিহাসে অমর করে রাখার জন্য যথেষ্ট।

পৃথিবীতে মহাপ্রলয় - আজ নাকি আগামীতে ?

 মোঃ তারেক বিন আবদুল্লাহ 


পিএমই ১/২


 

 

পরিবেশ বিজ্ঞানীরা নাকচ করে দিয়েছেন অতি সম্প্রতি কোন মহাপ্রলয় হওয়ার আশঙ্কা তথা খুব দ্রুত পৃথিবীর পরিবেশের আকস্মিক অভাবনীয় পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কাকে । সম্প্রতি “Trends in Ecology and Evolution” নামক সাময়িকীতে অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যের পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন যে-“ পরিবেশগত ‘Tipping point’ অসম্ভাব্য এবং পৃথিবীর বিশাল অঞ্চলজুড়ে পরিবেশগত বড় পরিবর্তন হবে ক্রমান্বয়ে ও ধারাবাহিকভাবে”- যা “Planetary tipping point বা বৈশ্বিক প্রলয়” ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক।

সম্প্রতি “Planetary tipping point” বলে একটি ধারণা সৃষ্টি হয়েছে যা বিজ্ঞান এবং নীতি নির্ধারকদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তাৎপর্য বহন করে। “Planetary tipping point ” সম্পর্কে বলা হয়েছিল- এটি ঘটবে অধিক জনসংখ্যার চাপে জীব-বৈচিত্র্যের বা জমির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির ফলে যা সারাবিশ্বে প্রভাব ফেলতে পারে।

সাময়িকীর প্রধান লেখক ও এডিলেড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়াবিজ্ঞানের অধ্যাপক ব্যারি ব্রুক বলেছেন “এটা খুবই ভালো সংবাদ যে, আমরা এই অপ্রত্যাশিত বিপর্যয়কে সম্ভবত এড়াতে পারব”

“বৈশ্বিক প্রলয়” এর ধারণা এবং এর দিকে মননিবেশ করার ফলে একদিকে যেমন পরিবেশগত রূপান্তর হতে দৃষ্টি সরে যেতে পারে, অন্যদিকে যা অহেতুক অদৃষ্টবাদের  (ভাগ্যের হাতে হাল ছেড়ে দেওয়ার মনোভাব্) সূচনা ঘটায়। “একটি অসম্ভাব্য ঘটনার দিকে অধিক মনোনিবেশ করা পরিবেশ সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমের জন্য সহায়ক নয়। আমাদের উচিত বিশ্বের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব কমাতে চেষ্টা করা।”

image001

“একটি বাস্তুতন্ত্রের প্রাণীরা বিলুপ্ত হলে, কার্বন নিঃসরণ দ্রুত বেড়ে প্রাণীদের সহ্যক্ষমতাকে অতিক্রম করলে “Tipping Point” সৃষ্টি হয়। অনেক স্থানীয় এবং আঞ্চলিক স্তরের বাস্তুতন্ত্রে (যেমন হ্রদ ও তৃণভূমি) এরকম ঘটেছে।

 দ্রুত প্রলয় ঘটার সম্ভাবনা নেই কেন?

তত্ত্ব বলে যে, পৃথিবীজুড়ে “বৈশ্বিক প্রলয়” ঘটতে পারে যদি পৃথিবীর সর্বত্র জনসংখ্যার চাপ সমান হয়, যাতে এর প্রভাব সারা বিশ্বজুড়ে দ্রুত ছড়াতে পারে। সুতরাং এর জন্য পৃথিবীর সব মহাদেশগুলোর বাস্তুসংস্থানকে একত্রিত হতে হবে। কিন্তু, বাস্তবে এসব ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা খুবই কম। “প্রথমত, মহাদেশগুলোর বাস্তুসংস্থানের মধ্যে সম্পর্ক বেশ শিথিল। দ্বিতীয়ত, জনসংখ্যার চাপের ফলে ভুমি বা আবহাওয়ার উপর সৃষ্ট প্রভাব একেক অঞ্চলে একেক ধরনের।

বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর বাস্তুসংস্থানের পরিবর্তন লিপিবদ্ধ করতে চার ধরনের পরীক্ষা করেন- আবহাওয়ার পরিবর্তন, ভুমির পরিবর্তন, জিব-বৈচিত্রের ক্ষয়, বাসস্থানের ক্ষয়। পরীক্ষার ফলাফলে তারা Tipping Point ঘটার অসম্ভাব্যতা দেখেতে পান।

image002

সহস্রাব্দ মানুষের শাসনের পরও আমাদের বাস্তুতন্ত্রের জীবজগতের চার-পঞ্চমাংশ বাস্তুসংস্থান এখনও টিকে আছে।  স্থানীয় এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ প্রচেষ্টাও দিন দিন বাড়ছে। যদিও,  বাস্তুসংস্থান ও বৈশ্বিক পরিবর্তন ঘটছে- তা শীঘ্রই একটি প্রলয় ঘটানোর মত দ্রুত ঘটছেনা।

এলিয়েনদের আক্রমন

মোহাম্মাদ নূর উদ্দিন


সিএসই ২/২


 

ছুটির দিন। নিত্যনৈমত্তিক এর মত আজকেও জোহাদের ঘুরতে বের হওয়া। প্রাত্যহিকের চেয়ে আজকের বিকেল টা একটু ভিন্ন। গত কিছুদিনের পরিচিত জন নেই আজ পাশে, মাথার মধ্যে কতগুলো

উদ্ভট চিন্তা আর সংসয়। নদীর পাড়ে পড়ন্ত বিকেলে বসে সে ভাবে মস্তিষ্কে এত পরিবর্তন কি আনা সম্ভব? বিবর্তন ও কি কোন দিন পারবে এই গ্রহের প্রানির মধ্যে এই পরিবর্তন আনতে।

এক মাস আগের কথা, দিনটি ছিল ৩০০৩৩ সালের ০৩ মার্চ, প্রতিদিনের মতই সে ঘুরতে এসেছিল এখানে, এই নদীর ই পাড়ে, হাটার সময় হটাৎ চোখে পড়ল একটু সামনে গাছের নিচে কেউ একজন একা

দাড়িয়ে। সচরাচর সে এখানে কাউকে দেখে না, লোকজন যা আসে একটু দুরের স্পটেই সবাই থাকে। কোন কিছু না ভেবেই একটু কাছে গিয়েই এক্সকিউজ মি, প্রতিউত্তরেঃ এক্সকিউজ মি। আমি জোহাদ,

আমি সানাম।

এই এলাকায় নতুন এসেছেন?

কেন বলুন তো ?

না মানে, যারা এখানে ঘুরতে আসে তারা সাধারণত ঐ যে, ঐ স্পট টা তেই থাকে।

ও আচ্ছা, জি হ্যাঁ নতুন এসেছি।

আশেপাশেই উঠেছেন নাকি ?

জি হ্যাঁ।

ফ্যামিলি নিয়েই ?

জি হ্যাঁ।

ঘুরতে বেরুলেন ?

জি হ্যাঁ।

জোহাদ মনে মনে ভাবে, এই মেয়ে সব কথার উত্তরে "জি হ্যাঁ" "জি হ্যাঁ" করে ক্যান :/ । চেহারাটা ও একটু কেমন জানি, বিশেষ করে মাথা টা। :/ । ধুর  ফরেনার ও তো হতে পারে।

আপনি কি বাইরের কোন দেশ থেকে এসেছেন ?

জি হ্যাঁ।

(আবারও "জি হ্যাঁ") ও আচ্ছা ।

আপনি কি এ এলাকাতেই থাকেন ?

হুম।

আপনি প্রতিদিন এখানে ঘুরতে আসেন ?

হ্যাঁ।

আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

বাই ।

জোহাদ কিছুক্ষন ঘুরাঘুরির পর, বাসায় ফিরে। পরের দিন ঘুরতে গিয়ে একই জনের সাথে দেখা। এবার মেয়েটিই জিজ্ঞসে করল কেমন আছেন ? ভালো। আপনি? ভালোই।

পড়াশুনা করেন আপনি?

হ্যাঁ।

কি নিয়ে পড়েন?

সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে টুক টাক ঘাটাঘাটি করি, এই যা।

ও। ভালোই।

বুঝলেন, একটা প্রবলেম নিয়ে কিছুদিন চিন্তায় আছি, কোন সল্যুশন পাচ্ছি না।

কি সেটা? বলা যাবে ?

প্রবলেম টা এই রকম, ৫০০ থেকে বড় যেকোনো সংখ্যা কে ফ্যাক্টরিয়াল করলে সে সংখ্যার শেষ থেকে যে ডিজিট টা প্রথমে মৌলিক হবে,  তাকে ৯ দিয়ে গুন করে গুণফলের অংকগুলোকে যোগ করে

প্রাপ্ত যোগফল থেকে ৫ বিয়োগ করলে যে সংখ্যা পাওয়া যাবে তা কত? আর শেষ থেকে মৌলিক ডিজিট এর ক্রম কত?

মেয়েটা কিছুক্ষণ আকাশের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করল। তারপর বলল প্রথম কোশ্চেন এর আন্সার তো মোটামুটি সহজ আছে।

জোহাদ তো অবাক, এত তাড়াতাড়ি কীভাবে সল্যুশন বের করল মেয়েটা!!

জোহাদ বলল আন্সার টা কত তাহলে ?

মেয়েটা বলল ৪ ।

জোহাদ চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল কীভাবে ?

মেয়েটা একটা সিস্টেম দেখিয়ে দিল তাকে ।

পরের কোশ্চেন এর আন্সার টা ও তাহলে দিয়ে দাও, জোহাদ বলল। মেয়েটা বলল একটু সময় লাগবে, কালকে দেই। ওকে ।

জোহাদ বলল তুমি কি সংখ্যা তত্ত্ব নিয়ে কাজ কর?

জি হ্যাঁ ।

তুমি তো অনেক ব্রিলিয়ান্ট! অনেক ভালো করবে তুমি।

না, অত ভালো না ।

সংখ্যা নিয়ে আরেকটু জেনে নেয়া যায় কিনা, সেটা ভেবে জোহাদ গল্প করতেছিল ।

হটাৎ মেয়েটা বলে উঠল - আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

জোহাদ বলল আচ্ছা। আমি প্রায় প্রতিদিন ই আসি, তুমিও চাইলে আসতে পার।

জোহাদ তার গবেষণার পাশাপাশি একটা বহুজাতিক রোবটিক সংস্থায় কাজ করে ।

অফিস এ একদিন গল্প হচ্ছিল বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ে, উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ তেমন একটা নেই। কিছুদিন আগে জোহাদ ইন্টারনেট এ ঘাটাঘাটির এক পর্যায়ে কয়েক হাজার বছর ধরে আপডেট হয় না

এমন একটা সাইট এ ঢুকে কিছু ইন্টারেস্টিং জিনিস দেখে পড়া শুরু করেছিল, এবং জানতে পেরেছিল উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ গলা শুরু হয়েছে, এবং তা অব্যাহত থাকলে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা

আগামী ১৫০ বছরে ৫ ইঞ্চি বাড়বে। এটা জোহাদ বলল । সবাই বলল কিন্তু এখন তো উত্তর দক্ষিন মেরুতে বরফ নেই বললেই তো চলে, তবুও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা তো তেমন একটা বাড়ে নি।

তাহলে এডুইন হাবল এর তত্ত্ব অনুসারে মহাবিশ্ব সম্প্রসারণশীল এর অংশ হিসেবে পৃথিবীর কি আয়তন বেড়ে গেল? কিন্তু বাড়লে ও এতই বেড়ে গেল ? আরেকজন বলে উঠল । এমন সময় একজন

পত্রিকার একটা নিউজ দেখে বলল দেখ তো এটা, নিউজ টা ছিল এরকম যে, পাশের নক্ষত্রের একটা গ্রহ থেকে এলিয়েনরা এই গ্রহে নিয়মিত আসা যাওয়া করতেছে গত এক মাস ধরে ধারণা করা হচ্ছে, কিন্তু

সেগুলো ডিটেক্ট করা যাচ্ছে না তারা ঠিক কোথায়, কীভাবে আসতেছে। আমাদের সংস্থার হেড কোয়ার্টার থেকে ও তো কোন ইনফরমেশন পেলাম না এত দিন। একজন বলে উঠল গতকাল নাকি অফিসে

এ বিষয় এর সাথে যায় এমন একটা মেইল এসেছে আমাদের এখানকার নির্বাহী প্রধান এর কাছে। যাই হোক বিষয়টা কিন্তু ভয়ানক। হয়ত আজকেই আমাদের কাছে নতুন প্রোজেক্ট এসে পড়বে।

দুইদিন পর জোহাদ আবার নদীর পাড়ে ঘুরতে যাবে ভেবে বাসা থেকে বের হল।

বের হয়ে ২ মিনিট হাটার পর ই পেছন থেকে ডাক শুনতে পায়, জোহাদ। পেছনে তাকিয়ে দেখে সানাম। হাই। ভালো আছ ?

জি হ্যাঁ।

তুমি ভালো ?

এইতো। কিন্তু তুমি এইদিকে, তোমার বাসা কি এই দিকে ?

না। একটু কাজ ছিল। তাহলে তোমার বাসা এই দিকে?

হুম। তো কাজ শেষ ?

জি হ্যাঁ। গত দুই দিন ঘুরতে যাও নি ?

ব্যাস্ত ছিলাম, তাই যাওয়া হয় নি।

ও আচ্ছা। তোমার প্রবেল সল্যুশন নিয়ে? নতুন প্রবলেম যোগ হল নাকি ?

প্রবলেম তো আছেই, অফিস এ ও নতুন প্রোজেক্ট এ কাজ করতে হচ্ছে। তোমাকে বলা হয় নি, আমি একটা রোবটিক সংস্থায় ও কাজ করছি।

রোবট এর কথা শুনে সানাম একটু চোখ বড় করল।

কি প্রোজেক্ট বলা যাবে?

এসব বলতে বলতে তারা নদীর পাড়ে এসে পড়ল। জোহাদ বলল চল ঐদিকটায় বসি।

তারা গিয়ে বসে পড়ল, যেখানে বসল সেখানটায় ঘাস ছিল না তাই মাটিতেই বসে পড়া।

সানাম বলল এদিকটায় তো তেমন মানুষ আসে না, জোহাদ বলল হ্যাঁ। ঐ দিকে আরও দূরে গেলে কি আরও কম মানুষ। জোহাদ বলল তাই হওয়ার কথা। নদীর পাড়ে যাইতে থাকলে এমন যায়গা ও

কি পাওয়া যাবে যেখানে কোন মানুষ ই থাকবে না। জোহাদ বলল হ্যাঁ এমন তো কত যায়গা ই আছে।

জোহাদ ঐদিনের সল্যুশন ও আরো কিছু কোশ্চেন করল।

সানাম বলল ও, ঐদিনের সল্যুশন টা নাও বলে হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিল, কিন্তু সেটা প্রিন্ট করা। নতুন কোশ্চেন গুলার আন্সার ও একটু পর পর দিতে লাগল, জোহাদ তো অবাক। তাকে তো আমাদের

সংস্থায় নিতে পারলে অনেক ভালো হয়, জোহাদ বলল তুমি আমার সাথে আমি যেখানে কাজ করি সেখানে যাবে? সানাম বলল দেখি।

সানাম বলল - আজকে আসি। আবার আসলে দেখা হবে :)

জোহাদ হাসি মুখে ওকে, বাই ।

 

মোটামুটি জনশূন্য একটা এলাকায় কিছু মানুষ তাবুর মত টানাল ২/১ মাসের মত হবে। সারাদিন তারা ঘরের ভিতরেই কাটায়। বের হতে তেমন একটা দেখা যায় না । মাঝে মাঝে দুই একটা গাড়ি আসে

আবার চলে যায় এই যা। আসে পাশে যে এলাকা আছে তা একটু দূরে, তাই হয়ত তাদের সাথে তেমন একটা মিশে না তারা। দুইজন কে পাশের দুইটা এলাকায় দেখা যায় কিছু মানুষের সাথে কথা বলতে।

এই দুইজন যখন পাশের এলাকায় যায়, সেখানকার মানুষজন তাদের পিছু নেয়, বিশেষ করে পিচ্চি রা। প্রথম প্রথম অবশ্য বেশি হত ব্যাপারটা, এখন অনেকটা কমে গেছে।

একজনকে এলাকার এক ব্যাক্তি প্রশ্ন করল আপনারা এখানে কেন এসেছেন? আর এত দূরেই বা কেন থাকেন?

উত্তরে লোকটি বলল আমরা সরকারের একটা প্রোজেক্ট এ এখানে এসেছি, আর আমাদেরকে ঐখানেই থাকার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

জোহাদ এর অফিসের নতুন প্রোজেক্ট এর কাজ অনেক বেশি, তাই তাকে এই কয়েকদিন অনেক ব্যাস্ত সময় কাটাতে হচ্ছে। প্রোজেক্ট এর কাজ হচ্ছে তাদের যে রোবট গুলো আছে সেগুলোর কয়েকটাতে

কিছু সেন্সর বসানো যেগুলো বাইরে থেকে দেখা যাবে না এবং রোবট গুলোর চোখ দিয়ে কিছু রস্মি নির্গমন করা। রস্মি নির্গমন করানো তেমন কঠিন না, কিন্তু রস্মি গুলোর ধর্ম এমন হতে হবে যে

রোবট এর সামনে কোন মানুষ দাড় করালে যাতে রোবট ডিটেক্ট করতে পারে যে সামনে দাঁড়ান মানুষের মস্তিষ্কের আকার, আয়তন, এবং গঠন কেমন।

 

কয়েক দিন পর। বিকেলে জোহাদ ঘুরতে বের হল সেই চিরচেনা নদীর পাড়ে। মনে মনে ভাবতেছিল আজকে কি সানাম এর সাথে দেখা হবে। খুব সুন্দর করে কথা বলে মেয়েটা, বিশেষ করে কিছু কমন ওয়ার্ড

ব্যাবহার করে সে, যেমন "জি হ্যাঁ"। জোহাদ তার যায়গায় পৌঁছে বসে রইল। হটাৎ সানাম এর আগমন। জোহাদ বলে উঠল ভালো আছ ?

জি হ্যাঁ । জোহাদ উত্তর শুনে কিঞ্চিৎ হাসল। তুমি ভালো ?

এইতো, ভালোই।

সানাম বলল চল আজকে হাটতে হাটতে কথা বলি, সানাম রাজি হয়ে গেল।

হাটতে হাটতে সানাম বলল তোমাদের নদীর পানি গুলো সুন্দর। তোমরা মানে তোমাদের মানুষজন কি ঐদিকে ৫ কি. মি. দূরে যায় রাতের বেলা?

না, ঐদিকে তো কোন বাড়িঘর নেই। কেন বলতো ।

এমন সময় একটা সাইকেল কে সাইড দিতে গিয়ে সানাম ধাক্কা খেয়ে নদীতে পড়ে যাবে এমন অবস্থায় জোহাদ তাকে ধরে ফেলল। জোহাদের ডান হাত সানাম এর পিঠে শক্তমত একটা যায়গায় লাগল।

তখন সানাম কেমন যেন মৃতের মত চোখ বন্ধ করল, যে হাত দিয়ে জোহাদ  কে ধরে রেখেছিল তা ও ছুটে গেল। পরক্ষনেই আবার সানাম সম্বিৎ ফিরে পাওয়ার মত জোহাদ  কে ধরে উঠে পড়ল। এবার আর

কোন কথা বলছে না। দুই তিনটা শব্দ করল, কিছুই বুঝল না জোহাদ । জোহাদ  জিজ্ঞেস করল কি হয়েছে, তার ও কোন উত্তর নেই। তার ৩ মিনিট পরেই ২টা গাড়ি হুইসেল বাজিয়ে তাদের পাসের রাস্তায় এসে

দাঁড়াল, সানাম এর মত দেখতে দুইজন এসে সানামকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে গেল, তারা কয়েকটা কথা বলল কিছুই বুঝল না জোহাদ । সে দৌড়ে গাড়িগুলোর পিছনে যাওয়ার চেষ্টা করল, একটু দূরে গিয়েই

জানতে পারল টিভি তে ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে এখান থেকে ৫ কি মি দূরে একটা গ্রামের পাশে কিছু লোক এসে তাবু টেনে থেকে ছিল কিছু দিন। তারা নাকি মানুষ ছিল না, এইটা এলাকার লোকজন জানার সাথে

সাথে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

পরের দিন অফিস থেকে তাদেরকে সে গ্রাম টাতে পাঠানো হল পর্যবেক্ষণ এর জন্য, সেখানে গিয়ে তারা জানতে পারে ঐ লোক গুলো গত রাত থেকে নদী থেকে পানি উঠিয়ে বিশাল ট্যাঙ্ক এ রাখতে

ছিল এবং একটার পর একটা ট্যাঙ্ক পুরিয়ে সেখান থেকে গাড়ি করে সেগুলো নিয়ে যাচ্ছিল আরেকটু নির্জন এলাকার দিকে। ঐ এলাকার লোকজনের সেচ এর সমস্যা হলে তারা ঐ লোকদের নিসেধ

করার পর ও যখন শুনল না, তখন এলাকাবাসী থাকায় ইনফর্ম করে এবং পুলিশ আসলে নাকি তারা কিছুক্ষণ কথা কাটাকাটি করে এবং পানি নেয়া বন্ধ করে। কিন্তু গত রাতে নাকি ওখানে বিকট শব্দ ।

এলাকা বাসি সকালে সেখানে গিয়ে দেখে বিশাল গর্ত এবং ঐ অদ্ভুত টাইপের লোকগুলো নেই ।

জোহাদ রা সেখান থেকে ব্যাক করে এবং জানতে পারে, অফিস এ নতুন মেইল এসেছে, এবং সেটা হল, কিছুদিন আগে যে পত্রিকায় এসেছিল এলিয়েন রা আসা যাওয়া করছে, সেটা সত্যি, এবং

তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পৃথিবী থেকে পানি নিয়ে যাওয়া, এবং তার ই অংশ হিসেবে এই দেশে ও তারা কার্যক্রম চালায়, যেটা গত কালকে বন্ধ হয়েগেছে। আরও জানা গেছে তারা আটলান্টিক এর একটা

যায়গা থেকে পানি সরিয়ে নিচ্ছে এবং সেটা বারমুডা ট্রায়ঙ্গেল কাছাকাছি কোন যায়গায়। ভয়ঙ্কর ব্যাপার হচ্ছে ঐ এলিয়েনরা রোবটদের প্রায় মানুষের আকৃতি দিয়ে বানায় শুধু মাথার আকৃতি ছাড়া, এবং

আর্টিফিসিয়াল ইন্তিলিজেন্স এত ইউজ করে যে মানুষ থেকে পৃথক করা অনেক কঠিন যেটা এখন তাদের টাস্ক।

জোহাদ বাসায় এসে ভাবে সানাম ও তাদের অন্তর্ভুক্ত। জোহাদ ভাবে আমারা কি পৃথিবী কে পারব মুক্ত করতে? পারব কি এলিয়েনদের বানানো রোবট কে সনাক্ত করার রোবট বানাতে ?

কত গুলো চিন্তা জোহাদের মাথায় ঘুরপাক খায়, জোহাদরা কাজ করে যায় পৃথিবীকে মুক্ত করার আসায় দৃঢ় প্রত্যয়ে , যদিও তারা ফলাফল জানে না ... ...

আয়েশার দিনরাত্রী

এস এম মনির


পরিসংখ্যান ৩/২


 

২০০৫ সালের নভেম্বরের ০৬ তারিখ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে, ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা। ছাত্রী হিসেবে আয়েশা মন্দ না। বাবা মার স্বপ্ন একমাত্র সন্তান একদিন বড় ডাক্তার হবে। কিন্তু মেডিকেলে চান্স হলো না। অবশ্য আয়েশা কখনোই ডাক্তার হবার স্বপ্ন দেখেনি। ওর স্বপ্ন বড় লেখক হবে। হুমায়ুন আহমেদ, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, আমিনুল হকদের মতো বড় লেখক। মুহম্মদ জাফর ইকবাল ওর সবচেয়ে প্রিয় লেখক। ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, বিভাগীয় প্রধান, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আর সেজন্যই হয়তো ওর স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় এটা। সাথে সাথে অবশ্যই সি. এস. ই ডিপার্টমেন্ট।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ না পেলেও সাস্ট আয়েশাকে আটকাতে পারে না। তবে সি.এস.ইতে ভর্তি হতে পারে না। শেষমেষ, বাধ্য হয়েই ভর্তি হয় জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনলটি (জি.ই.বি) বিভাগে। ২০০৬ সালের ২৮ জানুয়ারি, মুক্তমঞ্চে ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচিতি পর্ব অনুষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী, সচিব সহ আরো অনেকেই এসেছেন আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে। সবাই নতুন ভর্তি হওয়া সবাইকে স্বাগত জানিয়ে বক্তৃতা করলেন। সবশেষে আসলেন ড. জাফর ইকবাল। এই প্রথম আয়েশা তার প্রিয় লেখককে সামনা সামনি বসে দেখছে। তার উত্তেজনা যেন ধরে না। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে ও স্যারের কথা শুনছে। ওর মনে হচ্ছে স্যারের সব কথাই যেন শুধুমাত্র তাকে উদ্দেশ্য করেই বলা।

যথারীতি অনুষ্ঠান শেষে নতুনরা ছুটলো তাদের ডায়রীতে স্যারের অটোগ্রাফ নিতে। আয়েশাও সুযোগটা হাতছাড়া করলো না।

ক্লাস শুরু হয়ে গের ফেব্র“য়ারিরর প্রথম সপ্তাহ থেকেই। এখন সে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বা সাষ্টের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিষ্টারের (১/১) এর গর্বিত ছাত্রী। হোক না সেটা জিইবি ডিপার্টমেন্ট, তাতে কিছু আসে যায় না। সে তো আর এখানে ইঞ্জিনিয়ার হতে আসেনি, এসেছে বড় লেখক হতে। ওর উদাহারণ হিসেবে আছে আনিসুল হক, বুয়েট থেকে পাশ করা বড় লেখক।

নতুন জায়গা, নতুন জীবন, নতুন হল, নতুন বন্ধু-বান্ধবীদের নিয়ে স্বপ্নের মতোই কাটছে আয়েশার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন। আড্ডা, গান, গল্প, আবৃত্তি, নাটক এসব নিয়েই আয়েশার দিনরাত্রী। ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সংগঠনের একটার পর একটা আয়োজন যেন লেগেই আছে। হাতে একটুও সময় নেই বই নিয়ে বসার। অচিরেই ওর পরিচিতি হয়ে উঠলো ক্লাসের সবচেয়ে ফাকিবাজ আর অমনোযোগী ছাত্রী হিসেবে।
অবশ্য সে যে লেখক হবে তারও কোন লক্ষণ নেই। মাথা থেকে কোন শব্দই বেরোতে চায় না, লিখতে বসলে। অনেক চেষ্টা করে একটা গল্প লিখেছিল বটে কিন্তু কোথাও ছাপাতে পারেনি। আর এই দুঃখে সে লেখক হবার চিন্তা বাদ দিয়ে দিয়েছে, এক রকম। ছোট্র একটা ক্যাম্পাস, তার ওপর যত্রতত্র ধান ক্ষেত, এখানে সেখানে পাহাড় টিলা, টিলার ওপর একশ ধাপ পেরিয়ে শহীদ মিনার, অহেতুক লম্বা এককিলো মিটার লম্বা প্রবেশ পথ। এরকমই হয়তো মনে হবে প্রথমবার সাস্টে আসা যে কারোর। কিন্তু সেই প্রথমদিন থেকেই এগুলোই যে সাস্টের প্রধান আকর্ষন বুঝতে একটুও ভূল হয়নি আয়েশার। বিশেষ করে, এক কিলেতে শীতের সকালে হাটতে হাটতে রোদ পোহানো, আর রাতে লেডিস হলের জানালা দিয়ে সুদুর মেঘালয়ের মিটমিট করে জ্বলা পাহাড়ী জীবনের যেনো কোন তুলনাই চলে না। এদিকে প্রিয় বন্ধুরা আর বেস্টফ্রেন্ড তুহিনতো আছেই। সাস্টের ওর সময়গুলো যে কিভাবে পার হচ্ েআছেই। সাস্টের ওর সময়গুলো যে কিভাবে পার হচ্ছে ওযেন টেরই পাচ্ছিলনা।

সেমিস্টার সিস্টেমে চোখের পলকে কখন যে টার্মটেস্ট, ল্যাব, শেষ করে ১/১ এর সেমিস্টার ফাইনাল চলে আসলো আয়েশা বুঝতে পারে নি। আগে থেকেই সব পড়া গুছিয়ে না রাখার ফলাফল সে পরীক্ষার আগে হাড়ে হাড়ে টের পেলো। পরীক্ষার আগে রাতদিন পড়েও লাভ হচ্ছিল না। প্রত্যেক পরীক্ষাতেই চোখে সরষে ফুল দেখার জোগাড়! ইংরেজী, কেমেস্ট্রি, মাইক্রোরায়োলজি, প্লান্ট সায়েন্স আর অ্যানিমেল সায়েন্স কোন রকমে ভাল মন্দ কিছু গ্রেড পেয়ে উতরে গেলেও কনসেপ্ট অব জিইবিতে পাশই করতে পারলোনা। ফলাফল ড্রপ!

কোষ জীবদেহের সবচেয়ে ক্ষুদ্র একক। খালি চোখে দেখা যায় না। সেই কোষের মধ্যেই থাকে নিউক্রিয়াস। কোষের প্রাণ। সেই নিউক্লিয়াসেই থাকে সুতার মতো ক্লোমোসোম। আর ক্লোমোসোমেই নাকি থাকে জীবনের ব্লু প্রিন্ট ডিএনএ, দ্বিসূত্রক, হাইড্রোজের বন্ডসহ সাসাস কিছু। এসবই নাকি তাকে পড়ে হবে সারা জীবন। ভাবতেই আয়েশার গা গুলিয়ে আসে। সেকি আদৌ তার পড়ালেখা শেষ করতে পারবে? অ্যাডেনিন, গুয়ানিন, সাইটোসিস, থাইমিন কি সব বিদম্বটে নাম।

পড়াশুনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সে নিজেকে প্রথম বর্ষ ২য় সিমিস্টরের ছাত্রী হিেিসব আবিস্খার করে। লেখক হবার চিন্তা বাদদিয়ে সে আপাতত ফটোগ্রাফার হবার স্বপ্নে বিভোর। থাকতো যদি সুমন ভাইয়ের মতো একটা উঝওজ ক্যামেরা। সুমন পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। কি এক প্রতিযোগিতায় তার তোলা ছবি প্রথম হয় আর সে বছর টাইম ম্যাগাজিন সেই ছবি ব্যবহার করে আগস্ট ০৫ তারিখ সংখ্যার বাংলাদেশ শিরোনাম একটা প্রবন্ধ ছাপে। রাতারাতি সুমন তারকা বনে যায় শুধু সাস্ট ক্যাম্পাসে না সারা দেশ। হাতের কাছেই এমন উদাহরণ থাকলে কে না চাইবে ফটোগ্রাফার হতে। অনেক চেষ্টা করে বাবা থাকে রাজি করিয়ে একটা উঝখজ কেনে বটে। কিন্ত যন্ত্রটা কেনার পরই যেন ওর ছবি শখ মিটিয়ে যায়। কেন যানি আর ছবি তুলতে ভাল লাগে না।

এদিকে দেখতে দেখতে আবারো সেমিস্টার ফাইনাল। প্রথম বর্ষ ২য় সেমিস্টার। এবার একটা নয় দু’দুটা সাবজেক্ট ড্রপ চলে আসে। মেটাবলিজম আর ইনভ্নামেন্টাল বায়োটেকনোলজিতে। এই যখন অবস্থঅ তখন আয়েশা আবারো নিজেক আবিস্কার করে ২য় বর্ষে ১ম সেমিস্টারে ছাত্রী হিসেবে।  ২০০৭ সালের ফেব্র“য়ারী ০৩ তারিখে জিইবি এবং সিত্রসই বিভাগ মিলিত ভাবে একটা তিনদিন ব্যাপি সেমিহস্টার আয়োজন করে “ঝঊগওঘঅজ ঙঘ এঊঘঊঞওঈঝ অঘউ ঈঙগচটঞওঘএ”.বক্তারা দেশ বিদেশের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা। আয়েশা মূলত তুহিনের জোড়াজুড়িতেই সেমিনারের জন্য রিজিস্টেশন করে।

উদ্বোধনী সেশনের পরেই প্রথম বক্তা হিসেবে আসেন আয়েশার প্রিয় জাফর স্যার। সেদিনের স্যারের প্রেজেন্টেশনই আয়েশার জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে দিতে যথেষ্ট ছিল। স্যারের প্রেজেন্টেশনের নামছিল “জীবনের নীল নকশ;উঘঅ”স্যারের শুরুটা ছিল এমন “বিজ্ঞানের কোন তত্ত্ব যদি তুমি তোমার কাজের লোককে বোঝাতে না পার তাহলে বুঝাতে হবে তুমি নিজেই সেই তত্ত্বটি বোঝেনি। প্রকৃতি জটিলতা পছন্দ করে না। তাইতো প্রকৃতির সবকিছুই সহজ সরল। তেমনি জীবিত প্রাণীর মুল ব্যাপারটিও অত্যন্ত সহজ সলে। একটি মানুষ ছেলে হবে না মেয় হবে বেট না লম্বা, ফর্সা না কালোপ, টাকমাথাওয়ালা না টাকবিহীন, রাগী না নরম স্বভাবের হবে খুটিনাটি সব তথ্যই থাকে উঘঅ নামক অঞএঈঈএঞঅঅঞ

.........সূত্রে................

প্রাজল উপস্থাপনার পাশাপাশি প্রজেক্টের ছবির মাধ্যমে সবকিছূ ব্যাখ্যা করে দেখিয়েছিলেন। সেদিহন আয়েশার একটি কথাই বারবার মনে হচ্ছি কেন সে জিইবির মাত রোমাঞ্চকর বিষয়টাকে পাশ কাটিয়ে গিয়েছিল এতোদিন। সবশেষে স্যার জেনেটিক্সের সাথে কম্পিউটিং কিভাবে জড়িত ব্যাখ্যা করেছিলেন। পরবর্তি দু’দিনে সে বেশ বড় ক্যানভাসে জেনেটিক্সের বিভিন্ন মজার এবং জটিল কিন্তু চমকপ্রদ বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, ব্যাপারগুলো একজন জিইবির ছাত্রী হিসেবে সে আগে থেকেই একটু আধটু জানতো কিন্তু কখনোই ব্যাপারগুলোকে অন্তর দিয়ে অনুভব করেনি। এই তিনদিনের সেমিনার তাকে জিইবি সম্পর্কে দারুনভাবে অনুপ্রাণিত করে। সে দেশী বিদেশী বড় বড় জিন বিজ্ঞানীদের সম্পর্কে জানতে পারে। ড. মাকসুদুল আলম, বাংলাদেশের বড় জিন বিজ্ঞানী, জানতে পারেণ এখানে এসেই। একজন ভাল বিজ্ঞানীই যে পারেন তার কাজের মাধ্যমে সভ্যতাকে পরিবর্তন করতে পারে, সে অনুভব করে। এবার সে সত্যিকার অর্থেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে বড় বিজ্ঞানী হবার।

সেমিনার শেষ। আয়েশা পড়াশুনায় মনযোগ দেয়। সেমিনার করার আগের আয়েশা এবং পরে আয়েশার মাঝে যে রাতদিন তফাত বন্ধুরা সবাই বুঝতে পারে। আস্তে আস্তে নিজেকে গুছিয়ে নেয় সে। নিয়মিত পড়াশুনা, ল্যাবের কাজ, লাইব্রেরীতে পড়াশুনা সবই চলতে থাকে সমান তালে। সেকেন্ড ইয়ার ফাস্ট সেমিস্টার অনেক ভাল ফলাফল করে। আর সে বছর ২য় সেমিস্টারে আয়েশা ফাস্ট ক্লাস সেকেন্ড হয়। তবে তুহিনের সাথে পেরে ওঠে না, বরাবরের মতো সেবারও তুহিন ফাস্ট হয়, অবশ্য ৩/১ এ গিয়েই নাকি আয়েশা তুহিনকে ২টিয়ে প্রথম হবে একথাও তুহিনকে তখনই জানিয়ে রাখে।

২০০৮ সালের জানুয়ারিতেই যথারীতি তৃতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস শুরু হয়ে যায়। বলা নেই কওয়ানেই প্রিয়বন্ধু তুহিন হঠাৎ খুব অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। হাতের কাছেই ওসমানী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। ধরা পড়ে তুহিনের ব্লাড ক্যান্সার। ব্যাপার গুলো এতো দ্রুত ঘটতে থাকে যে বন্ধুরা কেউ কিছু বুঝে ওঠারই সময় পায় না। সে সময় রোগটা ধরা পড়লো তখন আর সেটা ডাক্তারদের আয়ত্বের মাঝে নেই। নিয়মিত ব্লাড পরিবর্তন করলে হয়তো আরো একমাস বাঁচানো যাবে, ডাক্তারদের অভিমত। চোখের সামনে বন্ধুকে এভাবে মরতে দেখে আয়েশা কিছুতেই মেনে নিতে পারে না। সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেও বি নেগেটিভ রক্ত জোগাড় করতে হিমসিম খায়। তারা দেখতে পায় সাস্টের শিক্ষার্থীদের কোন কেন্দ্রিয় ব্লাডের তথ্য নেই কারো কাছে। বলতে গেলে তুহিন আরো যে কিছুদিন বাঁচতে পারতো সেটাও সম্ভব হয় না রক্তের অভাবে। তুহিন সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় ফেব্র“য়ারির ১৮ তারিখ। তুহিন চলে গেলে আয়েশা বুঝতে পারে, সে তুহিনকে শুধুই বন্ধু হিসেবে দেখেনি মনের অজান্তে ভালবেসে ফেলেছিল ! সে ভাবতেই পারেনা, একুশে ফেব্র“য়ারিতে যখন সবাই শহীদ মিনারে প্রভাতফেরী করে ফুল দিতে যাবে, সেই সকালে তুহিন থাকবে না।

তুহিনের মৃত্যুতে আয়েশা জীবনে সবচেয়ে বড় আঘাত পায়। তবে আয়েশা ভেঙ্গে পড়ে না, যে প্রতিজ্ঞা করে রক্তের অভাবে সে কাউকে মরতে দিবে না। অন্তত সাস্টের কাউকে নয়।  পরবর্তি একমাসে আয়েশা আর বাকি বন্ধুরা মিলে সাস্টের সকল ব্যাচের সকল ছাত্র-ছাত্রীদের ব্লাড গ্র“প সংগ্রহ করে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তারা সেই তালিকা বড় সাইন বোর্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে টানিয়ে দেয়। এই ভেবে তারা আনন্দিত হয় যে, তাদের মতো আর কাউকে ব্লাডের জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। তালিকা দেখে অতি সহজেই সে তার প্রয়োজনীয় ব্লাড জোনারকে খুঁজে নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও অনেক সাহায্য করে, প্রতি বছর নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য হালনাগাদ করে। পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশুনা ৩/১, ৩/২ তেও ফাস্ট ক্লাস ফাস্ট।  ২০০৯ সালে তখন চতুর্থ বর্ষে আয়েশা ৪/১ অনেক ভাল ভাবে শেষ করে আর ৪/২ তে গিয়ে সকল কোর্সে সিজিপ্রিত ৪.০০ পায়। এভাবেই শেষ হয় আয়েশার বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া। এবার থিসিসের পালা।

২০১০ সালে আয়েশা ডিপার্টমেন্টের প্রিয় মাহবুবল হক স্যারের তত্ত্বাবধানে শুরু করে থিসিসের কাজ। থিসিসের বিষয় ‘মেটা-জিনোমিক্স’ সেপ্টেম্বর নাগাদ সে তার থিসিস পেপার সাবমিট করে। এতো সুন্দর থিসিস দেখে স্যাররা চমৎকৃত হয়। একই সময় বাংলাদেশী জিন বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম পার্টের জীবন-রহস্য উৎঘাটন করে সারা দেশকে আনন্দের জোয়ারে ভাসায় আয়েশা অনুপ্রাণিত হয়। ২০১০ সালের আগস্ট মাস, পৃথিবীর অপর প্রান্তে যুক্তরাষ্ট্রের একদল বিজ্ঞানী ‘লস অ্যালামস জৈব গবেষণাগারে’ প্রথেকট ম্যানেজার ক্রিস ডেটার নেতৃত্বে ‘মেটা জিনোমিক্সের’ ওপর ভিত্তি করে, শুরু করে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরী মহাযজ্ঞ। ব্যাপারটা জানতে পেরে আয়েশা তার থিসিস ক্রিস ডেটার কাছে ই-মেইলে পাঠায়। ২০১১ সালে। আয়েশা পাড়ি জমায় যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যালামস শহরে। ইউনির্ভাসিটি অব নিউ মেক্সিকোর ন্যিানোসায়েন্স অ্যান্ড মাইক্সোসিস্টেমস বিভাগে ভর্তি হয় ‘অপটোজেনেটিক্সের’ ওপর পিএইডি ডিগ্রী নিতে। পাশাপাশি চলতে থাকে জৈব গবেষণাগারে কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরীর গবেষণার কাজ। লস অ্যালামস হলো পুরো বিশ্বের একটি ছোট সংস্কারণ। প্রায় সবদেশের জ্ঞানীগুণী মানুষের বাস এই শহরে। পৃথিবীর প্রতি বর্গমাইলে সবচেয়ে বেশি ডক্টরেটধারী থাকেন সেই শহরে।
অবশেষে ২০১৩ সালে আয়েশারা প্রথমবারের মতো কৃত্রিম ফুসফুস তৈরীতে সাফল্য লাভ করে। সারা পৃথিবীতে সারা পড়ে যায় এই আবিষ্কার।  ২০১৩ সালেই আয়েশা তার পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে। যোগদান করে বিশ্বখ্যাত হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ডিপার্টমেন্ট অব মাইক্রোবায়োলজিতে’, অধ্যাপক হিসেবে।  হাভার্ডে থাকাকালীন সময়েই সে শুরু করে কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর গবেষণা। পাঁচবছর মেয়াদী। মাত্র চার বছরের মাথায়ই সে তার কাজ শেষ করে।

২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস, আয়েশা এখন বাংলাদেশে। উঠেছে তার প্রিয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি ভবনে। এক কিলেতে হাটতে হাটতে এক সকালে সূর্যোদয় দেখছে। জীবনটাকে তার কাছে সত্যিই এক রূপকথার মতো মনে হয়। সে এখন পৃথিবীর বড় বড় বিজ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম।

জানুয়ারির ১৭ তারিখে সাস্টের সমাবর্তনের প্রধান অতিথি সে। কিন্তু তার আগেই যথাক্রমে ০৮ তারিখে ‘ন্যাশনাল বিওগ্রাফি এবং ১৬ তারিখে ‘সায়েন্স’ ম্যাগাজিন তাঁর কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর সাফল্যের গবেষণাটি প্রকাশ করে। সারা বিশ্বের মানুষের অভিনন্দনে সিক্ত হয় আয়েশা। ১৭ তারিখের সেই সমাবর্তনে সে তার জীবনের গল্পটিই বলে সবার নতুন গ্রাজুয়েটদের কাছে এবং সেদিনই তার শ্রদ্ধেয় মাবহুবল হক স্যার আয়েশাকে সাস্টের জিইবি ডিপার্টমেন্টের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে যোগদানের আমন্ত্রণ জানায়।
ড. আয়েশা আরেফিনের এখন প্রচণ্ড ব্যাস্ততা। ডিপার্টমেন্টের নানা কাজ, পরীক্ষা, গবেষণা ইত্যাদি নিয়ে তার দম ফেলার সময় নেই, বিভাগীয় প্রধান হিসেবে, সাস্টের জিইবি ডির্পাটর্মেন্টে।

২০১৮ সালের ৭ অক্টোবর, ক্যারোলিনস্কা ইনিস্টিটিউট, সুইডেন। ঘোষণা করে পৃথিবীর সর্বকনিষ্ট চিকিৎসা সাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীর নাম। কৃত্রিম ব্লাড সেল তৈরীর সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ সেই পুরস্কার এককভাবে লাভ করেন বাংলাদেশের ড. আয়েশা আরেফিন, মাত্র ৩১ বছর বয়সে।

আজ ২০৩০ সালের একদিন। এখণ পৃথিবীতে এমন একজন কেও খুঁজে পাওয়া যাবে না সে কিনা রক্তের অভাবে মারা যায়। কৃত্রিম ব্লাড অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে পৃথিবীর সর্বত্র পাওয়া যায়। এবং এর কৃতিত্ব দেওয়া হয় বিশ্বখ্যাত শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত অধ্যাপক, প্রখ্যাত জীন বিজ্ঞানী ড. আয়েশা আরেফিনকে।

অনুপ্রেরণায়: আয়েশার আলো।
০৬ অক্টোবর ২০১৩, স্বপ্ননিয়ে,
প্রথম আলো।

কালোবাজরী না কি গণিতের সৌন্দর্য?

এস এম মনির


পরিসংখ্যান ৩/২


 

পত্র-পত্রিকার কল্যাণই হোক কিংবা ঈদে বাড়ি যাবার সময় বিড়ম্বনাতেই হোক আমরা টিকেট কালোবাজারীর সাথে একটু আধটু পরিচিত। তাপরেও মনে করিয়ে দিচ্ছি। ঈদের সময় ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন ট্রেনে। অগ্রিম টিকেট পাননি, তাতে কি? আপনি টিকই যেতে পারবেন যদি আপনি আড়াইশ টাকা দামের টিকেট দ্বিগুন তিনগুন কিংবা আরো বেশী দামে ক্রয় করেন। প্রশ্ন হচ্ছে টিকেট কিভাবে পেলেন? পেলেন কিছু অসাধু লোকের কারসাহিত, যারা কিনা আগে থেকে ই বেশী টিকেট কিনে কৃত্রিম সংকট তৈরী করে, আপনার প্রয়োজনের সময় বেশী দামে বিক্রি করেছে।  কিন্তু আজ আমরা এর চেয়েও বেশী ক্ষতিকর কালোবাজরীর সম্পর্কে জানাব্ োএবং ছোট খাট গণিত করে সেই “অসাধু ব্যবসার সৌন্দর্য (?)” আবিস্কার করব। তাহলে চলুন শুরু করি।
ধরুন আপনি ঢাকা থেকে ট্রেনে চট্রগ্রাম যাবেন। বগি নম্বর চ। বগিতে সিট ১০০ টি। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করেই ১০৫ টি টিকেট বিক্রি করেছে। আর আপনিই সেই হতভাগা ০৫ জনের দরে যাদের টিকেট সিট নম্বর দেওয়া নেই। এদিকে বগিতে দাড়িয়ে যাবার সুযোগ নেই। কি করবেন তাহলে? আপনি চট্রগ্রাম যেতে পারবেন না নয়তো প্রার্থনা করতে হবে যে কোন সিট নম্বর যুক্ত টিকেট ধারী জ্যামের কারণে স্টেশনে পৌঁছতে না পারে।
একই উদাহরণ একাটা প্লেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ধরুন বাংলাদেশ ছাগল মন্ত্রণালয়ের একজন প্রভাবশালী মন্ত্র ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন। ৩০০ সিটের প্লেন। এদিকেও কর্তৃপক্ষ ৩১৫ টি টিকেটে বিক্রি করেছে ইচ্ছে করে। ছাগল মন্ত্রীর পিত্র মন্ত্রীর জন্য টিকেট কেটেছে। কিন্তু পিত্র খেয়াল করেনি যে টিকেট সিট নম্বর দেয়া নেই। মন্ত্রী যথাসময়ে বিমানবন্দরে গিয়ে দেখে বিমান কানায় কানায় পূর্ণ, তার বসার জায়গা নেই। হতভাগা মন্ত্রী “ছাগল উন্নয়ন মহাসম্মেলন চট্রগ্রামে” এ উপস্থিত হতে পারলেন না। যথাসময়ে সিটের অভাবে। এমতাবস্থায়, বাংলাদেশের অন্যান্য মন্ত্রী মিনিস্টার যা করতেন তিনিও তাই করবেন। অতিরিক্ত টিকেট বিক্রির দায়ে মালিকের জেল জরিমান এমনকি ব্যবসার লাইসেন্স ই বাতিল করে দিবেন।
যদি ব্যাপরটা একজন সাংবাদিরে সাথে ঘটতো? ব্যাচারা সাংবাদিক রেগে মেগ তার পত্রিকায় সেই কোম্পানির নামে বিশাল কালোবাজারী অভিযোগ এনে নিউজ করেদিত আর এদিকে মালিকের ব্যবসার বারোটা বেজে যেত। কিন্তু আপনি যদি সেই এয়ার লাইন্স কোম্পানীর মালিক হয়ে থাকেন, আপনি কি চাইলে কোন মন্ত্রী বা বেরসিক সাংবাদিকের পাল্লায় পড়ে আপনার ব্যবসার বারোটা বাজাতে?? অবশ্যই চাইবেন না। কিন্তু তাহলে কেন আপনি ৩০০ সিটের প্লেনের জন্য ৩১৫ টা টিকেট বিক্রি করলেন? সেই উত্তরটা একটু পরেই দিচ্ছি।

আগের উদাহরণটার কথাই চিন্তা করুন, কিন্তু এবার দেশটা বাংলাদেশ না মহাপরাক্রমাশালী বিশ্বের দাদা ‘যুক্তরাষ্ট্র’।

ডেল্টা এয়ারলাইন্স নিউইয়র্ক থেকে ওয়াসিংর্টনে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। মালিক হিসাব করে দেখলো, তার ৩০০ সিটের প্লেনে ড়গে ১৫ জন যাত্রী অনুপস্থিত থাকে। ডাক পড়ালো ম্যানাজারের।

মালিক : ম্যানেজার কি করা যায়?
ম্যানেজার : স্যারি, একজন পরিসংখ্যান বিদকে ডাকুন দেখুন কিছূ সমাধান দিতে পারেন কি না?
মালিক : ডাকো তাহলে একজনকে।
ম্যানেজার : জ্বি, স্যার।
তো এবার পরিসংখ্যানবিদ এসে দেখলো ঘটনা সত্য। গড়ে ১৫ জন অনপস্থিত। সে আরো হিসাব করে দেখলো পরিমিতি ব্যবধান ২ অনেকেই হয়তো পরিমিত ব্যবধান ব্যাপারটার সাথে পরিচিত না। তবে ব্যাপারটা কিভাবে আসলো সেটা ব্যাখ্যা না করে বরং পরিমিতি ব্যবধান দিয়ে কি কাজ করা হয় সেটার ব্যাখ্যাই সকলের জন্য সুবিধা জনক। একটু খেয়াল করুন।
গড় ক্ট এক পরিমিত ব্যবধান = ( ১৫-২;১৫+২)
(১৩;১৭) ৬৮% ক্ষেত্রে।
২. গড় ক্ট দুই পরিমিতি ব্যবধান = (১৫-২দ্ধ২;১৫+২দ্ধ২)
= (১;১৯) ৯৫% ক্ষেত্রে।
৩. গড় ক্ট তিন পরিমিত ব্যবধান = (১৫- ৩দ্ধ২; ১৫+৩দ্ধ২)
(০৯-২১) ৯৯% ক্ষেত্রে।
১ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১৩-১৭ অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৬৮ টিতে।
২ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ১১-১৯ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৫ টিতে।
৩ নম্বর দ্বারা বুঝাচ্ছে গড়ে ০৯-২১ জন অনুপস্থিত প্রতি ১০০ টি ফ্লাইটের ৯৯ টিতে।

এবার সেই পরিসংখ্যানবিদ মালিককে সমাধান দিলো এভাবে, আপনি যদি প্রতি ফ্লাইটে সর্বোচ্চ ০৯ টি টিকেট অতিরিক্ত বিক্রি করেন তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে মাত্র ১ টি ফ্লাইটে বসা নিয়ে সমস্য হতে পারে। আর যদি সর্বোচ্চ ১১ টি অতিরিক্ত টিকেট বিক্রি তাহলে ১০০ টি ফ্লাইটের মধ্যে ৫ টিতে সমস্যা হতে পারে। আর সর্বোচ্চ ১৩ টি বিক্রি করলে ১০০ টিতে (১০০-৬৮) =৩২ টিতে সমস্যা হবে। তাই আপনার ব্যবসার জন্য ১২ নম্বর সমাধানই সবচেয়ে ভাল হবে। এখন যদি মালিক দু নম্বর সমাধানকেই বেছে নেয় তাহলে সে প্রতি ফ্লাইটের ১১ টিতে টিকেট বেশী বিক্রি করতে হবে। কিন্তু ১০০ টির ফ্লাইটে যে ০৫ টিতে সমস্যার ফলে কিছু যাত্রী গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না তখন কি হবে।
‘যুক্তরাষ্ট্র পরিবহন কর্পোরেশন’ রীতিমত বিধি-বিধান করে সমধান দিয়েছে। হয় সেই সব যাত্রীদের দ্বিগুন ভাড়া ফেরত দিতে হবে, নয়তো পরবর্তি ফ্লাইটে বিনামুল্যে পৌঁছে দিতে হবে নয়তো উচ্চতর শ্রেণীতে ভ্রমনের সুযোগ করেদিতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। ব্যাপারটা যদি কারো বিশ্বাস নাহয়, সে যেন ইন্টারনেটে ‘ঙাবৎংবষষরহম’ লিখে ফলাফল গুলো পড়ে দেখে।

আমেরিকানরা যে শুধু ব্যাপারটা ফ্লাইটের ক্ষেত্রেই করে থাকে তা কিন্তু নয়। তারা সকল ধরনের পরিবহন, হোটেল বুকিং ইত্যাদিতে সাফল্যের সাথে ব্যবহার করে আসছে। শুধু আমেরিকান কেন উন্নত সব দেশেই ব্যাপারটা ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে নিয়েছে। সুতরাং আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে যেটা কালোবাজারী সেটা উন্নত দেশ গুলোতে রীতিমত আইনসিদ্ধ ব্যাপার। আর সেই অসাধ্য সাধন করেছে গণিত। নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে বলা যায় পরিসংখ্যান গণিতের একটি শাখা।
তাই আমাদের বিজ্ঞান জানতে বা বুঝতে হলে অবশ্যই গণিত জানতে হবে। কেননা গণিত হলো বিজ্ঞানের ভাষা।  আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান আজ এতো উন্নত সেটা কিছু গণিত না থাকলে সম্ভব হতো না। তাই আমাদের গণিত মুখস্ত না করে গণিতের সৌন্দর্যটা আবিস্কার করতে হবে।

তথ্যসূত্র:
১.  wikipedia (overselling)
২. Statistics By James and Frank.
৩. একটু খানি বিজ্ঞান- মুহম্মদ জাফর ইকবাল

সায়েন্স সন্ধ্যা

 

সব্দল হাট।

প্রতিদিন বিকালে ছোটখাটো একটা বাজার লাগে, আর শনিবার ও মঙ্গলবারে লাগে হাট। হাটের দিন থাকে প্রচন্ড মানুষের ভীর। গরম জিলাপি থেকে শুরু করে সাপ দেখিয়ে মাদুলি আর হেকিম চাচার কবিরাজি ওষুধ বিক্রিও বাদ যায় না।

আজ শনিবারের হাট। পিংকু হাতে একটি চটের ব্যাগে পাঁচ কেজি ধান নিয়ে এসেছে। ধানের দামটা প্রতি বার-ই উঠা-নামা করে। সে একশত টাকা পেল ধানগুলো বিক্রি করে। পিংকুকে দেখা গেল এদিক-সেদিক ঘুরে বেরাতে। লোকের গিজ গিজ ঠেলে পিংকুর হাতের খালি চটের ব্যাগটা সামনে-পিছনে দুলছে। এমন সময় কিম্ভূতকিমাকার একটা মানুষ ভীর ঠেলে ঠেলে পিংকুর দিকে আসছিল। লোকটির পেটটি সামনে নীল শার্টের বোতাম ছিড়ে বের হতে চাইছে। চুলগুলো সাদা। বয়সের ভার মুখের চামড়াতে একেবারে স্পষ্ট। পিংকু তার সাথে কথা বলতে গেল।

পিংকুঃ       নমস্কার, আমার ভাগ্যটা মনে হয় খুব ভালো আজকে। আপনি সেই বিজ্ঞানী হরেণ চ্যাটার্জী, তাই না?

হরেণ চ্যাটারজীঃ হ্যা, ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু আমিতো. . .

পিংকু হরেণ চ্যাটার্জীকে থামিয়ে বলে-

- আমাকে চেনার কথা আপনার নয়। আসলে জানেন কি-বিখ্যাত লোকেরা অনেকের কাছেই পরিচিত। কিন্তু সেই ‘অনেকের’ সবাইকে কি ঐ ভদ্র বিখ্যাত লোকটি চেনেন?

- তা যা বলেছেন বাবু। আপনি তাহলে আমার জাদু দেখেছেন কোন স্কুলে, তাইনা?

- হ্যা, আমাদের স্কুলেইতো দু’বার দেখালেন।

- তা আপনার পরিচয়টা. . . .

- একি! আপনি আমার বাবার বয়সী। আমাকে ‘তুমি’ করে বললেই খুশি হব। আর-আমার পরিচয়! মানুষের পরিচয়তো ক্ষণে ক্ষণেই পালটায়। কোনটাইতো  স্থায়ী নয়।

- একেবারে পাক্কা কথা বলেছেন, না না বলেছ। তা তোমার বর্তমান ক্ষণের পরিচয়টাই বল।

পিংকু একটু সময় নিয়ে চিন্তা করে বলল-

- আমি পিংকু  রায়। একটা হাইস্কুলে শিক্ষকতা করছি। আর দু’বছর হল-নিজেই একটা ছোটখাটো থিয়েটার করেছি। সেখানেই বেশির ভাগ সময় কাটে।

- বাহ! বেশতো। তোমার থিয়েটারে একদিন আমাকে নিয়ে যেও।

- নিশ্চয়ই নিয়ে যাব। আপনি জানেন না আমি আপনাকে কত খুজেছি। এমন লোক আপনি, মোবাইল ছাড়া এখন কি কল্পনা করা যায়। একজন রিক্সাচালক- যে কিনা পেটে ক্ষুধা লাগলেও পাঁচ টাকা না খেয়ে বাচ্চার জন্য ক্রিম বল কেনে , সে-ই এখন মোবাইল কিনেছে। কেন জানেন-বউয়ের সাথে কথা বলবে বলে। বউয়ের সাথে কথা মোবাইলে বললে নাকি তার রিক্সা চালানোর কষ্টটা গায়ে লাগেনা।

- তা বুঝলাম, আমি কার সাথে কথা বলব?

- আপনার না হয় কথা বলার লোক নেই, কিন্তু আপনিইতো অন্য কারো কথা বলার লোক হতে পারেন, তাইনা?

- হ্যা, ঠিকই বলেছ। তবে. . . .

-তা যাইহোক, আমি আপনার জাদুর ফ্যান সেই ক্লাস সিক্স থেকেই। আমাদের স্কুলে তখন প্রথম দেখেছিলাম আপনাকে। আপনি তখন তো ইয়াং ম্যান, আর বলতেন-এগুলো কোন জাদু নয়, সব সায়েন্স। আমি তখন বুঝতে পারিনি জাদু কেন সায়েন্স হবে? পরে যতই বড় হয়েছি , বুঝেছি সায়েন্স কত মজার বিষয়। আপনার খোঁজে বেরিয়েছি এই আশায়-কিছু সায়েন্স শিখব।

 

বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে। সেটা হরেণ বাবুর ঠোঁট কাঁপুনি দেখেই ঠাহর হয়। কথোপকথন আর বেশি দূর এগোলনা। হরেণ বাবু তার বাড়িতে পিংকুকে আসার নিমন্ত্রন দিয়ে একটা কাগজে ঠিকানাটা কাঁপা- কাঁপা হাতে লিখে দিলেন। হরেণ বাবুর এক প্রতিবেশী হরেণ বাবুকে বাইকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন। আর পিংকুর তো মাথায় হাত! মা যে তরকারি – পাতি কিনতে বলেছিল! কাঁচা বাজারে প্রায় সব কিছু শেষের দিক। ভেন্ডি কিনল ২ টাকা প্রতি কেজি দরে। একশ টাকায় ব্যাগ ভর্তি!

 

 

২.

উমেদ আলি হাই স্কুল।

নবম শ্রেণীর ক্লাশ রুমে পিংকু ঢুকল। দিনের প্রথমেই পিংকুর পদার্থ ক্লাস। পিংকু বলল-

- তোমরা কি কেউ ফানুস দেখেছ? বলতে পারবে কেন ফানুস আকাশে উরে যায়?

কেউ কেউ দুই হাত তুলেছে, আবার কেউ এক হাত, কয়েকজন তোলেইনি-তারা মনে হয় ফানুস দেখেনি, না হলে স্যারের কথা ভালো মত বোঝেইনি। পিছনে গল্প করলে বুঝবে কিভাবে?

পিংকুঃ       সবাই হাত নামাও, জামান তুমি বল।

জামানঃ স্যার, আমি ফানুস কল্পনায় দেখেছি। আমার দাদু আমাকে বলেছিল- ফানুস আর মানুষ এই দু’য়ের মাঝে অনেক মিল। ফানুসের দম হল কেরোসিনে ভেজানো দড়ি, যতক্ষণ জ্বলবে – ততক্ষণ আকাশে উড়বে। কেরোসিন শেষ, ধুপ করে মাটিতে পরে যাবে।

পিংকুঃ       থামো!! সাহিত্য বলা শুরু করেছ? মিতালি, তুমি বল।

মিতালিঃ অ্যাঁ. . . উমম. . . স্যার. . .

পিংকুঃ       বলো বলো।

মিতালিঃ স্যার, হালকা জিনিস  তো ভারী জিনিসের উপর ভাসতে পারে। ফানুসের ভিতরে যে ধোয়াটা থাকে সেটাতো অনেক গরম এবং এই জন্যই হালকা, তার আশেপাশের বাতাসের চেয়ে। আমার মনে হয় এই জন্যই ফানুস উপরে ভাসতে থাকে, আর বাতাস এসে তাকে ঠেলে একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় নিয়ে যায়।

পিংকুঃ       এক্সাক্টলি। বসো। দেখেছ! সবাই মিতালির মত চিন্তা করতে শেখ। তাহলেই সায়েন্স পড়তে ভালো লাগবে। সেই সাথে আমাদের দেশটাও অনেকদূর এগিয়ে যাবে।

মিতালিঃ স্যার, আমার একটা প্রশ্ন আছে।

পিংকুঃ       কি প্রশ্ন বল। আমি প্রশ্ন করাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করি।

মিতালিঃ স্যার, একটা পেরেক হাতের মধ্যে জোড়ে টিপে দিলেও ঢুকেনা, কিন্তু একটা শুই দিয়ে  অল্প একটু চাপ দিলেই ঢুকে যায় কেন?

পিংকুঃ       বাহ! মিতালি। তোমার প্রশ্নটা খুবই মজার। তোমাদের মত ছেলে-মেয়েদের জন্য বাংলাদেশ সত্যিই গর্বিত। বাংলাদেশ বদলে যাচ্ছে, এটা তারই একটা প্রমাণ।

শোন- তোমার প্রশ্নের মধ্যেই কিন্তু একটা ক্লু আছে। ফোর্স বেশি দিচ্ছ কিন্তু ঢুকছেনা, আবার ফোর্স কম দিলেও কোন কিছুতে সেটা ঢুকে যাচ্ছে। তার মানে ফোর্স দিয়ে বিষয়টাকে পরিষ্কার করে বোঝা যাচ্ছেনা। তাই একটা নতুন রাশি চাপ, যেটা হল প্রতি একক ক্ষেত্রফলে ফোর্স। এ থেকে বোঝা যায় একই ফোর্সের জন্য ক্ষেত্রফল কম হলে চাপ বেশি, এবং ক্ষেত্রফল বেশি হলে চাপ কম, তাই না?

মিতালিঃ জী স্যার।

পিংকুঃ       শুই হল চিকন , মানে এর মুখের ক্ষেত্রফল অনেক কম । আবার পেরেক কিন্তু শুইয়ের চেয়ে অনেক মোটা, মানে ক্ষেত্রফল অনেক বেশি । এখন তুমি চিন্তা কর আমি একটু আগে কি বলেছি । শুইয়ের ক্ষেত্রফল কম – মানে চাপ বেশি , যার চাপ বেশি সেইতো আগে ঢুকবে , তাইনা ?

মিতালীঃ জ্বী স্যার, বুঝে গেছি, দারুণ মজার । আর আপনি আরো মজা করে বুঝিয়েছেন । ধন্যবাদ স্যার ।

পিংকুঃ       একজন মজা পেলেই হবে শুধু , সবাইকে পেতে হবে । একা একা কি দেশটাকে ভালো জায়গায় নিয়ে যাওয়া যাবে , সবাই মিলে ঠেলতে হবে কেউ চাকা , কেউ বডি , কেউ স্টিয়ারিং ধরবে – তবেই  না আমাদের সোনার বাংলা গড়তে পারব । তার মানে সবাইকে পড়ালেখায় মজা পেতে হবে, মজা না পেলে ছিটকে পড়ার সম্ভাবনা আছে ।

সবাই একসাথে বলে উঠে – স্যার , আমরা সবাই মজা পেতে চাই ।

পিংকুর চোখের কোনায় একবিন্দু জল চলে এসেছে, সে খুব আবেগপ্রবণ । দেশকে ভালোবাসার কথা উঠলে তার চোখে জল আসবেই ।

পিংকু একটু ভারী কন্ঠে বলল-

পিংকুঃ       আমিও তোমাদের মজায় মজায় শেখাতে চাই । তোমরা কি জান – যে এমন কিছু আলো আছে যেগুলো আমরা চোখে দেখিনা । কিন্তু সেই আলো গুলো জীবনের প্রতিটি মূহুর্তে আমাদের আশে পাশে ঘুরে বেরাচ্ছে ?

সবাই একসাথে বলে উঠল – না স্যার , কই??  এরকম কিছুই তো জানিনা । ভূত-টূত নাকি স্যার?

পিংকুঃ       আরে, ভূত-টূত না । ঐ আলোর নাম ইনফ্রারেড আলো । তোমাদের বাড়িতে যে টিভি রিমোট আছে, তার মাথায় একটা ছোট লাইট আছে, দেখেছো কখনো ? সেটা কি জ্বলে?

হরিঃ জ্বি স্যার দেখেছি । কিন্তু জ্বলেনাতো ।

পিংকুঃ       জ্বলে , জ্বলে । এখান থেকে যে আলো বের হয় সেটা ইনফ্রারেড , আমাদের চোখ সেটা দেখতে পায় না । তোমরা বাসায় গিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করবে ।

জামানঃ স্যার , এক্সপেরিমেন্ট কি ?

পিংকুঃ       এক্সপেরিমেন্ট হল – বইয়ের জ্ঞানগুলোকে চোখ দিয়ে বাস্তবে দেখা, হাতে কলমে কাজের মাধ্যমে ।

আচ্ছা শোন- বাসায় গিয়ে তোমরা মোবাইলে ক্যামেরা অন করবে, তারপর রিমোটের লাইটের উপরে ধরবে । রিমোটের বাটন চাপলে, ক্যামেরায় দেখবে লাইটটা জ্বলছে । যাদের বাসায় টিভি রিমোট বা ক্যামেরা মোবাইল নাই, তারা বন্ধুদের বাসায় যাবে যাদের টিভি রিমোট এবং ক্যামেরা মোবাইল আছে। ওকে আজ এ পর্যন্তই ।

বেশি কথা বললে পিংকুর মাথা ব্যাথা করে । এখন ক্লাশ থেকে বের হয়ে তার খুব মাথা ব্যাথা করছে । তাই ছুটি নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে গেল ।

 

 

 

৩।

বেলা পড়ে এসেছে ।

স্নিগ্ধ রোদ এসে পড়েছে বিজ্ঞানী হরেণ চ্যাটার্জীর বাড়ির ছাদে । আকাশে অনেকগুলো চিল উড়ে বেড়াচ্ছে । বাড়ির পাশেই মেঠোপথ একে-বেঁকে চলেছে ।

মনা, হরেণ চ্যাটার্জীর মেয়ে, বিকেলের ঘুম শেষে সেজে গুজে গুন গুন করে গান গাইতে গাইতে ছাদে উঠে এলো, একটা গল্পের বই নিয়ে । আকাশে উড়ন্ত চিল দেখতে দেখতে মনা ভাবল এরোপ্লেনের কথা । এই চিলের উড়ানো দেখেই তৈরি হয়েছে উড়োজাহাজের মডেল । চিলের ডানাগুলো কেমন যেন – উপরের দিকটা থ্যাবড়ে যাওয়া টিনের চালের মত , আর নিচটা সমতল।

মনার ধ্যান ভাঙল মেঠো পথ দিয়ে হেঁটে হেঁটে আসা এক আগুন্তুক দেখে । লম্বায় প্রায় ৫ ফুট ৮ইঞ্চিতো হবেই । পড়নে সাহেবী পোশাক, মাথায় হেট, চোখে চশমা । এইরকম স্মার্ট ছেলেকে এই মেঠোপথে খুব কমই দেখাছে মনা। ছাদের রেলিং এর জন্য আর দেখা গেলানো, কোথায় যেন হারিয়ে গেল দৃষ্টি সীমানা থেকে । একটু পরেই বাসায় কলিং বেলের আওয়াজ । মনা নিচে নেমে গেল । দরজা খুলতেই দেখা গেল সেই মেঠোপথের লোকটিকে !

ভদ্রলোকঃ নমস্কার। এটা কি হরেণ চ্যাটার্জী কাকুর বাড়ি ।

মনাঃ    আজ্ঞে, হ্যাঁ । কিন্তু আপনি ?

ভদ্রলোকঃ আমি. . ., আমাকে আপনি চিনবেননা। আমি কাকুর কাছে এসেছি, কথা বলতে।

মনাঃ    ভিতরে আসুন । আপনি বসুন, আমি বাবাকে ডেকে দিচ্ছি ।

পিংকু ঘরের চারপাশটা লক্ষ্য করছিল। ড্রয়িংরুমটা বেশ সাজানো । বেশ কিছু বিদেশী বিজ্ঞানীদের ছবি দেয়ালে টানানো । স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু’র ছবিও আছে দেখছি । নিশ্চয়ই এগুলো হরেণ বাবুর সদিচ্ছা । উত্তরের দেয়ালটার বড় একটা অংশ জুড়ে ডিজিটাল ঘরি-সবুজ আলোয় ভেসে উঠেছে ০৪:৩০ বিকাল, ২৪/০৮/২০৪৫ ।

এরপর হাতসেলাই করা একটা কবিতার ফ্রেম চোখে পড়ল । কবিতা পড়তে যাবে এমন সময় হরেণ বাবুকে নিয়ে মনা রুমে ঢুকল ।

হরেণ বাবুঃ     পিংকু বাবু যে! অবশেষে এই অধম হরেনের বাসায় আসার সময় হল ।

নমষ্কার  জানিয়ে পিংকু বলল-

পিংকুঃ        কি যে বলেন কাকু । আপনাদের সাথে সময় কাটানো তো ভাগ্যের বিষয় । আমিতো আসার জন্য উদগ্রীব । থিয়েটার আর স্কুল নিয়ে পেরে উঠছিলাম না । আজ সকালে ক্লাশ শেষে মাথাটা একটু ধরে উঠল । ভাবলাম ছুটি নিয়ে বাড়ি যাই ।

হরেণ বাবুঃ     এখন কেমন বোধ করছ বাবা ?

পিংকুঃ       এখন ভালো। ভাবলাম বিকেল বেলাটা আজ আপনার কাছে চলে আসি না কেন ?

হরেণ বাবুঃ     বেশ ভালোই করেছ । বিকেল  বেলাটা খুব একা একা লাগে । শুধু গল্প করতে মন চায় । খুব ভালো হল ।

মনাঃ    বাবা তোমরা গল্প কর, আমি তোমাদের জন্য চায়ের ব্যবস্থা করি ।

এই বলে মনা ভিতরে চলে গেল ।

হরেণ বাবুঃ     মা মরা মেয়েটাকে বুকে আগলে মানুষ করেছি বাবা । জন্মের তিন বছর পরই ওর মা মারা যায় । তারপর থেকে বাপ-মেয়ে এই দুজন মাত্র এই বাড়ির সদস্য । আর আছে একজন কাজের লোক।

পিংকুঃ       তা... কিসে পড়াশোনা করছে ।

হরেণ বাবুঃ     তারাকান্ত সরকারি কলেজ । উচ্চ মাধ্যমিক ২য় বর্ষ । ওর বিজ্ঞান খুব পছন্দ । ওকে বললাম, “তোর যেটাই পছন্দ সেটাই পড়, মা ।”

পিংকুঃ       ঠিকই করেছেন ।

এর মধ্যে মনা চা নিয়ে চলে আসে ।

হরেনঃ মা মনা পরিচিত হও ওর সাথে । ও হল পিংকু, পিংকু এই হল আমার মা- মনা ।

মনাঃ    চায়ে কি কফি দিব, পিংকু বাবু ।

পিংকুঃ       হ্যা, বেশ ভালোই লাগে চা-কফি একসাথে খেতে । কাকুর মুখে শুনলাম- আপনি বিজ্ঞান অনেক পছন্দ করেন । আজকে চা খেতে খেতে হয়ে যাক না একটা বিজ্ঞান সন্ধ্যা ।

হরেণ বাবু ও মনা একসাথে সম্মতি জানালো ।

মনাঃ    আপনিই শুরু করুন না যেকোন একটা বিষয় নিয়ে।

পিংকুঃ       স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুকে দিয়েই শুরু করা যাক। রেডিও আবিষ্কার কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসুই করেছিল, মারকোনি নয় ।

মনাঃ    কি বলছেন? বইতে যে পড়লাম – মারকোনি !

হরেণ বাবুঃ     ঐটা ভুল পড়েছ মা । গোটা বিশ্ববাসীকে ভুল জানানো হয়েছে ।

পিংকুঃ       ঠিক বলেছেন কাকু । যে যন্ত্রের মাধ্যমে তার ছাড়াই তথ্য পাঠানো যায় সেটা হল ‘কোহেরার’ ।

এটা জগদীশ স্যার একাই বানিয়েছেন । কিন্তু এই ডিভাইসের পেটেন্ট নেননি । আর এই সু্যোগ কাজে লাগিয়ে মারকোনি একটু পরিবর্তন করে কোহেরার ব্যবহার করে রেডিও বানান এবং পেটেন্ট করে নেন নিজের নামে । তাই না কাকু ?

হরেণ বাবুঃ     ঠিক, একদম খাটি কথা । এই কথা সবাই জানেনা । সবাইকে জানানো উচিত আমাদেরই।

মনাঃ    এই সত্যটা এতদিন চাপা ছিল কেন ?

পিংকুঃ       বিদেশীদের কুটনীতির কারণে । সত্য চিরকাল চাপা থাকেনা মনা, থাকেনা ।

হরেণ বাবুঃ     আচ্ছা, আমি মোবাইলের রেডিয়েশন নিয়ে একটু বলব । অনেকে বলে যে মোবাইলের রেডিয়েশনে মানুষের ক্যান্সার হয় ।এটা আসলে একটা ভুল কথা । কোয়ান্টাম মেকানিক্সে প্রথমেই বলা হয় , কোন মেটাল থেকে ইলেকট্রন বের করতে হলে একটা ফোটনের মিনিমাম শক্তি দরকার হয়, যেটাকে বলা হয় ওয়ার্ক ফাংশন । বেশি শক্তি মান ফোটনের কম্পাঙ্ক বাড়া । আলোর তীব্রতা বেশি হলেই ফোটনের শক্তি বাড়েনা । এই যেমন ধর, একটা ৫০ কেজি পাথর উঠানোর শক্তি যদি আমার না থাকে, তাহলে কি আমি ঐ পাথরটি উঠাতে পারব ? পারবনা- ছুড়ে মারা তো দূরে কথা । ঠিক তেমনি – মোবাইলের রেডিয়েশনের শক্তি এত কম যে মানুষের একটা কোষকে সে ভাঙ্গতে পারে না । কিন্তু এক্স-রে এর অনেক শক্তি , ও যেদিকে যায় সব কোষ মেরে চলে যায় । তাই মোবাইল রেডিয়েশন দিয়ে মানুষের ক্যান্সার হয় কথাটা ভুল ।

পিংকুঃ       হুম্‌... দারুণতো !

মনাঃ    খুব সুন্দর ব্যাখ্যা বাবা । আমার মাথায় একটা বিষয় ঘুরপাক খাচ্ছে । চিলের উড়তে না হয় পাখা লাগে , বিমানের পাখাগুলো কি কাজ করে ? অবশেষে হঠাত ব্যাখ্যাটা মাথায় চলে আসলো ।

হরেণ বাবু আর পিংকু অবাক হয়ে বলল – বলো,বলো...

মনাঃ    বিমানের পাখার উপরটা থাকে অসমতল, একটু উপরে উঠানো , আবার নিচের দিকে নামানো । আইডিয়াটা মনে হয় চিলের ডানা পর্যবেক্ষণ করে নেয়া । আর পাখার নিচের তলটা সমতল । এতে উপরের বাতাসটিকে তুলনামুলক বেশি পথ অতিক্রম করতে হয়, নিচের বাতাসের চেয়ে । এতে কি হয় জানো – পাখার উপরে থাকে কম চাপ, আর নীচে থাকে বেশি চাপ। এইটা জানা যায় আসলে বারনৌলির ইকুয়েশন থেকে । এতে করে নিচের বাতাস উপরে একটা উর্ধমুখী চাপ দেয় । এই চাপ এর কারণেই বিমান আকাশে উড়তে থাকে ।

পিংকুঃ       তোমারটা দারুণ । এসব কোথায় জেনেছ মনা ?

মনাঃ    আমি ইন্টারনেট থেকে পেয়েছি তথ্য গুলোর তারপর নিজের মত করে গুছিয়ে বলা, এইতো । দাড়ান আমি আপনাকে একটা জিনিস দেখাই । এই বলে ড্রয়ার থেকে একটা মোড়ানো কি যেন নিয়ে এসে দাড়ালো পিংকুর কাছে ।

পিংকুঃ       কি এটা ?

হরেণ বাবুঃ     আশ্চর্যজনক বস্তু!!, পিংকু , দেখোই না! আমার চেয়েও বড় জাদু দেখাবে আমার মেয়ে ।

মনাঃ    এটা একটা কম্পিউটার , সাধারণ নয় – কোয়ান্টাম কম্পিউটার । এটা তৈরি গ্রাফিন দিয়ে । গ্রাফিন হলো কার্বনের অন্য একটি রূপ । এটির মধ্যে দিয়ে কারেন্ট পাস করলে এটি গরম হয়না, এটিকে মুড়িয়ে রাখা যায় । তাই আমার এই কম্পিউটার টিকে মুড়িয়ে রাখা অসম্ভব কিছু না।

পিংকুঃ       সত্যিই তো তুমি আমাকে জাদু দেখালে । এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কার করেছেন কে ?

মনাঃ    আমদের দেশের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থ বিজ্ঞানী ২০২১ সালে এই কম্পিউটার প্রথম আবিষ্কার করেন ।

পিংকুঃ       আপনাদের এখানে অনেক ভালো সময় কাটলো ।আজ উঠি অন্য আরেক দিন আসব ।

মনাঃ    আসবেন কিন্তু ।

পিংকুঃ       অবশ্যই আসব । আমার মত অনেক পিংকু হরেণ চ্যাটার্জীর মত মানুষের সাথে দেখা করুক এটাই আমি চাই । এভাবেই বিজ্ঞান ভালোবেসে এগিয়ে নেব আমাদের বাংলাদেশকে।

মনাঃ    অদ্ভুত সুন্দর আপনার কথাগুলো , মনে থাকবে ।

ফুগু – পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ

১৭৭৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর। এদিন লেখা ক্যাপ্টেন কুকের লগবুক থেকে জানা যায়, আগের দিন রাতে জাহাজের নাবিকরা সমুদ্র থেকে কিছু মাছ ধরেন। মাছগুলো কাটার পর নাড়িভুঁড়িগুলো খেতে দেন জাহাজে রাখা শূকরগুলোকে। রাতের খাবার খাওয়ার পর পরই নাবিকেদের শরীর অবশ হয়ে আসে, নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায়। সাথে প্রচন্ড পেট ব্যাথা, মাথা ব্যাথা আর বমি। নাবিকরা বুঝতে পারেন, তারা ভুল করে বিষাক্ত মাছ খেয়ে ফেলেছেন। সারা রাত ছটফট করে সকালের দিকে তারা মোটামুটি সুস্থ্য অনুভব করেন। শূকরগুলোর অবস্থা দেখার জন্য তারা খোঁয়াড়ে যান, সেখানে সবগুলো শূকর মরে পড়ে আছে। নাবিকরা অল্পের জন্য তারা বেঁচে গেছেন। যে অংশগুলো তারা ফেলে দিয়েছিলেন সেগুলোতেই সবচেয়ে বেশী বিষ ছিল। যে মাছ নিয়ে এই ঘটনা তার নাম ফুগু (Fugu) - পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ!

ফুগু জাপানি শব্দ, অর্থ ‘নদীর শূকর’। এর আরেক নাম পাফার ফিস (Puffer Fish). পাফার ফিস বা ফুগু হচ্ছে আমাদের দেশীয় পটকা মাছের একই বংশীয় আত্মীয়! ফুগুর ফুগুর শরীরে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ টেট্রোডোটক্সিন (C11H17N3O8). টেট্রোডোটক্সিন সংক্ষেপে TTX নামে পরিচিত। TTX পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষ, পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও এই বিষ এক হাজার গুণ বেশী বিষাক্ত। এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয় নি। রান্না করলে বা আগুনে ঝলসালেও এই বিষের প্রভাব বিন্দু মাত্রও কমে না। শরীরে TTX থাকার কারণে ফুগু হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত মাছ। শুধু তাই নয়, মেরুদণ্ডী প্রাণীদের মধ্যে ফুগু দ্বিতীয় বিষাক্ততম প্রাণী। একটি ফুগু মাছে যে পরিমান বিষ আছে তা দিয়ে ত্রিশ জন সুস্থ-সবল মানুষকে সহজেই মেরে ফেলা সম্ভব! ফুগু মাছের বিষ মাত্র এক গ্রাম পরিমাণ সংগ্রহ করে তা দিয়ে পাঁচশ মানুষকে অনায়াসে মেরে ফেলা সম্ভব! মানুষকে মেরে ফেলার ভয়াবহ ক্ষমতার জন্য জাপানের কানসাই (Kansai) এলাকার মানুষজন ফুগুকে ডাকে ‘Teppo’ নামে। অর্থাৎ – ‘পিস্তল।’

TTX মানব দেহের কোষ পর্দার সোডিয়াম চ্যানেল বন্ধ করে দেয় ও স্নায়ুতন্ত্রে ব্লক সৃষ্টি করে। ফলে মস্তিষ্কের সাথে শরীরের অন্যান্য অংশের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। দেহ প্রথমে অবশ ও পরে প্যারালাইসিস হয়ে যায়। ডায়াফ্রাম অসাড় হয়ে যাওয়ায় শ্বাসতন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে আক্রান্ত ব্যাক্তি দ্রুত মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে।

ফুগুর শরীরে বিষের পরিমাণ মাছের জাত, ভৌগলিক অবস্থান, ঋতু ও খাদ্যের উপর নির্ভর করে। ফুগুর শরীরে সবচেয়ে বেশী বিষ থাকে যকৃতে। তাছাড়া ডিম্বাশয়, হৃদপিন্ড, নাড়ীভূড়ি ও চোখেও প্রচুর বিষ থাকে। কিছু কিছু জাতের চামড়াতেও বিষ থাকে। জাপানের ‘ফুগু রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ - এর গবেষণা মতে, ফুগু খেয়ে আক্রান্তদের মধ্যে ৫০% যকৃত, ৪৩% গর্ভাশয় আর ৭% চামড়া খেয়ে বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়। প্রজনন ঋতুতে ফুগু মাছে বিষের পরিমাণ বেড়ে যায়। জাতের দিক থেকে সবচেয়ে বেশী বিষাক্ত টোরাফুগু (Torafugu). টোরাফুগু অর্থ Tigerfugu বা বাঘাপটকা!

ফুগুর বিষে আক্রান্ত হলে তিন থেকে ত্রিশ মিনিটের মধ্যে উপসর্গ দেখা দিবে। বিষ বেশী পেটে গেলে বিশ মিনিট থেকে আট ঘন্টার মধ্যে নিশ্চিত মৃত্যু। মৃত্যু হবে কী হবে না বা খাওয়ার কতক্ষণ পর হবে - সেটা নির্ভর করে কী পরিমাণ বিষ পেটে গেছে তার উপর। বিষে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম উপসর্গ দেখা দেয় জিভ ও ঠোঁটে। প্রথমে জিহ্বা ও ঠোঁট শিরশির করে ও পরে অবশ হয়ে যায়, হাত-পা অবশ হয়ে আসে। হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়, প্রকট শ্বাস কষ্ট হয়।

দ্বিতীয় পর্যায়ে, আক্রান্ত ব্যাক্তি প্যারালিসিসে আক্রান্ত হয়। তার মস্তিষ্ক পুরো সচল থাকে। সে বুঝতে পারে সে প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হচ্ছে, আশেপাশে কি হচ্ছে সবই সে বুঝতে পারে; কিন্তু, শরীরের কোন অংশই সে নাড়াতে পারে না বা কথা বলতে পারে না। এ অবস্থাকে বলা হয় কোমা। ফুগু বিষে আক্রান্ত হয়ে সাত দিন পর্যন্ত কোমায় থাকার রেকর্ড আছে। ফুগুর যেহেতু কোন প্রতিষধক নেই তাই পেট ওয়াশ করাই হচ্ছে এর প্রধান চিকিৎসা। আক্রান্ত ব্যক্তিকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না বিষ ক্রিয়ার প্রভাব কাটে।

মজার ব্যাপার হল, জাপানিরা এই ভয়ঙ্কর বিষাক্ত ফুগু মাছের বিষ আলাদা করে খাওয়া শিখেছে। জাপানে সবচেয়ে দামী আর অভিজাত খাবার হচ্ছে ফুগু মাছের নানান পদ! প্রতি বছর জাপানিরা প্রায় ১০,০০০ টন ফুগু মাছ খায়। রেস্টুরেন্টে একজনের জন্য একটি ফুগু পদের দাম পড়বে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ ইয়ান, অর্থাৎ প্রায় ২০ থেকে ৫০ ডলার! জাপানে ফুগু আহরণ ও বিক্রি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফুগু কাটাকুটি আর রান্না করার জন্য জাপানে লাইসেন্সধারী আলাদা বাবুর্চি রয়েছে। খোলা বাজারে আস্ত ফুগু বিক্রি নিষিদ্ধ। সরকারি লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকর্তৃক প্রক্রিয়াজাত করা বিষমুক্ত ফুগুর মাংশ প্যাকেট করে খোলা বাজারে বিক্রি করা হয়। ফুগু প্রক্রিয়াজাত করতে বাধ্যতামূলকভাবে ৩০টি ধাপ মেনে চলতে হয়। ১৯৫৮ সাল থেকে শুধুমাত্র ট্রেনিংপ্রাপ্ত এবং সার্টিফিকেটধারী ব্যক্তিরাই ফুগু কাটাকুটি আর রেস্টুরেন্টগুলোতে রান্না করতে পারে। জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে তাদেরকে লিখিত ও ব্যবহারিক মিলিয়ে তিনটি কঠিন পরীক্ষা দিয়ে এই সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়।

রেস্টুরেন্ট আর ফুগু প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফুগুর বিষাক্ত অংশগুলো বিশেষ একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে লকারে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। তারপর বেশ কিছু বিষাক্ত বর্জ্য জমা হলে সেগুলোকে একত্র করে পাঠানো হয় চুল্লিতে, সেখানে বর্জ্যগুলোকে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যের মত করে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়।

১৯৫০ সাল ছিলো জাপানের জন্য একটি ভয়াবহ বছর। শুধু এই এক বছরেই ফুগু খেয়ে জাপানে মারা যায় ৪০০জন, অসুস্থ হয় ৩১,০৫৬ জন। তারপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ায় দুর্ঘটনা অনেক কমে যায়। তবু, ১৯৭৪ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত জাপানে ফুগু বিষে আক্রান্ত হয় ৬৪৬ জন। এদের মধ্যে মারা যায় ১৭৯ জন। জাপানে এখনও প্রতি বছরই কমপক্ষে ২০ টি ফুগু বিষক্রিয়ার খবর পাওয়া যায়। আক্রান্তদের ৬০% মারা যায়। এসব মৃত্যুর প্রায় সবগুলোই ঘটে জেলেপল্লীতে জেলেরা নিজেরা নিজেরা ফুগু প্রস্তুত করতে গিয়ে ঠিক ভাবে প্রস্তুত করতে না পেরে, আর দুর্ঘটনা ঘটে আইনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে সার্টিফিকেটবিহীন বাবুর্চিকে দিয়ে ফুগু প্রস্তুত করতে গিয়ে।

সম্প্রতি, নাগাসাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন, Pseudomonas নামক ব্যাকটেরিয়াযুক্ত স্টারফিস, শেলফিস খাওয়ার কারণে ফুগুর দেহে TTX বিষ তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা নিয়ন্ত্রিত খাবার খাইয়ে ৪,৮০০টি টোরাফুগু জাতের বিষমুক্ত ফুগু উৎপাদন করতে পেরেছেন। জাপানে এখন বিভিন্ন ফার্মে বিষমুক্ত ফুগু চাষ করার হিড়িক পড়ে গেছে!

যে ফুগু নিয়ে এত মাতামাতি তার স্বাদ আসলে কেমন? Noel Vietmeyer নামের একজন ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ম্যাগাজিনে লেখেন, ‘আহামরি কিছু না! আঁশ নেই, আঠালো জেলির মত। স্বাদে হালকা। স্বাদটা অনেকটা মুরগীর বাচ্চার মত, সামুদ্রিক নোনতা স্বাদযুক্ত।’ কিন্তু, এই ফুগুর মাংশ খেয়েই তৃপ্তিতে জাপানিরা প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট পর্যন্ত ভুলে যেতে পারে। ফুগু নিয়ে সবচেয়ে বিখ্যাত কবিতাটি লিখেছেন জাপানি কবি Yoso Buson (১৭১৬-১৭৮৩). কবিতাটি একটি তিন লাইনের হাইকু কবিতা-

I cannot see her tonight.
I have to give her up.
So, I will eat Fugu.

কবিকে বালিকা পাত্তা দেয় না! দেখা করার শত চেষ্টা করেও কবি এক রাতে বালিকার সাথে দেখা করতে পারলেন না। কবি সিদ্ধান্ত নিলেন, অহংকারী বালিকাকে মন থেকে মুছে ফেলবেন! আর, মুছে ফেলার কষ্ট ভোলার জন্য খাবেন সুস্বাদু ফুগু!

রিমোভেবল ডি. এন. এ

দিনে দিনে বাড়ছে মানুষ ,বাড়ছে পৃথিবীর বয়স ।সেই সাথে বাড়ছে ইতিহাস,তত্ব,তথ্য,আর তথ্য ।কিন্তু আজ থেকে ২৫ হাজার বছর আগের এই পৃথিবী থেকে এ পর্যন্ত পৃথিবি পেয়েছে অনেক অনেক তথ্য ।তেলাপোকা থেকে ডাইনোসর...অ্যামিবা থেকে অত্যাধুনিক মানুষ ।ভু-পৃষ্টের নানা প্রান্তে নানা বিচিত্র সব পরিস্থিতি ।ভু-পৃষ্ঠের কঠিন                                                                                                                                                                      থেকে শুরু করে হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াসের উচ্চ তাপে এবং উত্তর মেরুর ঋনাত্বক তাপে ও রয়েছে জীবনের স্পন্ধনের রহস্য ।

এসবের সব কিছু ই সংগ্রহ করছে এই পৃথিবী ।কিন্তু এই সব তথ্য কোথায় সংগ্রহ করছে ...আর কেন ই বা সবাই শুধু তথ্য সংগ্রহ করে চলছে প্রতিনিয়ত?!

মিলিয়ন টেরা বাইট তথ্য নিয়ে ই ভু-পৃষ্ঠ থেকে গভীরে তৈরী হয়েছে "হোয়াইট বার্ন" ,"গ্রে-ডিফেন্স","ব্লাক রেডিয়ান্স" এর মত অনেক অনেক ডেটা সেন্টার।

এরা প্রতিনিয়ত ইনফরমেশন ক্যাল্কুলেট করে ব্রন্টুবাইট এ ।ভু-পৃষ্ঠের উপর যখন কিলো বাইট,মেগা ,গিঘা বাইট নিয়ে গননা করে তখন থেকে ই হাজার হাজার ব্রন্টুবাইট এর

মেমুরি নিয়ে হার্ডড্রাইভ সাজানো এসব সিস্টেম এ। তবে জেনে নেই যে ১০,০০,০০,০০,০০,০০০(দশ হাজার কোটি) টেরা বাইট এ ১ ব্রন্টু বাইট হয় ।

গ্রে ডিফেন্স অন্যতম শক্তিশালী ডেটা সেন্টার

ভূ-পৃষ্টের প্রায় প্রতি কিলোমিটার পর পর রয়েছে শক্তিশালি নিরাপত্তা ব্যাবস্থার  ইনফরমেশন কালেক্টর মডিঊল ।।

পাইয়োনিরার ফিনিক্স একজন উর্ধ্বত্বন কর্মকর্তা । তার মাথায় লাগানো রয়েছে সিগনাল জেনারেটর অ্যান্ড রিসিভার । গ্রে ডিফেন্স ডেটা সেন্টারে প্রবেশের সময় ফিনিক্স এর সিগনাল ইলেক্ত্রিক ওয়েভ এ

রুপান্তরিত হয় ।ইউনিক এসব নিরাপত্তা প্রটোকল ছাড়া ও রয়েছে মানব মস্তিষ্কের ইউটিলাইজড লগিক্যাল পোর্শন স্ক্যানার ।সব প্রাণী কিংবা সব মানুষ

তার মস্তিষ্কের ১০ ভাগ ও ব্যবহার করে নাহ । ব্রেইন এর বিবিধ ব্যবহার এর মাত্রা স্ক্যান করে প্রবেশ অনুমতি পায় অতি উচ্চ এই নিরাপত্তা সিস্টেম এ ।

 

পৃথিবির আদিকাল থেকে আগামী শতক এ কি বৈশিষ্টের প্রানী এসেছে ও আসবে তাদের বর্ণ ,ধর্ম,ইমোশন,বিভিন্ন রোগ,সহ ব্যাক্টেরিয়া,ভাইরাস, এর DNA এর ব্যাবচ্ছেদ ও বিবর্তনের ধাপ।

এখানে প্রতি মুহূর্তে আল্ট্রাসনিক সুপার অ্যাবাকাস যন্ত্রের সাহায্যে ১০০-১০০০টেরা Hz প্রসেসর প্রসেস করা হয় ।বিভিন্ন DNA গুনাগুন সংমিশ্রন করে তৈরী হচ্ছে

নতুন প্রজাতি ও বিভিন্ন রোগ জীবানুর রহস্য ।লিউকোমিয়া,ক্যান্সার,এইডস সহ নানা জিবানু অটোমেশন এর সাহায্যে কিউর হচ্ছে প্রতিনিয়ত ।গ্রে ডিফেন্স ছাড়াও আরো রয়েছে হোয়াইট বার্ণ ,ও ব্লাক রেডিয়ান্স

সহ অনেক অনেক শক্তিশালি ডাটা সেন্টার ।পৃথিবির কেন্দ্রর কঠিন শিলার সাথে  কানেক্ট করে তৈরী এসব স্টোরেজ ভান্ডার । ভু-পৃষ্টের ১/৪ অংশ

যদি ইউরেনিয়াম এ পূর্ণ করে তেজস্ক্রিয় বিস্ফোরন করে তবে ধ্বংস হতে পারে এরা । হোয়াইট বার্ণ ,ব্লাক রেডিয়ান্স এ বিভিন্ন বস্তু,প্রানীর রেডিয়েশন,গন্ধ,জমা থাকে ।

রয়েছে অসংক্ষ বস্তুর ত্রিমাতৃক ছবি।

এসব  রেডিয়েশন ব্যবহার করে তৈরী করে মৃত্যু ঘটানু বা সহনীয় বেচে থাকার ইউনিক রেডিয়েশন মাত্রা ।

ডেটা সেন্টা্রের নিজস্ব রোবটিক ল্যাব এ ডেভেলপক্রিত এল টি ই ,লাই-ফাই এর মত টেকনলজি ব্যাবহার করে তৈরী করছে এক নেটওয়ার্ক যেখানে প্রতি সেকেন্ডে ২-৪ টেরা,এক্সা,জেটা বাইট পর্যন্ত ডেটা ট্রান্সফার হয়ে থাকে ।

এত সব শক্তিশালি নেটওয়ার্ক সম্পর্কে জানে না ভু-পৃষ্ঠের উপরের অনেক লোকজন ।

---------

কিন্তু নাহ জানে অন্তত একজন ।মি.রিকুভা ।সারা জীবন খোজ করে যাচ্ছেন এমন কিছু ।তিনি আজ বৃদ্ধ ।নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন ।অর্জনের ঝুলিও কম নয়।

হোয়াইট বার্ণ এ প্রবেশের কিছু নমুনা ছক তৈরী করেছেন। রিকুভা র কাছে ভয়ংকর বেপার হচ্ছে প্রবেশদ্বার ।খোজে পাচ্ছেন না কোথাও । পেলেই বা কি তার ধারনা প্রবেশদ্বার এর হাফ কিলোমিটার রেঞ্জ ব্যাপি রয়েছে ইনফ্রারেড সিগনাল ,ও সিকিউরিটি রেডিয়েশন যা ধ্বংস করে দিবে বায়োলজিক্যাল টিস্যু ।

রিকুভার জ্ঞানের কথা তার প্রতিবেশী রিভান ,লোভা ও তাদের পিতা-মাতা ছাড়া কেউ জানে না ।তবে জ্ঞানী হিসেবে সবাই জানে ।রিভান একদিন বাসায় প্রবেশ ।

রিভান কে তার তেজস্ক্রিয় বস্তু সম্পর্কে আগ্রহের কারনে অনেক কিছু বলেন রিকুভা ।সে সুবাদে অনেক ভাল সম্পর্ক ।

আঙ্কেল কি করছেন?

---কিছু খোজার চেস্টা করছি ।

কি খোজছেন?

--তুই আজ যা জানতে চাইবি আজ তুকে সব ই বলব ।

রিকুভা আজ অনেক খুশি ,জীবনের একটা স্বাধ পূরন হতে যাচ্ছে ।

দীর্ঘ জীবনে গবেষনা করে আজ আংশিক সফল ।তৈরী করেছেন ইন ভিজিবল আর্টিফিশিয়াল DNA.তিনি এডেনিন ,থায়ামিন,ফসফেট সুগার এর সাথে

বিশেষভাবে তৈরী একটি রিমোভেবল ডিভাইস যুক্ত করেছেন ।যাতে DNA ফরমেট এ যেকোন ডেটা আপ্লোড করতে সক্ষম।DNA ফরমেটে র ডেটা যেকোন

প্রাণীর দেহে টান্সফার করতে পারলে ই সেই প্রাণীটি যে তথ্য রিকুভা দিবেন সে মতে কাজ করবে ।অর্থাৎ যদি রিমোভেবল মেমোরি তে কিভাবে গান গাইতে হয়

বা নাচতে হয় তা DNA ফরমেট এ ট্রান্সফার করা যায় তবে বাহন কারী প্রানী টি গান গাইতে ,নাচতে জানবে ।

।আর এই যুক্তি ব্যবহার করে হয়ত ---কিছু দিন পর সকল প্রাণী কে নিয়ন্ত্রন করা যাবে । হয়ত মশা আপনার গায়ে বেন বেন /প্যান প্যান গান না শুনিয়ে রক বা পপ মিউজিক শুনিয়ে রক্ত খাবে ,হাতি এসে বলবে---

ভাই আমার পিঠে এসে বসেন অনেক দিন জিমে যাই না ......

কিন্তু বিপ্তত্তি অন্য জায়গাতে DNA সাপোর্টেড ফরমেট এ তিনি ডেটা পাবেন কোথায়?

তার জন্য এখন কোন পথ ই নাই ।তবে যদি হোয়াইট বার্ণ ,গ্রে ডিফেন্স এর ডেটা সে পায় ...

 

------------

এদিকে রিভান পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে একটি মুড়ানো পেকেটে কি একটা বাসায় এনেছে । পরে তার বাবা মা খাবারের  সময় খুলে ফেলেছে পেকেট টি।একদিন পরে ই অজানা কি কারনে

দুজন ই অসুস্থ ।রিভান তার আংকেল রিকুভা কে সব বললে রিকুভা বুঝতে পারে ।নিরাপদ ভাবে ই ছিল পোলেনিয়াম টুকরো টি। খোলে ফেলে ই বিপত্তি এনেছে ।

কিন্তু উপায় ।ভেবে না পেয়ে উদাস মনে হারিয়ে আছে রিভান ও ,লোভা ।সেদিন পৃথিবী তে ঘটল এক বিরল ঘটনা ।প্লাজমা রেইন ।লন্ড-ভন্ড পৃথিবির

সব পাওয়ার স্টেশন ।ধ্বংস হয়ে গেসে অনেক স্থাপনা ।ইলেক্ট্রোমেগনেটিক ফোর্স ,প্লাজমা সব কিছু গুড়িয়ে দিয়েছে ।বিদ্যুৎ কেন্দ্র গুলো,ধ্বংস স্তুপ ,ইউরেনিয়াম বিস্ফোরন.........

পাহাড়ি অঞ্চল রিকুভা ,রিভান, ও লোভা দের এলাকা ।পাহাড়ে লোভা ও রিভান । লোভার দেখানো দূরে একটা মরিচিকার মত জিনিষ টা দেখতে কিছুক্ষন পর লুটিয়ে পরল রিভান ।

ঊচু পাহাড়ে অজ্ঞান রিভান কে ধরতে পারল না লোভা ।অচেতন হয়ে খুব দ্রুত বেগে নিচের দিকে গড়িয়ে পড়ছে... মরিচিকার মত গর্ত টি তে গড়িয়ে পরে গেল অচেতন রিভান ।

কিছুক্ষন পর বিকট শব্দে সাউন্ড ও বার্তা র ধ্বনি । সামনে এগোনোর সাহস পাচ্ছে না লোভা । মরিচিকার মত গর্তটি থেকে আলো ছড়িয়ে পড়ছে ।

অল্প কিছুক্ষন পর ই থেমে গেলো আলোর ঝলকানি । ---সিসস্টেম রিবুটেড --,নিউ ইউজার এডেড...এরকম কিছু শব্দ ভেসে এল লোভার কানে --সাথে সাথে ধাক্কা খেয়ে শুন্যে ভেসে এল রিভান ।

লোভা নিজের ছানা ভড়া চোখ বিশ্বাস করতে পারছেন নাহ ।

 

লোভা দ্রুত অসুস্থ ভাই কে সাথে পেয়ে বাসার পথে নিয়ে চলছে...

রিকুভার  বাড়ির সামনে ।

রিকুভার তাদের দেখতে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে সেবা করে একটু সুস্থ হলে জানতে চায় কি ভাবে এরকম টি হল ।

লোভা তাকে সব বলল ।হাটতে হাটতে যখন রিকুভার ল্যাব এর সামনে তখন ই এলার্ম ।ভেরিয়েবল DNA কি যেন সংকেত দিচ্ছে সাথে সাথে শক্তিশালি সিগনাল

রিসিভ করতে শুরু করল ।রিকুভা চমকিত কিন্তু কিছু বুঝতে পারছে না ।বার বার রিভান কে বাসা থেকে দূরে নিয়ে আবার যখন কাছে আসে

তখন সিগনাল স্ত্রেংন্থ বৃদ্ধি পায় , সে যখন ভাল ভাবে সব কিছু লোভার কাছ থেকে শুনল ।সে অবাক চোখে লোভাকে দেখে ।রিভান চিন্তিত ।

কি বুজেছেন আঙ্কেল?

রিভান,লোভা জানতে চায় আংকেল রিকুভা র কাছে ।

রিকুভা কোন একটা বিষয় চিন্তা করতে থাকলে  রিভান বুঝতে পারে সে কোন কিছু তাদের কাছ থেকে লুকিয়ে যাচ্ছে ।

কিন্তু বিষয় টা রিভান ও লোভা র কাছে গুরুত্বপুর্ণ নয় ।তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আসে । বাবা মা দুজন ই অত্যান্ত অসুস্থ্য ।তেজস্ক্রিয় তার মাত্রা

প্রচন্ড তাই মৃত্যুর সময় এগিয়ে আসছে ভেবে নিজেকে অসহায় লাগে রিভানের ।তার আগ্রেহের তেজস্ক্রিয়তাই পিতা মাতা হীন হবার কারন হয়ে দাড়িয়েছে ।

সে রাস্তায় বেড়োতেই রিকুভা তার সাথে দেখা করার জন্য এগিয়ে আসছে......

বাসায় নিয়ে গেল অনেক টা জোর করে ই -----

---প্লাজমা রেইন এর কারনে কোন একটি ডেটা সেন্টার ওপেন সার্কিট হয়ে গিয়েছিল ।তাই সকল নেটওয়ার্ক ডিস্কানেক্টেড হয়ে গিয়েছিলো ।রিভানের দেহের মধ্য দিয়ে ডেটা টান্সফার হয়েছে ।তাই পুরূ সিস্টেম রিবুট হয়েছে এবং

রিভান একজন ইউজার হিসেবে যুক্ত হয়েছে ।কিন্তু কিভাবে  হল তা মিলছে না রিকুভার কাছে ।কারন বায়োলজিক্যাল টিস্যু সেখানে ক্ষতিতে রূপ নেইয়ার কথা ।

আসলে তাই--যখন রিভান অচেতন হয়ে পাহাড়ে গরিয়ে পরে তখন রেডিয়েশন এক্সেপ্টেবল রেঞ্জে চলে যায় ।ফলে যখন সিস্টেম একটিভ হয় রিভান কে তাদের ইউজার হিসেবে প্রাইমারি অটোমেশন এর মাধ্যমে সুস্থ্য করে ...

রিকুভা আজ তাকে অনেক কিছু ই বলতে চাচ্ছে কিন্তু রিভান শুনতে চাচ্ছে নাহ ।কারন বাড়িতে তার বাবা মা পোলেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তায় মৃত্য পথে...

দ্রুত বাসায় গিয়ে বাবা মা র করুন চেহেরা দেখে আর থাকতে পারছে না  রিভান ।বাসা থেকে আবার রিকুভা র কাছে ।কিন্তু এবার রিকুভা এক ফন্দি এটে বসে আছে ।

সে রিভান কে কাজে লাগাতে চায় ।

সে আবার রিভান কে সেখানে যেতে ।রিভান বাসায় এলে রিকুভা বিভিন্ন কৌশলে তাকে বসে আনার চেস্টা করতে থাকে ।

সে রিভান কে পাহাড়ে নিয়ে আসে । মরিচিকার মত সেই গর্তে আবার প্রবেশ করার জন্ন রিভান কে বলে ।কিন্তু রিভান কেন যাবে ?

এক সময় রিকুভা রিভান কে বলে যদি সে ডেটা সেন্টার থেকে DNA এর সকল তথ্য তাকে এনে দেয় তাহলে তার বাবা মা কে বাচানো যাবে ।

রিকুভা ব্লাক রেডিয়ান্স এর ইউনিক রেডিয়েশন দিয়ে dna তে আপলোড করবে ।এবং সে ডেটা ইনফ্রারেড রেডিয়েশন করে তার বাবা মায়ের শরীরে প্রবেশ করাতে পারলে বেচে যাবেন ।অন্য দিকে যদি মি.রিকুভা ডেটা সেন্টার থেকে প্রাপ্ত এসব ইনফরমেশন  ব্যাবহার করে বিভিন্ন অন্যায় ,অত্যাচার ,এমন কি সকল প্রানীদের দেহে বিষাক্ত ভাইরাস

বা  ব্যাকটেরিয়ার জিবানু প্রবেশ করায় তাহলে ধ্বংস হয়ে যাবে মানব তথা পৃথিবি ।তাই   রিভান চিন্তা করছে তার চেয়ে নিজের জীবন ও বাবা মা কে বিদায় দেয়া ই মঙ্গল ।

কিন্তু রিভানের সারা জীবনের শখ সে যদি পালটে দিতে পারত সমাজের অন্যায় ,দেশের বিশৃংখল ও বিকৃত মস্তিষ্কের রাজনৈতিক ব্যাক্তিদের সঠিক ও ন্যায় এর রাজনীতি তে ফিরে আনতে ।

কিন্তু ----রিভানের শখ কোন টা বাচাবে ।

Md.Majharul islam

Dept.: Electrical and Electronic engineering

Semester: ½(1st year 2nd semester)

Mobile:  01813598254

Email: majharul30@gmail.com